মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ: কী কারণে হয়েছিল ও কী ঘটেছিল পরে?

 

মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ: কী কারণে হয়েছিল ও কী ঘটেছিল পরে?

মহাভারত, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও বিস্তৃত মহাকাব্য, যেখানে ধর্ম, ন্যায়, শক্তি ও রাজনীতির এক মহাকাব্যিক সংঘাত চিত্রিত হয়েছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ—একটি ভয়াবহ যুদ্ধ, যা কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এই যুদ্ধ কি শুধুই সিংহাসনের জন্য লড়াই ছিল, নাকি এর গভীরে লুকিয়ে ছিল ন্যায়-অন্যায়ের চিরন্তন দ্বন্দ্ব?


এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করব, কী কারণে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, কীভাবে এটি ঘটেছিল এবং যুদ্ধের ফলাফল কীভাবে ভারতীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করেছিল।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ: কারণ ফলাফল

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কারণ

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ মহাভারতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধের মূল কারণ নিম্নরূপ:

 রাজ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধঃ
কৌরবদের নেতা দুর্যোধন এবং পাণ্ডবদের নেতা যুধিষ্ঠির উভয়েই হস্তিনাপুরের সিংহাসনের উত্তরাধিকার দাবি করেছিল। দুর্যোধন পাণ্ডবদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল।

পাণ্ডবদের বনবাস ও আজ্ঞাতবাসঃ
পাশা খেলার মাধ্যমে দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরকে পরাজিত করে পাণ্ডবদের বনবাসে পাঠায়। ১৩ বছর বনবাস ও ১ বছর গোপনে থাকার শর্ত থাকলেও, দুর্যোধন তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়।

দ্রৌপদীর অপমানঃ
পাশা খেলার সময় দ্রৌপদীকে কৌরবদের সভায় টেনে আনা হয় এবং তার অপমান করা হয়। এটি যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।

শান্তি প্রস্তাবের প্রত্যাখ্যানঃ
কৃষ্ণ পাণ্ডবদের পক্ষ থেকে কৌরবদের কাছে শান্তির প্রস্তাব নিয়ে যান, যেখানে তারা মাত্র পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিল। দুর্যোধন তা প্রত্যাখ্যান করে এবং যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।

কৃষ্ণের ভূমিকা ও শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শঃ
কৃষ্ণ যুদ্ধ এড়ানোর জন্য কৌরবদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও, দুর্যোধন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং কৃষ্ণের পরামর্শ গ্রহণ করেনি।

 

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ফলাফল

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ১৮ দিন স্থায়ী ছিল এবং এতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। যুদ্ধের প্রধান ফলাফলগুলো হলো:

কৌরবদের পরাজয়ঃ
পাণ্ডবরা যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরের রাজা হন। দুর্যোধনসহ কৌরবদের প্রায় সকল সেনাপতি ও যোদ্ধা নিহত হয়।

ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসঃ
এই যুদ্ধে প্রায় ৪০ লক্ষ সৈন্য মারা যায়, যা কুরু বংশের প্রায় অবসান ঘটায়। ভারতবর্ষের অনেক রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে।

ধর্ম ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাঃ
যুদ্ধের মাধ্যমে কৃষ্ণ ধর্ম ও ন্যায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শিক্ষা মহাভারত থেকে পাওয়া যায়।

ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণের মৃত্যুঃ
যুদ্ধে কৌরবদের প্রধান যোদ্ধারা একে একে নিহত হন। পাণ্ডবদের জয় হলেও তাদের অনেক নিকট আত্মীয়ও নিহত হয়।

গীতা উপদেশঃ
যুদ্ধের আগে কৃষ্ণ অর্জুনকে ভগবদ্গীতার শিক্ষা দেন, যা হিন্দু দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।

অশ্বত্থামার অভিশাপঃ
দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে অভিমন্যুর স্ত্রী উত্তরার গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কৃষ্ণ তার জীবন রক্ষা করেন, কিন্তু অশ্বত্থামাকে চিরস্থায়ী কষ্টভোগের জন্য অভিশাপ দেন।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কোন মাসে হয়েছিল

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সাধারণভাবে কার্তিক বা মার্গশীর্ষ মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর) সংঘটিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে।


প্রাচীন গ্রন্থ ও গবেষণা অনুযায়ী:

•    অনেক গবেষক মনে করেন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ খ্রিস্টপূর্ব ৩১০২ বা তার কাছাকাছি সময়ে সংঘটিত হয়েছিল।


