শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছেন “ভগবান নৃসিংহদেব যখন আবির্ভূত হয়েছিলেন তখন সমস্ত ভক্তরা নির্ভয় হয়েছিল। ভক্তদের নির্ভয় হওয়ার আশা হচ্ছে ভগবান নৃসিংহদেবের পবিত্র নাম কীর্তন করা।
যতো যতো যামি ততো নৃসিংহঃ যেখানেই আমরা যাই সর্বদাই আমাদের ভগবান নৃসিংহদেবের কথা চিন্তা করা কর্তব্য। তার ফলে ভগবদ্ভক্তের আর কোন ভয় থাকে না।
ব্রহ্মার কাছ থেকে বর প্রাপ্ত হয়েও হিরণ্যকশিপু অকুতোভয় হতে পারেননি। কিন্তু ব্রহ্মার পুত্র নারদ মুনি হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ মহারাজকে সম্পুর্ণরূপে নির্ভয় হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিলেন।
ব্রহ্মা হিরণ্যকশিপুকে বর দিয়ে তার কর্তব্য সম্পাদন করেছেন মাত্র। কিন্তু নারদমুনি তার সাধুসুলভ কৃপায় অপ্রতিহতা ভক্তি প্রদানের মাধ্যমে প্রহ্লাদ মহারজকে পরম পুরুষোত্তম ভগবানের আশ্রয়ে নিয়ে এসেছেন।
হিরণ্যকশিপু যদিও বিভিন্নভাবে বালক প্রহ্লাদকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তবুও প্রহ্লাদ মহারাজ তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত ও ভীত হননি।
সেই জন্য প্রহ্লাদ মহারাজ তার সকল সঙ্গীদের ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের চরণকমলে আশ্রয় নিতে বলেন।
তস্মাদ্ রজোরাগবিষাদমন্যু-
মানস্পৃহাভয়দৈন্যাধিমূলম্ ।
হিত্বা গৃহং সংসৃতিচক্রবালং
নৃসিংহপাদং ভজতাকুতোভয়মিতি।।
“অতএব হে অসুরগণ, গৃহস্থ জীবনের তথাকথিত সুখ পরিত্যাগ করে নির্ভীকতার প্রকৃত আশ্রয় শ্রীনৃসিংহদেবের শ্রীপাদপদ্মের শরণ গ্রহণ কর।
গৃহস্থ জীবনের প্রতি আসক্তিই রাগ, বিষয়তৃষ্ণা, বিষাদ, ক্রোধ, স্পৃহা, ভয়, মান, প্রভৃতির মূল কারণ যার ফল হচ্ছে জন্ম মৃত্যুর সংসার চক্র।”
যখন হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদ মহারাজকে জিজ্ঞেস করেছিল এই জগতের সর্বোত্তম জিনিস বলতে তিনি কি মনে করেন।
উত্তরে প্রহ্লাদ মহারাজ বলেন “মানুষের কর্তব্য দুঃখ দুর্দশা পূর্ণ সকল পরিস্থিতি পরিত্যাগ করে বনে গমন করা বিশেষ করে বৃন্দাবনে এবং সেখানে কৃষ্ণভাবনামৃতের পন্থা অবলম্বন করে পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের আশ্রয় গ্রহণ করা।”
ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণের মাধ্যমে মুক্তি
“কৃষ্ণ থেকে বিষ্ণর উৎপত্তি হয়। তাকে সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত। কখনও তাকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।” শাস্ত্রে উল্লেখিত সমস্ত বিধি বিধান এই দুটি মখ্য তত্ত্বের অনুগত।
নববিধা ভক্তির মধ্যে স্মরণ এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে প্রহ্লাদ মহারাজ। বিষ্ণু স্মরণের মাধ্যমে তিনি আত্মোপলব্ধি অর্জন করেছিলেন।
হিরণ্যকশিপু যখন স্নেহার্দপূর্ণভাবে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তিনি তার গুরুর থেকে কোন বিষয়টি খুব ভালোভাবে রপ্ত করেছেন।
নারদ মুনি প্রহ্লাদ মহারাজকে অনেক প্রশংসা করেন যে প্রহ্লাদ মহারাজ শৈশব থেকেই শিশুসুলভ খেলাধুলার প্রতি উদাসীন ছিলেন বলে।
প্রকৃতপক্ষে তিনি সর্বতোভাবে সেগুলি পরিত্যাগ করে শ্রীকৃষ্ণের ভাবনায় সম্পূর্ণরূপে মগ্ন ছিলেন। প্রহ্লাদ মহারাজের হৃদয় সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের চিন্তায় মগ্ন থাকত।
তাই প্রহ্লাদ মহারাজ হচ্ছেন আদর্শ কৃষ্ণ ভক্ত। যখন হিরণ্যকশিপুর সৈন্যরা প্রহ্লাদ মহারাজকে হত্যা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন যেমন শরীরে ধারালো অস্ত্র প্রয়োগ, হাতির পদপৃষ্টে নিক্ষেপ, উচ্চ পর্বত শৃঙ্গ থেকে ফেলে দেওয়া প্রভৃতি। তখন প্রহ্লাদ মহারাজ শুধুমাত্র বিষ্ণু স্মরণে নিমগ্ন ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