মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী ও শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুন ও শকুনির বাণী সমূহ

 
 
১. যখন সংসারে দেখার মত কিছুই থাকে না, তখন মানুষ ঈশ্বর এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) 

২. জদি কোন ঘটনার মানুষ ভয়প্রাপ্ত হয় তবে তার পরাজয়ই হয়। আর জে মানুষ সব হারিয়েও শান্ত আর একাগ্র থাকে সেই জয়ী।   
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

৩. বাস্তবে না পরিচয় মানুষের দেহের সাথে যুক্ত থাকে না তো সম্পর্কের ভিত্তি তার দেহের সাথে যুক্ত থাকে। মানুষের স্বভাব, তার আচরণ আর তার কার্যই তার পরিচয়।
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)


৪.  দান তাকেই বলে জাতে দানী হারায় আর যাচক প্রাপ্তি লাভ করে। কিন্তু বলিদান সেটাই হয় যা দানী দেয় আর সমস্ত জগৎ প্রাপ্ত করে। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

৫. সমুদ্র হোক বা সংসার যে ধর্মের নৌকা প্রস্তুত করে সে ঠিক পার হয়ে যায়।
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

৬. সময় কখনও মানুষের নির্দেশিত পথে চলে না, মানুষকে সময়ের নির্দেশিত পথে চলতে হয়। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

৭. প্রত্যেক স্ত্রী-লোক মাতা দূর্গার আরেক রূপ হয়। যে স্ত্রী লোকের সম্মান করে না, তার সামর্থই বৃথা। 
-(মহারথী অর্জুন)

৮. ধর্মের উপদেশ দেয়া যায়, আদেশ কিছুতেই দেয়া যায় না। সকলকে নিজের ধর্ম স্বয়ং নিশ্চিত করতে হয়। 
-(বেদব্যাস)

৯. যে বস্তু সহজেই লাভ করা যায়, সে বস্তুর প্রতি মানুষের মূল্যবোধ থাকে না। 
-(মহামন্ত্রী বিদুর) 

১০. চরিত্রের পরিক্ষা তখনই হয়, যখন অপরিচিত কারো সংস্পর্শে আসা হয়। 
-(মহামহিম ভীষ্ম)

১১. জয়ের জন্য বলের চেয়ে অধিক ছলের প্রয়োজন। 
-(শকুনি)

১২. সুগন্ধ, দুরগন্ধ ও মানুষের স্বভাব কখনো গোপন থাকে না। 
-(শকুনি)
  
১৩. পরিস্থিতিকে যদি নিজের অনূকুলে না আনতে পার, তবে তাকে শত্রুর প্রতিকুল বানিয়ে ফেলো। 
-(শকুনি)

১৪. যারা শত্রুর শত্রু হয়, তাদের সাথে বন্ধুত করতে হয়।
-(শকুনি)

১৫. যেখানে বল কাজ করে না, সেখানে ছল কাজ করে। 
-(শকুনি)

১৬. বিরোধিতা শক্তির প্রমাণ হয় না। শক্তিমান সেই যে সহনশীল, সহ্য করতে পারে। যখন হৃদয় থেকে ক্রোধ আর বিরোধিতা দূর হয়ে যায়, তখন সহনশক্তি ধর্মের শক্তিতে পরিণত হয়। 
 
ক্রোধ থেকে প্রতিশোধের জন্ম হয় আর ধর্ম থেকে ন্যায় জন্মায়। তোমার জীবনেও যদি এমন সময় আসে, যখন তোমার উপর কোন অন্যায় হয় তবে ন্যায় করার পূর্বে নিজের ক্রোধের উপর অঙ্কুশ অবশ্যই রেখো।
  -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

১৭. মনুষ্য এই ভ্রমে থাকে যে সকল নির্ণয় সে স্বয়ং করছে। কিন্তু চোখে আবেগের অবকুন্ঠন বেঁধে যারা আছে তারা স্বয়ং নির্ণয় কি করে করতে পারে? বাস্তবে সব নির্ণয় নিয়তিই করে। 
-(বেদব্যাস)

১৮. যে বৃক্ষ তিক্ত-ফল দান করে সে বৃক্ষকে উৎপাটন করে মধুর ফল প্রদানকারী বৃক্ষকে রোপন করতে হয়। ওই বৃক্ষকেই অধিক খাদ্য গ্রহন করিয়ে বা শাখা প্রশাখাকে কাট-ছাট করলে মধুর ফল পাওয়া যায় না। 
 
