গীতা-প্রথম অধ্যায় অর্জুন বিষাদ-যোগ-Srimad bhagavad gita in bengali, Capter-1

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ
 অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
(মূল সংস্কৃত শ্লোক ও অনুবাদ)

প্রথম অধ্যায়- অর্জুন বিষাদ-যোগ (Bangla Gita)


ধৃতরাষ্ট্র উবাচ
ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ।
মামকাঃ পান্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয়।।১।।
অনুবাদঃ ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসা করলেন- হে সঞ্জয়! ধর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করার মানসে সমবেত হয়ে আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্রেরা তারপর কি করল? 
সঞ্জয় উবাচ
দৃষ্ট্বা তু পাণ্ডবানীকং ব্যূঢ়ং দুর্যোধনস্তদা। 
আচার্যমুপসঙ্গম্য রাজা বচনমব্রবীৎ।।২।।
অনুবাদঃ সঞ্জয় বললেন-হে রাজন্! পান্ডবদের সৈন্যসজ্জা দর্শন করে রাজা দুর্যোধন দ্রোণাচার্যের কাছে গিয়ে বললেন

পশ্যৈতাং পান্ডুপুত্রাণামাচার্য মহতীং চমূম্ ।
ব্যূঢ়াং দ্রুপদপুত্রেণ তব শিষ্যেণ ধীমতা।।৩।।
অনুবাদঃ হে আচার্য! পান্ডবদের মহান সৈন্যবল দর্শন করুন, যা আপনার অত্যন্ত বুদ্ধিমান শিষ্য দ্রুপদের পুত্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বূহ্যের আকারে রচনা করেছেন। 
অত্র শূরা মহেষ্বাসা ভীমার্জুনসমা যুধি। 
যুযুধানো বিরাটশ্চ দ্রুপদশ্চ মহারথঃ।।৪।।
ধৃষ্টকেতুশ্চেকিতানঃ কাশিরাজশ্চ বীর্যবান্ ।
পুরুজিৎ কুন্তিভোজশ্চ শৈব্যশ্চ নরপুঙ্গবঃ।।৫।।
যুধামন্যুশ্চ বিক্রান্ত উত্তমৌজাশ্চ বীর্যবান্ ।
সৌভদ্রো দ্রৌপদেয়াশ্চ সর্ব এব মহারথাঃ ।।৬।।
অনুবাদঃ সেই সমস্ত সেনাদের মধ্যে অনেকে ভীম ও অর্জুনের মতো বীর ধনুর্ধারী রয়েছেন এবং যুযুধান ও দ্রুপদের মতো মহাযোদ্ধা রয়েছেন। সেখানে ধৃষ্টকেতু,চেকিতান, কাশিরাজ,পুরুজিৎ, কুন্তিভোজ ও শৈব্যের মতো অত্যন্ত বলবান যোদ্ধারাও রয়েছেন। সেখানে রয়েছেন অত্যন্ত বলবান যুধামন্যু, প্রবল পরাক্রমশালী উত্তমৌজা,সুভদ্রার পুত্র এবং দ্রৌপদীর পুত্রগণ। এই সব যোদ্ধারা সকলেই এক-একজন মহারধী।  
অস্মাকন্ত বিশিষ্টা যে তান্নিবোধ দ্বিজোত্তম। 
নায়কা মম সৈন্যস্য সংজ্ঞার্থং তান্ ব্রবীমি তে।।৭।।
অনুবাদঃ হে দ্বিজোত্তম! আমাদের পক্ষে যে সমস্ত বিশিষ্ট সেনাপতি সামরিক শক্তিপরিচালনার জন্য রয়েছেন, আপনার অবগতির জন্য আমি তাঁদের সম্বন্ধে বলছি। 
ভবান্ ভীষ্মশ্চ কর্ণশ্চ কৃপশ্চ সমিতিঞ্জয়ঃ। 
অশ্বত্থামা বিকর্ণশ্চ সৌমদত্তিস্তথৈব চ।।৮।।
অনুবাদঃ সেখানে রয়েছেন আপনার মতোই ব্যক্তিত্বশালী-ভীষ্ম,কর্ণ, কৃপা, অশ্বত্থামা,বিকর্ণ ও সোমদত্তের পুত্র ভূরিশ্রবা, যাঁরা সর্বদা সংগ্রামে বিজয়ী হয়ে খাকেন। 
 

অন্যে চ বহুবঃ শূরা মদর্থে ত্যক্তজীবিতাঃ। 
নানাশস্ত্রপ্রহরণাঃ সর্বে যুদ্ধবিশারদাঃ।।৯।।
অনুবাদঃ এ ছাড়া আরও বহু সেনানায়ক রয়েছেন, যাঁরা আমার জন্য তাঁদের জীবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত। তাঁরা সকলেই নানা প্রকার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবংতাঁরা সকলেই সামরিক বিজ্ঞানে বিশারদ। 

