আত্মা ও দেহের পার্থক্য এবং আমাদের দুঃখের প্রকৃত কারণ কি?

আমাদের দুঃখের কারণ

দুঃখের কারণ এবং সুখী হওয়ার সূত্র


বৈদিক শাস্ত্র সমূহে বর্ণনা করা হয়েছে আত্মার প্রকৃত  বাসস্থান নিত্যধাম চিন্ময় জগতে। উপনিষদ থেকে জানা যায়। 

নিত্যো নিত্যানাম, চেতনাশ্চেতনানাম্, 

একো বনাম যে | বিদধ্যাতি কামান্।

-সকল জীবসত্তার মধ্যে একজন পরম  চেতন ব্যক্তি রয়েছেন, তিনিই পরমপুরুষােত্তম ভগবান।


ভগবান হচ্ছেন প্রভু আর জীব তাঁর অংশ। নিত্য সেবক প্রত্যেক জীবাত্মাকে ক্ষুদ্র স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সে তার পছন্দ অনুযায়ী ভগবানকে ভালবাসতে ও সেবা করতে পারে অথবা ভগবান থেকে স্বতন্ত্রভাবে তথাকথিতভাবে জড় জগৎকে ভােগ করার জন্য সংগ্রাম করতে পারে। 

সাধারণ এই জগতে জীবাত্মা দ্বিতীয়টি পছন্দ করে।

দেহ-ইন্দ্রয়সমূহ-মন-বুদ্ধি যান্ত্রিক পরিকাঠামাে

যখন কেউ সঠিকভাবে জানতে পারে- দেহ ইন্দ্রিয়-মন বুদ্ধির পরিকাঠামাে এবং কিভাবে এটা কাজ করে, তখন সে যথার্থভাবে মনকে সংযত করার কৌশল শিক্ষা করতে পারে। 

আত্মা যখন এই জড়জগতে আসে তখন তাকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপযােগী একটি স্থূল ও সূক্ষ্ম আবরণ রূপ দেহ প্রদান করা হয়।


মিথ্যা অহঙ্কারই হচ্ছে আত্মার জড়দেহে বন্ধনগ্রস্থ অবস্থা। প্রত্যেকেই এই দেহগত চেতনাই প্রকাশ করে। প্রত্যেকেই আমি এবং আমার এই ধারণা প্রকাশ করে আমি সুন্দর, আমি কালো, আমি লম্বা, আমি বেঁটে, আমি ব্রাহ্মণ, আমি ভারতীয় এরূপ চিন্তাই হল মিথ্যা অহঙ্কার। 

প্রকৃত বা সত্য অহঙ্কার হচ্ছে এটা উপলব্ধি করা যে সে ভগবানের নিত্য দাস।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উত্তরােত্তর উন্নতি সত্ত্বেও মানবসভ্যতা কেন সমস্যায় জর্জরিত?

একবিংশ শতাব্দীর চোখ ধাঁধানাে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের আশ্চর্যান্বিত করেছে, কয়েকশাে বছর পূর্বে যা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। 

এয়ার কন্ডিশন, গাড়ী, ফাইভ স্টার হােটেল, উন্নততর ব্যবস্থ(যা পৃথিবীকে অনেক ছােট করে দিয়েছে); বর্তমান যুগে এরকম কত আধুনিক সুযােগ সুবিধা রয়েছে। 

এই বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হয় সমস্ত বিশ্বকে দুর্দশা মুক্ত করা বা যথাসম্ভব দুর্দশা কমিয়ে আনা এবং তার ফলে সাধারণ মানুষ আরাে সুখে বাস করতে পারবে। 

সুতরাং আমাদের উচিত সবচেয়ে উন্নত দেশগুলিতে এই প্রযুক্তি কি করছে দেখা। তার ফলে আমরা আশা করতে পারি ভালবাসা, শান্তি সমৃদ্ধি নাগরিকদের মধ্যে থাকবে; যদিও বর্তমানে তার বিপরীত বৈশিষ্ট্যেই দেখা যাচ্ছে। 

বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণকারী দেশগুলি, যেমন আমেরিকা, জাপান যদিও ভারতের থেকে শতগুণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত, তবুও আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে সেখানেই ধনী ও যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি! 

