শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনি শ্রবণে গােপীদের আকুলতা- শ্রীকৃষ্ণলীলা কথামৃত

 

 বংশীধ্বনি শ্রবণে গােপীদের আকুলতা-কৃষ্ণ লীলা

ফুলে ফুলে পূর্ণ এবং আনন্দমুখর ভ্রমরের গুনে উচ্ছল বনের পরিবেশ কৃষ্ণ অত্যন্ত ভালবাসতেন। পাখিরা তখন আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠত আর গাছগুলি উল্লাসভরে তাদের শাখা আন্দোলিত করত। 

 

কৃষ্ণ তখন বলরাম এবং গােপসখাদের সঙ্গে গাভী চরাতে চরাতে তার বাঁশি বাজাতেন, কৃষ্ণের বংশীধ্বনি শুনে ব্ৰজগােপিকাদের চিত্তে কৃষ্ণস্মৃতির উদয় হত এবং তারা পরস্পরের সঙ্গে বলাবলি করতেন, "কৃষ্ণ কি সুন্দরভাবে বাঁশি বাজায়!” 

 

এইভাবে কৃষ্ণের মধুর বংশীধ্বনির বর্ণনা করতে করতে গােপিকাদের তার সঙ্গে তাদের লীলাবিলাসের কথা মনে পড়ে যেত।

  (শ্রীমদ্ভাগবত-শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলা এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডাউনলোড করুন)

কৃষ্ণের জন্য তখন তাদের চিত্ত আকুল হয়ে উঠত এবং বিরহবিধুর চিত্তে তারা তখন আর কৃষ্ণের সঙ্গে তাদের মিলনের স্নিগ্ধ আনন্দের কথা বর্ণনা করতে পারতেন না। 

 

সেই দিব্য বংশীধ্বনির বর্ণনা করতে করতে তাদের মনে পড়ে যেত কৃষ্ণ কিভাবে তার মাথায় ময়ুরের পুচ্ছ ধারণ করেন, তখন তাকে দেখে মনে হয় যেন একজন নর্তক। 

 

তার কানে নীল বর্ণের ফুল গোঁজা থাকে। তার পরনে থাকে উজ্জ্বল পীত বসন, আর তার গলায় শােভা পায় বৈজয়ন্তী মালা। 

 

এইভাবে মনােমুগ্ধকর সাজে সজ্জিত হয়ে কৃষ্ণ তার অধরামৃত ঢেলে দিয়ে তার বাঁশির রত্নগুলি পূর্ণ করে তােলেন। এইভাবে তারা কৃষ্ণ ও সহচরদের পদচিহ্নে ভূষিত বৃন্দাবনের বনে প্রবেশােন্মুখ কৃষ্ণের কথা মনে করতেন।

 

কৃষ্ণ অতি সুন্দরভাবে বাঁশি বাজাতেন আর গােপিকারা সেই বাঁশির সুরে মােহিত হয়ে সব কিছু ভুলে যেতেন। শুধু যে কেবল গােপিকারাই তার বাঁশির সরে আকৃষ্ট হতেন তা নয়, সেই বাঁশির সুর যে শােনে সেই মােহিত হয়ে পড়ে। 

 

একজন গােপিকা তার সখীদের বললেন, "বৃন্দাবনের বনে সখা পরিবৃত হয়ে গােচারণরত এবং বংশীবাদনরত কৃষ্ণ ও বলরামকে দর্শন করাই হচ্ছে চোখের চরম সার্থকতা।

Radha Krishna

 

যে মানুষ নিরন্তর ধ্যানে অন্তরে এবং বাহিরে বাশি বাজাতে বাজাতে কৃষ্ণকে বৃন্দাবনের বনে প্রবেশ করতে দর্শন করেন, তিনিই যথার্থ সমাধি লাভ করেছেন। 

 

সমাধি কথাটির অর্থ হচ্ছে কোন বিষয়ে সব কটি ইন্দ্রিয়কে মগ্ন করা এবং গােপিকারা দেখিয়ে গেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণের লীলা স্মরণে সম্পূর্ণভাবে মগ্ন হওয়াই হচ্ছে সমস্ত ধ্যানের সিদ্ধি বা সমাধি। ভগবদগীতাতেও বলা হয়েছে যে, যিনি সর্বক্ষণ শ্রীকৃষ্ণের চিন্তাতেই মগ্ন, তিনিই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ যােগী।

 

অপর এক গােপী বললেন, "গােপবালকদের মাঝে কৃষ্ণ ও বলরামকে দেখে মনে হচ্ছিল ঠিক যেন দু'জন অভিনেতা। কৃষ্ণের পরনে ছিল উজ্জ্বল পীত বসন আর বলরামের পরনে ছিল নীল বসন এবং তাদের হাতে আম্রপল্লব, ময়ুরপুচ্ছ এবং পত্র-পুষ্পগুচ্ছ আর তাদের শ্রীঅঙ্গে পদ্মফুলের মালা শােভা পাচ্ছিল। 

 

সখা- পরিবৃত হয়ে তাঁরা গান করছিলেন।” একজন গােপী তাঁর সখীকে বললেন, "কৃষ্ণ ও বলরামের এই অপূর্ব সুন্দর রূপ কিভাবে সম্ভব হল?” অপর একজন গােপী বললেন, “হে সখীরা, এই বেণু না জানি পূর্বে কত পুণ্যই অর্জন করেছিল যে, সে আজ নিরন্তর কৃষ্ণের অধরামৃত আস্বাদন করছে?” কৃষ্ণ কখনও কখনও গােপিকাদের চুম্বন করেন, তাই তাঁর অধরামৃত কেবল তাঁদেরই উপভােগ্য আর তার অধরােষ্ঠ কেবল তাঁদেরই সম্পত্তি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url