রাসলীলার সম্পূর্ণ বর্ণনা-কৃষ্ণ কথা-শ্রীমদ্ভাগবত
রাসলীলার সম্পূর্ণ বর্ণনা-কৃষ্ণ কথা
এইভাবে শ্রীকৃষ্ণের সান্ত্বনা বাণী শুনে গােপীরা অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন। শুধু তার কথা শুনেই নয়, পরমেশ্বর ভগবানের করকমল এবং তার শ্রীপাদপদ্ম স্পর্শ করে তাঁদের বিরহজনিত গভীর বেদনা প্রশমিত হল।
তারপর পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই গােপীদের সঙ্গে তাঁর রাসনৃত্য শুরু করলেন। কেউ যখন অনেক মেয়েদের মাঝখানে নাচে, সেই নৃত্যকে বলা হয় রাসনৃত্য।
এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ ত্রিভুবনের সর্বশ্রেষ্ঠা সুন্দরী এবং সৌভাগ্যশালিনী রমণীদের সঙ্গে নাচতে শুরু করলেন। ব্রজগােপিকারা যারা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট ছিলেন, তারা তার হাত ধরে নাচতে লাগলেন।
শ্রীকৃষ্ণের এই রাসনৃত্যকে কখনই জড় জগতের কোন রকমের নৃত্যের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এই রাসনৃত্য সম্পূর্ণ চিন্ময়। সেই কথাটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যােগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, নিজেকে বহুরূপে বিস্তার করে প্রতিটি গােপিকার সঙ্গে নৃত্য করেছিলেন।
কৃষ্ণ দু’জন গােপিকার মাঝখানে বিরাজ করে, তাদের কণ্ঠ ধারণ করে তাঁদের সঙ্গে নাচতে লাগলেন। শ্রীকৃষ্ণ যে তাঁর অচিন্ত্য শক্তির প্রভাবে বহু মূর্তিতে প্রকাশিত হয়েছেন তা গােপীরা বুঝতে পারলেন না।
কেননা তাদের প্রত্যেকেরই মনে হলাে, কৃষ্ণ যেন একলা তাদের সঙ্গে নাচছেন। গােপীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের এই অপূর্ব নৃত্য দর্শন করবার জন্য সেই রাসমণ্ডলীর উপরিভাগে আকাশে বিমানে চড়ে স্বর্গের দেবতারা এসে উপস্থিত হলেন। গন্ধর্ব এবং কিন্নরেরা গান করতে লাগলেন এবং সস্ত্রীক দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন।
গােপীদের সঙ্গে কৃষ্ণের সেই নাচে, তাদের নূপুর, অলঙ্কার ও চুড়ির শব্দে এক অপূর্ব সুন্দর সঙ্গীতের সৃষ্টি হল। কৃষ্ণকে তখন একটি সােনার রত্নহারের মাঝে নীলকান্ত মণির মতাে দেখাচ্ছিল। কৃষ্ণের সঙ্গে গােপীদের সেই নৃত্যের সময় তাঁদের অপূর্ব সুন্দর দেহসৌষ্ঠব প্রদর্শিত হয়েছিল।
তাদের পদবিক্ষেপ, কর সঞ্চালন, সুমধুর হাস্যের সঙ্গে ভ্রু-বিলাস, চঞ্চল স্তনবসন, তাদের কানের কুন্তল, তাদের পুষ্পশােভিত কেশরাশি—কৃষ্ণের গুণকীর্তন করতে করতে নাচবার সময় সেগুলিকে মেঘ, বিদ্যুৎ, বজ্র এবং তুষারের মতাে মনে হল।
কৃষ্ণকে দেখে মনে হল ঠিক যেন একটি মেঘমালা, তাদের সঙ্গীতের ধ্বনি ছিল বজ্রের মতাে, গােপিকাদের সৌন্দর্য ছিল বিদ্যুতের মতাে এবং তাদের মুখের স্বেদবিন্দুগুলি ঠিক তুষারের মতাে মনে হল। এইভাবে কৃষ্ণ এবং গােপীরা উভয়েই নৃত্যমগ্ন হলেন।
কৃষ্ণকে আরও বেশি করে উপভােগ করার কামনায় গােপীদের কণ্ঠ আরক্তিম হয়ে উঠল। তাদের তৃপ্তিসাধনের জন্য কৃষ্ণ তাদের সঙ্গীতের তালে তালে হাততালি দিতে লাগলেন। প্রকৃতপক্ষে, সমস্ত জগৎই কৃষ্ণের সঙ্গীতে পূর্ণ, কিন্তু বিভিন্ন জীব বিভিন্ন ভাবে সেই সঙ্গীতকে উপলব্ধি করে থাকে।
ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে—“যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে। কৃষ্ণ নৃত্য করছেন এবং প্রতিটি জীবও নৃত্য করছে, তবে অপ্রাকৃত জগতের নৃত্য এবং এই প্রাকৃত জগতের নৃত্য সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন।
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের রচয়িতা শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গােস্বামী বলেছেন, একেলা ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য। যারে যৈছে নাচায় সে তৈছে করে নৃত্য ॥
সকলেই কৃষ্ণের নৃত্যের অনুকরণ করার চেষ্টা করছে। যারা কৃষ্ণভাবনাময় কৃষ্ণভক্ত, তারা যথাযথভাবে কৃষ্ণের সেই নৃত্যে সাড়া দিতে পারেন; তারা স্বাধীনভাবে নাচতে চেষ্টা করেন না। কিন্তু যারা জড় জগতে আবদ্ধ হয়ে আছে, তারা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই নৃত্যের অনুকরণ করতে চেষ্টা করে।
জড় জগতের বন্ধনে আবদ্ধ বদ্ধ জীবেরা শ্রীকৃষ্ণের মায়ার পরিচালনায় নৃত্য করে এবং মনে করে যে, তারা কৃষ্ণের সমপর্যায়ভুক্ত। কিন্তু জীব যতই পরমেশ্বর ভগবান হওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, সে কোনদিনও ভগবানের সমপর্যায়ভুক্ত হতে পারে না । কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত হলে এই ভ্রান্তি দূর হয়ে যায়, কেননা কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত মানুষ জানেন যে, কৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং অন্য সকলেই হচ্ছেন তার ভৃত্য।
কৃষ্ণের প্রীতিসাধনের জন্যই নৃত্য করা উচিত, পরমেশ্বর ভগবানের অনুকরণ করে তার সমান হওয়ার জন্য নয়। গােপীরা কৃষ্ণের প্রীতিসাধন করতে চেয়েছিলেন, এবং তাই কৃষ্ণের সঙ্গীতে তারাও সুর মিলিয়েছিলেন এবং "সাধু, সাধু!” বলে তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
কখনও কখনও তারা তার প্রীতি উৎপাদনের জন্য মধুর সুরে গান গেয়েছিলেন এবং তিনিও সেই সঙ্গীতে সাড়া দিয়ে তাদের প্রশংসা করেছিলেন।