এই দেশগুলোর লােকেরা কোনভাবে বেঁচে আছে। সবসময়ই তারা উৎকণ্ঠিত, হতাশাগ্রস্থ এবং খুবই বিভ্রান্ত। আমরা দার্শনিক বিচার বিশ্লেষণ করছি না। আমরা কেবল বাস্তব সমস্যাগুলােই বর্ণনা করছি। 

সুখি হওয়ার উপায়

আজকাল আমেরিকায়, বিবাহের প্রথম ৩ বছরের মধ্যে বিচ্ছেদের (ডিভাের্স) হার ৭৫%। অধিক থেকে অধিকতর লােকের (বিশেষ করে পাশ্চাত্য দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লােক) রাত্রিতে ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমাতে হয়। আর তারা নিয়মিত মনস্তত্ত্ববিদদের নিকট যায়। 

লােকগুলাে এত ভয়ঙ্কর যে, তাদেরকে দরজার লেন্সের মধ্যে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে ঢুকতে দিতে হয় এবং আরাে নিরাপত্তার জন্য তারা কতিপয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন করে। 

এই  লােকগুলাে যেন রােবােটের মত অনুভূতিহীন, যন্ত্রের মতাে চালিত হচ্ছে। আবেগ বলে কোন কিছু নেই। যদিও বা আছে তাও মিথ্যা ভাবপ্রবণতা।

যদি কেই বাড়ীর বাইরে গিয়ে, নেশা, নারীসঙ্গ, জোচ্চুরি, এড়িয়ে সফলতার সঙ্গে জীবিত অবস্থায় সন্ধ্যার পর পুনরায় বাড়ী ফিরে আসে, তাহলে বুঝতে হবে সে বিশেষ সৌভাগ্যবান


আধুনিক সমাজের ভুল কোথায় ?

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়ই আধুনিক সমাজের বর্ণনা প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিতেন। 

যদি আমরা কতগুলাে কুকুরকে নিয়ে একটা রুমে তালা বন্ধ করে রাখি, তাহলে কি আশা করা যেতে পারে? তারা একে অপরকে দেখে হাসবে? তারা কি পরস্পরের মধ্যে ভালােবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলবে? একজন বড়জোর আশা করতে পারে সে ঘটনাটি হবে এরকম তারা চিৎকার করবে, কামড়াকামড়ি করবে এবং একে অপরকে মেরে ফেলবে। 

ঠিক অনুরূপ ঘটনাই আজকালকার সমাজে দেখা যায়। যদি 'জ্ঞানই শক্তি হয় তাহলে আমাদের সেই জ্ঞানের কি মূল্য আছে যা বর্তমান পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অসমর্থ?

বর্তমান দিনে সারা বিশ্ব যে সমস্যর সম্মুখীন, তাতে সরকার, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা প্রভৃতির প্রতি দোষারোপ করে লাভ নেই। আমরা ভেতর থেকেই উদ্বিগ্ন, তাই অন্যকেও উদ্বেগ দিতে চাই। আমাদের মনের এই গতিপ্রকৃতির মূল্যায়ন করতে হবে এবং তখনই বােঝা সম্ভব হবে মনসংযমের কৌশল ।


আপনি কি একটা শুধু রক্তমাংসের থলি যার মূল্য ২১০ টাকা?

সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পরিচয় নিয়ে । আমি কে? আমি কি এই দেহ, মন, বুদ্ধি অথবা মাথা বা নাক? 

