দেবাসুর সংরাম -দেবতা ও দানবদের যুদ্ধ
শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেন-"হে রাজন, দৈত্য এবং দানবেরা সকলেই পূর্ণ উদ্যমে সমুদ্রমন্থন কার্যে যত্নবান হয়েছিল, কিন্তু তারা ভগবান শ্রীবাসুদেবের ভক্ত না হওয়ার ফলে অমৃত পান করতে পারেনি।
হে রাজন, ভগবান সমুদ্র মন্থনের দ্বারা অমৃত উৎপাদন করে, তাঁর প্রিয় ভক্ত দেবতাদের তা পান করিয়ে, সকলের সমক্ষে তাঁর বাহন গরুড়ের পৃষ্ঠে আরোহণ করে তাঁর ধামে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।"
"দেবতাদের এই প্রকার পরম ঐশ্বর্য লাভ করতে দেখে, অসুরেরা অসহিষ্ণু হয়ে তাদের অস্ত্র উত্তোলন করে দেবতাদের প্রতি ধাবিত হয়েছিল। তারপর, অমৃত পানে অনুপ্রাণিত এবং নারায়ণের শ্রীপাদপদ্মে সর্বদা শরণাগত দেবতারা তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অসুরদের প্রতি-আক্রমণ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
হে রাজন, তখন ক্ষীরসমুদ্রের তীরে দেবতা এবং দানবদের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধ এতই ভয়ানক যে, তা শ্রবণ করলেও রোমাঞ্চ হয়। সেই যুদ্ধে উভয় পক্ষই অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিল এবং পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে তারা তরবারি, বাণ এবং বিভিন্ন অস্ত্রের দ্বারা পরস্পরকে প্রহার করতে শুরু করেছিলেন।
শঙ্খ, তুর্য, মৃদঙ্গ, ভেরী, ডমরু এবং হস্তী, অশ্ব, রথী ও পদাতিকদের তুমুল ধ্বনিতে সেই রণক্ষেত্র পূর্ণ হয়েছিল। সেই যুদ্ধক্ষেত্রে রথীরা বিপক্ষের রথীদের সঙ্গে, পদাতিকেরা বিপক্ষের পদাতিকদের সঙ্গে, অশ্বারোহী সৈনিকেরা বিপক্ষের অশ্বারোহী সৈনিকদের সঙ্গে এবং গজারূঢ় সৈনিকেরা শত্রুপক্ষের গজারূঢ় সৈনিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে শুরু করেছিলেন।
এইভাবে সমানে সমানে লড়াই হয়েছিল। সৈন্যরা কেউ উটের উপর, কেউ হাতির উপর, কেউ গর্দভের উপর, কেউ শ্বেতমুখ এবং রক্তমুখ বানরের উপর, কেউ বাঘের উপর এবং কেউ সিংহের উপর আরোহণ করে যুদ্ধ করছিলেন।
হে রাজন, অন্য সমস্ত সৈনিকেরা কেউ শকুনি, কেউ ঈগল, কেউ বক, কেউ শ্যেন, কেউ ভাস, কেউ তিমিঙ্গিল, কেউ শরভ, কেউ মহিষ, কেউ গণ্ডার, কেউ গাভী, কেউ বৃষ, কেউ গবয় এবং কেউ অরুণের পিঠে চড়ে যুদ্ধ করেছিলেন।
অন্যেরা শৃগাল, মুষিক, গিরগিটি, শশক, মানুষ, ছাগ, কৃষ্ণসার মৃগ, হংস এবং শূকরের পিঠে চড়ে যুদ্ধ করেছিলেন। এইভাবে জলচর, স্থলচর ও খেচর এবং বিকট আকার প্রাণীর উপর আরোহণ করে পরস্পরের সম্মুখীন হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।
হে রাজন, হে পাণ্ডুনন্দন, দেবতা এবং দানব উভয় পক্ষের যোদ্ধারা অত্যন্ত সুন্দরভাবে সজ্জিত চন্দ্রাতপ, বিচিত্র ধ্বজা এবং অত্যন্ত মূল্যবান মণিরত্ন খচিত দণ্ডযুক্ত ছত্রে বিভূষিত ছিলেন।
তাঁরা ময়ূরপুচ্ছ নির্মিত পাখা এবং অন্যান্য প্রকার চামরের দ্বারাও সজ্জিত হয়েছিলেন। সেই সমস্ত যোদ্ধাদের উত্তরীয় এবং উষ্ণীষ বায়ুভরে আন্দোলিত হওয়ায় স্বভাবতই তাঁদের অত্যন্ত সুন্দর দেখাচ্ছিল এবং তাঁদের বর্ম, অলঙ্কার ও তীক্ষ্ণধার অস্ত্র উজ্জ্বল সূর্যকিরণে ঝলমল করছিল।
