বৃন্দাবনের ‘রাধা’ নামের মাহাত্ম্য

 

 

বৃন্দাবন — এটি শুধু এক সাধারন তীর্থভূমি নয়, এ হলো প্রেম, ভক্তি এবং অনন্ত লীলার ভূমি। আর এই বৃন্দাবনধামে সর্বশ্রেষ্ঠ যে নাম উচ্চারিত হয়, সেটি হলো 'রাধা'। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যাঁর নামের স্মরণে মুগ্ধ হন, তিনি হলেন শ্রীমতী রাধারাণী।

শাস্ত্রে বলা হয়েছে—

"যস্মিন স্তব্ধং জগত্‌ সর্বং রাধানাম্নি প্রকাশিতে।"
অর্থাৎ, যখন 'রাধা' নাম প্রকাশিত হয়, তখন সমগ্র জগৎ স্তব্ধ হয়ে যায়। দেবতা, ঋষি, সিদ্ধগণও সেই নাম শুনে মুগ্ধ হয়ে যান।

🌸 কেন এত মহিমা 'রাধা' নামের?

শ্রীমতী রাধারাণী হলেন কৃষ্ণের হৃদয়েশ্বরী। কৃষ্ণ নামের সাথে সর্বাপেক্ষা মধুর এবং প্রেমময় নাম যদি কিছু হয়, তবে সেটি 'রাধা'। বৃন্দাবনে 'রাধা' নাম উচ্চারণ করার সময় শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে। তিনি নিজেও বলেন—

"রাধা নাম মহাবলং, রাধা নাম মহাশক্তি।
রাধা নাম মহাপুণ্যং, রাধা নাম মহারস।"

শুধু বৃন্দাবন নয়, সমগ্র সৃষ্টি জগতেই 'রাধা' নাম শ্রেষ্ঠ প্রেম, করুণা ও ভক্তির প্রতীক। বৃন্দাবনে বলা হয় —

"রাধা নাম বিনা বৃন্দাবনে একপদ অগ্রসর হওয়া বৃথা।"

কারণ, রাধার কৃপা ছাড়া কৃষ্ণলীলার রসাস্বাদন অসম্ভব।

🌸 রাধা নামের জপের মাহাত্ম্য

শাস্ত্র বলে, 'রাধা' নামের একবার জপ করলে যা ফল, তা হাজার বার কৃষ্ণ নাম জপ করলেও মেলে না। কারণ, রাধা নামের মধ্য দিয়েই কৃষ্ণ প্রসন্ন হন।

পদ্মপুরাণে আছে —

"রাধা নাম্নঃ স্বনির্ঘোষে হরিরাপি রণে রণং।
স্তম্ভিতং জগত্‌ সর্বং দেবী ধন্যা রাধিকা।"

অর্থাৎ, ‘রাধা’ নাম ধ্বনিত হতেই ভগবান হরিও স্তব্ধ হয়ে যান। সমস্ত সৃষ্টি থমকে যায় এই নামের অনুরণনে।

🌸 বৃন্দাবনে ‘রাধে রাধে’ ধ্বনি

বৃন্দাবনে আপনি যখন যাবেন, দেখবেন প্রতিটি গলিতে, রাস্তার ধারে, দেউড়িতে, অশ্বত্থ গাছের তলায়, সব জায়গায় ‘রাধে রাধে’ ধ্বনি। কারও মুখে ‘নমস্কার’ নয়, এখানে শুভেচ্ছা হয় 'রাধে রাধে' বলে। এমনকি বৃন্দাবনের দেয়াল, মন্দিরের দরজা, দোকানপাটেও লেখা থাকে — 'রাধে রাধে'

কারণ, এই নাম যেন বৃন্দাবনের প্রাণ।

🌸 উপসংহার

‘রাধা’ নাম শুধু একটি নাম নয় — এ এক অনন্ত প্রেমের প্রতীক। এ নামের মধ্যেই নিহিত রয়েছে কৃষ্ণের পূর্ণ অভিমুখতা। যার হৃদয়ে 'রাধা' নাম প্রতিধ্বনিত হয়, তারই হৃদয়ে কৃষ্ণ বাস করেন।

শ্রীজীব গোস্বামী বলেছেন —

"যে রাধা নাম স্মরণ করে, সে নিজেই কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর হয়।"

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url