হিন্দু ধর্মে স্বর্গ ও নরক, নরক কত প্রকার ও কি কি?

 
স্বর্গ-নরক

স্বর্গ ও নরকের বর্ণনা


ভগবদ্গীতায় (৩/২৭) উল্লেখ করা হয়েছে- 
প্রকৃতে ক্রীয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ। 
অহংকার বিমূঢ়াত্মা কর্তাহমিতি মন্যতে।।
“প্রকৃতিতে সবকিছুই সম্পাদিত হয় গুণ এবং কর্ম অনুসারে, কিন্তু অহংকারের দ্বারা বিমোহিত হয়ে জীব নিজেকে কর্তা বলে অভিমান করে।” মূর্খ মানুষ মনে করে যে, সে কোনো আইনের অধীন নয়। সে মনে করে, ভগবান বা কোনো নিয়ন্তা নেই এবং সে তার খেয়ালখুশি মতো যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এভাবে সে বিভিন্ন পাপকর্মে লিপ্ত হয় এবং তার ফলে প্রকৃতির নিয়মে তাকে জন্ম-জন্মান্তরে বিভিন্ন নারকীয় পরিবেশে  দন্ডস্বরূপ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। তার এ যন্ত্রণা ভোগের মূল কারণ, সে মুর্খতাবশত নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে মনে করে, যদিও সে সর্বদাই জড়াপ্রকৃতির কঠোর নিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এসমস্ত নিয়ম কার্য করে প্রকৃতির গুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এবং তাই প্রত্যেকে তিনিটি গুণের বিভিন্ন প্রকার প্রভাবের অধীনে কর্ম করে। তার কর্ম অনুসারে সে এজীবনে অথবা পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন প্রকার ফল ভোগ করে। ধার্মিকেরা নাস্তিকদের থেকে ভিন্নভাবে আচরণ করে, তাই তারা যে কর্মফল ভোগ করে তা-ও ভিন্ন। 

গুণ ও কর্ম অনুসারে স্বর্গ ও নরক ভোগ

যারা সত্ত্বগুণে কর্ম করে, তারা ধার্মিক এবং সুখী হয়, যারা রজোগুণে কর্ম করে, তারা সুখ ও দুঃখ দুই-ই ভোগ করে, আর যারা তমোগুণের দ্বারা প্রভাবিত, তারা সর্বদাই দুঃখী এবং তারা পশুর মতো জীবনযাপন করে। বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন গুণের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ফলে জীবের গতির তারতম্য হয়। 

পূর্ণকর্মের ফলে যেমন স্বর্গভোগ হয়, তেমনি পাপকর্মের ফলে নরকভোগ হয়। তমোগুণের প্রভাবে মানুষ পাপকর্মে লিপ্ত হয় এবং তাদের অজ্ঞানের মাত্রা অনুসারে তাদের নারকীয় জীবনের বিভিন্ন স্তর প্রাপ্ত হয়। কেউ যদি প্রমাদবশত তামসিক আচরণ করে, তাহলে তাকে অল্প কষ্ট ভোগ করতে হয়। কেউ যদি জ্ঞানবশত পাপকর্ম করে, তাহলে তাকে আরো বেশি নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। আর যারা নাস্তিকতাবশত পাপকর্ম করে, তাদের সবচেয়ে বেশি নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। অনাদিকাল ধরে জীব সহস্র নরকগতি প্রাপ্ত হয়। 

কর্মের সাক্ষ্মী কে?