অপর্যাপ্তং তদস্মাকং বলং ভীষ্মাভিরক্ষিতম্ । 
পর্যাপ্তং ত্বিদমেতেষাং বলং ভীমাভিরক্ষিতম্ ।।১০।। 
অয়নেষু চ সর্বেষু যথাভাগমস্থিতাঃ।
ভীষ্মমেবাভিরক্ষস্ত ভবন্তঃ সর্ব এব হি।।১১।।
অনুবাদঃ আমাদের সৈন্যবল অপরিমিত এবং আমরা পিতামহ ভীষ্মের দ্বারা পূর্ণরূপেসুরক্ষিত, কিন্ত ভীমের দ্বারা সতর্কভাবে সুরক্ষিত পান্ডবদের শক্তি সীমিত। এখন আপনারা সকলে সেনাব্যূহের প্রবেশপথে নিজ নিজ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থিত হয়ে পিতামহ ভীষ্মকে সর্বতোভাবে সাহায্য প্রদান করুন। 

তস্য সঞ্জনয়ন্ হর্ষং কুরুবৃদ্ধঃ পিতামহঃ। 
সিংহনাদং বিনদ্যাচ্চৈঃ শঙ্খং দধ্মৌ প্রতাপবান্ ।।১২।।
অনুবাদঃ তখন কুরুবংশের বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম দুর্যোধনের হর্ষ উৎপাদনেরজন্য সিংহের গর্জনের মতো
অতি উচ্চনাদে তাঁর শঙ্খ বাজালেন।



ততঃ শঙ্খাশ্চ ভের্যশ্চ পণবানকগোমুখাঃ ।
সহসৈবাভ্যহন্যস্ত স শব্দস্তুমুলোহভবৎ।।১৩।।
অনুবাদঃ তারপর শঙ্খ, ভেরী, পণব,আনক, ঢাক ও গোমুখ শিঙাসমূহ হঠাৎ একত্রে ধ্বনিত হয়ে এক তুমুল শব্দের সৃষ্টি হল। 

ততঃ শ্বেতৈর্হয়ৈর্যুক্তে মহতি স্যন্দনে স্থিতৌ। 
মাধবঃ পান্ডবশ্চৈব দিব্যৌ শঙ্খৌ প্রদ্ধমতুঃ।।১৪।।
অনুবাদঃ অন্য দিকে, শ্বেত অশ্বযুক্ত এক দিব্য রথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন উভয়ে তাঁদের দিব্য শঙ্খ বাজালেন। 
 
 
পাঞ্চজন্যং হৃষীকেশো দেবদত্তং ধনঞ্জয়ঃ। 
পৌন্ড্রং দধ্মৌ মহাশঙ্খং ভীমকর্মা বৃকদরঃ।।১৫।।
অনুবাদঃ তখন, শ্রীকৃষ্ণ পাঞ্চজন্য নামক তাঁর শঙ্খ বাজালেন, অর্জুন বাজালেন তাঁর দেবদত্ত নামক শঙ্খ এবং বিপুল ভোজনপ্রিয় ও ভীমকর্মা ভীমসেন বাজালেন পৌন্ড্র নামক তাঁর ভয়ংকর শঙ্খ। 

অনন্তবিজয়ং রাজা কুন্তীপুত্রো যুধিষ্ঠিরঃ। 
নকুলঃ সহদেবশ্চ সুঘোষমণিপুষ্পকৌ।।১৬।।
কাশ্যশ্চ পরমেষ্বাসঃ শিখন্ডী চ মহারথঃ। 
ধৃষ্টদ্যুম্নো বিরাটশ্চ সাত্যকিশ্চাপরাজিতঃ।।১৭।। 
দ্রুপদো দ্রৌপদেয়াশ্চ সর্বশঃ পৃথিবীপতে। 
সৌভদ্রশ্চ মহাবাহুঃ শঙ্খান্ দধ্মুঃ পৃথক্ পৃথক্।।১৮।।
অনুবাদঃ কুন্তীপুত্র মহারাজ যুধিষ্ঠির অনন্তবিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন এবং নকুল ও সহদেব বাজালেন সুঘোষ ও মণিপুষ্প নামক শঙ্খ। হেমহারাজ!তখন মহান ধনুর্ধর কাশীরাজ, প্রবল যোদ্ধা শিখন্ডী, ধৃষ্টদ্যুম্ন,বিরাট, অপরাজিত সাত্যকি, দ্রুপদ, দ্রৌপদীর পুত্রগণ, সুভদ্রার মহা বলবান পুত্র এবং অন্য সকলে তাঁদের নিজ নিজ পৃথক শঙ্খ বাজালেন। 