•    কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গবেষক মহাভারতে উল্লেখিত গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিশ্লেষণ করে অনুমান করেছেন যে যুদ্ধটি সম্ভবত ৩১৩৯ BCE থেকে ৩০৬৭ BCE-এর মধ্যে হয়েছিল।


•    "ভগবদ্গীতা" অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হয়েছিল অমাবস্যার দিন, এবং কৃষ্ণ পাণ্ডবদের সঙ্গে ছিলেন।
সংক্ষেপে: কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে (হিন্দু ক্যালেন্ডারের কার্তিক বা মার্গশীর্ষ মাসে) হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কতদিন হয়েছিল

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ১৮ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
এই যুদ্ধ মহাভারতে বর্ণিত সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধগুলোর একটি ছিল এবং প্রতিদিনই ব্যাপকসংখ্যক যোদ্ধা নিহত হতো। যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:


যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ (প্রতিদিনের প্রধান ঘটনা)

  •  প্রথম দিন: উভয় পক্ষের যুদ্ধ শুরু হয়, ভীষ্ম সেনাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন।
  •   দ্বিতীয় দিন: পাণ্ডবদের সেনাপতি ভীম দুর্যোধনের সেনাবাহিনীকে বিপর্যস্ত করেন।
  •   তৃতীয় দিন: দুর্যোধন কর্ণকে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান, কিন্তু কর্ণ পরে যোগ দেন।
  •   চতুর্থ-পঞ্চম দিন: যুদ্ধ আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে, ভীষ্ম পাণ্ডব বাহিনীকে প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ করেন।
  •  ষষ্ঠ-নবম দিন: ভীষ্ম ক্রমাগত যুদ্ধ পরিচালনা করেন, কৃষ্ণ অর্জুনকে ভীষ্মকে পরাস্ত করার জন্য উৎসাহিত করেন।
  •   দশম দিন: অর্জুন শিখণ্ডীর সহায়তায় ভীষ্মকে গুরুতর আহত করেন, তিনি যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ান।
  •   এগারো-চৌদ্দ দিন: দ্রোণাচার্য সেনাপতি হন, অভিমন্যু চক্রব্যূহে নিহত হন।
  •  পনেরো-ষোলো দিন: কর্ণ সেনাপতি হন, যুদ্ধে গতি পরিবর্তন হয়।
  •  সতেরো দিন: অর্জুন কর্ণকে হত্যা করেন।
  •   আঠারো দিন: দুর্যোধন পরাজিত হন এবং পরে নিহত হন, যুদ্ধ শেষ হয়।

এই ১৮ দিনের যুদ্ধে প্রায় ৪০ লক্ষ সৈন্য নিহত হয় এবং কৌরব বংশ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

 

মহাভারতের যুদ্ধ কোথায় হয়েছিল

মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে হয়েছিল, যা বর্তমানে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত।

কুরুক্ষেত্রের গুরুত্ব:

  •  ধর্মক্ষেত্র: মহাভারতে কুরুক্ষেত্রকে "ধর্মক্ষেত্র" বা পবিত্র ভূমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বহু ঋষি-মুনির তপস্যার স্থান ছিল।
  •   কৌরব ও পাণ্ডবদের যুদ্ধক্ষেত্র: হস্তিনাপুর রাজ্যের অংশ হওয়ায় এটি যুদ্ধের জন্য নির্বাচিত হয়।
  •  ভগবদ্গীতা উপদেশ: যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এখানে কৃষ্ণ অর্জুনকে ভগবদ্গীতা উপদেশ দেন।

বর্তমান কুরুক্ষেত্র:

  •  এটি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কুরুক্ষেত্র জেলায় অবস্থিত।
  •  এখানে অনেক প্রাচীন মন্দির, সরোবর ও মহাভারতের স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে।
  •   প্রতি বছর হাজারো তীর্থযাত্রী ও পর্যটক এই ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন।


মহাভারতের যুদ্ধ কেন হয়েছিল

মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পেছনে বিভিন্ন কারণ ছিল, যার মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, রাজ্য নিয়ে বিরোধ, এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। যুদ্ধের প্রধান কারণগুলো নিচে বিশদভাবে দেওয়া হলো—