চেতনার বিবর্তনক্রমে জীবাত্মা মনুষ্যদেহ লাভ করে। ভগবান মানুষকে ভালোমন্দ বিচারবোদ দান করে থাকেন। মানুষ তার স্বতন্ত্র ইচ্ছাক্রমে কর্মক্ষেত্রে সদাচার বা কদাচার করতে থাকে। মানুষের সমস্ত কর্মের সাক্ষী চৌদ্দ জনের নাম মহাভারতে আদি পর্বে উল্লেখ রয়েছে। যথা- (১) সূর্য, (২) চন্দ্র, (৩) বায়ু, (৪) অগ্নি, (৫) আকাশ, (৬) পৃথিবী, (৭) জল, (৮) দিবা, (৯) নিশা, (১০) ঊষা, (১১) সন্ধ্যা, (১২) ধর্ম, (১৩) কাল এবং পরমাত্মা। 

সারা বিশ্বে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে আমরা অনেক কিছু পাপ কর্ম করতে পারি, কিন্তু এসকল দেবতাদের কাউকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। আবার, আমাদের বহু সৎ কর্মের হিসাব এই বিশ্বে কেউ না রাখলেও তাঁরা সাক্ষী থাকেন। এমনকি সমস্ত দেবতাকেও যদি কখনো সম্ভব হয়ে থাকে, কোনোকিছু তাদের আড়ালে থাকার বা করার মতো, তবুও কাল কিংবা সর্বোপরি পরমাত্মাকে আড়াল করে কোনোকিছু করা সম্ভব নয়। 

তিন প্রকার পাপ

পাপ নিত প্রকার। যথা- (১) শারীরিক পাপঃ জীবহিংসা, চুরি, পরস্ত্রী সঙ্গ ইত্যাদি। (২) বাচিক পাপঃ অসৎ প্রলাপ, নিষ্ঠুর বাক্য প্রয়োগ, পরদোষ কীর্তন, মিথ্যা ভাষণ ইত্যাদি। (৩) মানসিক পাপঃ পরের দ্রব্যে লোভ, পরের অনিষ্ট চিন্তা, বেদবাক্যে অশ্রদ্ধা ইত্যাদি। এই ত্রিবিধ পাপ সযত্নে এড়িয়ে চললে মানুষ ইহলোকে ও পরলোকে সুখী হতে পারে। শ্রীভীষ্মদেব যুধিষ্ঠির মহারজকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। (মহাভারত অনুশাসন পর্ব ১৩ অধ্যায়) 


নরকের অবস্থান কোথায়? 

জনৈক স্বনামধন্য বাঙালি সাহিত্যিক বলেছেন- 
“কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর? 
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।”

এ কবিতাংশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বুঝতে না পেরে অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা মনে করে যে, মৃত্যুর পর মানুষের স্বর্গে বা নরকে গমনের ধারণাটি ভ্রান্ত। কিন্তু, কবি এখানে বলেননি যে, পরকাল বা স্বর্গ-নরক বলে কোনো স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে, তিনি স্বর্গ নরক সম্বন্ধে এখানে কেবল আংশিক ধারণা দিয়েছেন। বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে বৈদিক শাস্ত্রে। শ্রীমদ্ভাগবতে (৩.১০.৮) বলা হয়েছে, ব্রহ্মান্ডের অভ্যন্তরস্থ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভিপদ্মজাত ব্রহ্মা পদ্মকর্ণিকাতে প্রবেশ করে একে প্রথমে উর্ধ্বলোক, মধ্যলোক (ভূলোক) এবং অধঃলোক- তিনটি স্তরে, তারপর চৌদ্দটি স্তরে ভাগ করেন; যাকে বলা হয় চতুর্দশ ভুবন-দ্বিসপ্তধা। 


উল্লেখ্য যে, একটি স্তরে এক বা একাধিক গ্রহলোক বিদ্যমান। এই চতুর্দশ ভুবনের মধ্যে পৃথিবীসহ উপরে রয়েছে সাতটি লোক- ভূ, ভূব, স্বর্গ, মহ, জন, তপ ও সত্য বা ব্রহ্মলোক এবং পৃথিবীর নিচে রয়েছে সাতটি লোক- অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল ও পাতাল। অর্থাৎ, পৃথিবীর অবস্থার স্বর্গ ও নরক গৃহের মাঝামাঝি। তাই, এখানে স্বর্গ ও নরক উভয় গ্রহলোকের প্রভাবই বিদ্যমান এবং কলিপূর্ব যুগত্রয়ে দৈব ও আসুরিক গুণ পৃথকভাবে পৃথক ব্যক্তির মধ্যে অবস্থান করলেও, বিশেষত এই কলিযুগে একই মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর। 