এইভাবে দুই পক্ষের সৈনিকদের যেন জলজন্তুসমূহে সমাকীর্ণ দুটি সমুদ্রের মতো মনে হচ্ছিল। সেই যুদ্ধে প্রসিদ্ধ সেনাপতি বিরোচনের পুত্র বলি বৈহায়স নামক এক অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বিমানে উপবেশন করেছিলেন।
হে রাজন, সেই অতি সুন্দরভাবে সজ্জিত বিমানটি ময়দানব নির্মাণ করেছিল এবং তা সর্বপ্রকার যুদ্ধের উপযুক্ত অস্ত্র সমন্বিত ছিল। সেই বিমানটি ছিল অচিন্ত্য এবং অবর্ণনীয়। তা কখনও দৃশ্য এবং অদৃশ্য ছিল।
সেই বিমানে এক সুন্দর ছত্রের নিচে ২ অসুর সেনাপতিদের দ্বারা পরিবেষ্টিত বলি মহারাজকে শ্রেষ্ঠ চামরের দ্বারা ব্যজন করা হচ্ছিল এবং তখন তাঁকে - ঠিক সর্বদিক আলোকিত করে সন্ধ্যাবেলায় উদীয়মান ৪ চন্দ্রের মতো মনে হচ্ছিল।
বলি মহারাজের চতুর্দিকে এ সমস্ত অসুর সেনাপতিরা তাদের নিজ নিজ বাহনে • উপবিষ্ট হয়ে অবস্থান করছিল।
তাদের মধ্যে ছিল নমুচি, - শম্বর, বাণ, বিপ্রচিত্তি, অয়োমুখ, দ্বিমূর্ধা, কালনাভ, প্রহেতি, - হেতি, ইম্বল, শকুনি, ভূতসন্তাপ, বজ্রদংষ্ট্র, বিরোচন, হয়গ্রীব, শঙ্কুশিরা, কপিল, মেঘদুন্দুভি, তারক, চক্রদৃক্,শুম্ভ, নিশুম্ভ, জন্তু, উৎকল, অরিষ্ট, অরিষ্টনেমি,সঙ্গে এবং মিত্র প্রহেতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন।
যমরাজ কালনাভের সঙ্গে, বিশ্বকর্মা ময়দানবের সঙ্গে, ত্বষ্ট্রা শম্বরের সঙ্গে এবং সূর্যদেব বিরোচনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। অপরাজিতদেব নমুচির সঙ্গে এবং অশ্বিনীকুমারদ্বয় বৃষ্ণপর্বার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন।
সূর্যদেব বাণ আদি বলি মহারাজের একশ পুত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন এবং চন্দ্রদেব রাহুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। পবনদেব পুলোমার সঙ্গে এবং মহাবলবতী ভদ্রকালীদেবী শুম্ভ ও নিশুন্তের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন।
হে অরিন্দম মহারাজ পরীক্ষিৎ, মহাদেব জম্ভের সঙ্গে এবং বিভাবসু মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। ভ্রাতা বাতাপি সহ ইল্বল ব্রহ্মার পুত্রদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। দুর্মর্ষ কামদেবের সঙ্গে, উৎকল অসুর মাতৃকা দেবীদের সঙ্গে, বৃহস্পতি শুক্রাচার্যের সঙ্গে এবং শনি নরকাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন।
মরুতেরা নিবাতকবচের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন, বসুগণ কালকেয় নামক অসুরদের সঙ্গে, বিশ্বদেব দেবতাগণ পৌলোম ত্রিপুরাধিপ, ময়, পুলোমার পুত্রগণ এবং কালেয় ও নিবাতকবচ আদি অসুরেরা।
এই সমস্ত অসুরেরা অমৃতের অংশলাভে বঞ্চিত হয়ে কেবল সমুদ্রমন্থনের ক্লেশভাগী হয়েছিল। এখন, তারা দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়েছিল। তাদের সৈন্যদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তারা সিংহনাদ করতে করতে তুমুল রবে শঙ্খ বাজাতে লাগল। বলভিৎ বা ইন্দ্র তাঁর হিংস্র প্রতিদ্বন্দ্বীদের দর্শন করে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন।