ভবিষ্যৎকে শুদ্ধ করার জন্য এই অশুদ্ধ বর্তমানকে ধ্বংস করা অনিবার্য। ভবিষ্যতের উদীয়মান সূর্যের প্রথম কিরনকে দেখো। যা সবার জন্য প্রতিক্ষা করছে।
  -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

১৯. অধিকতর আত্মা নিজের দেহকেই সব কিছু বলে গণ্য করে, স্বয়ং দেহ থেকে যে ভিন্ন তা জানতেই পারে না শরীরের যে দুঃখ, সুখ, স্বাদ। গন্ধ আদির অনুভব হয় তাকেই নিজের অনুভব মেনে নেয়, আর পরিবর্তনের প্রয়াসই করে না। 
 
যে আত্মা পরিবর্তনের প্রচেষ্টাই করে না, নিরন্তর অধর্ম করে চলে তাকে জাগ্রত করার জন্য দন্ড দেয়া অনিবার্য। তুমিও এটা জেনে নাও যে তুমিও কোন শরীর নও, কেবল মাত্র এক আত্মা।
 
 এই পৃথিবীতে পরিলক্ষিত সকল মানুষ তা নয় যা তুমি ওদের গণ্য করছ, কিছু সময়ের জন্য এরা শরীরে বসবাস করছে মাত্র। এদের শরীরের মৃত্যু হবে কিন্তু এরা সবাই অমর। সে পুনরায় নতুন শরীর ধারন করবে।
  -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)


২০. প্রেম উন্নতি দেয়, উচিৎ অনুচিতের জ্ঞান দেয়। প্রেম আর মোহের মাঝে পার্থক্য থাকে। বাস্তবে যা প্রেম, তা কোন মোহ নয়। প্রেমের জন্ম করুণা থেকে হয়, আর মোহের জন্ম অহংকার থেকে। প্রেম মুক্তি দেয়, মোহ আবদ্ধ করে। প্রেম ধর্ম, আর মোহ অধর্ম। 
  -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

২১. নির্ণয় নেয়ার মুহুর্তে আমরা সর্বদা কোন অন্য ব্যক্তির উপদেশ, সুচনা বঞ্চনা বা পরামর্শকে আধার করে থাকি। 
 
আর আমাদের ভবিষ্যতের আধার হয়ে থাকে আমাদের আজকের নেয়া সিদ্ধান্ত। তাহলে কি আমাদের ভবিষ্যৎ অন্য ব্যক্তির পরামর্শ, কোন অন্য ব্যক্তির দেয়া উপদেশের ফল? তবে কি আমাদের সম্পূর্ণ জীবন কোন অন্য ব্যাক্তির বুদ্ধির পরিনাম? আমরা কি কখনও বিচার করেছি?
 
সবাই জানে যে ভিন্ন ভিন্ন লোক একই পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে। মন্দিরে দাড়ানো ভক্ত বলে দান করা উচিৎ। আর চোর বলে যদি সুযোগ পাওয়া যায় তবে ঐ মূর্তির গয়না চুরি করা উচিৎ। ধার্মিক হৃদয় ধার্মিক উপদেশ দিয়ে থাকে আর অধর্ম-ভরা হৃদয় অর্ধামিক পরামর্শ দেয়।
 
এই ধর্মময় উপদেশ পরামর্শ স্বীকার করলে মানুষ সুখের দিকে যায়। কিন্তু এইরকম পরামর্শ স্বীকার করার আগে স্বয়ং নিজের হৃদয়ে ধর্মকে স্থাপন করা কি অনেক বেশি জরুরী নয়? স্বয়ং বিচার করুন। 
  -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

২২. মানুষের সব সম্পর্কের আধার হল প্রত্যাশা। পতি কেমন হবে- যে আমার জীবন সুখ আর সুবিধায় ভরে দিবে। পত্নী কেমন হবে- যে সর্বদা আমার প্রতি সমর্পিত থাকবে। 
 
সন্তান কেমন হবে- যে আমার সেবা করবে, আমার আদেশ মেনে চলবে। মানুষ প্রেম তাকেই দিতে পারে, যে তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে। আর প্রত্যাশার নিয়তিই হচ্ছে ভঙ্গ হওয়া। কিভাবে? কারন- প্রবল ইচ্ছা থাকলেও কোন মানুষ কারোর সকল প্রত্যাশা পূর্ণ করতে পারে না। 
 