ত্রিলোকের অন্তরালে অবস্থিত। দক্ষিণদিকে ভূমন্ডলের অধঃভাগে এবং গর্ভোদক সমুদ্রের উপরিভাগে নরক গ্রহের অবস্থান। এ প্রসঙ্গে শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, “পাতাল লোকের নিচে নরক; আর ব্রহ্মান্ডের তলদেশে গর্ভোদক সমুদ্র। তাই নরক গ্রহের অবস্থানটি হচ্ছে পাতাললোক ও গর্ভোদক সমুদ্রের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।” 

পাপাচারী মানুষ যখন স্থুল দেহ ত্যাগ করে, তখন যমদূতেরা তার সূক্ষ্ম দেহকে পাশবদ্ধ করে যমপুরীতে নিয়ে যায়। পৃথিবী থেকে যমপুরী অর্থাৎ নরক গ্রহের দূরত্ব ৮৬ হাজার যোজন বা ৭ লক্ষ ৯২ হাজার মাইল। অর্থাৎ ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার কিলোমিটার। মহাভারতে বলা হয়েছে, ষড়শীতি-সহস্রযোজন-বিস্তীর্ণ মার্গ। মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যে অতি দ্রুতগতি যমদূতেরা পাপাত্মাকে সেই স্থানে নিয়ে যায়। নরকের যম পুরীর নাম হচ্ছে সংযমনী। শ্রীসূর্যদেবের পুত্র ধর্মরাজ যম নরকের অধিপতি। 

আমরা স্বর্গ-নরক দেখি না কেন? 

ব্রহ্মান্ডে অসংখ্য গ্রহলোক আছে, যেগুলো আমরা কেউই দেখতে পাই না। কারণ, সেগুলো অনেক দূরবর্তী হওয়ায় আমাদের দৃষ্টিসীমার অতীত। তেমনি স্বর্গ-নরকও সুদূরবর্তী। তাছাড়া, পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষই তার পূর্বজীবনের স্মৃতি মনে রাখতে পারে না। তাই পূর্বজীবনে কেউ স্বর্গে অথবা নরকে থাকলেও তা তার বিস্মৃত। আবার, এ জীবনে যেহেতু এখনো মৃত্যুবরণ করেনি, তাই স্বর্গ-নরক দেখেনি। 
 
 
তাই- যা দেখিনা দুই নয়নে, বিশ্বাস করি না গুরুর বচনে-এরূপ মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরাই স্বর্গ-নরক, পরকাল, আত্মা বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, যদিও তারা অদেখা অনেককিছুই বিশ্বাস করে; যেমন পরমাণু, ভাইরাস, মন ইত্যাদি। এদের বলা হয় নাস্তিক। তবে, তাদের হতাশ হবার কিছু নেই; কেননা, মৃত্যুর পর অচিরেই নরকের দর্শন পাবেন। একইভাবে, পুণ্যাত্মারাও মৃত্যুর পরই স্বর্গের দর্শন পাবেন। 

বিভিন্ন প্রকার নরক

শতসহস্র নরককুন্ড বা শাস্তিবিভাগ রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেবের পুত্র শ্রীল শুকদেব গোস্বামী শ্রীপরীক্ষিৎ মহারাজের কাছে মাত্র ২৮ টি নরকের বর্ণনা করেছেন, যা শ্রীমদ্ভাগবতে (৫/২৬/৫-৩৬) বর্ণিত হয়েছে। যাতনা শরীর নামক এক প্রকার শরীর ধারণ করে পাপাত্মারা সেখানে বহু সহস্র বৎসর অবধিও নরক যাতনা ভোগ করে। যাতনা শরীরটির বৈশিষ্ট্য হলো বহু রকমের নিপীড়ণ করা হলেও শরীর ত্যাগ হবে না। কেবল যাতনাই পেতে থাকবে। 


কোন পাপে কোন নরক-কীরূপ শাস্তি? 