স ঘোষো ধার্তরাষ্ট্রাণাং হৃদয়ানি ব্যদারয়ৎ। 
নভশ্চ পৃথিবীং চৈব তুমুলোহভ্যনুনাদয়ন্ ।।১৯।।
অনুবাদঃ শঙ্খ-নিনাদের সেই প্রচন্ড শব্দ আকাশ ও পৃথিবী প্রতিধ্বনিত করে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হৃদয় বিদারিত করতে লাগল। 

অথ ব্যবস্থিতান্ দৃষ্ট্বা ধার্তরাষ্ট্রান্ কপিধ্বজঃ। 
প্রবৃত্তে শস্ত্রসম্পাতে ধনুরুদ্যম্য পান্ডবঃ। 
হৃষীকেশং তদা বাক্যমিদমাহ মহীপতে।।২০।।
অনুবাদঃ সেই সময় পান্ডুপুত্র অর্জুন হনুমান চিহ্নিত পতাকা শোভিত রথে অধিষ্ঠিত হয়ে. তাঁর ধনুক তুলে নিয়ে শর নিক্ষেপ করতে প্রস্তুত হলেন। হে মহারাজ!ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের সমরসজ্জায় বিন্যস্ত দেখে, অর্জুন তখন শ্রীকৃষ্ণকে এই কথাগুলি বললেন-

সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে রথং স্থাপয় মেহচ্যুত। 
যাবদেতান্নিরীক্ষেহহং যোদ্ধুকামানবস্থিতান্ ।।২১।। 
কৈর্ময়া সহ যোদ্ধব্যমস্মিন্ রণসমুদ্যমে।।২২।।
অনুবাদঃ অর্জুন বললেন- হে অচ্যুত! তুমি উভয় পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে আমার রথ স্থাপন কর, যাতে আমি দেখতে পারি যুদ্ধ করার অভিলাষী হয়ে কারা এখানে এসেছে এবং এই মহা সংগ্রামে আমাকে কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।  

যোৎস্যমানানবেক্ষেহহং য এতেহত্র সমাগতাঃ। 
ধার্তরাষ্ট্রস্য দুর্বদ্ধের্যুদ্ধে প্রিয়চিকীর্ষবঃ।।২৩।।
অনুবাদঃ ধৃতরাষ্ট্রের দুর্বুদ্ধিসম্পন্ন পুত্রকে সন্তুষ্ট করার বাসনা করে যারা এখানে যুদ্ধ করতে এসেছে, তাদের আমি দেখতে চাই। 

এবমুক্তো হৃষীকেশো গুড়াকেশেন ভারত। 
সেনয়োরুভয়োর্মধ্যে স্থাপয়িত্বা রথোত্তমম্।।২৪।।
অনুবাদঃ সঞ্জয় বললেন-হে ভরত-ভংশধর!অর্জুন কর্তৃক এভাবে আদিষ্ট হয়ে, শ্রীকৃষ্ণ সেই অতি উত্তম রথটি চালিয়ে নিয়ে উভয় পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে রাখলেন। 

ভীষ্মদ্রোণপ্রমুখতঃ সর্বেষাং চ মহীক্ষিতাম্ । 
উবাচ পার্খ পশ্যৈতান্ সমবেতান্ কুরূনিতি।। ২৫।।
অনুবাদঃ ভীষ্ম, দ্রোণ প্রমুখ পৃথিবীর অন্য সমস্ত নৃপতিদের সামনে ভগবান হৃষীকেশ বললেন, হে পার্থ! এখানে সমবেত সমস্ত কৌরবদের দেখ। 

তত্রাপশ্যৎ স্থিতান্ পার্থঃ পিতৃনথ পিতামহান্। 
আচার্যান্মাতুলান্ ভ্রাতৃন্ পুত্রান্ পৌত্রান্ সখীংস্তথা। 
শ্বশুরান্ সুহৃদশ্চৈব সেনয়োরুভয়োরপি।। ২৬।।
অনুবাদঃ তখন অর্জুন উভয় পক্ষের সেনাদলের মধ্যে পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য, মাতুল, ভ্রাতা, পুত্র, পৌত্র,  শশুর, মিত্র ও শুভাকাঙ্খীদের উপস্থিত দেখতে পেলেন। 