প্রস্রবণসমূহ যেখানে সর্বদা ক্ষরিত হয়, সেই উদয়গিরিতে আরূঢ় সূর্যদেবের মতো ইন্দ্র তখন মদধারাস্রাবী দিগৃহস্তীতে আরোহণ করে শোভা পাচ্ছিলেন। স্বর্গের বিভিন্ন দেবতারা ধ্বজা ও অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এবং বিভিন্ন বাহনে উপবিষ্ট হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে বেষ্টন করেছিলেন।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন বায়ু, অগ্নি, বরুণ আদি সমস্ত দেবতা এবং পার্ষদ সহ সমস্ত লোকপালগণ। দেবতা এবং দানবেরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়ে মর্মভেদী বাক্যের দ্বারা পরস্পরকে তিরস্কার করেছিলেন এবং তারপর পরস্পরের সমীপবর্তী হয়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করতে শুরু করেছিলেন।
"হে রাজন, মহারাজ বলি ইন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন, কার্তিকেয় তারকাসুরের সঙ্গে, বরুণ হেতির অসুরদের সঙ্গে এবং রুদ্রগণ ক্রোধবশ অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। এই সমস্ত দেবতা এবং অসুরেরা যুদ্ধ করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে সমবেত হয়ে, অত্যন্ত বলপূর্বক পরস্পরকে আক্রমণ করেছিলেন।
জয় লাভের আশায় তাঁরা সকলে পরস্পরকে তীক্ষ্ণ বাণ, খড়গ এবং তোমরের দ্বারা প্রহার করতে লাগলেন। তারা ভুশুণ্ডি, চক্র, গদা, ঋষ্টি, পট্টিশ, শক্তি, উন্মুক, প্রাস, পরশধ, নিস্ত্রিংশ, ভল্ল, পরিঘ, মুদ্গর এবং ভিন্দিপাল প্রভৃতি অস্ত্রের দ্বারা বিপক্ষের মস্তক ছিন্ন করতে লাগলেন।
হস্তী, অশ্ব, রথ, রথী, পদাতিক এবং অন্যান্য বাহন সহ তাঁদের আরোহীদের বাহু, উরু, গলা, পা ছিন্ন হয়েছিল এবং তাঁদের পতাকা, ধনুক, বর্ম এবং অলঙ্কার খণ্ড-বিখণ্ড হয়েছিল। দেবতা এবং অসুরদের পদাঘাতে এবং রথের চাকার দ্বারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রচণ্ড ধূলি আকাশে উত্থিত হয়ে সূর্যমণ্ডল পর্যন্ত সর্বদিক আচ্ছাদিত করেছিল।
কিন্তু তার পরেই রক্তের ধারায় সিক্ত হয়ে সেই ধূলিজাল নিবৃত্ত হয়েছিল। সেই যুদ্ধক্ষেত্র তখন যোদ্ধাদের ছিন্ন মস্তকের দ্বারা পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। তাঁদের মস্তক দেহ থেকে ছিন্ন হলেও তাঁদের নয়ন ক্রোধযুক্ত ছিল এবং ক্রোধে তাঁরা তাঁদের অধর দংশন করেছিলেন। তাঁদের বিচ্ছিন্ন মস্তক থেকে কিরীট এবং কুণ্ডল সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল।
তেমনই, অলঙ্কারে ভূষিত এবং অস্ত্রধৃত বহু হস্ত এবং হাতির শুঁড়ের মতো পা এবং উরু সেই যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল। সেই যুদ্ধক্ষেত্রে বহু কবন্ধের (মস্তকরহিত দেহের) উৎপত্তি হয়েছিল, যারা তাদের নিপতিত মস্তকের চক্ষুর দ্বারা দেখতে পাচ্ছিল এবং হাতে অস্ত্র নিয়ে তারা - শত্রুপক্ষের সৈন্যদের আক্রমণ করেছিল।
বলি মহারাজ - তখন দশটি বাণের দ্বারা ইন্দ্রকে, তিনটি বাণের দ্বারা -ঐরাবতকে, চারটি বাণের দ্বারা ঐরাবতের পাদরক্ষক - চারজন অশ্বারোহীকে এবং একটি বাণের দ্বারা হস্তীচালককে আক্রমণ করেছিলেন।
ধনুর্বিদ্যায় সুনিপুণ - দেবরাজ ইন্দ্র হাসতে হাসতে ভল্ল নামক অতি তীক্ষ্ণ - অস্ত্রের দ্বারা সেই বাণগুলি প্রতিহত করেছিলেন। ইন্দ্রের অতি সুনিপুণ সামরিক কার্য দর্শন করে, বলি মহারাজ - তাঁর ক্রোধ সংবরণ করতে পারেননি।