সেই নৃত্যের ফলে কয়েকজন গােপী যখন পরিশ্রান্ত হয়ে পড়লেন, তখন তারা কৃষ্ণের কাধে হাত রাখলেন, তখন তাঁদের কেশপাশ শিথিল হল এবং তাদের কবরীর ফুল মাটিতে ঝরে পড়ল।
তারা যখন কৃষ্ণের কাধে হাত রাখলেন, তখন তারা তার অঙ্গের চন্দন, পদ্ম এবং অন্যান্য সুবাসিত ফুলের সৌরভ আঘ্রাণ করে পুলকাঙ্গী হয়ে তাকে চুম্বন করতে লাগলেন। কোন কোন গােপী তাদের কপােল দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের কপােল স্পর্শ করলেন এবং কৃষ্ণ তখন তাদের মুখে চর্বিত তাম্বুল প্রদান করলেন, যা তারা চুম্বনের গভীর আনন্দের সঙ্গে বিনিময় করলেন।
বহুক্ষণ ধরে এইভাবে নৃত্যগীত করার ফলে গােপীরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। তখন তারা তাঁদের শ্রান্তি দূর করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের করকমল তাঁদের পীন পরােধকের উপর ধারণ করলেন। শ্রীকৃষ্ণের করকমল এবং গােপীদের স্তন, উভয়ই নিত্য মঙ্গলময় এবং অপ্রাকৃত।
এইভাবে গােপীরা লক্ষ্মীর অতি প্রিয় শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গসুখ উপভােগ করে ভুলে গেলেন যে, এই পৃথিবীতে তাদের অন্য কোন পতি আছে, এবং কৃষ্ণের বাহুযুগলের আলিঙ্গনে এবং তার সঙ্গে নৃত্য এবং গীতের সৌভাগ্য অর্জনে তারা সব কিছু ভুলে গেলেন।
এইভাবে শ্রীমদ্ভাগবতে রাসলীলায় শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে নৃত্যপরায়ণা গােপীদের সৌন্দর্য বর্ণিত হয়েছে। তাদের কানের উপর পদ্মফুল ছিল এবং তাদের মুখমণ্ডল চন্দন শােভিত ছিল। তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখে তিলক এবং স্বেদবিন্দু শোভা পাচ্ছিল। তাদের পায়ের নুপুর এবং হাতের বলয় থেকে অতি মধুর কিঙ্কিনী শব্দ উথিত হচ্ছিল। তাদের মাথার চুল থেকে ফুল ঝরে পড়ছিল কৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মের উপর।
এবং শ্রীকৃষ্ণ তখন অত্যন্ত তৃপ্ত হয়েছিলেন। ব্রহ্মসংহিতায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, সমস্ত গােপিকারা হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তির প্রকাশ। তাদের শ্রীঅঙ্গ তার হস্তের দ্বারা স্পর্শ করে এবং তাদের অতি মনােরম চোখের দিকে তাকিয়ে শ্রীকৃষ্ণ গােপিকাদের উপভােগ করেছিলেন—ঠিক যেভাবে শিশু দর্পণে তার নিজের প্রতিবিম্বের সঙ্গে খেলা করে।
শ্রীকৃষ্ণ যখন গােপিকাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ স্পর্শ করেছিলেন, গােপিকারা তখন অনুভব করেছিলেন তারা যেন এক অপ্রাকৃত শক্তির দ্বারা আবিষ্ট হয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গস্পর্শের পরমানন্দে তাদের ইন্দ্রিয়সমূহ বিবশ হওয়ায় তাদের কবরীস্থিত। পুষ্পমাল্য স্বলিত হয়ে পড়ল, তাদের কেশদাম, পরিধানের বস্ত্র তারা আর আগের মতাে অনায়াসে ধারণ করতে পারলেন না।
শ্রীকৃষ্ণ যখন রাসনৃত্যে ব্রজগােপিকাদের সঙ্গসুখ আস্বাদন করছিলেন, তখন স্বর্গের বিস্ময়াবিষ্ট দেবতারা তাদের বধূসহ সেই অপূর্ব নৃত্য দর্শন করার জন্য গগনমার্গে সমবেত হলেন; সেই নৃত্য দর্শন করে কামবাণে পীড়িত হয়ে চন্দ্র বিস্ময়ে হতবাক হলেন।
ব্রজগােপিকারা কাত্যায়নী দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণকে তাদের পতিরূপে পাওয়ার জন্য; শ্রীকৃষ্ণ তাই যতজন গােপিকা ছিলেন। ততটি রূপে নিজেকে প্রকাশিত করে পতির মতাে তাঁদের সঙ্গসুখ উপভােগ করে তাদের মনােবাসনা পূর্ণ করেছিলেন।
শ্রীল শুকদেব গােস্বামী বলেছেন যে, কৃষ্ণ হচ্ছেন আত্মারাম—তিনি সম্পূর্ণভাবে আত্মতৃপ্ত। তাই সুখ উপভােগের জন্য তার অপরের সঙ্গের প্রয়ােজন হয় না।
কিন্তু ব্রজগােপিকারা যেহেতু তাকে পতিরূপে পাওয়ার বাসনা করেছিলেন, তাই তিনি তাদের সেই বাসনা পূর্ণ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ যখন দেখলেন যে, গােপিকারা তাঁর সঙ্গে নৃত্য করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তিনি তখন তাদের শ্রান্তি দুর করার জন্য তার পরম সুখকর হাতের দ্বারা প্রীতি সহকারে গােপীদের মুখমণ্ডল মার্জনা করে দিলেন।
গােপিকারা তখন প্রেমভরে তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের পরম মঙ্গলময় হস্তস্পর্শে তারা পরমানন্দে মগ্ন হয়েছিলেন। তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখমণ্ডল অপূর্ব সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল এবং তারা তখন দিব্য আনন্দে মগ্ন হয়ে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা কীর্তন করছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্তরূপে গােপিকারা যতই শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গসুখ উপভােগ করলেন, ততই তারা তার মহিমা উপলব্ধি করলেন; এইভাবেই শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে তাদের প্রেমের বিনিময় হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণের দিব্য লীলাসমূহ কীর্তন করে তারা শ্রীকৃষ্ণকে আনন্দ দান করার চেষ্টা করেছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান, সমস্ত ঈশ্বরের পরম ঈশ্বর এবং তাদের প্রতি তিনি অসীম করুণা প্রদর্শন করেছিলেন, সেজন্য তারা তার আরাধনা করতে চেয়েছিলেন। রাসনিত্যজনিত শ্রান্তি দূর করবার জন্য গােপিকাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ যমুনার জলে প্রবেশ করলেন।
