গীতা-চতুর্দশ অধ্যায়-গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ-Srimad bhagavad gita in bengali-Chapter-14 - শ্রীমদ্ভগবদ গীতা যথাযথ বাংলা

নতুন পোষ্ট

Add

শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৯

গীতা-চতুর্দশ অধ্যায়-গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ-Srimad bhagavad gita in bengali-Chapter-14

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ

 অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
(মূল সংস্কৃত শ্লোক ও অনুবাদ)

গীতা-চতুর্দশ-অধ্যায়-গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ-(Bangla Gita)


 শ্রীভগবানুবাচ
পরং ভূয়ঃ প্রবক্ষ্যামি জ্ঞানানং জ্ঞানমুত্তমম্। 
যজজ্ঞাত্বা মুনয়ঃ সর্বে পরাং সিদ্ধিমিতো গতাঃ।।১।।
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন-পুনরায় আমি তোমাকে সমস্ত জ্ঞানের মধ্যে সর্বোত্তম জ্ঞান সম্বন্ধে বলব, যা জেনে মুনিগণ এই জড় জগৎ থেকে পরম সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।

ইদং জ্ঞানমুপাশ্রিত্য মম সাধর্ম্যমাগতাঃ।
সর্গেহপি নোপজায়ন্তে প্রলয়ে ন ব্যথন্তি চ।।২।।
অনুবাদঃ এই জ্ঞান আশ্রয় করলে জীব আমার পরা প্রকৃতি লাভ করে। তখন আর সে সৃষ্টির সময়ে জন্মগ্রহণ করে না এবং প্রলয়কালেও ব্যথিত হয় না।

মম যোনির্মহদ্ ব্রহ্ম তস্মিন্ গর্ভং দধাম্যহম্।
সম্ভবঃ সর্বভূতানাং ততো ভবতি ভারত।।৩।।
অনুবাদঃ হে ভারত! প্রকৃতি সংজ্ঞক ব্রহ্ম আমার যোনিস্বরূপ এবং সেই ব্রহ্মে আমি গর্ভাধান করি, যার ফলে সমস্ত জীবের জন্ম হয়।

সর্বযোনিষু কৌন্তেয় মূর্তয়ঃ সম্ভবন্তি যাঃ। 
তাসাং ব্রহ্ম মহদযোনিরহং বীজপ্রদঃ পিতা।।৪।।
অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! সকল যোনিতে যে সমস্ত মূর্তি প্রকাশিত হয়, ব্রহ্মরূপী যোনিই তাদের জননী-স্বরূপা এবং আমি তাদের বীজ প্রদানকারী পিতা।

সত্ত্বং রজস্তম ইতি গুণাঃ প্রকৃতিসম্ভবাঃ। 
নিবধ্নন্তি মহাবাহো দেহে দেহিনমব্যয়ম্।।৫।।
অনুবাদঃ হে মহাবাহো! জড়া প্রকৃতি থেকে জাত সত্ত্ব, রজ ও তম-এই তিনটি গুণ এই দেহের মধ্যে অবস্থিত অব্যয় জীবকে আবদ্ধ করে।


তত্র সত্ত্বং নির্মলত্বা প্রকাশমনাময়ম্। 
সুখসঙ্গেন বধ্নাতি জ্ঞানসঙ্গেন চানঘ।।৬।।
 অনুবাদঃ হে নিষ্পাপ! এই তিনটি গুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ নির্মল হওয়ার ফলে প্রকাশকারী ও পাপশূন্য এবং সুখ ও জ্ঞানের সঙ্গের দ্বারা জীবকে আবদ্ধ করে।

রজো রাগাত্মকং বিদ্ধি তৃষ্ণাসঙ্গসমুদ্ভবম্। 
তন্নিবধ্নাতি কৌন্তেয় কর্মসঙ্গেন দেহিনম্।।৭।।
অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! রজোগুণ অনুরাগাত্মক এবং তা তৃষ্ণা ও আসক্তি থেকে উৎপন্ন বলে জানবে এবং সেই রজোগুণই জীবকে সকাম কর্মের আসক্তির দ্বারা আবদ্ধ করে।