যদি কেউ নিজের প্রকৃত পরিচয় খুঁজে বের করতে পারে, তাহলেই কেবল সে নিরবচ্ছিন্ন সুখ লাভের লক্ষ্যে কাজ করতে পারে। 

আমরা এই দেহ নই; আমরা শুদ্ধ চিন্ময় আত্মা। আত্মার অস্তিত্ব কোনাে তথাকথিত ধর্ম অনুসরণকারীদের অন্ধ বিশ্বাসের ভিত্তিতে নয়, যা কিছু লোক ভালভাবে চিন্তা করে থাকে। এটা উপলব্ধি, বিজ্ঞান ও যুক্তিসম্মতভাবে প্রমাণ করা যায়। 

একবার একজন বিজ্ঞানী একটি দেহ নিয়ে সেই দেহটির সমস্ত রাসায়নিক পদার্থকে পৃথক করে তার বাজার মূল্য যাচাই করে রিপাের্ট দিলেন যে ঐ দেহটির দাম দাড়াচ্ছে। ২১০ টাকা!!! 

কেউ যদি তর্ক করে দেহটিই সব, দেহের মধ্যে উন্নতর আত্মা বলে কিছু নেই, সে নিজেকে জিজ্ঞাসা করে দেখুক যে তার পিতামাতা তাকে ঐ ২১০ টাকায় বিক্রি করে দেবে কিনা?

যদি আপনার বন্ধু সাইকেলে চড়ে যাওয়ার সময় তা থেকে পড়ে আহত হয়, আপনি কি করবেন? নিশ্চয়ই আপনি ২০০০ টাকা মূল্যের সাইকেলটি রাস্তায় ফেলে বন্ধুর ২১০ টাকা মূল্যের শরীরটি নিয়ে তাৎক্ষণাৎ হাসপাতালে যাবেন। 

এমনকি যদি আপনার বন্ধু একটি মূল্যবান মার্সিডিজ বেঞ্জে চড়ে যেতে গিয়ে অন্য একটি গাড়ীর সঙ্গে মুখােমুখি ধাক্কা খায়, তাহলেও আপনি ঐ ২১০ টাকা মূল্যের দেহটির জন্য উৎকণ্ঠিত হয়ে হাসপাতালে যাবেন আর রাস্তায় পড়ে থাকা ২৫ লাখ টাকা দামের গাড়ীটির কথা কোনাে চিন্তাই করবেন না। 

সুতরাং, একজন প্রকৃতিস্থ ব্যক্তির পক্ষে এটা বুঝতে কোন অসুবিধা থাকার কথা নয় যে, জীবন্ত দেহের মধ্যে এমন একটি মূল্যবান বিশেষ সত্তা অর্থাৎ নিত্য আত্মা সম্পর্কে জ্ঞান নাও থাকে। আত্মা হচ্ছে প্রকৃত নিত্য ব্যক্তিত্ব, যা এই অনিত্য দেহের মধ্যে বাস করে। 

তারপরও সারা বিশ্ব, তার সমস্ত অগ্রগতি নিয়ে এই অপ্রয়ােজনীয় ২১০ টাকা মূল্যের দেহটির রক্ষণাবেক্ষণেই ব্যস্ত, যা এক ব্যাগ রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়। 

দেহকে একটি গাড়ীর সঙ্গে তুলনা করা হয়, আত্মাকে তুলনা করা হয় চালকের সঙ্গে। আত্মার (জীবনী সত্ত্বা) উপস্থিতির জন্যই দেহকে জীবন্ত বলে মনে হয়। 

আত্মা যখন দেহ ত্যাগ করে, তখন আমরা বলি লােকটি মারা গেছে। এক্ষেত্রে আমরা দেহের একটি গাড়ীর কিছু সাদৃশ্য বিবেচনা করতে পারি। 

রাস্তা দেখার জন্য গাড়ীতে হেডলাইট রয়েছে, আপনিও আপনার চোখ দিয়ে দেখেন। গাড়ীটি হর্ণের মাধ্যমে শব্দ সৃষ্টি করে, আপনিও কথা বলেন। গাড়ীটির চারটি চাকা রয়েছে। আপনারও দুটি হাত এবং দুটি পা রয়েছে। গাড়ীটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়, আপনিও তা করেন। 