 মানুষ কিছু পাপ-পুণ্যের ফল এ পৃথিবীতে ভোগ করে এবং কিছু ফল ও অন্যান্য ঊর্ধ্ব-অধঃলোকগুলোতে অথবা স্বর্গ-নরকে গিয়ে ভোগ করে। পৃথিবীতে কোন ধরনের ব্যক্তি কী ধরনের পাপাচার করলে নরকের কোন কুন্ডে কীভাবে শাস্তি ভোগ করে, তা শুকদেব গোস্বামী বর্ণনা করেছেন। 

(১) তাম্রিশঃ  যে ব্যক্তি পরধন, পরস্ত্রী-পুত্র অপহরণ করে, তাকে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর যমদূতেরা কালপাশে বেঁধে বলপূর্বক এই নরকে নিক্ষেপ করে শাস্ত্রি ভোগ করায়। এই নরক ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন। সেখানে পাপীকে নির্জলা উপবাস রেখে তার উপর প্রচন্ড প্রহার করা হয় এভাবে ক্রুদ্ধ যমদূতদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে সে মূর্ছিত হয়। 

(২) অন্ধ তাম্রিশ যে ব্যক্তি পতিকে বঞ্চনা করে তার স্ত্রী-পুত্র উপভোগ করে, সে এই নরকে পতিত হয়। বৃক্ষকে ভূপতিত করার পূর্বে যেমন তার মূল ছেদন করা হয়, তেমনি সেই পাপীকে সেই নরকে নিক্ষেপ করার পূর্বে যমদূতেরা তাকে এতই যন্ত্রণা প্রদান করে যে, প্রচন্ড প্রহারে তার বুদ্ধি ও দৃষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। 

(৩) রৌরবঃ যে ব্যক্তি তার জড় দেহটিকে তার স্বরূপ বলে মনে করে, তার নিজের দেহ ও দেহের সঙ্গে সম্পর্কিত আত্মীয়-স্বজনদের ভরণ পেষণের জন্য দিনের পর দিন অপর প্রাণীকে হিংসা করে, সে ব্যক্তি প্রাণী হিংসাজনিত পাপের ফলে রৌরব নরকে নিপতিত হয়। যাদের হিংসা করা হয়েছে, সেই প্রাণীরা সর্পের থেকেও ভয়ঙ্কর রুরু প্রাণী হয়ে তাকে পীড়া দেয়। 

(৪) মহা রৌরবঃ যারা অন্যদের কষ্ট দিয়ে নিজেদের দেহ ধারণ করে, ক্রব্যাদ নামক রুরু পশুরা তাকে অশেষ যাতনা দিয়ে তাদের মাংস খেতে থাকে। 

(৫) কুন্তীপাকঃ যে সমস্ত নিষ্ঠুর মানুষ তাদের দেহ ধারণের জন্য এবং জিহ্বার তৃপ্তি সাধনের জন্য নিরীহ পশুপাখিকে হত্যা করে রন্ধন করে, সেই প্রকার ব্যক্তিরা নরমাংসভোজী রাক্ষসদেরও ঘৃণিত। মৃত্যুর পর যমদূতেরা এই নরকে ফুটন্ত তেলে তাদের পাক করে। 

(৬) কালসূত্রঃ ব্রহ্ম-ঘাতক পাপীরা এখানে পতিত হয়। ৮০,০০০ মাইল বিস্তীর্ণ উত্তপ্ত তামার মেঝেতে প্রচন্ড সূর্যতাপের মধ্যে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে হাজার হাজার বছর ধরে পাপী যন্ত্রণা ভোগ করে। 

(৭) অসিপত্র বনঃ যারা নাস্তিক পাষন্ডী তারা এই বনের মধ্যে প্রবেশ করে। যমদূতেরা পাপীকে বেত্রাঘাত দিয়ে পীড়ন করে। প্রহারের যন্ত্রণায় যখন পাপী বনের মধ্যে দৌড়াতে থাকে, তখন তরবারির মতো ধারালো পাতাগুলোতে তার সর্বাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত হয়। তখন সে “হায়, আমি এখন কী করব! আমি কীভাবে রক্ষা পাব!” এই বলে আর্তনাদ করতে করতে পদে পদে মূর্ছিত হয়ে পড়তে থাকে। 