তমস্ত্বজ্ঞানজং বিদ্ধি মোহনং সর্বদেহিনাম্। 
প্রমাদালস্যনিদ্রাভিস্তন্নিবধ্নাতি ভারত।।৮।।
অনুবাদঃ হে ভারত! অজ্ঞানজাত তমোগুণকে সমস্ত জীবের মোহনকারী বলে জানবে। সেই তমোগুণ প্রমাদ, আলস্য ও নিদ্রার দ্বারা জীবকে আবদ্ধ করে।

সত্ত্বং সুখে সঞ্জয়তি রজঃ কর্মণি ভারত। 
জ্ঞানমাবৃত্য তু তমঃ প্রমাদে সঞ্জয়ত্যুত।।৯।।
অনুবাদঃ হে ভারত! সত্ত্বগুণ জীবকে সুখে আবদ্ধ করে, রজোগুণ জীবকে সকাম কর্মে আবদ্ধ করে এবং তমোগুণ প্রমাদে আবদ্ধ করে।


রজস্তমশ্চাভিভূয় সত্ত্বং ভবতি ভারত। 
রজঃ সত্ত্বং তমশ্চৈব তমঃ সত্ত্বং রজস্তথা।।১০।।]
অনুবাদঃ হে ভারত! রজ ও তমোগুণকে পরাভূত করে সত্ত্বগুণ প্রবল হয়, সত্ত্ব ও তমোগুণকে পরাভূত করে রজোগুণ প্রভল হয় এবং সেভাবেই সত্ত্ব ও রজোগুণকে পরাভূত করে তমোগুণ প্রবল হয়।



সর্বদ্বারেষু দেহহস্মিন্ প্রকাশ উপজায়তে। 
জ্ঞানং যদা তদা বিদ্যাদ্ বিবৃদ্ধং সত্ত্বমিত্যুত।।১১।।
অনুবাদঃ যখন এই দেহের সব কয়টি দ্বারে জ্ঞানের প্রকাশ হয়, তখন সত্ত্বগুণ বর্ধিত হয়েছে বলে জানবে।

লোভঃ প্রবৃত্তিরারম্ভঃ কর্মণামশমঃ স্পৃহা। 
রজস্যেতানি জায়ন্তে বিবৃদ্ধে ভরতর্ষভ।।১২।।
অনুবাদঃ হে ভরতশ্রেষ্ঠ! রজোগুণ বর্ধিত হলে লোভ, প্রবৃত্তি, কর্মে উদ্যম ও দুর্দমনীয় স্পৃহা বৃদ্ধি পায়।

অপ্রকাশোহপ্রবৃত্তিশ্চ প্রমাদো মোহ এব চ। 
তমস্যেতানি জায়ন্তে বিবৃদ্ধে কুরুনন্দন।।১৩।।
অনুবাদঃ হে কুরুনন্দন! তমোগুণ বর্ধিত হলে অজ্ঞান-অন্ধকার, নিষ্ক্রিয়তা, প্রমাদ ও মোহ উৎপন্ন হয়।

 
যদা সত্ত্বে প্রবৃদ্ধে তু প্রলয়ং  যাতি দেহভৃৎ। 
তদোত্তমবিদাং লোকানমলান্ প্রতিপদ্যতে।।১৪।।
অনুবাদঃ যখন সত্ত্বগুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কালে দেহধারী জীব দেহত্যাগ করেন, তখন তিনি মহর্ষিদের নির্মল উচ্চতর লোকসমূহ লাভ করেন।

রজসি প্রলয়ং গত্বা কর্মসঙ্গিষু জায়তে। 
তথা প্রলীনস্তমসি মূঢ়যোনিষু জায়তে।।১৫।।
অনুবাদঃ রজোগুণে মৃত্যু হলে কর্মাসক্ত মনুষ্যকুলে জন্ম হয়, তেমনই তমোগুণে মৃত্যু হলে পশুযোনিতে জন্ম হয়।