তাই তিনি তখন - শক্তি নামক উল্কার মতো এক জ্বলন্ত অস্ত্র গ্রহণ - করেছিলেন। কিন্তু বলির হাতে থাকতে থাকতেই ইন্দ্র সেই অস্ত্র খণ্ড খণ্ড করেছিলেন। তারপর, বলি মহারাজ একের পর এক শূল, প্রাস, তোমর, ঋষ্টি প্রভৃতি যে যে অস্ত্র গ্রহণ করেছিলেন, ইন্দ্র তৎক্ষণাৎ সেগুলি খণ্ড খণ্ড করেছিলেন।"
"হে রাজন, বলি মহারাজ তখন অন্তর্হিত হয়ে আসুরী মায়া সৃষ্টি করেছিলেন। সেই মায়ার প্রভাবে তখন দেবসৈনিকদের মাথার উপর এক বিশাল পর্বত আবির্ভূত হয়েছিল। সেই পর্বত থেকে দাবানলে দগ্ধ বিশাল বৃক্ষসমূহ, পাষাণ বিদারক অস্ত্রের মতো তীক্ষ্ণাগ্র পাথরের খণ্ডসমূহ দেবসৈনিকদের উপর পতিত হয়ে তাঁদের মস্তক চূর্ণ করতে লাগল।
বৃশ্চিক, বিশাল সর্প এবং অন্যান্য বহু বিষাক্ত জন্তু, সিংহ, ব্যাঘ্র, বরাহ এবং বিশাল হস্তীসমূহ দেবসৈন্যদের উপর পতিত হয়ে সব কিছু চূর্ণবিচূর্ণ করতে লাগল। শত শত বিবসনা রাক্ষসী এবং রাক্ষসেরা শূলহস্তে সেখানে আবির্ভূত হয়ে চিৎকার করতে লাগল, "ছেদন কর! বিদ্ধ কর। " তখন আকাশে প্রবল বায়ু তাড়িত হয়ে ভয়ঙ্কর মেঘ আবির্ভূত হয়েছিল। বজ্রের মতো ভয়ঙ্কর শব্দ করতে করতে সেই মেঘ থেকে অঙ্গার বর্ষিত হতে লাগল। বলি মহারাজের সৃষ্ট এক মহা সংহারক অগ্নি দেবতাদের সৈন্যদের দগ্ধ করতে লাগল।
অতি প্রচণ্ড বায়ু সহ সেই অগ্নি সাংবর্তক নামক প্রলয়কালীন অগ্নির মতো ভয়ঙ্কর ছিল। তারপর সর্বদিকে প্রচণ্ড বায়ুর দ্বারা উত্থিত সমুদ্রের তরঙ্গ এবং আবর্ত দৃষ্ট হয়েছিল। যুদ্ধে যখন মহা মায়াবী দানবেরা এইভাবে অদৃশ্য থেকে বিবিধ মায়া সৃষ্টি করতে লাগল, তখন দেবসৈনিকেরা বিষণ্ণ হয়েছিলেন।"
"হে রাজন, দেবতারা যখন অসুরদের সেই মায়ার প্রতিকারের কোন উপায় দেখতে পেলেন না, তখন তাঁরা সর্বান্তঃকরণে ভগবানের ধ্যান করেছিলেন এবং বিশ্বভাবন ভগবান সেখানে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
গরুড়ের স্কন্ধন্বয়ে পাদপদ্মযুগল বিন্যস্ত করে পীতবসন, নব বিকশিত পদ্মপলাশ লোচন ভগবান তাঁর আট হাতে আটটি অস্ত্র ধারণ করে শ্রী, কৌস্তুভ, মহামূল্যবান কিরীট ও মনোহর কুণ্ডলে শোভিত হয়ে সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছিলেন।
জাগ্রত হলে যেমন দুঃস্বপ্ন দূর হয়ে যায়, তেমনই যুদ্ধক্ষেত্রে ভগবান প্রবেশ করা মাত্রই তাঁর অপ্রাকৃত শক্তির প্রভাবে অসুরদের কূটকর্মজনিত মায়া বিলীন হয়ে গিয়েছিল। বস্তুতপক্ষে, ভগবানকে স্মরণ করার ফলেই সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।"
হে রাজন, সিংহবাহন কালনেমি গরুড় বাহন " ভগবানকে যুদ্ধক্ষেত্রে দর্শনপূর্বক তার শূল ঘূর্ণন করে গরুড়ের মস্তকের প্রতি তা নিক্ষেপ করেছিল। ত্রিলোকেশ্বর ভগবান শ্রীহরি সেই শূল অবলীলাক্রমে গ্রহণ করে, সেই অস্ত্রের দ্বারাই কালনেমিকে তার বাহন সিংহ সহ সংহার করেছিলেন।
তারপর ভগবান তাঁর চক্রের দ্বারা মালী এবং সুমালী নামক দুই অতি বলবান অসুরদের মস্তক ছিন্ন করে সংহার করেছিলেন। তারপর মাল্যবান নামক আর একটি অসুর ভগবানকে আক্রমণ করেছিল।
তার অতি তীক্ষ্ণ গদা নিয়ে সিংহের মতো গর্জন করতে করতে সেই অসুরটি পক্ষীরাজ গরুড়কে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু আদি পুরুষ ভগবান তাঁর চক্রের দ্বারা সেই শত্রুটিরও মস্তক ছিন্ন করেছিলেন।"