মহাভারতের বংশ তালিকা-মহারাজ শান্তুনু
মহারাজ শান্তুনু
মহাভারতের বংশ তালিকায় মহারাজ শান্তুনু ছিলেন প্রদীপ ও সুনন্দার পুত্র । তাঁর বড় ভাই দেবাপি এবং ছোট ভাই বাহ্লীক বাল্য বয়সেই দেবাপি সন্ন্যাসী হন, শান্তনু রাজা হলেন।
শান্তনু নামের অর্থ শমগুণান্বিত, রাজার পুত্ররূপে জন্মগ্রহণের জন্য তাঁর নাম শান্তনু। (আদি, ৯২।১৮) ইক্ষ্বাকুবংশের নৃপতি মহাভীষ পরজন্মে শান্তনুরূপে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন, সর্বদা আলস্য ত্যাগ করে ধর্মাচরণ করতেন এবং সত্যবাদী ছিলেন। তাঁর মৃগয়াতে ভীষণ আসক্তি ছিল। একদিন গঙ্গাতীরে গমন করবার কালে এক দিব্যগন্ধা নারীকে দেখে তিনি বিচলিত হন।
মৃগয়ার চিন্তা দূর করে সুন্দরী রমণীকে পত্নীরূপে পাবার জন্য উদ্গ্রীব হন। সেই সুন্দরীই গঙ্গাদেবী।, গঙ্গাদেবী শান্তনুকে একটি শর্তে বিয়ে করতে রাজি হন। আর সেই শর্ত হলো—গঙ্গাদেবী পূর্ণ স্বাধীনতা চান, তাঁর কোন কাজেই রাজা কোনদিন বাধা দিতে পারবেন না।
শান্তনু তাঁর শর্ত দ্বিধাশূন্য চিত্তে মেনে নেন। গান্ধর্ব মতে তখনই বিয়ে হলো। শান্তনু ও গঙ্গার মিলনে আটটি পুত্রের জন্ম হয়। বশিষ্ঠ ঋষির শাপে অষ্টবসু গঙ্গার পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রতি পুত্রের জন্মের পর মা গঙ্গাদেবী পুত্রটি গঙ্গায় বিসর্জন দিতেন এই বলে—পুত্র, আমি তোমার প্রীতি উৎপাদন করছি। সাতটি পুত্র এইভাবে নষ্ট হলো। অষ্টম পুত্রের জীবনেও ঐরূপ মৃত্যু আছে এই আশঙ্কা করে শান্তনু পত্নীকে নিষেধ করেন এবং শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় গঙ্গাদেবী আত্মপরিচয় দিয়ে চলে যান।
এই অষ্টম পুত্রই মহাভারতের দেবব্রত, ভীষ্ম। গঙ্গার অবর্তমানে শান্তনু বিমর্ষ হয়ে পড়েন। দেবব্রত মায়ের কাছেই ছিলেন। বাল্যকাল অতীত হলে যুবক পুত্রটিকে গঙ্গাদেবী শান্তনুকে দেন। কয়েক বছর কেটে গেছে। শান্তনু রাজকাজে মন দিয়েছেন।
উপযুক্ত পুত্রকে রাজা যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করেন, এইভাবে আরও চার বছর কেটে গেল। শান্তনু মৃগয়া-প্রিয়, সেজন্য যমুনাতীরে মৃগয়ার জন্য গেলেন। সেখানে এক সুগন্ধ তাঁকে পাগল করে। তিনি মৃগয়া ছেড়ে সুগন্ধের সন্ধানে সময় কাটান।
বহু অনুসন্ধানের পর দেখলেন, এক পরমাসুন্দরী রমণীকে, নৌকাপারের কাজে ব্যস্ত। তাঁরই দেহ থেকে এই প্রাণমাতানো সুগন্ধের উৎপত্তি, প্রশ্ন করে জানলেন, ধীবররাজের কন্যা তিনি। পিতার আদেশে এই কাজে লিপ্ত আছেন
ধীবররাজের নিকট তাঁর কন্যাকে প্রার্থনা করলে কন্যার পিতা শর্ত দেন—এই কন্যার গর্ভে যে পুত্র জন্মগ্রহণ করবে তিনি রাজা হবেন। শান্তনু সম্মতি দিতে পারেন নি। তাঁর বিষণ্ণ বদন, হতশ্রী দেহ, উদাসীন ভাব লক্ষ্য করলেন দেবব্রত। পিতার কাছে জানতে চাইলে পিতা আসল কারণ গোপন করতে ইচ্ছা করেও পারলেন না।
বুদ্ধিমান যুবকের কাছে ধরা পড়ে গেলেন। শান্তনু বললেন, দেবব্রত, তোমার গুণের শেষ নেই। সর্ববিষয়ে তুমি রাজার কর্তব্য পালনে দক্ষ। কিন্তু আমার মনে এক আশঙ্কা আছে।
একটি মাত্র পুত্র, পুত্রহীন বলেই গণ্য একথা মহাজনের উক্তি। তোমার জীবনে কোন অশুভ ঘটলে এই বিপুল রাজ্যের কি অবস্থা হবে? এই দুশ্চিন্তার জন্য আমি বিমর্ষ।
দেবব্রত অমাত্যদের সঙ্গে কন্যার পিতার নিকট গিয়ে নিজের সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করলেন। তথাপি কন্যার পিতা সুখী নন। তিনি দেবব্রতের নিকট তাঁর চির-কৌমার্যের শর্ত চাইলেন।
পিতৃভক্ত দেবব্রত সব ত্যাগ করে কন্যাকে হস্তিনাপুরে পিতার কাছে আনলেন। বিয়ে হলো এইভাবে নিজের জীবনের সুখ ও রাজ্য ত্যাগ করে পিতাকে তুষ্ট করার জন্য পিতা তাঁকে ইচ্ছামৃত্যু’ বর দিলেন। সত্যবতীর গর্ভে দুটি সন্তান – চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য। ছত্রিশ বছর রাজত্ব করে শান্তনু পরলোকে গেলেন।
আরও পড়ুন