তান্ সমীক্ষ্য স কৌন্তেয়ঃ সর্বান্ বন্ধুনবস্থিতান্। 
কৃপয়া পরায়াবিষ্টো বিষীদন্নিদমব্রবীৎ।।২৭।।
অনুবাদঃ যখন কুন্তীপুত্র অর্জুন সকল রকমের বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থিত দেখলেন, তখন তিনি  অত্যন্ত কৃপাবিষ্ট ও বিষণ্ণ হয়ে বললেন। 

অর্জুন উবাচ
দৃষ্ট্বেমং স্বজনং কৃষ্ণ যুযুৎসুং সমুপস্থিতম্। 
সীদন্তি মম গাত্রাণি মুখং চ পরিশুষ্যতি।।২৮।।
অনুবাদঃ অর্জুন বললেন- হে প্রিয়বর কৃষ্ণ! আমার সমস্ত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়- স্বজনদের এমনভাবে যুদ্ধাভিলাষী হয়ে আমার সামনে অবস্থান করতে দেখে আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ হচ্ছে এবং মুখ শুষ্ক হয়ে উঠছে। 

বেপথুশ্চ শরীরে মে রোমহর্যশ্চ জায়তে। 
গান্ডীবং স্রংসতে হস্তাৎ ত্বক্ চৈব পরিদহ্যতে।।২৯।।
অনুবাদঃ আমার সর্বশরীর কম্পিত ও রোমাঞ্চিত হচ্ছে, আমার হাত থেকে গান্ডীব খসে পড়ছে এবং ত্বক যেন জ্বলে যাচ্ছে। 

ন চ শক্নোম্যবস্থাতুং ভ্রুমতীব চ মে মনঃ। 
নিমিত্তানি চ পশ্যামি বিপরীতানি কেশব।।৩০।।
অনুবাদঃ হে কেশব! আমি এখন আর স্থির থাকতে পারছি না। আমি আত্মবিস্মৃত হচ্ছি এবং আমার চিত্ত উদভ্রান্ত হচ্ছে। হে কেশী দানবহন্তা শ্রীকৃষ্ণ! আমি কেবল অমঙ্গলসূচক লক্ষণসমূহ দর্শন করছি। 

ন চ শ্রেয়োহনুপশ্যামি হত্বা স্বজনমাহবে। 
ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ।।৩১।।
অনুবাদঃ হে কৃষ্ণ! যুদ্ধে আত্মীয়-স্বজনদের নিধন করা শ্রেয়স্কর দেখছি না। আমি যুদ্ধে জয়লাভ চাই না, রাজ্য এবং সুখভোগও কামনা করি না। 

কিং নো রাজ্যেন গোবিন্দ কিং ভোগৈর্জীবিতেন বা। 
যেষামর্থে কাঙ্ক্ষিতং নো রাজ্যং ভোগাঃ সুখানি চ।।৩২।। 
ত ইমেহবস্থিতা যুদ্ধে প্রাণাংস্ত্যক্তা ধনানি চ। 
আচার্যাঃ পিতরঃ পুত্রাস্তথৈব চ পিতামহাঃ।।৩৩।। 
মাতুলাঃ শ্বশুরাঃ পৌত্রাঃ শ্যালাঃ সম্বন্ধিনস্তথা। 
এতান্ন হস্তুমিচ্ছামি ঘ্নতোহপি মধূসূদন।।৩৪।। 
অপি ত্রৈলোক্যরাজ্যস্য হেতোঃ কিং নু মহীকৃতে। 
নিহত্য ধার্তরাষ্ট্রন্নঃ কা প্রীতিঃ স্যাজ্জনার্দন।।৩৫।।
অনুবাদঃ হে গোবিন্দ! আমাদের রাজ্যে কি প্রয়োজন, আর সুখভোগ বা জীবন ধারণেই বা কী প্রয়োজন, যখন দেখছি-যাদের জন্য রাজ্য ও ভোগসুখের কামনা, তারা সকলেই এই রণক্ষেত্রে আজ উপস্থিত? হে মধুসূদন! যখন আচার্য,পতিৃব্য,পুত্র, পিতামহ, মাতুল, শ্বশুর, পৌত্র, শ্যালক ও আত্মীয়স্বজন, সকলেই প্রাণ ও ধনাদির আশা পরিত্যাগ করে  আমার সামনে যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছেন, তখন তাঁরা আমাকে বধ করলেও আমি তাঁদের হত্যা করতে চাইব কেন? যেসমস্ত জীবের প্রতিপালক জনার্দন! পৃথিবীর তো কথাই নেই, এমন কি সমগ্র ত্রিভুবনের বিনিময়েও আমি যুদ্ধ  করতে প্রস্তুত নই। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের নিধন করে কি সন্তোষ আমরা লাভ করতে পারব?  
পাপমেবাশ্রয়েদস্মান্ হত্বৈতানাততায়িনঃ। 
তস্মান্নার্হা বয়ং হস্তুং ধার্তরাষ্ট্রান্ সবান্ধবান্ । 
স্বজনং হি কথং হত্বা সুখিনঃ স্যাম মাধব।।৩৬।।
অনুবাদঃ এই ধরনের আততায়ীদের বধ করলে মহাপাপ আমাদের আচ্ছন্ন করবে। সুতরাং বন্ধুবান্ধব সহ ধৃতরাষ্ট্রেরপুত্রদের সংহার করা আমাদের পক্ষে অবশ্যই উচিত হবে না। হে মাধব, লক্ষীপতি শ্রীকৃষ্ণ!আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করে  আমাদের কী লাভ হবে? আর তা থেকে আমরা কেমন করে সুখী হব? 