আর তার থেকেই জন্ম নেয় সংঘর্ষ। সকল সম্পর্ক সংঘর্ষে পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ যদি প্রত্যাশাকে সম্পর্কের আধার না বানায়, আর স্বীকার করে যে, কেবল সম্পর্কই মূল আধার। তবে কি জীবন আপনা থেকেই সুখ আর শান্তিতে ভরে যাবে না। স্বয়ং বিচার করে দেখুন। 
  -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

২৩. যখনই মানুষের জীবনে কোন বিরূপ পরিস্থিতি আসে মানুষ তখনই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। ঈশ্বরের সম্মুখে মিনতি করে যেন সে পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পায়। 
 
কিন্তু এই প্রার্থনার বাস্তবিকরূপ কেমন হয়? সেটা কি আমরা কখনও বিবেচনা করেছি? প্রার্থনার অর্থ হল নিজের সমস্ত আকাঙ্খা, সমস্ত চিন্তা, সমস্ত সংকল্প, সমস্ত পরিকল্পনা ঈশ্বরের চরনে দান করা। 
 
অর্থাৎ নিজের কর্মেল ফল কি হবে সেই নিয়ে চিন্তা না করে ধর্মের অনুরূপ কর্ম করা। ঈশ্বরের পরিকল্পনাকেই নিয়তি বলে মেনে নেয়া সেটাই তো প্রার্থনা, তাই না? কিন্তু ঈশ্বরের সমস্ত পরিকল্পনা বোজাটা সম্ভব কি? সেসব পরিকল্পনা তো আমাদের কর্মের পরিনামস্বরূপ প্রকাশ পায় সর্বদা।
 
 কিন্তু যদি কেউ সবকর্মকেই ত্যাগ করে, সেটা কি প্রকৃত প্রার্থনা? বাস্তবে কর্মই জীবন আর ফলের প্রতি মোহ না করাই সত্যিকারের প্রার্থনা। যে প্রার্থনা কর্মের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, মানুষকে কার্যই করতে না দেয়, সেটা প্রার্থনা না পরাজয়? স্বয়ং বিচার করুন। 
  -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)


২৪. যখন নিজের কোন ভাল কাজের বদলে দুঃখ লাভ হয়, অথবা কেউ দুঃস্কর্ম করেও সুখ লাভ করে, তাহলে মন অবশ্যই এ ভাবতে বসে যে, তাহলে ভাল কাজ করা, ধর্মের পথে চলার তাৎপর্যটা কি? 
 
কিন্তু দুরাত্মাকে কি ভোগ করতে হয় সেটাও দেখুন। দুঃস্কর্ম যে করে তার মন সর্বদা চঞ্চল থাকে, ব্যাকুল হতে থাকে, মনে সর্বদা নতুন নতুন সংঘর্ষ উৎপন্ন হয়। অবিশ্বাস তাকে সারাজীবন ছোটাতে থাকে, একে কি সুখ বলে? যে ব্যাক্তি ধর্মের পথে চলে সর্বদা সুকর্মে লিপ্ত থাকে। 
 
সৎ চরিত্রের অধিকারী হৃদয় বর্সদা শান্ত থাকে। পরিস্থিতি তার জীবনের সুখের বাধা হয়ে দ্বারায় না। সমাজে তার সম্মান আর মনের সন্তোষ অক্ষেত থাকে সর্বদা।
 
অর্থাৎ ভালো ব্যাবহার ভবিষ্যতে সুখের পথ দেখায় না, ভালো ব্যাবহার নিজেই সুখ দেয়। অপরদিকে দুরব্যাবহার ভবিষ্যতে দুঃখের পথ দেখায় না, অধর্ম সেই মুহুর্তে দুঃখকে উৎপন্ন করে। ধর্ম থেকে সুখ পাওয়া যায় না, ধর্মই স্বয়ং সুখ। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)


২৫. ভবিষ্যৎ তো প্রতিদিন, প্রতিক্ষনে নির্মিত হয়। ভবিষ্যৎ যে কিছু নয়। মানুষের আজকের নির্ণয় ও কর্মের পরিনাম আগামীর ভবিষ্যৎ। আপনি যদি আজ কোন নির্ণয় করে সন্তোষ বোধ করেন, তবে বিশ্বাস রাখুন ভবিষ্যতে অবশ্যই তার থেকে সুখ লাভ হবে। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

২৬. যে স্বাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আহারকেই ত্যাগ করে বাস্তবে তার মন থেকে স্বাদের লালসা কখনোই যায় না। তার দু-প্রকারের হানি হয়। প্রথমত সে দুর্বল হয়ে পরে। যার কারণে পরমাত্মাকে প্রাপ্ত করার জন্য যে প্রসেচষ্টা অনিবার্য তা সে করতে সক্ষম হয় না। 
 