(৮) শূকর মূখঃ কোনো ক্ষমতাসীন ব্যক্তি অদন্ডণীয় বা নির্দোষ ব্যক্তিকে দন্ড দিলে তাকে এখানে আসতে হয়। যমদূতেরা বিশাল যাঁতাকলে ইক্ষুদন্ডের ন্যায় তাকে নিষ্পেষণ করে। তখন সে আর্তস্বরে রোদন করতে করতে দন্ডিত নির্দোষ ব্যক্তির ন্যায় মূর্ছা প্রাপ্ত হয়। 


(৯) অন্ধকূপঃ যে ব্যক্তি কীট পতঙ্গকে হত্যা হত্যা কর, তাকে এই অন্ধকূপে আসতে হয়। সে যেসমস্ত পশু, পাখি, সরীসৃপ, মশা, উকুন, কীট, মাছি ইত্যাদি প্রাণীদের যন্ত্রণা দিয়েছিল, কুঁয়োর মধ্যে তাদের দ্বারা আক্রান্ত্র হয়। নিদ্রাবিহীন ও অসহ্য যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পাপী কোথাও বিশ্রাম করতে না পেরে অন্ধকারে নিরন্তর ছুটতে থাকে এবং পশুর মতো ছটফট করতে থাকে। 

(১০) কৃমিভোজনঃ যে ব্যক্তি অতিথি, বালক, বৃদ্ধদের না ভোজন করিয়ে নিজে ভোজন করে, তাকে এই কুন্ডে কৃমি হয়ে অন্য কৃমিকে খেতে হয় এবং অন্য কৃমি তাকে খেতে থাকে।

(১১) সন্দংশঃ বল প্রয়োগ করে সৎ ব্যক্তির ধন যে হরণ করে তাকে এখানে আসতে হয়। যমদূতেরা উত্তপ্ত কাঁচি ও সাড়াশি দিয়ে তার পেটের নাড়ি বের করে।

(১২) তপ্ত শূর্মীঃ যে পুরুষ বা নারী অগম্য গমন করে, তাকে যমদূতেরা এখানে জ্বলন্ত লৌহমূর্তিকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য করায়।

(১৩) বজ্রকণ্টক শাল্মলীঃ যে ব্যক্তি কামান্ধ হয়ে পশুগমন করে তাকে এখানে ভয়ঙ্কর কাঁটাময় শিমুল গাছে চড়িয়ে টানা হেঁচড়া করা হয়।

(১৪) বৈতরণীঃ এই পূঁজ-রক্ত-বমিনখ পূর্ণ নদীতে হাবুডুবু খেতে হয়।

(১৫) পূয়োদঃ যে ব্যক্তি নিয়মবিহীনভাবে যৌন-জীবনযাপন করে, তাকে এই নোংরা সমুদ্রে কফ-থুতু-পুঁজ-মুত্র খেতে হয়।

(১৬) প্রাণ রোধঃ উচ্চ বর্ণের মানুষেরা পশুপাখি পালন ও হত্যা করলে এই কুন্ডে বাণবিদ্ধ অবস্থায় তাদের নোংরা খেতে হয়।

(১৭) বিশসনঃ যে ব্যক্তি দম্ভ করে যজ্ঞে পশু বলি দেয়, তাকে এই নরকে যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে বলি দেওয়া হয়।

(১৮) লালাভক্ষঃ যে বদ স্বভাব ব্যক্তি পত্নীকে বশে আনতে শুক্রু পান করায়, তাকে এই শুক্র নদীতে ডুবিয়ে জোর করে শুক্র পান করানো হয়।