শ্রীকৃষ্ণকে আলিঙ্গন করার ফলে গােপিকাদের গলার পদ্মফুলের মালা দলিত হয়েছিল এবং তাদের বক্ষের কুমকুমের রঙে ফুলগুলি রঞ্জিত হয়েছিল।
ভ্রমরেরা সেই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য গুঞ্জন করতে করতে সেগুলির চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল। গজরাজ যেভাবে হস্তিনীদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে সরােবরে প্রবেশ করে, শ্রীকৃষ্ণও তেমনই গােপিকাদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে যমুনার জলে প্রবেশ করলেন।
পরস্পরের সঙ্গসুখ উপভােগ করে রাসনৃত্যজনিত শ্রান্তি দূর করার জন্য জলকেলি করতে করতে শ্রীকৃষ্ণ এবং গােপিকারা উভয়েই আনন্দে আত্মহারা হলেন। কলহাস্যে চতুর্দিক মুখরিত করে তারা শ্রীকৃষ্ণের শ্রীঅঙ্গে যমুনার জল সিঞ্চন করতে লাগলেন এবং মহা আনন্দে শ্রীকৃষ্ণ তা উপভােগ করলেন।
শ্রীকৃষ্ণ যখন এইভাবে গােপিকাদের কৌতুকপূর্ণ মধুর বচন এবং জল সিঞ্চন উপভােগ করছিলেন, স্বর্গের দেবতারা তখন পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন। এইভাবে স্বর্গের দেবতারা পরম ভােক্তা শ্রীকৃষ্ণের পরম মাধুর্যমণ্ডিত রাসনৃত্য এবং গােপিকাদের সঙ্গে যমুনায় তাঁর জলক্রীড়ার প্রশংসা করলেন।
তারপর শ্রীকৃষ্ণ এবং গােপিকারা জল থেকে উঠে এসে যমুনার তীরে ভ্রমণ করতে লাগলেন। তখন স্থল এবং জলের নানা রকম ফুলের গন্ধ বহন করে স্নিগ্ধ সমীরণ প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনার তটে ভ্রমণ করতে করতে শ্রীকৃষ্ণ নানা রকম কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। এইভাবে শরতের জ্যোৎস্নালােকিত রাত্রে তিনি গােপিকাদের সঙ্গসুখ উপভােগ করেছিলেন।
শরৎকালে মৈথুন আকাঙ্ক্ষা বিশেষভাবে বর্ধিত হয়, কিন্তু ব্রজগােপিকাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের এই যে সঙ্গ, তাতে কোন রকম মৈথুন আকাঙ্ক্ষা ছিল না। সেই সম্বন্ধে শ্রীল শুকদেব গােস্বামী শ্রীমদ্ভাগবতে স্পষ্টভাবে বলেছেন, অবরুদ্ধ সৌরত’ অর্থাৎ মৈথুন আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ ছিল। এই জড় জগতে সাধারণ মানুষের নৃত্য এবং ব্রজগােপিকাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের রাসনৃত্য এক নয়।
ব্রজগােপিকাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্ক এবং রাসনৃত্য সম্বন্ধে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণার নিরসন করার জন্য শ্রীমদ্ভাগবতের শ্রোতা মহারাজ পরীক্ষিৎ শুকদেব গােস্বামীকে বলেছিলেন, “শ্রীকৃষ্ণ ধর্ম সংস্থাপন করবার জন্য এবং অধর্মের বিনাশ করবার জন্য এই পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন।
কিন্তু গােপীদের সঙ্গে তার এইরকম আচরণের ফলে এই জড় জগতে অধর্মাচরণ বর্ধিত হতে পারে। তিনি যে এইভাবে গভীরভাবে পরস্ত্রীর সঙ্গসুখ উপভােগ করেছিলেন, সেজন্য আমি অত্যন্ত আশ্চর্য হচ্ছি। মহারাজ পরীক্ষিতের এই প্রশ্নে শ্রীল শুকদেব গােস্বামী প্রশংসা করেছিলেন। এই প্রশ্নের উত্তরে নির্বিশেষবাদী মায়াবাদীরা যারা নিজেদেরকেই কৃষ্ণ বলে প্রচার করে যুবতী স্ত্রীদের সঙ্গে করে, তাদের মুখােশ খুলে দেওয়া হয়েছে।
বৈদিক নির্দেশ অনুসারে বিবাহিত স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন রমণীর সঙ্গসুখ উপভােগ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জিত হয়েছে। ব্রজগােপিকাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্ককে আপাতদৃষ্টিতে সরাসরিভাবে সমস্ত শাস্ত্রীয়বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে মনে হলেও শুকদেব গােস্বামীর কাছ থেকে মহারাজ পরীক্ষিং যথাযথভাবে সেই অবস্থাটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, কিন্তু তবুও ব্ৰজগােপিকাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের রাসনৃত্যের অপ্রাকৃতত্ব প্রতিপন্ন করার জন্য তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। প্রাকৃত সহজিয়াদের অবৈধ স্ত্রী-সঙ্গ বন্ধ করার জন্য এই নির্দেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার বর্ণনায় মহারাজ পরীক্ষিৎ কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের ব্যবহার করেছেন যার অর্থ সম্বন্ধে অবগত হওয়া প্রয়ােজন। প্রথম শব্দটি হচ্ছে জুগুলিত, অর্থাৎ অত্যন্ত ঘৃণ্য। তার সন্দেহ প্রকাশ করে মহারাজ পরীক্ষিৎ প্রথমে বলেছেন, শ্রকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান যিনি ধর্ম সংস্থাপন করবার জন্য অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি কেন গভীর রাত্রে পরস্ত্রীর সঙ্গে নৃত্যপরায়ণ হয়েছিলেন, তাদের আলিঙ্গন করেছিলেন এবং চুম্বন করেছিলেন? বৈদিক শাস্ত্রে তাে এগুলি অনুমােদিত হয়নি।
আর তাছাড়া গােপিকারা যখন প্রথম তার কাছে এসেছিলেন, তিনি তখন তাদের ঘরে ফিরে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বৈদিক শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারে পরস্ত্রী অথবা যুবতী রমণীর সঙ্গে নৃত্য করা অবশ্যই গর্হিত অপরাধ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলে কেন কৃষ্ণ তা করলেন?"