কর্মণঃ সুকৃতস্যাহুঃ সাত্ত্বিকং নির্মলং ফলম্।
রজসস্তু ফলং দুঃখমজ্ঞানং তমসঃ ফলম্।।১৬।।
অনুবাদঃ সুকৃতি-সম্পন্ন সাত্তিক কর্মের ফলকে নির্মল, রাজসিক কর্মের ফলকে দুঃখ এবং তামসিক কর্মের ফলকে অজ্ঞান বা অচেতন বলা হয়।

সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং রজসো লোভ এব চ। 
প্রমাদমোহৌ তমসো ভবতোহজ্ঞানমেব চ।।১৭।।
অনুবাদঃ সত্ত্বগুণ থেকে জ্ঞান, রজোগুণ থেকে লোভ এবং তমোগুণ থেকে অজ্ঞান, প্রমাদ ও মোহ উৎপন্ন হয়।

ঊর্ধ্বং গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা মধ্যে তিষ্ঠন্তি রাজসাঃ। 
জঘন্যগুণবৃত্তিস্থা অধো গচ্ছন্তি তামসাঃ।।১৮।।
অনুবাদঃ সত্ত্বগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ ঊর্ধ্বে উচ্চতর লোকে গমন করে, রজোগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ মধ্যে নরলোকে অবস্থান করে এবং জঘন্য গুণসম্পন্ন তামসিক ব্যক্তিগণ অধঃপতিত হয়ে নরকে হমন করে।

নান্যং গুণেভ্যঃ কর্তারং যদা দ্রষ্টানুপশ্যতি। 
গুণেভ্যশ্চ পরং বেত্তি মদ্ভাবং সোহধিগচ্ছতি।।১৯।।
অনুবাদঃ জীব যখন দর্শন করেন যে, প্রকৃতির গুণসমূহ ব্যতীত কর্মে অন্য কোন কর্তা নেই এবং জানতে পারেন যে, পরমেশ্বর ভগবান এই সমস্ত গুণের অতীত, তখন তিনি আমার পরা প্রকৃতি লাভ করেন।

গুণানেতানতীত্য ত্রীন্ দেহী দেহসমুদ্ভবান্। 
জন্মমৃত্যুজরাদুঃখৈর্বিমুক্তোহমৃতমশ্নুতে।।২০।।
অনুবাদঃ দেহধারী জীব এই তিন গুণ অতিক্রম করে জন্ম, মৃত্যু, জরা ও দুঃখ থেকে বিমুক্ত হয়ে অমৃত ভোগ করেন।

অর্জুন উবাচ
কৈর্লিঙ্গৈস্ত্রীন্ গুণানেতানতীতো ভবতি প্রভো। 
কিমাচারঃ কথং চৈতাংস্ত্রীন্ গুণানতিবর্ততে।।২১।।
অনুবাদঃ অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে প্রভু! যিনি এই তিন গুণের অতীত, তিনি কি কি লক্ষণ দ্বারা জ্ঞাত হন? তাঁর আচরণ কি রকম? এবং তিনি কিভাবে এই তিন গুণ অতিক্রম করেন?।