(১৯) সারমেয়াদনঃ যে ব্যক্তি পরগৃহে অগ্নি সংযোগ করে, করের নামে লুন্ঠন করে, বিষ প্রয়োগ করে, তাকে এই নরকে আসতে হয়। এখানে ৭২০ টি বজ্রদংষ্ট্রা কুকুর সেই পাপীকে জ্যান্ত ছিঁড়ে ছিঁড়ে থেতে থাকে।

(২০) অবীচিঃ যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয়ে সাক্ষ্য দানে মিথ্যা কথা বলে, তাকে এখানে এনে সুউচ্চ পর্বত থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয় এবং নিচে পাথরের মধ্যে পড়ে পাপীর শরীর চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়।

(২১) অয়ঃপানঃ উচ্চবর্ণের ব্যক্তি যদি সুরাপাণ করে, তাকে এখানে যমদূতেরা পা দিয়ে তার বুক চেপে ধরে তপ্ত তরল লোহা পান করায়।

(২২) ক্ষারকর্দমঃ যে ব্যক্তি ‘আমি উন্নত’ এরূপ আত্মগরিমা করে এবং অন্যে অসম্মান করে, তাকে এখানে নির্যাতিত হয়ে ক্ষার ও কর্দমের মধ্যে হাবুডুবু খেতে হয়।

(২৩) রক্ষোভোজনঃ যে ব্যক্তি কালীর কাছে নরবলি বা পশুবলি দিয়ে মাংস খায়, তাকে এই নরকে পতিত হতে হয়। এখানে হিংসিত অর্থাৎ যাকে বলি দেওয়া হয়েছিল, সে রাক্ষস হয়ে মহানন্দে পাপীর মাংস খেতে থাকে।

(২৪) শূলপ্রোতঃ যে ব্যক্তি পশুপাখিকে আশ্রয় দেয়, যত্ন করে, আবার পশুপাখিকে বিদ্ধ করে খেলা করে এবং যন্ত্রণা দিয়ে মারে, তাকে এখানে আসতে হয়। এই নরকে ক্ষুদা-তৃষ্ণায় পীড়িত সেই পাপীকে বক-শকুনেরা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে থাকে।

(২৫) অবট নিরোধনঃ যে ব্যক্তি কাউকে কূপে, গোলায়, গুহায় বদ্ধ রেখে কষ্ট দেয়, তাকে এখানে বিষাক্ত ধোঁয়া ও আগুনে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ছটফট করতে হয়।

(২৬) দন্দশূকঃ যে ব্যক্তি সাপের মতো ক্রোধ দেখিয়ে কোনো প্রাণীকে যন্ত্রনা দেয়, তাকে এখানে পঞ্চমুখ-সপ্তমুখ সাপেরা যাতনা দিয়ে গ্রাস করতে থাকে।

(২৭) পর্যাবর্তনঃ  যে ব্যক্তি অতিথিকে দেখলেই ক্রুদ্ধ হয়, এই নরকে শকুন-বক চঞ্চু দিয়ে তার চোখ উৎপাটন করতে থাকে।

(২৮) সূচীমুখঃ বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে কেউ যদি চোর মনে করে সন্দেহ করে, তবে তাকে এই নরকে পতিত হতে হয়। এখানে যমদূতেরা কাঁথা সেলাইয়ের মতো লোহার সূত্র দিয়ে তার শরীর সেলাই করে। শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী আমাদের সাবধান করে দিয়ে বলেছেন- কৃষ্ণনাম ভজ জীব, আর সব মিছে। পলাইতে পথ নাই যম আছে পিছে।।

 


Next Post Previous Post
2 Comments
  • Byomkesh
    Byomkesh ১০ মে, ২০২১ এ ১:১৯ PM

    অসাধারণ লিখেছেন
    জয় শ্রী রাম
    আমিও হিন্দু ধর্ম বিষয়ে ব্লগ লিখি❤️❤️

  • UJJAL MALLIK
    UJJAL MALLIK ৯ আগস্ট, ২০২১ এ ৭:৫৬ PM

    অসাধারণ। তবে রেফারেন্স সহ দিলে আরও ভালো হতো

Add Comment
comment url