পরীক্ষিৎ মহারাজ এই প্রসঙ্গে ‘আপ্তকাম শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কেউ মনে করতে পারে যে, যুবতী রমণীদের সঙ্গ প্রভাবে শ্রীকৃষ্ণ নিশ্চয়ই অত্যন্ত কামার্ত হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু সেই সম্বন্ধে পরীক্ষিৎ মহারাজ স্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করলেন যে, সেটা সম্ভব নয়। তিনি কখনই কামার্ত হতে পারেন না। প্রথমতঃ, জড়জাগতিক হিসাব অনুসারে তার বয়স তখন মাত্র আট বৎসর, সেই বয়সে কোন বালকই কামার্ত হতে পারে না।
আগুকাম কথাটির অর্থ হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন আত্মতৃপ্ত। যদি তিনি কামার্তও হতেন, তা হলে তার সেই কামনা চরিতার্থ করার জন্য অন্য কারাের সহযোগিতার প্রয়ােজনীয়তা তার নেই। আর তাছাড়া, যদিও তিনি কামার্ত ছিলেন না, তবে এমনও হতে পারে যে গােপিকাদের কামনাবাসনার দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন।
কিন্তু মহারাজ পরীক্ষিৎ সেই সন্দেহ নিরসন করার জন্য যদুপতি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন—যার অর্থ হচ্ছে, কৃষ্ণ হচ্ছেন যদুকুলের শ্রেষ্ঠ পুরুষ। যদুবংশীয় রাজারা ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ পুণ্যাত্মা এবং তাদের বংশধরেরাও সেই গুণে বিভূষিত ছিলেন। সেই বংশে জন্মগ্রহণ করে কৃষ্ণ কিভাবে গােপিকাদের দ্বারা প্রভাবিত হবেন?
তাই সহজেই অনুমান করা যায় যে, শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে কোন রকম জঘন্য কর্ম করা কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু মহারাজ পরীক্ষিৎ দ্বিধাগ্রস্ত চিত্তে প্রশ্ন করেছেন—তা হলে কেন কৃষ্ণ এই রকম আচরণ করলেন তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ছিল? শুকদেব গােস্বামীকে পরীক্ষিৎ মহারাজ সুব্রত বলে সম্বােধন করেন—যার অর্থ হচ্ছে বিনি পুণ্যকর্ম আচরণ করবার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছেন। শ্রীল শুকদেব গােস্বামী ছিলেন ব্রহ্মজ্ঞানী, ব্রহ্মচারী, সুতরাং তাঁর পক্ষে কামােদ্দীপক বিষয় নিয়ে আলােচনা করা সম্ভব নয়।
কোন ব্রহ্মাচারীর পক্ষেই তা উচিত নয়, সুতরাং শ্রীল শুকদেব গোস্বামীর মতাে ব্রহ্মচারীর কি কথা! তাই মহারাজ পরীক্ষিৎ শ্রীল শুকদেব গােস্বামীর কাছে রাসলীলার তত্ত্ব বিশ্লেষণ করার অনুরােধ করেছেন। শ্রীল শুকদেব গােস্বামী তার উত্তরে বলেন যে, পরমেশ্বর ভগবান তার পরমেশ্বরত্ব প্রতিপন্ন করার জন্য ধর্মীয় বিধি ল্ঘন করেছেন। তা কেবল তিনিই পারেন।
অগ্নি যেমন সর্বভুক হয়েও কোনভাবে কলুষিত হন না, সূর্য যেমন মলমূত্র থেকে জল শােষণ করলেও কলুষিত হন না, পক্ষান্তরে সূর্যকিরণের প্রভাবে কলুষিত অপবিত্র স্থানও পবিত্র হয়ে যায়, তেমনই পরমেশ্বর ভগবান শাস্ত্রবিধি ল্বন করে তার পরমেশ্বরত্বই প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
এই সম্পর্কে কেউ তর্ক করতে পারে যে, শ্রীকৃষ্ণ যেহেতু পরমেশ্বর ভগবান, তাই তার কার্যকলাপও অনুসরণীয়। কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীল শুকদেব গগাস্বামী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ঈশ্বরানা’অর্থাৎ পরম ঈশ্বর ইচ্ছা করলে তার নির্দেশ লঙ্ঘন করতে পারেন, কিন্তু সেটি কেবল তার পক্ষেই সম্ভব। তাঁর অনুগামীদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ঈশ্বরের অসাধারণ এবং অস্বাভাবিক কার্যকলাপের অনুকরণ করা কখনই উচিত নয়। শ্রীল শুকদেব গােস্বামী সেই সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, বন্ধ জীব যেন কখনও ঈশ্বরের অসাধারণ কার্যকলাপের অনুকরণ না করে।
মায়াবাদী দার্শনিকেরা ভ্রান্তভাবে প্রচার করতে পারে যে, তারা ভগবান হয়ে গেছে অথবা শ্রীকৃষ্ণ হয়ে গেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা কখনই শ্রীকৃষ্ণের মতাে আচরণ করতে পারে না। তারা তাদের অনুগামীদের রাসনৃত্যের অনুকরণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে কিন্তু তারা কখনও গিরি-গোবর্ধন তুলতে পারে না।
মায়াবাদী ভগুদের নিজেদের শ্রীকৃষ্ণ বলে প্রচার করে পরস্ত্রীর সঙ্গে রাসলীলা করতে প্রায়ই দেখা যায়। এই সমস্ত জঘন্য কার্যকলাপের জন্য তাদের অনেক সময় পুলিশ গ্রেপ্তার করে দণ্ড দিয়েছে। শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুর যখন উড়িষ্যায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, তখন তিনি যুবতী স্ত্রীলােকের সঙ্গে রাসলীলা পরায়ণ এক তথাকথিত বিষ্ণুর অবতারকে দণ্ডদান করেছিলেন।
সেই পাষণ্ডীর বিরুদ্ধে অনেকে সরকারের কাছে অভিযােগ করেছিল। তাই সরকার পক্ষ থেকে তখন শ্রীল ভক্তিবিনােদ ঠাকুরকে সেই অভিযােগগুলি পর্যবেক্ষণ করে সেই কঠোরভাবে দণ্ডদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কেউই রাসলীলার অনুকরণ করতে পারে না। শ্রীল শুকদেব গােস্বামী জনসাধারণকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, কেউ যেন করবার চেষ্টা না করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে কেউ যদি শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার করবার চেষ্টা করে,
হলে তার সর্বনাশ হবে, ঠিক যেমন নীলকণ্ঠের অনুকরণ করে কেউ যদি সমুদ্র মন্থনে হলাহল পান করার অনুকরণ করা হলে যেমন অবধারিতভাবে মৃত্যু হবে, দেবাদিদেব মহাদেব সমুদ্রমন্থনে হলাহল পান করে তার কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। সেই বিষের প্রভাবে কণ্ঠ নীলবর্ণ হয়ে যায়; এবং তাই দেবাদিদেব মহাদেবের আরেক নাম হচ্ছে নীলকণ্ঠ।
কিন্তু কোন সাধারণ মানুষ যদি মহাদেবের বিষপানের অনুকরণ করতে যায়, হলে তার মৃত্যু অবধারিত। এক বিশেষ অবস্থায় এক বিশেষ উদ্দেশ্যে শ্রীকৃষ্ণ ব্রজগােপিকাদের সঙ্গে রাসলীলাবিলাস করেছিলেন।
অধিকাংশ গােপীরাই তাদের পূর্ব জীবনে ছিলেন বৈদিক শাস্ত্রজ্ঞ মহর্ষি। শ্রীকৃষ্ণ যখন শ্রীরামচন্দ্ররূপে লীলাবিলাস করছিলেন, তখন তারা তার সঙ্গসুখ করতে চান। তাই শ্রীরামচন্দ্র তাদের আশীর্বাদ করেন যে, তিনি যখন শ্ৰীকৃষ্ণচন্দ্রূপে আবির্ভূত হবেন, তখন তিনি তাদের সেই মনস্কামনা পূর্ণ করবেন।
এইভাবে পরমেশ্বর ভগবানের সঙ্গসুখ লাভ করার জন্য গােপিকারা যুগ-যুগান্তর ধরে তপস্যা করেছিলেন। তাই তারা কাত্যায়নী দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, শ্রীকৃষ্ণকে তাদের পতিরূপে পাওয়ার জন্য। আরও অনেক পরিস্থিতিতে শ্রীকৃষ্ণ তার পরমেশ্বরত্ব প্রতিপন্ন করে দেখিয়ে গেছেন জড়জাগতিক বিধি-নিষেধের দ্বারা নন।
বিশেষ বিশেষ অবস্থায়, তার ভক্তকে কৃপা করার জন্য, তিনি তার স্বতন্ত্র ইচ্ছা অনুসারে আচরণ করেছেন। কেবল তার পক্ষেই সম্ভব, কেননা তিনি হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। সাধারণ মানুষের কর্তব্য হচ্ছে ভগবদ্গীতায় প্রদত্ত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ অনুসরণ করা এবং কোন অবস্থাতেই ভগবানের রাসনৃত্যের অনুকরণ করার কল্পনা পর্যন্ত না করা।
গিরি-গোবর্ধন ধারণ, তৃণাবর্ত, অঘাসুর, ধেনুকাসুর আদি অসুরদের বধ, এই সমস্ত তার অসাধারণ কার্যকলাপ। তেমনই রাসনৃত্যও হচ্ছে তার এক অসাধারণ কার্যকলাপ এবং কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে তাঁর অনুকরণ করা সম্ভব নয়।
সাধারণ মানুষের কর্তব্য হচ্ছে, অর্জুনের মতাে, তাদের বৃত্তি অনুসারে ধর্ম আচরণ করে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা। সেটাই কেবল তার পক্ষে সম্ভব। অর্জুন ছিলেন ক্ষত্রিয়, এবং শ্রীকৃষ্ণ চেয়েছিলেন যে, তাঁর জন্য অর্জুন যুদ্ধ করুক। প্রথমে যুদ্ধ করতে অসম্মত হলেও অবশেষে অর্জুন রাজি হয়েছিলেন।
সাধারণ মানুষের কর্তব্য হচ্ছে শাস্ত্রনির্দেশ অনুসারে কর্ম করা। কোন অবস্থাতেই তাদের শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার অনুকরণ করে নিজেদের সর্বনাশ করা উচিত নয়। সকলেরই জেনে রাখা উচিত যে, গােপিকাদের প্রতি কৃপাপ্রদর্শন করে তিনি রাস
লীলা করেছিলেন, তাতে তার কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল না। ভগবদ্গীতাতে তিনি বলেছেন, মাং কর্মাণি লিম্পতি' অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ কখনও তার কর্মের ফল ভােগ করেন না। তাই তাঁর পক্ষে অধর্ম আচরণ করা কখনই সম্ভব নয়।
সর্ব অবস্থাতেই তিনি সব রকমের কর্ম এবং ধর্মীয় বিধির অতীত। জড়া প্রকৃতির গুণগুলি কখনই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি হচ্ছেন সমস্ত জীবের পরম নিয়ন্তা। পৃথিবীর মানুষ, স্বর্গের দেবতা এবং নিম্নস্তরের জীবেরা সকলেই তার নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি সমস্ত জীবের এবং জড়া প্রকৃতির নিয়ন্তা, তাই তার পক্ষে ধর্ম এবং অধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।
শ্রীল শুকদেব গােস্বামী এই সিদ্ধান্তে আরও বলেছেন যে, মহান ঋষি এবং মহান ভক্ত, যারা সব রকমের জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েছেন, তারা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তাঁদের হৃদয়ে ধারণ করে জড় জগতের যে কোনও কলুষিত পরিবেশে নির্ভয়ে বিচরণ করতে পারেন।
এইভাবে তারাও জড়া প্রকৃতির গুণজাত সুখ এবং দুঃখের প্রভাব থেকে মুক্ত হন, তাহলে তার অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা স্বেচ্ছায় এই জগতে আবির্ভূত হয়েছেন পরমেশ্বর ভগবান তিনি কিভাবে কর্মবন্ধনের দ্বারা প্রভাবিত হবেন?
শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি অন্তরঙ্গা শক্তির প্রভাবে এই জগতে আবির্ভূত হন; সাধারণ মানুষের মতাে কর্মবন্ধনের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে তাকে দেহ ধারণ করতে বাধ্য হতে হয় না। এই জগতে প্রতিটি জীবকেই তার পূর্বকৃত কর্ম অনুসারে প্রকৃতি প্রদত্ত দেহ ধারণ করতে বাধ্য হতে হয়। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যখন আবির্ভূত হন, তখন তাকে তার পূর্বকৃত কর্মের ফল অনুসারে দেই ধারণ করতে হয় না।
তার শ্রীবিগ্রহ হচ্ছে তার অন্তরঙ্গা শক্তি প্রসূত দিব্য বিলাসের আলয়। তিনি কখনও কর্মবন্ধনের দ্বারা প্রভাবিত হন না। অদ্বৈতবাদী মায়াবাদীদের প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে কোন বিশেষ শরীর ধারণ করতে বাধ্য হতে হয়; তাই তারা যে শ্রীকৃষ্ণ হবার বা ভগবান হবার দাবী করে, সেই দাবী সম্পূর্ণ অর্থহীন। যে সমস্ত মানুষ ভগবান হয়ে গেছে বলে দাবী করে রাসলীলার অনুকরণ করে, তারা নিজেদের সর্বনাশ তাে করেই, সেই সঙ্গে জনসাধারণকেও বিপথগামী করে তাদেরও সর্বনাশ করে।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মারূপে প্রতিটি গােপিকার অন্তরে এবং তাদের পতিদের অন্তরে বিরাজমান। তিনিই হচ্ছেন সমস্ত জীবের পরিচালক, যা কঠোপনিষদে প্রতিপন্ন হয়েছে, 'নিত্যোযো নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানামপরমাত্মা জীবাত্মাকে পরিচালিত করেন এবং সেই পরমাত্মা হচ্ছেন জীবের সমস্ত কর্মের সাক্ষী।
ভগবদগীতায় প্রতিপন্ন হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণ সকলেরই হৃদয়ে বিরাজ এবং তিনিই জীবকে স্মৃতি ও বিস্মৃতি দান করে তাদের পরিচালিত করেন। সমস্ত বেদের মধ্যে একমাত্র জ্ঞাতব্য বিষয় হচ্ছেন তিনি। তিনিই হচ্ছেন বেদান্ত-দর্শনের প্রণেতা এবং বেদবেত্তা। তথাকথিত সমস্ত বৈদান্তিক এবং মায়াবাদীরা শ্রীকৃষ্ণকে যথাযথভাবে জানতে পারে না; তারা তাদের অনুগামীদের বিপথে পরিচালিত করে শ্রীকৃষ্ণের কার্যকলাপের অনুকরণ করতে প্ররােচিত করে। সকলের পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ সকলের হৃদয়ে বিরাজ করছেন; তাই তিনি যদি কাউকে দর্শন করেন বা আলিঙ্গন করেন, হলে কখনও অবৈধ হতে পারে না।
কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করে যে, শ্রীকৃষ্ণ যদি আত্মারাম হন, তা হলে জগতের নীতিবাগীশদের বিচলিত করে কেন তিনি গােপিকাদের সঙ্গে এইভাবে লীলাবিলাস করেছিলেন? তার উত্তরে বলা হয়েছে যে, তাঁর এই লীলাবিলাস প্রকাশ করে তিনি অধঃপতিত বদ্ধ জীবদের প্রতি বিশেষভাবে কৃপা করেছেন। গােপিকারাও হচ্ছেন তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তির প্রকাশ। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যেহেতু রাসলীলা প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন, তাই তারা সাধারণ মানবীর মতাে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই জড় জগতের উপভােগের চরম প্রকাশ হচ্ছে স্ত্রী এবং পুরুষের মৈথুন।
পুরুষের জীবনের একমাত্র স্ত্রীলােকদের দ্বারা হওয়া এবং স্ত্রীলােকদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে পুরুষদের দ্বারা আকৃষ্ট হওয়া। এটিই হচ্ছে জড় জাগতিক জীবনের মূল তত্ত্ব। যখন মানুষ সেই আকর্ষণ যুক্ত হয়, তখন সে এই জড় জগতে আরও বেশি করে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। তার বিশেষ কৃপা প্রদর্শন করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ এই রাসলীলা প্রকট করেছিলেন। যাতে বদ্ধ জীবেরা মুগ্ধ চিত্তে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। যেহেতু তারা কাম উপভােগের প্রতি অত্যন্ত আসক্ত, তাই যাতে তারা কামের চরম কমনীয় নায়করূপে তাকে জানতে পেরে প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে।
শ্রীমদ্ভাগবতের দ্বিতীয় স্কন্ধে পরীক্ষিৎ মহারাজও বিশ্লেষণ করেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণের লীলাবিলাস হচ্ছে ভবরােগগ্রস্ত বদ্ধ জীবের মহৌষধ। তারা যদি কেবল শ্রীকৃষ্ণের কার্যকলাপ এবং লীলাবিলাস শ্রবণ করে, তা হলে তারা ভবরােগ থেকে মুক্ত হতে পারবে। তারা জড় সুখভােগের প্রতি আসক্ত এবং কামােদ্দীপক গ্রন্থ পাঠ করতে আসক্ত। কিন্তু ব্ৰজগােপিকাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাবিলাসের কথা শ্রবণ করে তারা সব রকম জড় কলুষ থেকে মুক্ত হতে পারবে।
কিভাবে এবং কার থেকে শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে শ্রবণ করা উচিত, তারও বিশ্লেষণ শ্রীল শুকদেব গােস্বামী করেছেন। আজকের একটা মস্ত বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে যে, এই জগৎ মায়াবাদীতে পূর্ণ, এবং তারা যখন অর্থ উপার্জনের জন্য শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করে, সাধারণ মানুষ মায়াবাদী দর্শনের বিষময় প্রভাবের কথা না জেনে যখন তাদের ভাগবত পাঠ শােনে, তখন তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের কাছে রাসলীলা সম্বন্ধে আলােচনা করতে নিষেধ করা হয়েছে, কেননা তারা মায়াবাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত, কিন্তু কোন তত্ত্বদ্রষ্টা মহাপুরুষ যখন ভগবানের দিব্য লীলা-বিলাসের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং মানুষ যখন তার কাছ থেকে তা শােনে, তখন সেই শ্রোতারা অবধারিতভাবে জড় জগতের কলুষমুক্ত হয়ে কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত হয়ে কৃষ্ণভক্তে পরিণত হন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে সমস্ত গােপিকারা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে নৃত্যপরায়ণ হয়েছিলেন তাদের শরীর জড় ছিল না। তারা তাদের চিন্ময় শরীরে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে নৃত্য করেছিলেন। তাদের পতিরা মনে করেছিলেন যে, তাদের স্ত্রীরা তাদের পাশেই শুয়ে আছেন। গােপিকাদের তথাকথিত পতিরা ইতিমধ্যেই ভগবানের দৈবী মায়ার প্রভাবে আচ্ছন্ন ছিলেন; তাই সেই মায়ার প্রভাবে তাঁরা বুঝতে পারেননি যে, তাদের পত্নীরা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে নাচতে গেছেন। সুতরাং অপরের স্ত্রীর সঙ্গে নেচেছিলেন বলে শ্রীকৃষ্ণকে অভিযুক্ত করার কোন ভিত্তিই নেই। গােপিকাদের দেহ, যা ছিল তাদের পতিদের সম্পত্তি, তা শয্যাতে শায়িত ছিল, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন অংশ, তাঁদের চিন্ময় স্বরূপে, তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে নাচছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষ, পরম আত্মা, এবং তিনি চিন্ময় গােপিকাদের সঙ্গে নাচছিলেন। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণকে দোষারােপ করার কোনই কারণ নেই।
রাসনৃত্য সমাপ্ত হলে, রাত্রি শেষ হয়ে ব্রাহ্ম মুহূর্ত দেখা দিল (ভগবদগীতায় বর্ণনা করা হয়েছে যে ব্রহ্মার রাত্রি অত্যন্ত দীর্ঘকালব্যাপী)। সূর্য উদয়ের দেড় ঘণ্টা পূর্বের সময়কে ব্রাহ্ম মুহূর্ত বলা হয়। শাস্ত্রের নির্দেশ, সেই সময় শয্যাত্যাগ করে প্রাতঃকৃত্য সমাপন করে, ভগবানের মঙ্গল আরতিতে যােগদান করতে হয়। এবং হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করতে হয়। এই সময়টি পারমার্থিক কার্যকলাপ সম্পাদন করার জন্য অত্যন্ত উপযােগী। সেই শুভ মুহূর্তের আগমনে শ্রীকৃষ্ণ ঘরে ফিরে যেতে নির্দেশ দিলেন, যদিও তারা তাকে ছেড়ে যেতে চাইছিলেন না। তারা ছিলেন তার অত্যন্ত প্রিয় এবং বাধ্য। শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁদের ঘরে ফিরে যেতে বললেন, তৎক্ষণাৎ ঘরে ফিরে গেলেন।
শ্রীল শুকদেব গােস্বামী এই রাসলীলা সম্বন্ধে বলেছেন যে, কেউ যদি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ ব্রজগােপিকাদের সঙ্গে রাসলীলা-বিলাসের কাহিনী যথার্থ তত্ত্বজ্ঞানী পুরুষের কাছ থেকে শ্রবণ করেন, তাহলে কাম নামক অতিভয়ানক রােগ থেকে তিনি মুক্ত হবেন। কেউ যদি যথাযথভাবে রাসলীলা শ্রবণ করেন, তা হলে তিনি কামভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হবেন এবং পারমার্থিক জীবনের চরম স্তরে অধিষ্ঠিত হবেন। সাধারণত মানুষ যেহেতু মায়াবাদের দ্বারা প্রভাবিত এবং তারা মায়াবাদীদের কাছে শ্রীকৃষ্ণের এই রাসলীলা-বিলাসের কথা শ্রবণ করে, তাই তারা স্ত্রীসঙ্গের প্রতি বেশী করে আসক্ত হয়ে পড়ে।
বদ্ধ জীবের কর্তব্য হচ্ছে তত্ত্বজ্ঞানীর কাছ থেকে রাসলীলার বর্ণনা শ্রবণ করা এবং তার যথাযথভাবে শিক্ষা লাভ করা, যার ফলে তারা এই পারমার্থিক জীবনের স্তরে অধিষ্ঠিত হতে পারেন। তা না হলে তারা অধঃপতিত হবেন। কাম হচ্ছে এক রকমের হৃদরােগ, বদ্ধ জীবের এই হৃদরােগ নিরাময়ের উপায় হচ্ছে ভগবানের কথা শ্রবণ করা। কিন্তু সেই শ্রবণ যেন নির্বিশেষবাদী পাষণ্ডীর কাছ থেকে না হয়; কেউ যদি তত্ত্বদ্রষ্টা মহাপুরুষের কাছ থেকে ভগবানের কথা শ্রবণ করেন, তা হলে তার বন্ধন ক্ষয় হবে, সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই।
যাঁরা পারমার্থিক জীবনে ব্রতী তাদের সম্বন্ধে শ্রীল শুকদেব গােস্বামী শ্রদ্ধা শব্দটি ব্যবহার করেছেন। পারমার্থিক জীবনের ভিত্তি হচ্ছে শ্রদ্ধা। শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান, পরম আত্মারূপে জেনে তাঁর প্রতি যিনি শ্রদ্ধান্বিত হয়েছেন, তিনিই যথাযথভাবে শ্রবণ এবং কীর্তন করতে পারেন। শ্রীল শুকদেব গােস্বামী শ্রদ্ধা শব্দটি ব্যবহার করেছেন। গুরু-পরম্পরার ধারায় সদ্গুরুর কাছ থেকে শ্রবণ করতে হয়।
অনু শব্দটির অর্থ হচ্ছে অনুগামী হওয়া, এবং অনু শব্দটির আরেকটি অর্থ হচ্ছে সর্বক্ষণ। সুতরাং আমাদের নিরন্তর সদ্গুরু পরম্পরার ধারা অনুসরণ করতে হবে এবং সব রকম পেশাদারী ভাগবত পাঠকের কাছ থেকে মায়াবাদী অথবা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে শ্রীমদ্ভাগবতের ব্যাখ্যা না শােনবার চেষ্টা করতে হবে। মানে হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণভাবনায় মগ্ন, গুরু পরম্পরার ধারায় অধিষ্ঠিত মহাজনের কাছ থেকে ভগবানের কথা শ্রবণ করা উচিত। কেউ যখন এইভাবে শ্রবণ করতে চায় তখন অবশ্যই যথার্থ ফল লাভ করা যায়। রাসলীলার যথার্থ তাৎপর্য-সমন্বিত বর্ণনা শ্রবণ করলে পারমার্থিক জীবনের উন্নত স্তরে অধিষ্ঠিত হওয়া যায়।
শ্রীল শুকদেব গােস্বামী দু'টি বিশেষ শব্দ, এবং পরাম্ এর ব্যবহার করেছেন। 'ভক্তিম পরাম মানে হচ্ছে কনিষ্ঠ অধিকারের স্তর অতিক্রম করে উত্তম ভক্তির স্তরে, ভগবানের সেবাপরায়ণ হওয়া। যারা কেবল মন্দিরে ভগবানের পূজার প্রতি আকৃষ্ট, কিন্তু ভগবদ্ভক্তির যথার্থ দর্শন সম্বন্ধে অবগত নয়, তাদের বলা হয় কনিষ্ঠ অধিকারী। সেই স্তরের ভক্তি শুদ্ধ ভক্তি নয়। শুদ্ধ ভক্তি সর্বতােভাবে জড় কলুষ থেকে মুক্ত। জড় জগতের সব চাইতে ভয়ঙ্কর কলুষ হচ্ছে কাম অথবা স্ত্রী-সঙ্গ উপভােগ করার বাসনা। 'ভক্তিম্ পরাম্ ভগবানের পরাভক্তি এতই শক্তিশালী যে, সেই মার্গে যতই অগ্রসর হওয়া যায়, ততই জড়জাগতিক আসক্তি ক্ষয় হতে থাকে। যিনি ভগবানের রাসলীলার বর্ণনা করে যথাযথভাবে লাভবান হতে চান, তাকে অবশ্যই পরাভক্তির স্তরে অধিষ্ঠিত হতে হবে। হৃদয় অবশ্যই কামের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে হবে।
শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর বিশ্লেষণ করেছেন যে, ভগবদ্গীতার বর্ণনা অনুসারে ব্রহ্মার দিন এবং রাত্রির ব্যাপ্তি হচ্ছে ৪৩২কোটি বছর। শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুরেরর মতে রাসনৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল ব্রহ্মার রাত্রি জুড়ে, কিন্তু গােপিকারা তা বুঝতে পারেননি। তাদের মনােবাসনা পূর্ণ করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ সেই রাত্রিকে এইভাবে প্রসারিত করেছিলেন। কেউ সেই সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে পারে তা কি করে সম্ভব, এবং বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর সেই জন্য আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, কৃষ্ণ যদিও একটি ছােট্ট রজ্জুর দ্বারা বদ্ধ হয়েছিলেন তবুও তিনি মা যশােদাকে মুখের মধ্যে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড দর্শন করিয়েছিলেন। তা কি করে সম্ভব হয়েছিল? তার উত্তর হচ্ছে তার ভক্তকে আনন্দদান করার জন্য তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন।
তেমনই গােপিকারা যেহেতু সঙ্গ সুখ উপভােগ করতে চেয়েছিলেন, তাই তিনি দীর্ঘকাল ধরে তার সঙ্গ লাভ করার সুযােগ তাদের দিয়েছিলেন। সেটি তিনি করেছিলেন তার প্রতিজ্ঞা অনুসারে। যমুনার চিরঘাটে গােপিকারা যখন স্নান করছিলেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ বস্ত্র হরণ করেন, তখন তিনি তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে কোন এক রাত্রে তারা তাদের প্রিয় পতি শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গসুখ উপভােগ করবেন। তাই শারদীয়া পূর্ণিমার রাত্রে তাদের প্রিয়তম শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গসুখ উপভােগ করেছিলেন। কিন্তু সেই রাত্রিটি কোন সাধারণ রাত্রি ছিল না। সেটি ছিল ব্রহ্মার রাত্রি, এবং তার দৈর্ঘ্য ছিল কোটি কোটি বৎসর। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান, তাই তার পক্ষে সব কিছুই সম্ভব।