হরিনামই কলি যুগের একমাত্র উদ্ধার পথ: কী বলছে ভাগবত পুরাণ?

কলি যুগ—এই সময়কে বলা হয় ‘কলহ, বিভ্রান্তি ও পাপের যুগ’। মানুষ দিনদিন ধর্ম থেকে বিচ্যুত হচ্ছে, আত্মিক শক্তির পরিবর্তে বস্তুগত আকর্ষণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। 

 

কলি যুগের মুক্তির উপায়

এই ঘোরতর অন্ধকার সময়েও যদি কোনও একটি পথ সত্যিকারের মুক্তি দিতে পারে, তা হলো “হরিনাম সংকীর্তন”। ভাগবত পুরাণ ও অন্যান্য বৈষ্ণব গ্রন্থ বারবার এই সত্যকে তুলে ধরেছে। চলুন জেনে নিই, কলি যুগে হরিনামের মাহাত্ম্য এবং শাস্ত্র কী বলে।


🕉️ কলি যুগে ধর্মচর্চার অবস্থা

ভাগবত পুরাণে বর্ণিত হয়েছে, কলি যুগে চারটি ধর্মস্তম্ভের (সত্য, করুণা, সংযম, পবিত্রতা) মধ্যে তিনটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং শুধু নাম সংকীর্তন বা ভগবানের নাম জপই মানুষের উদ্ধার করতে পারবে।



"কলিযুগে কেবল নামমাত্রই মুক্তির কারণ।"
অর্থাৎ, কলি যুগে শুধুমাত্র ভগবানের নামই মুক্তির কারণ।



📜 ভাগবত পুরাণ কী বলছে?

ভাগবত পুরাণ (১২.৩.৫১) তে বলা হয়েছে:


"হে রাজন! কলি যুগ পাপের আধার হলেও, এতে একটি মহান গুণ আছে — কেবল কৃষ্ণের নাম কীর্তনের মাধ্যমে মানুষ সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে পরম গতি লাভ করতে পারে।"


এই শ্লোক স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে, কলি যুগে কঠিন তপস্যা, যজ্ঞ, দান কিংবা উপবাসের চেয়েও “হরিনাম” অনেক সহজ এবং কার্যকর মুক্তির পথ।

 

 🔱 কেন হরিনামই কলি যুগে শ্রেষ্ঠ উপায়?

✅ ১. সহজ ও সুলভ
অন্য যুগে যজ্ঞ, তপস্যা ও কঠোর ব্রত ছিল মুক্তির উপায়।

কিন্তু কলি যুগে মানুষ দুর্বল, অলস, অস্থিরমনস্ক—এখন কেবল নাম জপই সহজ পথ।

✅ ২. যেকোনো স্থান ও সময়ে সম্ভব
মন্দিরে না গিয়ে, গৃহে, পথে, কর্মস্থলে—যেখানেই হোক, ভগবানের নাম জপ করা যায়।

✅ ৩. মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক শক্তি দেয়
নাম সংকীর্তনের মাধ্যমে মন শান্ত হয়, আত্মা জাগ্রত হয়।

✅ ৪. পাপ থেকে মুক্তি দেয়
হরিনাম এমন এক শক্তি যা জন্মজন্মান্তরের পাপ ধুয়ে দিতে পারে।

 

🎵 হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র: কলির চিকিৎসা


হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে

এই ১৬ শব্দের মহামন্ত্র কলি যুগের জন্য নির্ধারিত একমাত্র মহৌষধ। চৈতন্য মহাপ্রভু নিজে এই মন্ত্র প্রচার করেছেন এবং বলেছেন:



“নামের মাধ্যমে সব সিদ্ধি লাভ সম্ভব।”


🌼 আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় হরিনামের প্রভাব


বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে মন্ত্র জপ করলে স্ট্রেস হরমোন কমে, মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, এবং মস্তিষ্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।


‘হরিনাম’ জপ মন ও হৃদয়কে প্রশান্ত করে—এমনকি অতি ব্যস্ত জীবনে একটুকু সময়ের জপও জীবন বদলে দিতে পারে।


🔚 উপসংহার

বর্তমান যুগের দুঃখ-ক্লেশ, মানসিক অস্থিরতা, আত্মিক শূন্যতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ “হরিনাম”। ভাগবত পুরাণ ও অন্যান্য শাস্ত্র বারবার এই কথাই বলে—ভগবানের নামের মধ্যেই আছে সমস্ত শক্তি। তাই আসুন, আমরা সকলে হরে কৃষ্ণ নাম জপে আত্মিক মুক্তির পথে এগিয়ে যাই।

 আরও পড়ুনঃ 

* হরিনাম জপের বিজ্ঞানভিত্তিক সুফল 

* মন কি? মনকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল। 




Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url