 আর দ্বীতিয়ত- সর্বদাই তার মন স্বাদ গ্রহণের লালশায় পূর্ণ থাকে। এই হেতু আহার ত্যাগের চাইতে উত্তম কার্য স্বাদ গ্রহণের লালশাকেই ত্যাগ করে ফেলঅ।
 
কর্মযোগী নিজের মনের সমস্ত লালশাকে নিষ্কাশন করে, জীবনেকে কর্তব্য মনে করে কার্য অবশ্যই করে, সেই কার্যে আবদ্ধ হয় না। অর্থাৎ যে ব্যাক্তি নিজের কার্য থেকে আশা বা আকাঙ্খরা রাখে না তারই কার্য পূর্ণ হয়। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

২৭. ভয় কী? 
মানুষের জীবনে ভয়ের বসত করে সর্বদাই, কখনও সম্পত্তি নাশের ভয়, কখনও অপমানের ভয়, কখনও আপন জনের সাথে বিচ্ছেদের ভয়। এ কারণেই ভয়ের অস্তিত্ব সবার একই রকম মনে হয়। 
 
কখনও কি বিবেচনা করেছেন- যে কোনো পরিস্থিতি বা বস্তু ভয়ের জন্ম দেয়। তার থেকে বাস্তবে দুঃখ তৈরি হয়? না এমন কোন নিয়ম নেই, আর সবার অভিজ্ঞতা তো এই বলে- ভয় ধারন করলেই ভবিষ্যতের দুঃখের নিবারণ কমে। 
 
ভয় কেবল আগামি দুঃখের কল্পনা মাত্র। বাস্তবের  সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ভয় আর কিছু নয়, কেবল কল্পনা মাত্র। ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া কি খুব কঠিন কাজ? অবশ্যই বিচার করে দেখুন। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)


২৮.  পূর্ব পুরুষদের ইচ্ছা, আশা, মহৎ আকাঙ্খা, ক্রোধ, বিবাধ, প্রতিশোধ এ সব কিছুর ভার নতুন প্রজন্মকে বহন করতে হয়। মাতা-পিতা নিজের সন্তানকে দিতে তো চান বিশ্বের সমস্ত সুখ, কিন্তু দিয়ে ফেলেন নিজের জমানো পীরার সত্তা। 
 
দিতে চান অমৃত, কিন্তু সাথে সাথে বিষের ঘড়াও পূর্ণ করে দিয়ে জান। আপনি বিচার করুন আপনি আপনার সন্তানকে কি দিয়েছেন জীবনে? অবশ্যই প্রেম, জ্ঞান, সম্পত্তি এসব দিয়ে থাকবেন। 
 
কিন্তু তার সাথে সাথে ওদের মনে বিষ দেননি তো? পূর্ব শর্ত দিয়ে ভালমন্দের পূর্ব পরিকল্পিত ব্যাখ্যা দেন নি তো? ব্যাক্তির সাথে ব্যাক্তির, সমাজের সাথে সমাজের রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের এ সংঘর্ষ পূর্ব ব্যাখ্যার থেকে নির্মিত নয় কি? হত্যা, মৃত্যু, রক্তপাত, 
 
এসব কি পূর্বব্যাখ্যা প্রেমের প্রকাশের সাথে ঘৃনার অন্ধকার ও উপহার দেন। অন্ধকার মনের হোক,হৃদয়ের হোক বা বাস্তবিক হোক, তার থেকে কেবল ভয়ের উৎপত্তি হয়। কেবল ভয়। স্বয়ং বিচার করুন। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)


২৯. কখনও কখণও কোন ঘটনা মানুষের জীবনের সকল পরিকল্পনা ভেঙ্গে দেয়। আর মানুষ সেই আঘাতকেই জীবনের কেন্দ্র বানিয়ে নেয়। কিন্তু ভবিষ্যৎ কি মানুষের পরিকল্পনার আধারে নির্মিত হয় না।
 
 যেভাবে কোন উচু পর্বতে যে ব্যাক্তি সর্বপ্রথম চড়ে সেই পর্বতের পাদদেশে বসে সে যা পরিকল্পনা করে সেই পরিকল্পনাই কি তাকে পর্বতের শিখরে পৌছে দিতে পারে? না, বাস্তবে যত উপরে ওঠে তত নিত্যনতুন পরীক্ষা নতুন বিরম্বনা নতুন ধরনের অবরোধের সম্মুখীন হয়।
 
প্রত্যেক পদে তার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে হয়। প্রত্যেক পদে তাকে পরিকল্পনা বদলাতে হয়। না হলে যদি পুরাতন পরিকল্পনা তাকে ক্ষাদের দিকে ঠেলে দেয়। সে পর্বতকে নিজের যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে না। কেবল নিজেকে পর্বতের যোগ্য তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। 
 
আচ্ছা জীবনের ক্ষেত্রে তো এমনি হয়, তাই না? যখন মানুষ তার কোন একটি ক্ষেত্রে বাঁধা, কোন একটি অবরোধকে জীবনের কেন্দ্র বানিয়ে নেয়, নিজের জীবনের গতিই থামিয়ে দেয়, তখন সে তার জীবনে সফল হতে পারে না। পারে না সুখ আর শন্তি প্রাপ্ত করতে। অর্থাৎ জীবনকে নিজের যোগ্য করে তোলার বদলে স্বয়ং নিজেকে জীবনের যোগ্য গড়ে তোলাই কি সাফল্য আর সুখের একমাত্র মার্গ নয়? স্বয়ং বিচার করুন।
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) 

৩০.  সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুখে ভরিয়ে তোলার চেষ্টা। এই তো প্রত্যেক মাতা-পিতার প্রথম কর্তব্য। যাদের আপনি এই সংসারে এনেছেন, যাদের কর্মের দ্বারা আপনারও পরিচয় পাবে ভবিষ্যতে। 
 
তাদের ভবিষ্যৎ সুখদায়ক করার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কিইবা হতে পারে? কিন্তু সুখ আর সুরক্ষা এসব কি মানুষের কর্ম থেকেই প্রাপ্ত হয় না? 
 
মাতা-পিতার দেয়া ভাল বা মন্দ সংস্কার বা তাদের সুরক্ষা এসব কি মানুষের কর্ম থেকেই প্রাপ্ত হয় না? মাতা-পিতার দেয়া ভাল বা মন্দ সংস্কার বা তাদের দেয়া যোগ্য অথবা অযোগ্য শিক্ষা এ সবই কি আজকের সমস্ত কর্মের মূল নয়?
 
 সংস্কার আর শিক্ষা থেকে তৈরি হয় মানুষের চরিত্র। অর্থাৎ মাতা-পিতা যেমন তার সন্তানদের চরিত্র নির্মাণ করেন তেমনই হয় তার ভবিষ্যৎ। কিন্তু তবুও অধিকতর মাতা-পিতা নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার চিন্তায় তাদের চরিত্র নির্মাণের কার্যের কথা ভুলেই জান।
 
বস্তুত যে মাতাপিতা কেবল নিজের সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেন তার চরিত্রের নির্মাণ করেন সেই সন্তানের প্রশস্তি বিশ্বসংসার করে। স্বয়ং বিচার করুন।
 -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) 

৩১. সমাজে সর্বদাই স্ত্রী- লোকদের সাথে অন্যায় হয়। মানব সমাজ স্ত্রী- লোককে সর্বদা শোষণ, অন্যায় আর অপমান দিয়েছে। 
 
আপনারা নিজেদের আশেপাশে দেখুন, সমগ্র ইতিহাসকে দেখুন এই একই রূপ দেখা যাবে যে পুরুষের ঈর্শা, অহংকার, বৈরিতা, লালসা, এই সব কুচিন্তার পরিনাম স্ত্রী-লোকই ভোগ করে। যুদ্ধ পুরুষ করে আর পরাজিত নগরে স্ত্রী-লোকের সাথে বলাৎকার করা হয়।
 
পুরুষ মদ্যপান ও দূতক্রীরায় নিজের সম্পত্তি হারায়, আর স্ত্রী- লোকদের ভাগ্যে নেমে আসে ক্ষুধা। পুরুষের অহংকার ক্ষুন্ন হয় আর স্ত্রী লোকের স্বাধীনতা ও সুখে বাঁধা উৎপন্ন হয়ে যায়। 
 
পুরুষ জীবনে পরাজিত হয়ে পরিবারকে ত্যাগ করে আর স্ত্রী নিজের সন্তানদের ক্ষুধা নিবারনের তারনে সংঘর্ষ করতে থাকে। সমগ্র সংসারের দুঃখের হিসাব করুন স্পষ্ট দেখতে পাবেন যে পুরুষের তুলনায় স্ত্রী-লোক অধিকতর দুঃখ ভোগ করে। 
 
এ কোন প্রকারের সমাজ রচনা করেছি আমরা? যেখানে মনুষ্যজাতীর অর্ধেক ভাগ অপর অর্ধেক ভাগকে নিরন্তর পদদলিত করছে। আর সেই পদলিত স্ত্রী-লোক মানুষের ভবিষ্যতের  জন্মদায়িনী? 
 
সৃষ্টিকে দেখুন- নতুন বৃক্ষকে জন্মদানকারী বীজের আসপাশে ঈশ্বর ফুলের পাপরী নির্মাণ করেছেন। তাকে রং ও সুগন্ধ দিয়ে ভরে দিয়েছেন। যেখানে ভবিষ্যতের জন্ম হয় সেখানে তো কেবল মাত্র সৌন্দর্য, কেবল সুখ সন্তোষ ও সম্মান হওয়া আবশ্যক নয় কি? কিন্তু সমাজ স্ত্রী- লোককে দুঃখ দিয়ে সমস্ত ভবিষ্যৎকে দুঃখ দ্বরা পূর্ণ করতে থাকে। 
 
প্রহার, শোষণ, পীরা এই সবে ঝলসে যাওয়া স্ত্রী- লোক স্বাস্থবান সুখী সন্তানের জন্ম কোন প্রকারে দেবে? অর্থাৎ যে যে সময় কোন স্ত্রী- লোকের অপমান হয়, কোন স্ত্রী-লোক এর উপর শোষণ হয়, 
 
কোন নারীর কেশ আকর্ষন করা হয় সেই সময় কোন না কোন রূপে এক যুদ্ধের জন্ম হয়। কোন না কোনভাবে মহাভারতের আরম্ভ হয়। স্বয়ং বিচার করুন। বারংবার বিচার করুন।।
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) 

৩২. সুখের কামনা যে করে তার সুখ লাভ হয় না, যে সুখ চিনতে পারে তারই সুখ লাভ হয়। তুমি যদি এটা জেনে যাও যে তোমার জন্য সুখ কি, তবে তুমি সুখ অবশ্যই পাবে। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) 

৩৩. যে কেবল নিজের পীরাকে আপন করে জীবন কাটায়, সে শক্তিহীন হয়ে পরে। কিন্তু যে ব্যাক্তি সমগ্র সমাজের পীরাকে আপন হৃদয়ে ধারণ করে জীবন কাটায়, সে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) 

৩৪. সুখ তো উপলব্ধী করার বস্তু, প্রাপ্ত করার বস্তু নয়। যে ব্যাক্তি বস্তুকে সুখ বলে মানে বাস্তবে তার সুখ প্রাপ্ত হয় না। যে সত্তা অথবা সম্পত্তিকে সুখ বলে গন্য করে সে অবশ্যই নিজের জন্য বিনাশকে আমন্ত্রণ জানায়। 
-(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)   

 
 
Next Post Previous Post
10 Comments
  • Unknown
    Unknown ২৪ জুন, ২০২০ এ ৭:৩৩ PM

    হরে কৃষ্ণ,

  • Unknown
    Unknown ৮ আগস্ট, ২০২০ এ ৭:৫০ PM

    হরে কৃষ্ণ ভগবান সবার মঙ্গল করুন 🙏🙏

  • Quotes King
    Quotes King ২৯ আগস্ট, ২০২০ এ ১:৫৭ PM

    Hora Krishna

  • Unknown
    Unknown ৯ জানুয়ারী, ২০২১ এ ৮:৪৩ PM

    হরে কৃষ্ণ

  • Unknown
    Unknown ৯ জানুয়ারী, ২০২১ এ ৮:৪৫ PM

    আমি সবার মাঝে কথা গুলো শিয়ার করবো হরে কৃষ্ণ জয় রাধে

  • Unknown
    Unknown ৮ মে, ২০২১ এ ৬:৫২ PM

    Hare Krishna

  • Unknown
    Unknown ৫ জুলাই, ২০২১ এ ১:০৪ AM

    হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে

  • Unknown
    Unknown ১ ডিসেম্বর, ২০২১ এ ৫:০৮ PM

    Hare krishna 🙏🙏🙏

  • Unknown
    Unknown ১০ এপ্রিল, ২০২২ এ ৫:১১ PM

    Hare Krishna 🙏🙏

  • Unknown
    Unknown ২৫ এপ্রিল, ২০২২ এ ৯:০৬ PM

    হরে কৃষ্ণ ❤️

Add Comment
comment url