১. হস্তিনাপুরের সিংহাসন নিয়ে বিরোধ

•    কৌরব ও পাণ্ডব উভয়েই হস্তিনাপুরের রাজত্বের উত্তরাধিকার দাবি করেছিল।
•    পাণ্ডবদের পিতা পাণ্ডু ছিলেন হস্তিনাপুরের রাজা, কিন্তু তার মৃত্যুর পর ধৃতরাষ্ট্র (দুর্যোধনের পিতা) রাজা হন।
•    দুর্যোধন (কৌরবদের নেতা) চাননি যে পাণ্ডবরা তাদের উত্তরাধিকার দাবি করুক।

২. পাশা খেলা ও বনবাস

•    দুর্যোধন ও তার কাকা শকুনির চক্রান্তে যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় সব কিছু হারান।
•    কৌরবরা পাণ্ডবদের ১৩ বছরের বনবাস এবং ১ বছর আজ্ঞাতবাসে পাঠায়।
•    এই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও দুর্যোধন তাদের রাজ্য ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।

৩. দ্রৌপদীর অপমান

•    পাশা খেলায় পরাজয়ের পর কৌরবরা দ্রৌপদীকে প্রকাশ্যে সভায় টেনে আনেন এবং তাকে অপমান করেন।
•    ভীম শপথ করেন যে তিনি দুর্যোধন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবেন।

৪. কৃষ্ণের শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

•    কৃষ্ণ কৌরবদের কাছে পাণ্ডবদের পক্ষে শান্তির প্রস্তাব নিয়ে যান।
•    তিনি মাত্র পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিলেন (হস্তিনাপুর নয়), কিন্তু দুর্যোধন একটিও দিতে রাজি হননি।
•    দুর্যোধন ঘোষণা করেন— "আমি সূক্ষ্ম পরিমাণ মাটিও দেব না, যুদ্ধই হবে!"

৫. ন্যায় ও অধর্মের সংঘাত

•    মহাভারতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুধু সিংহাসনের জন্য ছিল না, এটি ধর্ম (ন্যায়) ও অধর্মের (অন্যায়) মধ্যে লড়াইও ছিল।
•    কৃষ্ণ বলেছিলেন যে এই যুদ্ধের মাধ্যমে অধর্মকে পরাজিত করতে হবে।


কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ মহাভারত

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ মহাভারতের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি ছিল এক মহাকাব্যিক যুদ্ধ যা পাণ্ডব ও কৌরবদের মধ্যে ১৮ দিনের জন্য লড়াই হয়েছিল। এই যুদ্ধের পটভূমি ছিল রাজকার্য, অধিকার ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম। মহাভারতের কাহিনীতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আখ্যানের মধ্যে প্রচুর দার্শনিক শিক্ষা ও মানবিক মুল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে।


কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কিছু মূল বিষয়:

 পাণ্ডব ও কৌরবদের মধ্যে দ্বন্দ্ব: পাণ্ডবরা তাদের অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য, আর কৌরবরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য যুদ্ধ শুরু করে।


 কৃষ্ণের ভূমিকা: শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের উপদেষ্টা এবং সহায়ক হিসেবে যুদ্ধের সময় তাদের পাশে দাঁড়ান। তিনি মহাভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যেমন শ্রীমদ্ভগবদগীতা, পাণ্ডবদের প্রদান করেন।


 ধর্ম ও অধর্ম: যুদ্ধের মধ্যে ধর্ম ও অধর্মের প্রশ্ন উঠে আসে। কৌরবরা নিজেদের স্বার্থে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, যেখানে পাণ্ডবরা ধর্মের পক্ষে লড়াই করছিল।

প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ১: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কেন হয়েছিল?
উত্তর: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ মহাভারত কাব্যের মূল সংঘর্ষ এবং এটি প্রধানত রাজ্যাভিষেক ও ক্ষমতার লোভের কারণে সংঘটিত হয়। পাণ্ডব ও কৌরবদের মধ্যে ক্ষমতার জন্য দ্বন্দ্ব ছিল, যেখানে কৌরবরা চেয়েছিল পুরো হস্তিনাপুরের রাজত্ব, এবং পাণ্ডবদের দাবি ছিল তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার। দুরুদর্শী শাস্ত্রজ্ঞদের পরামর্শ সত্ত্বেও কৌরবরা যুদ্ধের পথে আগিয়েছিল, যার ফলস্বরূপ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পাণ্ডবদের সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল।

প্রশ্ন ২: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মধ্যে কী কী ঘটনা ঘটেছিল?
উত্তর: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো:

অর্জুনের দ্বন্দ্ব: অর্জুন যখন যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর আত্মীয়, গুরু, ও বন্ধুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, তখন তিনি দুঃখিত হয়ে পড়েন এবং গীতার উপদেশ পান শ্রীকৃষ্ণ থেকে।
ভীষ্মের মৃত্যু: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে মহর্ষি ভীষ্ম শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হন, কিন্তু তিনি মারা যান না, কারণ তিনি নিজেকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করেছিলেন।
দ্রোণাচার্যর মৃত্যু: দ্রোণাচার্য পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হন। তাঁর মৃত্যু সংঘর্ষের মোড় পরিবর্তন করে দেয়।
কর্ণের মৃত্যু: মহাপুরাণের এক বড় যুদ্ধনায়ক, কর্ণ, যুদ্ধের শেষের দিকে নিহত হন, যখন তিনি পূর্ণ শক্তির সাথে লড়াই করছিলেন।


প্রশ্ন ৩: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর কী হয়েছিল?
উত্তর: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর পাণ্ডবরা হস্তিনাপুরে ফিরে আসেন এবং রাজত্ব লাভ করেন। তবে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও নৈতিক সংকট তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। যুদ্ধ শেষে, অর্জুন, যিনি মহাকবির শিষ্য ছিলেন, ধ্যান ও আত্মসংবেদন দিয়ে নিজের পাপমুক্তির চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে, পাণ্ডবরা শাস্তির শিকার হন এবং তাদের রাজ্য হস্তিনাপুর ছাড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত, তারা স্বর্গযাত্রা করেন, কিন্তু তাদের পেছনে রেখে যায় বহু শোক, মৃত্যুও বেদনাদায়ক স্মৃতি।

প্রশ্ন ৪: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের নৈতিক দিক কী ছিল?
উত্তর: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের নৈতিক দিক বিশাল এবং জটিল। যুদ্ধের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, এবং শাস্ত্রের বিপরীতে ব্যক্তিগত স্বার্থের মধ্যে অশান্তি দেখা দেয়। পাণ্ডবরা যুদ্ধ করতে বাধ্য হলেও, তাঁরা জানতেন যে যুদ্ধের ফল ভয়াবহ হবে, যেখানে অন্যদের মৃত্যু হতে পারে। গীতার আলোচনায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জানিয়ে দেন যে, ন্যায় এবং ধর্মের পথ অনুসরণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তবে বাস্তবতা ছিল, যুদ্ধটি ধ্বংসাত্মক ছিল এবং এর ফলস্বরূপ মানবতার ক্ষতি হয়।

প্রশ্ন ৫: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের চিরস্থায়ী প্রভাব কী ছিল?
উত্তর: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ফলস্বরূপ সমাজে গভীর পরিবর্তন ঘটে। যুদ্ধের মাধ্যমে শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটলেও, যুদ্ধের ফলস্বরূপ দুর্ভোগ ও বিপর্যয় ঘটে, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধের পরবর্তী যুগে, মানুষ ধীরে ধীরে যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এবং ন্যায় ও ধর্মের পথে চলে যেতে শিখে।

উপসংহার

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ মহাভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যা শুধুমাত্র শারীরিক সংগ্রামের গল্প নয়, বরং মানবতা, নৈতিকতা, ধর্ম, এবং অধর্মের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের প্রতিফলন। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মহাভারত আমাদের শেখায় যে, কখনোই শক্তি বা ক্ষমতার অপব্যবহার করা উচিত নয় এবং ধর্মের পথে চলাই সব সময় সঠিক। শ্রীকৃষ্ণের প্রদত্ত গীতা আমাদের দেখায় যে, জীবনে সঠিক পথ অনুসরণ করা, নিজের কর্তব্য পালন করা এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মাধ্যমে, মহাভারত মানব জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন বন্ধুত্ব, প্রতিশোধ, শত্রুতা, ক্ষমা, এবং আত্মবিশ্বাসের নানা জটিলতা তুলে ধরে। এই যুদ্ধের পরিণতি কেবল ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের জন্য এক গভীর শিক্ষা।

আরও পড়ুনঃ

* মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী ও শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ 

* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন

 

👇আপনি আমাদের তথ্যগুলি আরও যেসব মাধ্যমে পাবেন।👇

👉Facebook পেজ ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন।

👉X (twitter) পেজ ফলো করে রাখুন – এখানে ক্লিক করুন।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url