প্রকাশং চ প্রবৃত্তিং চ মোহমেব চ পান্ডব। 
ন দ্বেষ্টি সংপ্রবৃত্তানি ন নিবৃত্তানি কাঙ্ক্ষতি।।২২।।
উদাসীনবদাসীনো গুণৈর্যো ন বিচাল্যতে। 
গুণা বর্তন্ত ইত্যেবং যোহবতিষ্ঠতি নেঙ্গতে।।২৩।।
সমদুঃখসুখঃ স্বস্থঃ সমলোষ্ট্রাশ্মকাঞ্চনঃ। 
তুল্যপ্রিয়াপ্রিয়ো ধীরস্তুল্যনিন্দাত্মসংস্তুতিঃ।।৩৪।।
মানাপমানয়োস্তুল্যস্তুল্যো মিত্রারিপক্ষয়োঃ। 
সর্বারম্ভপরিত্যাগী গুণাতীতঃ স উচ্যতে।।২৫।।
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে পান্ডব! ‍যিনি প্রকাশ, প্রবৃত্তি ও মোহ আবির্ভূত হলে দ্বেষ করেন না এবং সেগুলি নিবৃত্ত হলেও আকাঙ্ক্ষা করেন না; যিনি উদাসীনের মতো অবস্থিত থেকে গুণসমূহের দ্বারা বিচলিত হন না, কিন্তু গুণসমূহ স্বীয় কার্যে প্রবৃত্ত হয়, এভাবেই জেনে অবস্থান করেন এবং তার দ্বারা চঞ্চলতা প্রাপ্ত হন না; যিনি আত্মস্বরূপে অবস্থিত এব্ং সুখ ও দুঃখে সম-ভাবাপন্ন; যিনি মাটির ঢেলা, পাথর ও স্বর্ণে সমদৃষ্টি-সম্পন্ন; যিনি প্রিয় ও অপ্রিয় বিষয়ে সম-ভাবাপন্ন; যিনি ধৈর্যশীল এবং নিন্দা, স্তুতি, মান ও অপমানে সম-ভাবাপন্ন; যিনি শত্রু ও মিত্র উভয়ের প্রতি সমভাব-সম্পন্ন এবং যিনি সমস্ত কর্মোদ্যম পরিত্যাগী- তিনিই গুণাতীত বলে কথিত হন।
মাং চ যোহব্যভিচারেণ ভক্তিযোগেন সেবতে। 
ম গুণান্ সমতীতৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে।।২৬।।
অনুবাদঃ যিনি ঐকান্তিক ভক্তিযোগ সহকারে আমার সেবা করেন, তিনি প্রকৃতির সমস্ত গুণকে অতিক্রম করে ব্রহ্মভূত স্তরে উন্নীত হন।

ব্রহ্মণো হি প্রতিষ্ঠাহমমৃতস্যাব্যয়স্য চ। 
শাশ্বতস্য চ ধর্মস্য সুখস্যৈকান্তিকস্য চ।।২৭।।
অনুবাদঃ আমিই নির্বিশেষ ব্রহ্মের প্রতিষ্ঠা বা আশ্রয়। অব্যয় অমৃতের, শাশ্বত ধর্মের এবং ঐকান্তিক সুখের আমিই আশ্রয়।

 সমাপ্ত
-----------------------

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সকল অধ্যায় সমূহ

 *মঙ্গলাচরণ

 *গীতা-মাহাত্ম্য

 ১. গীতা-প্রথম অধ্যায় অর্জুন বিষাদ-যোগ

২. গীতা-২য় অধ্যায়-সাংখ্য-যোগ

৩. গীতা-৩য় অধ্যায়-কর্মযোগ

৪. গীতা-৪র্থ অধ্যায়-জ্ঞান যোগ

৫. গীতা-৫ম অধ্যায়-কর্মসন্ন্যাস-যোগ

৬. গীতা-ষষ্ঠ-অধ্যায়-ধ্যানযোগ

৭. গীতা-সপ্তম-অধ্যায়-বিজ্ঞান-যোগ

৮. গীতা-অষ্টম-অধ্যায়-অক্ষরব্রহ্ম-যোগ

৯. গীতা-নবম-অধ্যায়-রাজগুহ্য-যোগ

১০. গীতা-দশম-অধ্যায়-বিভূতি-যোগ

১১. গীতা-একাদশ-অধ্যায়-বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ

১২. গীতা-দ্বাদশ অধ্যায়-ভক্তিযোগ

১৩. গীতা-ত্রয়োদশ অধ্যায়-প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেকযোগ

১৫. গীতা-পঞ্চদশ অধ্যায়-পুরুষোত্তম-যোগ

১৬. গীতা-ষোড়শ অধ্যায়-দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ

১৭. গীতা-সপ্তদশ অধ্যায়-শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ

১৮. গীতা-অষ্টাদশ অধ্যায়-মোক্ষযোগ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন