দাবানল থেকে গাভীদের উদ্ধার-শ্রীকৃষ্ণলীলা - শ্রীমদ্ভগবদ গীতা যথাযথ বাংলা

নতুন পোষ্ট

Add

শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০

দাবানল থেকে গাভীদের উদ্ধার-শ্রীকৃষ্ণলীলা

 দাবানল থেকে গাভীদের রক্ষা


কৃষ্ণ ও বলরাম যখন তাদের সখাদের সঙ্গে বৃন্দাবনের বনে নানা রকম লীলাবিলাস করছিলেন, তখন একদিন গাভীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে করতে নতুন ঘাসের লােভে গভীর অরণ্য প্রবেশ করল। 

ছাগল, গরু এবং মহিযেরা বন থেকে বনান্তরে প্রবেশ করতে করতে ইফিকাটবি নামক বনে প্রবেশ করল। এই বনটি ছিল সুন্দর সবুজ ঘাসে পূর্ণ এবং তাই তারা সেই বনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। 

কিন্তু যখন তারা সেখানে প্রবেশ করল, তখন তারা বুঝতে পারল যে, সেই বনে দাবানল জ্বলে উঠেছে। ভয়ে তখন তারা ক্রন্দন করতে লাগল। এদিকে কৃষ্ণ, বলরাম এবং গােপবালকেরা তাদের পশুদের না দেখতে পেয়ে অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠলেন। 


 

তাদের জীবিকার উপায়স্বরূপ পশুরা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় গােপবালকেরা ক্ষুব্ধ চিত্তে এবং দন্তের দ্বারা ছিন্ন তৃণ এবং গরুর ক্ষুরের চিহ্ন অনুসরণ করতে করতে তাদের খুঁজতে লাগলেন। 

অচিরেই তারা গাভীদের ক্রন্দন শুনতে পেলেন। কৃষ্ণ গাভীদের নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকতে লাগলেন। কুষ্ণের ডাক শুনে গাভীরা তৎক্ষণাৎ হর্যা্বিত হয়ে সাড়া দিল। 

কিন্তু ইতিমধ্যে দাবানল তাদের ঘিরে ফেলেছে এবং সে পরিস্থিতি তখন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বলে মনে হল। তীব্র গতিতে হাওয়া বইছিল, তাই খুব তাড়াতাড়ি আগুন ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং মনে হল যে স্থাবর, জঙ্গম সব কিছুই যেন সেই সর্বগ্রাসী দাবানল অগ্নি গ্রাস করবে।

সমস্ত গাভী এবং গােপবালকেরা অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়ল এবং একজন মরণােন্মুখ মানুষ পরমেশ্বর ভগবানের ছবির দিকে যেভাবে তাকিয়ে থাকে, তারা ঠিক সেই রকম সকরুণভাবে বলরামের দিকে তাকাল। 

তারা বলল, "প্রিয় কৃষ্ণ ও বলরাম, এই আগুনের তাপে আমরা দগ্ধ হচ্ছি। এখন আমরা তােমাদের শ্রীপাদপদ্মের শরণাগত হচ্ছি। আমরা জানি যে, এই মহাভয় থেকে তােমরা আমাদের রক্ষা করতে পার। 

হে প্রিয় সখা কৃষ্ণ, আমরা তােমার অন্তরঙ্গ সখা। তাই আমাদের এইভাবে বিপদগ্রস্ত করা সমীচীন নয়। আমরা সকলেই সর্বতােভাবে তােমার ওপর নির্ভরশীল এবং কে কিভাবে ধর্ম আচরণ করে, তা তুমি জান। তােমাকে ছাড়া আমরা আর কিছুই জানি না।”


পরমেশ্বর ভগবান তার সখাদের এই আবেদন শুনলেন এবং তাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি বর্ষণ করে তিনি তাদের আশ্বাস দিলেন যে, ভয়ের কোন কারণ নেই। 

তারপর যােগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, পরমেশ্বর ভগবান মুখ-ব্যাদান করে তৎক্ষণাৎ সেই দাবানল গ্রাস করে ফেললেন। সমস্ত গাভী এবং গােপবালকেরা এইভাবে অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেল। 

ভয়ে গােপবালকেরা প্রায় অচেতন হয়ে পড়েছিল, কিন্তু যখন তারা তাদের চেতনা ফিরে পেল এবং তাদের চোখ খুলে তাকাল, তখন তারা দেখল যে, কৃষ্ণ, বলরাম এবং গাভীদের সঙ্গে তারা সেই বনে রয়েছে। 

এইভাবে তাদের গাভীসহ প্রচণ্ড দাবানল থেকে রক্ষা পেয়ে তারা অত্যন্ত আশ্চর্য হল। তারা মনে মনে ভাবল যে, কৃষ্ণ নিশ্চয়ই সাধারণ বালক নন, তিনি অবশ্যই কোন দেবতা হবেন।


সন্ধ্যাবেলা গােপসখা এবং গাভীসহ কৃষ্ণ ও বলরাম বাঁশি বাজাতে বাজাতে বৃন্দাবনে ফিরে এলেন। তাদের ফিরে আসতে দেখে ব্রজগােপিকারা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। সারাদিন ধরে কৃষ্ণ যখন গােচারণ ভূমিতে গাভী চরাতেন এবং গােপবালকদের সঙ্গে খেলা করতেন, তখন ব্রজগােপিকারা সারাক্ষণ তার কথা ভাবতেন এবং তার বিরহে এক নিমেষকে তাদের এক যুগ বলে মনে হত।

 

আরও পড়ুনঃ 

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন