পূতনা বধ-কৃষ্ণলীলা কাহিনী-শ্রীমদ্ভাগবত


পূতনা বধ-কৃষ্ণলীলা কাহিনী-শ্রীমদ্ভাগবত

পূতনা বধ-কৃষ্ণ লীলা কাহিনী

যদিও শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকী এবং বসুদেবের পুত্র, কংসের অত্যাচারের ফলে বসুদেব শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের পালক-পিতা নন্দ মহারাজ অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব পালন করেছিলেন। 
 
পরের দিন ঘোষণা করা হয়েছিল যে, যশোদার একটি পুত্রসন্তান হয়েছে। বৈদিক প্রথা অনুসারে নন্দ মহারাজ জন্মোৎসব পালন করার জন্য জ্যোতিষী এবং ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণ করলেন। শিশুর জন্মের পরে জ্যোতিষীরা তাঁর জন্মলগ্নের গণনা করে কোষ্ঠি তৈরি করলেন। 

জন্মোৎসবের পর, নন্দ মহারাজ ঠিক করলেন কংসকে কর দেওয়ার জন্য মথুরায় যাবেন। যাবার আগে তিনি সমস্ত সমর্থ গোপেদের ডেকে তাঁর অনুপস্থিতিতে বৃন্দাবনের দেখাশুনা করতে বললেন। 
 
নন্দ মহারাজের আগমনের সংবাদ পেয়ে বসুদেব তাঁর বন্ধুকে অভিনন্দন জানাবার জন্য অধীর হয়ে উঠলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ নন্দ মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। 

বসুদেব যখন নন্দ মহারাজকে দেখলেন, তখন তাঁর মনে হল তিনি যেন নবজীবন লাভ করলেন। আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে নন্দ মহারাজ তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে উঠে বসুদেবকে আলিঙ্গণ করলেন। 
 
প্রীতিভরে বসুদেবকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তিনি তাঁকে বসতে দিলেন সেই সময় বসুদেব তাঁর দুই পুত্রের সংবাদ লাভের আশায় উৎকন্ঠিত হয়ে উঠলেন যারা নন্দ মহারাজের অজ্ঞাতসারে তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিল। উৎকন্ঠিত বসুদেব তাঁদের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। 
 
কৃষ্ণ এবং বলরাম উভয়েই বসুদেবের সন্তান ছিলেন। বলরামকে রোহিণীর গর্ভে স্থানান্তরিত করা হয়। রোহিণী ছিলেন বসুদেবের পত্নী কিন্তু রোহিণীকে নন্দ মহারেজর তত্ত্বাবধানে রাখা হয় কংসের অত্যাচারের জন্য।

বসুদেব তখন তাঁকে বললেন, “তোমার অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল এবং একটা পুত্রসন্তান লাভ করার জন্য তুমি অত্যন্ত আকুল হয়ে উঠেছিলে কেননা তোমার কোন পুত্র ছিল না। এখন ভগবানের কৃপায় তুমি এক অপূর্ব সুন্দর পুত্র লাভ করেছ। 
 
আমার মনে হয় যে, এই ঘটনাটি তোমার পক্ষে অত্যন্ত মঙ্গলজনক। ভাই নন্দ, আমি কংসের কারাগারে বন্দী ছিলাম, কিন্তু এখন আমি মুক্ত হয়েছি; তাই আমার মনে হচ্ছে যেন আমি নবজীবন প্রাপ্ত হয়েছি। তোমাকে আবার দর্শন করার কোন আশাই আমার ছিল না।

বসুদেব জিজ্ঞাসা করলেন, “দয়া করে আমাকে বৃন্দাবনবাসীদের সকলের খবর বলো। তোমার অনেক পালিত পশু রয়েছে, তারা সকলে সুখী ত? তারা সকলে যথেষ্ট ঘাস ও জল পাচ্ছে ত? যেখাতে তুমি আছ সেই জায়গাটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ ত?

বসুদেব এইভাবেই প্রশ্ন করলেন, কেননা শ্রীকৃষ্ণের নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি জানতেন যে, কংস এবং তার অনুচরেরা শ্রীকৃষ্ণকে বধ করবার জন্য সমস্ত অসুর এবং রাক্ষসদের পাঠাচ্ছিল। তারা ইতিমধ্যেই স্থির করেছিল যে, শ্রীকৃষ্ণের জন্মের দশ দিনের মধ্যে যত সমস্ত শিশুর জন্ম হয়েছে, তাদের সকলকে হত্যা করতে হবে। বসুদেব যেহেতু শ্রীকৃষ্ণের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন,

সেই কথা শুনে নন্দ মহারাজ বললেন, “প্রিয় বসুদেব, আমি জানি যে, তুমি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছ। কেননা কংস তোমার এবং দেবকীর সক কটি সন্তানকেই হত্যা করেছে। যদিও শেষের সন্তানটি ছিল একটি কন্যা, তবুও কংস তাকে হত্যা করতে পারেনি, এবং সে স্বর্গলোকে ফিরে গেছে। 
 
প্রিয় সখা বসুদেব, তুমি দুঃখিত হয়ো না; আমরা সকলেই অদৃষ্টের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছি। সকলেই তার পূর্বকৃত কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করে থাকে এবং যিনি কর্ম ও তার ফল সম্বন্ধে অবগত, তিনি হচ্ছেন যথার্থ জ্ঞানী। তিনি কখনই কোন কিছুতে বিমর্ষ হন না। সুখ ও দুঃখে তিনি সর্বদাই অবিচলিত থাকেন।

নন্দ মহারাজ যখন ঘরে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন বসুদেবের উপদেশের কথা তাঁর বারবার মনে হতে লাগল। বসুদেব বলেছিলেন, সেদিন কোন উৎপাত হতে পারে। বসুদেব অবশ্যই তাঁর মঙ্গলের জন্য এই উপদেশ দিয়েছিলেন, এবং বসুদেবের বচন কখনও অসত্য হওয়ার কথা নয়। 
 
তাই ভীত চিত্তে তিনি পরমেশ্বর ভগবানকে স্মরণ করতে লাগলেন। বিপদের সময় ভগবানের শরণাপন্ন হওয়া ভক্তের পক্ষে খুবেই স্বাভাবিক, কেননা তার ত’ অন্য কোন আশ্রয় নেই। কোন শিশু যখন বিপদে পড়ে, তখন সে তার পিতা অথবা মাতার শরণ নেয়। তেমনই ভক্ত সব সময়ই পরমেশ্বর ভগবানের শরণাগত। তিনি যখন কোন বিশেষ বিপদের সম্মুখীণ হন, তখন তিনি বারবার ভগবানের স্মরণ করতে থাকেন।

কংসের পূতনা রাক্ষসীকে প্রেরণ 

কংস তার আসুরিক মন্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করার পর পুতনা নামক এক রাক্ষসীকে শহরে, গ্রামে এবং গোচারণভূমিতে সমস্ত শিশুদের হত্যা করতে নির্দেশ দিল। যেখানে ভগবানের নাম সংকীর্তন হয় না, সেইখানেই কেবল এই সমস্ত মায়াবী রাক্ষসীরা তাদের যাদুর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। 
 
শাস্ত্রে বলা হয়েছে, যেখানে হেলাভরেও ভগবানের নাম কীর্তিত হয়, ভুত-প্রেত-পিশাচের উৎপাত এবং নানা রকম দুর্যোগ সেখান থেকে তৎক্ষণাৎ বিদুরিত হয়ে যায়। আর যেখানে ঐকান্তিকভাবে নিষ্ঠাভরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম কীর্তন হয়, সেখানকার ত’ কথাই নেই, বিশেষ করে বৃন্দাবনে, যেখানে পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন।

তাই নন্দ মহারাজের এই আশঙ্কা কেবল শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাঁর স্নেহের প্রকাশ। প্রকৃতপক্ষে, পুতনা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তার থেকে ভয় পাওয়ার কিছুই ছিল না। এই ধরনের পিশাচীদের বলা হয় ‘খেচরী’ অর্থাৎ তারা আকাশে উড়তে পারে। 
 
এই ধরনের পিশাচী-বিদ্যা ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের কোন কোন গহন প্রদেশে আজও কিছু স্ত্রীলোক চর্চা করে থাকে। তারা উপড়ে ফেলা গাছের ডালে করে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে পারে। পূতনা সেই বিদ্যা জানত, সেই জন্য তাকে শ্রীমদ্ভাগবতে ‘খেচরী’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

অনুমতি না নিয়েই  পূতনা গোকুলে নন্দ মহারাজের গৃহে পবেশ করে। এক অতি রূপবতী রমণীর রূপ ধারণ করে সে যশোদা মায়ের ঘরে প্রবেশ করল। পাপিনী পূতনা নানা রকম যাদুবিদ্যা জানত। সেই যাদুবিদ্যার প্রভাবে সে কি অপূর্ব সুন্দরী যুবতীর বেশ ধারণ করল। তার উন্নত নিতম্ব, নিটোল কুচযুগল, কানে দুল এবং কেশপাশে ফুলমালায় বিভূষিতা হয়ে সে এক অপূর্ব সুন্দর রূপ ধারণ করল। তার ক্ষীণ কটিতট তাকে বিশেষভাব সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলেছিল।

মৃদু হাস্যে ভ্রু-ভঙ্গি করে সে সকলের দিকে তাকাতে লাগল, এবং সমস্ত ব্রজবাসীরাই তার রূপে মোহিত হল। সরল গোপিকারা মনে করল যে, পদ্মফুল হাতে স্বয়ং লক্ষীদেবীই যেন বৃন্দাবনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের মনে হল লক্ষ্মীদেবী যেন তাঁর পতি শ্রীকৃষ্ণের দর্শন করতে এসেছেন। 
 
পূতনার অপূর্ব সুন্দর রূপ দর্শন করে কেউই তাকে বাধা দিল না, এবং সে নির্বিঘ্নে নন্দ মহারাজের গৃহে প্রবেশ করল। শিশুঘাতিনী পূতনা দেখল যে, শ্রীকৃষ্ণ একটা শয্যার উপরে শুয়ে আছে এবং সে বুঝতে পারল যে, সেই ‍শিশুটির মধ্যে এক অজেয় শক্তি নিহিত রয়েছে। পুতনা ভাবল, “এই শিশুটি এত শক্তিশালী যে নিমেষের মধ্যে সে সমস্ত ব্রহ্মান্ডকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।”

পূতনার এই চিন্তাধারা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকলের হৃদয়ে বিরাজ করছেন। ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যে, তিনিই স্মৃতি, জ্ঞান, এবং বুদ্ধি দান করেন, আবার তিনিই তা অপহরণ করে নেন। পূতনা বুঝতে পেরেছিল যে, নন্দ মহারাজের গৃহে সে যে শিশুটিকে দর্শন করছিল, তিনিই হচ্ছেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান। 
 
যদিও তিনি একটি শিশুর রূপ পরিগ্রহ করে পালঙ্কের উপর শুয়ে আছে, কিন্তু তা বলে তিনি শক্তিহীন নন। জড়বাদীদের যে ধারণা- যোগ, তপস্যা ইত্যাদি করে কোন জীবই কখনও ভগবান হতে পারে না। ভগবান সর্ব অবস্থাতেই ভগবান। শিশুরূপেও শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণ বিকশিত নব যৌবনসম্পন্ন শ্রীকৃষ্ণের মতোই সর্বশক্তিমান।

মায়াবাদী-মতবাদ অনুসারে জীব পূর্বে ভগবান ছিল কিন্তু এখন মায়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছেন। তাই তারা বলে যে, বর্তমানে তারা ভগবান নয়, কিন্তু যখন তারা মায়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হবে, তখন তারা আবার ভগবান হয়ে যাবে। এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। জীব হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের অণু সদৃশ বিভিন্ন অংশ । অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যেমন অগ্নির বিভিন্ন অংশ, জীবও তেমনই ভগবানের বিভিন্ন অংশ, সে কখনই শ্রীকৃষ্ণরূপী বরাট অগ্নি হতে পারে না। বসুদেব এবং দেবকীর শিশু সন্তানরূপে আবির্ভূত হলেও শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণ পুরুষোত্তম পরমেশ্বর ভগবান।

একটি ছোট্র শিশুর মতো শ্রীকৃষ্ণ তাঁর চোখ দুটি বন্ধ করলেন, যেন তিনি পূতনার মুখ দর্শন করতে চাইলেন না। ভগবদ্ভক্তেরা বিভিন্নভাবে শ্রীকৃষ্ণের এই চোখ বন্ধ করার কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। অনেকে বলে যে, অসংখ্য শিশুঘাতিনী পূতনা যে এখন তাঁকে হত্যা করবার অভিপ্রায় নিয়ে এসেছে, সেই পাপিনী পূতনার মুখ দর্শন করতে চাননি বলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর চোথ বন্ধ করেছিলেন।

কেউ কেউ আবার বলেন যে, তিনি অস্বাভাবিক কিছু একটা করতে যাচ্ছিলেন, তাই তিনি চোখ বন্ধ করেছিলেন, যাতে পূতনা ভয় না পায়।

অনেকে আবার বলেন যে, অসুরদের সংহার করবার জন্য এবং ভক্তদের রক্ষা করবার জন্য শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়েছিলেন, যে কথা ভগবদগীতায় বর্ণিত হয়েছে, ‘পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।’ প্রথম যে অসুরটিকে তিনি সংহার করতে যাচ্ছিলেন সে হচ্ছে একটি স্ত্রীলোক, এবং বৈদিক শাস্ত্রের নিদের্শ অনুসারে নিষিদ্ধ হলেও শ্রীকৃষ্ণ পূতনাকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাই তিনি চোখ বন্ধ না করে পারেনি।

আবার কেউ কেউ বলেন যে, পূতনাকে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ধাত্রী বলে মনে করেছিলেন, তাই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর চোখ বন্ধ করেছিলেন। পূতনা এসেছিল ভগবানকে তার স্তন্যদান করবার জন্য। শ্রীকৃষ্ণ এতই কৃপাময় যে, তিনি যদিও জানতেন যে, পূতনা তাঁকে হত্যা করার অভিপ্রায় নিয়ে এসেছে, কিন্তু তবুও তিনি তাকে তাঁর ধাত্রী বা মাতৃরূপে গ্রহণ করেছিলেন। বৈদিক নির্দেশ অনুসারে মাতা সাত প্রকারের-গর্ভধারিণী মাতা, গুরুপত্নী, রাণী, ব্রাহ্মণ-পত্নী, গাভী, ধাত্রী এবং ধরিত্রী। পূতনা যেহেতু শ্রীকৃষ্ণকে কোলে নিয়ে তাঁকে তার বুকের দুধ পান করবার জন্য স্তন দান করেছিল, তাই শ্রীকৃষ্ণ তাকে মাতৃরূপে গ্রহণ করেছিলেন। এটাও তাঁর চোখ বন্ধ করার আরেকটা কারণ; কনেনা তিনি তাঁর ধাত্রী মতাকে সংহার করতে যাচ্ছিলেন। কিন্ত তাঁর এই ধাত্রীমাতাকে সংহার তাঁর গর্ভধারিণী মাতা বা লালন-পালনকারী মতো যশোদার প্রতি তাঁর ভালবাসার থেকে ভিন্ন নয়।
Sree Krishna

বৈদিক শাস্ত্র থেকে আমরা জানতে পরি যে, শ্রীকৃষ্ণ পূতনাকে মাতৃপূপে গ্রহণ করেছিলেন এবং মা যশোদার মতো বাৎসল্যরসে তাঁরে প্রতি অনুরক্ত হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছিলেন। পূতনাকে তিনি জড় জগদের বন্ধন থেকে মুক্তি দান করেছিলেন। শশু শ্রীকৃষ্ণ যখন জানত না যে, সে স্বয়ং মৃত্যকে তার কোলে তুলে নিচ্ছে। কোন মানুষ যখন একটা দড়ি মনে করে একটা সাপকে তুলে নেয়, তখন তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়, তেমনই শ্রীকৃষ্ণের কাছে আসার আগে পূতনা অসংখ্য শিশু হত্যা করেছিল কিন্তু তথন সে তার অবশ্যম্ভবী মৃত্যু-স্বরূপ কালসর্পকে তার কোলে তুলে নিচ্ছিল।

পূতনা যখন শিশু শ্রীকৃষ্ণকে তার কোলে তুলে নিচ্ছিল, তখন রোহিণী এবং যশোদা উভয়েই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাকে নিষেধ করেননি, কেননা সে এত সুন্দর সজ্জায় ভূষিতা ছিল আর তা ছাড়া শ্রীকৃষ্ণের প্রতি সে যে বাৎসল্য স্নেহ প্রদর্শন করেছিল, তাতে তাঁদের মনে কোন সন্দেহ স্থান পায়নি। তাঁরা বুঝতে পারেননি যে, সে একটা সুন্দর খাপে ঢাকা তলোয়ার। পূতনা তার স্তনে অতি তীব্র বিষ লাগিয়ে এসেছিল এবং শিশু শ্রীকৃষ্ণকে কোলে নিয়েই সে তৎক্ষণাৎ তাঁকে তার স্তন দান করল, যাতে সেই স্তন্য পান করা মাত্রই তাঁর মৃত্যু হয়। শ্রীকৃষ্ণ ক্রুদ্ধভাবে তৎক্ষণাৎ সেই স্তন করে দুগ্ধরূপী বিষের সঙ্গে সেই রাক্ষসীর প্রণবায়ুও শোষণ করে নিল।

শ্রীকৃষ্ণ এতই কৃপাময় যে, সেই রাক্ষসী যেহেতু তার বুকের দুধ দান করবার জন্য তাঁর কাছে এসেছিল, তাই তিনি তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছিলেন এবং তার সেই কার্যকলাপ মাতৃবৎ বলে গ্রহণ করেছিলেন। আর তার বীভৎস্য কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য তাকে তৎক্ষণাৎ সংহার করেছিলেন। আর শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা নিহত হওয়ার ফলে সে মুক্তি লাভ করেছিল।

শ্রীকৃষ্ণ যখন তার প্রাণবায়ু শুষে নিল, তখন পূতনা হাত-পা ছড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর্তনাদ করতে লাগল, “ছেড়ে দাও“ আমাকে ছেড়ে দাও!” সে বিকটভাবে আর্তনাদ করতে করতে যখন তার মৃত্যু হল, তখন চারদিকে এক প্রচন্ড শব্দ হল, নদ-নদী, গিরি, তরু, ধরণী কেঁপে উঠল। লোকেরা মনে করল যেন চারদিকে বজ্রপাত হচ্ছে। এইভাবে পূতনা রাক্ষসীর বিভীষিকা সমাপ্ত হল।

তখন বিরাট রাক্ষসীর রূপ প্রকাশ পেল। তার হাত-পা ছড়িয়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল এবং তার মুখ হা হয়ে রইল। ইন্দ্রের বজ্রঘাতে বৃত্রাসুরের যেভাবে পতন হয়েছিল, পতনাও ‍ঠিক সেইভাবে ভূপতিত হল। তার মাথার লম্বা চুল সারা শরীরে ছড়িয়ে রইল। 
 
তার বিশাল শরীরের পতনে ফলে ছয়-ক্রোশ জায়গা জুড়ে সমস্ত গাছপালা বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। তার সেই অতি বিশাল শরীর দেখে সকলেই বিষ্ময়াভিভুত হয়ে পড়েছিল। 
 
তার মুখের দাঁতগুলি ছিল লাঙ্গলের ফলার মতো তীক্ষ্ণ, নাসারম্ব্র পর্বত-গহ্বরের মতো গভীর, তার স্তনদ্বয় গিরিশিখরচ্যুত শিলাখন্ডের মতো গভীর, তার কেশরাশি বিক্ষিপ্ত এবং তাম্রবর্ণ, চোখ দু’টি অন্ধকুপের মতো গভীর, জঙ্ঘদ্বয় নদীর দু’টি তটের মতো, তার হাত দু’টি সেতুর মতো এবং তার উদর জলশূন্য হ্রদের মতো মনে হচ্ছিল। তার পতনের ভীষণ শব্দে গোপ এবং গোপিকাদের কর্ণ বিদীর্ণ হল এবং প্রচন্ডভাবে হৃৎকম্প হতে লাগল।

গোপিকারা যখন দেখলেন যে, শিশু শ্রীকৃষ্ণ নির্ভয়ে সেই মৃতা রাক্ষসীর বক্ষস্থলে খেলা করছে, তখন শীঘ্র তাঁরা তাঁকে সেখান থেকে তুলে নিলে। মা যশোদা, রোহিণী এবং অন্যান্য বয়স্কা গোপিকারা তৎক্ষণাৎ সব রকমের বিঘ্ন থেকে শিশু শ্রীকৃষ্ণকে রক্ষা করার জন্য গো-পুচ্ছ ভ্রমণ অর্থাৎ গরুর লেজ ধরে নিকটস্থ পর্বত প্রদক্ষিণ করলেন। 
 
গোমুত্র এবং গোধূলি দ্বারা শিশুকে স্নান করালেন এবং গোময় দিয়ে তাঁর দ্বাদশ অঙ্গে তিলক দিলেন, যাতে ভবিষ্যতে তাঁর আর কোন অমঙ্গল না হয়। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি, মানব সমাজে গাভী কত প্রয়োজনীয়। 
 
শ্রীকৃষ্ণের দিব্য শরীরের কোন প্রতিক্ষরক্ষার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু গাভীর উপযোগীতা এবং প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভগবান গোমুত্র এবং গোধূলিতে স্নান হলেন এবং অঙ্গে গোময় লেপন করলেন।

এই পবিত্র সংস্কারের পর মা যশোদা এবং রোহিণীর নেতৃত্বে গোপিকারা শ্রীকৃষ্ণের শরীরকে সব রকমের বিঘ্ন থেকে রক্ষা করার জন্য ভগবানের দ্বাদশ নাম উচ্চারণ করলেন। তাঁরা তাঁদের হাত এবং পা ধুয়ে তিনবার আচমন করলেন, যেটি হচ্ছে মন্ত্র উচ্চারণের পূর্বের বিধি। 
 
তাঁরা উচ্চারণ করলেন, “মণিদান তোমার জানুদ্বয় রক্ষা করুন’ যজ্ঞ তোমার ঊরুদ্বয় রক্ষা করুন. অচ্যুত তোমার কটিতট রক্ষা করুণ’ হয়গ্রীব তোমার জঠরদেশ রক্ষা করুন, কেশব তোমার হৃদয় রক্ষা করুন, বিষ্ণু তোমার বাহুযুগল রক্ষা করুন, 
 
ঈশ্বর তোমার মস্তক রক্ষা করুন, চক্রধর তোমার সম্মুখভাগ রক্ষা করুন, গদাধর তোমার পশ্চাদভাগ রক্ষা করুন, ধনুর্ধারী মধুসূদন তোমার দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করুন, শঙ্খধারী তোমার বামপার্শ্ব রক্ষা করুন; উপেন্দ্র তোমার উপরিভাগ রক্ষা করুন; তর্ক্ষ ভূতলে তোমাকে রক্ষা করুন; 
 
হলধর তোমাকে চতুর্দিক থেকে রক্ষা করুন; হৃষীকেশ তোমার ইন্দ্রিয়সকল রক্ষা করুন; নারায়ণ তোমার প্রাণবায়ু রক্ষা করুন; এবং শ্বেতদ্বীপাধিপতি নারায়ণ তোমার চিত্তকে রক্ষা করুন; এবং যোগেশ্বর তোমার মনকে রক্ষা করুন; পৃশ্নিগর্ভ তোমার বুদ্ধি রক্ষা করুন; 
 
এবং পরমেশ্বর তোমার আত্মাকে রক্ষা করুন; এবং তুমি যখন ঘুমিয়ে থাক; তখন মাধব, তোমাকে রক্ষা করুন। গমনকালে বৈকুন্ঠ তোমাকে পতন থেকে রক্ষা করুন, উপবেশনকালে শ্রীপতি তোমাকে রক্ষা করুন এবং ভোজন সময়ে যজ্ঞেশ্বর তোমাকে রক্ষা করুন।”

এইভাবে মা যশোদা শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন অঙ্গ রক্ষা করার জন্য বিষ্ণুর বিভিন্ন নাম কীর্তন করতে লাগলেন। মা যশোদার স্থির বিশ্বাস ছিল যে, ডাকিনী, যাতুধানী, কুষ্মান্ড, যক্ষ, রাক্ষস, বিনায়ক, কোটরা, রেবতী, জ্যেষ্ঠা, পূতনা, মাতৃকা, উন্মাদ প্রভৃতি ভূত-প্রেত পিশাচীর প্রভাব থেকে শ্রীকৃষ্ণকে রক্ষা করতে হবে। 
 
এদের প্রভাবে মানুষ তাদের অস্তিত্বের কথা ভুলে যায়। কখনও এরা স্বপ্নেও মহা উৎপাতের সৃষ্টি করে; কখনও এরা বৃদ্ধা স্ব্রীলোকের রূপে এসে শিশুদের রক্তপান করে। কিন্তু যেখানে ভগবানের নাম কীর্তন হয়, সেখানে তারা থাকতে পারে না। 
 
গাভী এবং ভগবানে নামের মাহাত্ম্য এবং বৈদিক নির্দেশ সম্বন্ধে মা যশোদার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল, তাই তিনি তাঁর শিশুপুত্র শ্রীকৃষ্ণকে রক্ষা করার জন্য সম্পূর্ণভাবে গাভীর উপর নির্ভর করেছিলেন এবং বিষ্ণুর নামের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। 
 
তিনি বিষ্ণুর দিব্য নামসমূহ কীর্তন করেছিলেন, যাতে তিনি তাঁর শিশুপুত্রটিকে রক্ষা করেন। বৈদিক সংস্কৃতি অনাদিকাল থেকে গো-রক্ষা এবং ভগবানের নামকীর্তনের সুযোগ গ্রহণ করে আসছে। যাঁরা বৈদিক প্রথা অনুসরণ করে আসছেন, বিশেষ করে গৃহস্থরা, তাঁরা তাঁদের বাড়িতে অন্ততঃপক্ষে বারটি গাভী পালন করেন এবং শ্রীবিষ্ণুর অর্চাবিগ্রহের উপাসনা করেন।

বৃন্দাবনের বয়স্কা গোপিকারা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভালবাসায় এতই মগ্ন ছিলেন যে, তাঁকে রক্ষা করার জন্য তারা আকুল হয়ে উঠেছিলেন, যদিও তাঁর রক্ষার কোন প্রয়োজন হয় না; কেননা ইতিমধ্যেই তিনি নিজেকে রক্ষা করেছেন। 
 
তারা জানতেন না যে, শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান, এবং এখন তিনি একটি শিশুরূপে তাদের সঙ্গে খেলা করছেন। শ্রীকৃষ্ণকে রক্ষা করার সমস্ত অনুষ্ঠানগুলি সম্পন্ন হলে পরে মা যশোদা শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর দুধ পান করার জন্য স্তন দান করলেন। 
 
বিষ্ণু মন্ত্র উচ্চারণ করার পর মা যশোদার মনে হল যে, তাঁর শিশুসন্তানটি এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইতিমধ্যে যে সমস্ত গোপেরা রাজাকে কর দেওয়ার জন্য মথুরায় গিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরে এসে পূতনার বিশাল শরীর দর্শন করে অত্যন্ত বিস্মত হলেন।

নন্দ মহারাজ বসুদেবের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ করলেন এবং ভাবলেন, তিনি নিশ্চয়ই একজন মহান ঋষি এবং যোগী; তা না হলে কি করে তিনি মথুরাতে থেকে ব্রজের এই উৎপাতের কথা বলতে পারলেন? তারপর ব্রজবাসীরা সেই রাক্ষসীর দেহ কুঠার দিয়ে টুকরো করে কেটে পৃথক পৃথকভাবে দগ্ধ করলেন। 
 
তথন সুগন্ধযুক্ত ধুম্র উদগীরণ হচ্ছিল। এর থেকে বোঝা যায় যে, পূতনা তার সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে দিব্য শরীর লাভ করেছিল। পরমেশ্বর ভগবান যে পরম মঙ্গলময়, তা এর থেকে বোঝা যায়; পূতনা এসেছিল শ্রীকৃষ্ণকে হত্যা করবার জন্য, কিন্তু যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ পূতনার স্তন পান করেছিলেন, তাই পূতনা তার সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছিল এবং তার মৃতদেহটিও দিব্যভাব লাভ করেছিল। 
 
তার একমাত্র কাজ ছিল শিশু হত্যা করা। সে ছিল রক্তপায়িনী, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বিদ্বেষযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সে মুক্তিলাভ করেছিল, কেননা সে শ্রীকৃষ্ণকে তার স্তন্যদান করেছিল। সুতরাং যাঁরা বিশ্বাস ও ভক্তি সহকারে পিতা ও মাতার মতো বাৎসল্যরসে ভগবানকে স্নেহ করেনম তাঁরা যে কত সৌভাগ্যশালী, তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি।

শুদ্ধ ভক্ত সর্বদাই গভীর স্নেহ ও ভালবাসা সহকারে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন। কেননা তিনি জানেন যে, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। তিনিই হচ্ছেন সমস্ত জীবের পরমাত্মা। তাই বলা হয় যে, কেউ যদি ভগবানের সেবায় অল্প একটু প্রয়াসও করে, তা হলে তার যে লাভ হয়, তা কল্পনারও অতীত। সেই সম্বন্ধে ভগবদগীতায় বলা হয়েছে, “স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ” অর্থাৎ অল্প একটু ভগবৎ-সেবা আমাদের মহাভয় থেকে রক্ষা করে।

ভগবদ্ভক্তি এতই অপূর্ব যে, জ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞাতসারে যদি ভগবানের একটু সেবাও আমরা করে থাকি, তার ফলে যে মহৎ লাভ হয়, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। একটা গাছের ফুল নিয়ে যদি আমরা শ্রীকৃষ্ণের পূজায় অর্পণ করি, তা হলে সেই গাছটিরও প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। এইভাবে শ্রীকৃষ্ণের পূজায় যখন ফুল অর্পণ করা হয়, তখন  যে সমস্ত গাছগুলিতে সেই ফল-ফুলগুলো ধরেছিল, অজ্ঞাতসারে তরাও সুকৃতি অর্জন করে। তাই অর্চনের প্রভাবে সকলেরই মঙ্গল হয়।

শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মা, শিব আদি মহান দেবতাদেরও উপাস্য আর পূতনা এতই সৌভাগ্যশালী ছিল যে, তার ক্রোড়ে তিনি একটি শিশুরূপে খেলা করেছিলেন। মুনি-ঋষিরা শ্রীকৃষ্ণের যে চরণকমলের ধ্যান করেন, তা পূতনার শরীর স্পর্শ করেছিল। মানুষ শ্রীকৃষ্ণকে ভক্তিভরে নানা রকম আহার্য নিবেদন করে, শ্রীকৃষ্ণ স্বেচ্ছায় পূতনার স্তন্যপান করেছিলেন। ভক্তরা তাই প্রার্থনা করেন যে, বৈরীভাবাপন্ন হয়ে শ্রীকৃষ্ণকে কিছু দান করার ফলে পূতনা যদি এই রকমের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, তা হলে ভক্তিভরে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করলে যে কি লাভ হবে, সেটা কে কল্পনা করতে পারে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

তাই শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অহৈতুকী ভক্তিযুক্তি হওয়া হচিত। যদিও পূতনা ছিল রাক্ষসী, তবুও সে পরমেশ্বর ভগবানের মাতৃপদ প্রাপ্ত হয়েছিল। এর থেকে বোঝা যায়, যে সমস্ত গোপিকারা এবং গাভীরা শ্রীকৃষ্ণকে দুগ্ধদান করেছিলেন, তাঁরা অবশ্যই অপ্রাকৃত জগতে প্রবিষ্ট হয়েছিলেন। 
 
মুক্তি থেকে শুরু করে আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু, শ্রীকৃষ্ণ সে সমস্ত যে কাউকে দান করতে পারেন। তাই, শ্রীকৃষ্ণ যখন পূতনার স্তন্যপান করলেন, তখন পূতনার মুক্তি সম্বন্ধে কোন সন্দেহই থাকতে পারে না। তাই শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত গোপিকারা যে মুক্তিলাভ করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে সেন্দহ কি? যে সমস্ত গোপ-গোপিকা এবং গাভী গভীর প্রীতি ও স্নেহ সহকারে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেছিলেন, তারা সকলেই জড় জগতের ক্লেশদায়ক অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন।

পূতনার চিতার আগুনের ধোঁয়ার সুগন্ধ আঘ্রাণ করে ব্রজবাসীরা বিস্ময়ান্বিত হয়ে একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, এই সৌরভ কোথা থেকে আসছে? অবশেষে তাঁরা বুঝতে পারলেন যে, এই সুবাস পূতনার দগ্ধ শরীর থেকে আসছে। তাঁরা সকলে শ্রীকৃষ্ণকে প্রাণের থেকেও অধিক ভালবাসতেন। তাই পূতনাবধের পর তাঁরা শ্রীকৃষ্ণকে অশেষ আশীর্বাদ করলেন। পূতনাকে জ্বালাবার পর নন্দ মহারাজ ঘরে ফিরে এলেন এবং শিশু শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর কোলে বসিয়ে পুনঃ পুনঃ তাঁর মস্তক আঘ্রাণ করতে লাগলেন। এইভাবে তিনি শ্রীকৃষ্ণের সুরক্ষা সম্বন্ধে আশ্বস্ত হলেন।

শ্রীল শুকদেব গোস্বামী শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা পূতনা বধ সংবাদ শ্রবণকারী সমস্ত শ্রোতাদের আশীর্বাদ প্রদান করলেন। এই সমস্ত শ্রোতারা অবশ্যই গোবিন্দের শ্রীচরণারবিন্দে অহৈতুকী এবং অপ্রতিহতা ভক্তি লাভ করবেন


আরও পড়ুন 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url