কিন্তু গাড়ীটি থেকে চালক নেমে যাওয়ার পর ঐ গাড়ীটি ১০০ বছরেও এক ইঞ্চি চলতে পারে না, ঠিক তেমনি, যখন একজন মানুষ মারা যায়, শরীরটি তখন পুরােপুরিই ঐ চালকবিহনীন গাড়ীর মতােই নিশ্চল, অনড়। সুতরাং আমরা যে দেহটিকে দেখি তা সবসময়ই মৃত। 

আত্মার উপস্থিতির জন্যই দেহকে জীবন্ত বলে মনে হয়। আত্মা যখন দেহ ত্যাগ করে, তখন দেহটি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। 

শরীরকে একটি খাঁচার সঙ্গেও তুলনা করা হয়, আর খাঁচার টিয়া পাখীকে তুলনা করা হয় শরীরস্থ আত্মার সঙ্গে। ধরুন কেউ খাঁচায় এই ভাবে একটি পাখি পুষে-কেবল খাছাটিকে সুন্দর ভাবে যত্ন করে, ভালােভাবে ঘষে মেজে পালিশ করে ঝকঝকে করে ইত্যাদি। 

কিন্তু পাখিটির প্রয়ােজনগুলােকে সে অবহেলা করে; পাখিটিকে দেয় না খাদ্য,জল। তখন পাখিটিকে খাঁচার ভেতর রাখার সমস্ত উদ্দেশ্যই নিরর্থক হয়ে পড়ে। 

ঠিক তেমটি, বর্তমান যুগে আধুনিক সভ্যতায় প্রত্যেকে দেহের জন্য সমস্ত রকম আরাম, স্বাচ্ছন্দ্য, বিলাসিতা করার জন্য অত্যন্ত ব্যস্ত। কিন্তু আত্মার প্রয়ােজনের দিকে কেউ দৃষ্টিপাত করছে না। 

সেজন্য প্রত্যেকে পারমার্থিক ভাবে অনশনে ভুগছে। প্রত্যেকেই অন্তরে বিষন্ন, নিরানন্দ ও প্রত্যেকেই অজ্ঞানতার তামসায় আবৃত হয়ে দুর্দশা ভােগ করছে।

বুদ্ধি হচ্ছে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার বিচারক, (decision-maker)  বুদ্ধির দ্বারা ভালা-মন্দ বিচার করে মনকে উপযুক্ত নির্দেশ প্রদান করা হয়- কি করা হবে এবং কি করা চলবে না।

মন হচ্ছে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের কার্যকলাপের কেন্দ্র এবং সমস্ত ইন্দ্রিয় ভােগের ধারণাসমূহ সেখানে জমা থাকে। মন হচ্ছে চিন্তা, অপূর্ণ ইচ্ছা এবং পুর্ব অভিজ্ঞাতার সংগ্রহশালা। 

মনের কাজ হল চিন্তা, অনুভূতি এবং ইচ্ছা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার সংগ্রহশালা। মন হচ্ছে সমস্ত জ্ঞানেন্দ্রিয়সমূহ (চোখ, কান নাক, জিহবা, এবং ত্বক) এর সাধারণ কেন্দ্রস্থল। 

ইন্দ্রিয়সমূহ বহির্জগতের কার্যকলাপে সরাসরি যুক্ত। জ্ঞানেন্দ্রিযগুলি (চোখ, কান, নাক, জিহবা, ত্বক) তথ্য সংগ্রহ করে আর দেহটি তখন কর্মেন্দ্রিয় গুলির বাক্ (মুখ), পা, হাত, পায়ু এবং উপস্থ) সাহায্যে কাজ করে । 

দেহের এই কার্যকলাপ সব সময়ই পাঁচটি বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলাে হল রূপ, গন্ধ, শব্দ, রস এবং স্পর্শ। 

সবকিছুই যা আমরা এই জগতে গ্রহণ করি তা আমাদের এই পাঁচ প্রকার ইন্দ্রিয়ের বিষয় মধ্যে যে কোনাে একটিতে আবদ্ধ করে। 

এখন আমরা একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে আলােচনা করব কিভাবে দেহ, মন ও ইন্দ্রিয় সমূহ কাজ করে।

যখন আপনি রাস্তায় হাঁটছেন, আপনি দেখলেন একটি মিষ্টির দোকানে সুন্দর টাটকা গােলাপজাম রয়েছে প্রথমঃ আপনার চোখ (একটি জ্ঞানেন্দ্রিয়) গােলাপ জামের প্রতি আকৃষ্ট হবে। 

এই তথ্য সে মনকে পাঠিয়ে দেবে। মন তখন দুটি বিষয় চিন্তা করবে, পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুসারে গােলাপজামের সুমিষ্ট স্বাদ আর ওটাকে কিভাবে কখন গ্রহণ করা যায়। 

মন তখন বুদ্ধির সঙ্গে পরামর্শ করে এবং বুদ্ধি হাত ও পাকে (কর্মেন্দ্রিয়) দোকানে গিয়ে গােলাপজাম কিনতে নির্দেশ দেয়। কিভাবে জ্ঞানেন্দ্রিয়, কর্মেন্দ্রিয়, মন এবং বুদ্ধির পারস্পরিক সহযােগিতায় দেহের কার্যকলাপের সমন্বয় সাধিত হয়।

দেহ রথ

উপনিষদের পাতায় একটি উপমা দেখা যায় যা আমাদের স্থূলদেহ, মন, বুদ্ধি এবং আত্মা সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে। 

বৈদিক শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে দেহটি একটি রথের ন্যায়। আত্মা রথের আরােহী। বুদ্ধি হচ্ছে সারথী এবং মন হচ্ছে। লাগাম। 

যদি ইন্দ্রিয় সমূহ (পাঁচটি ঘােড়া) অসংযত এবং পাশবিক হয়, তাহলে দেহ (রথ) কোথায় যাবে তার ঠিক নেই। যদি বুদ্ধি (সারখী) খুব শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে সে মনকে (লাগাম) নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ফলস্বরূপ ইন্দ্রিয়গুলিকে (ঘােড়া) সংযত এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ করা যায়। 

তাই এই দেহ- আত্মার এই ব্যবস্থাপরায়ণ করা যায়। তাই এই দেহ- আত্মার এই ব্যবস্থাপনার যথার্থ উদ্দেশ্য পূরণ হতে পারে যদি ইন্দ্রিয় সমূহ সংযত হয়।

সুতরাং আমরা বুঝতে পারি যে যদিও মন প্রধান ভূমিকা নেয়, তবুও বুদ্ধি তারও উপরে,যা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বুদ্ধিরও উর্দ্ধে হচ্ছে আত্মা। 

ভগবদ্গীতায় বর্ণনা করা হয়েছে-‘স্থূল জড় পদার্থের থেকে চক্ষু, কর্ণ আদি ইন্দ্রিয়সমূহ শ্রেষ্ঠ। ইন্দ্রিয়ের থেকে মন আরও শক্তিশালী, মনের থেকে বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ, আর বুদ্ধি থেকেও শ্রেষ্ঠ হচ্ছে আত্মা। (ভঃগীঃ ৩/৪২)

আরও পড়ুন 

 

* জন্মান্তরবাদ ও পুনর্জন্ম কি

* জড়বন্ধন থেকে মুক্তির উপায়-নৈতিক শিক্ষামূলক গল্প

* প্রকৃত সুখলাভের উপায়, সুখ অর্থে নয় সন্তুষ্টিতে।  

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url