যদ্যপ্যেতে ন পশ্যন্তি লোভোপহতচেতসঃ। 
কুলক্ষয়কৃতং দোষং মিত্রদ্রোহে চ পাতকম্।।৩৭।। 
কথং ন জ্ঞেয়মস্মাভিঃ পাপাদস্মান্নিবর্তিতুম্।
কুলক্ষয়কৃতং দোষং প্রপশ্যদ্ভির্জনার্দন।।৩৮।।
অনুবাদঃ হে জনার্দন! যদিও এরা রাজ্যলোভে অভিভুত হয়ে  কুলক্ষয় জনিত দোষ ওমিত্রদ্রোহ নিমিত্ত পাপ লক্ষ্য করছে না, কিন্তু আমরা কুলক্ষয় জনিত দোষ লক্ষ্য করেও এই পাপকর্মে কেন প্রবুত্ত হব? 

কুলক্ষয়ে প্রণশ্যন্তি কুলধর্মাঃ সনাতনাঃ। 
ধর্মে নষ্টে কুলং কৃৎস্নমধর্মোহভিভবত্যুত।।৩৯।।
অনুবাদঃ কুলক্ষয় হলেও সনাতন কুলধর্ম বিনষ্ট হয় এবং তা হলে সমগ্র বংশ অধর্মে অভিভুত হয়। 

অধর্মাভিভবাৎ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কুলুস্ত্রয়ঃ। 
স্ত্রীষু দুষ্টাসু বার্ষ্ণেয় জায়তে বর্ণসঙ্করঃ।।৪০।।
অনুবাদঃ হে কৃষ্ণ! কুল অধর্মের দ্বারা অভিভুত হলে কুলবধূগণ ব্যভিচারে প্রবুত্ত হয় এবং হে বার্ষ্ণেয়! কুলস্ত্রীগণ অসৎ চরিত্রা হলে অবাঞ্চিত প্রজাতি উৎপন্ন হয়। 

সঙ্করো নরকায়ৈব কুলঘ্নানাং কুলস্য চ। 
পতন্তি পিতরো হ্যেষাং লুপ্তপিন্ডোদকক্রিয়াঃ।।৪১।।
অনুবাদঃ বর্ণসঙ্কর উৎপাদন বৃদ্ধি হলে কুল ও কুলঘাতকেরা নরকগামী হয়।সেইকুলে পিন্ডদান ও তর্পণক্রিয়া লোপ পাওয়ার ফলে তাদের পিতুপুরুষেরাও নরকে অধঃপতিত হয়। 

দোষৈরেতৈঃ কুলঘ্নানাং বর্ণস্করকৈঃ। 
উৎসাদ্যন্তে জাতিধর্মাঃ কুলধর্মাশ্চ শাশ্বতাঃ।।৪২।।
অনুবাদঃ যারা বংশের ঐতিহ্য নষ্ট করে এবং কার ফলে অবাঞ্চিত সন্তানাদি সৃষ্টি করে, তাদের কুকর্মজনিত দোষের ফলে সর্বপ্রকার জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং বংশের কল্যাণ-ধর্ম উৎসন্নে যায়। 

উৎসন্নকুলধর্মাণাং মনষ্যাণাং জনার্দন। 
নরকে নিয়তং বাসো ভবতীত্যনুশুশ্রুম।।৪৩।।
অনুবাদঃ হে জনার্দন!আমি পরম্পরাক্রমে শুনেছি যে, যাদের কুলধর্ম বিনষ্ট হয়েছে, তাদের নিয়ত নরকে বাস করতে হয়। 

অহো বত মহৎ পাপং কর্তুং ব্যবসিতা বয়ম্।
যদ্ রাজ্যসুখলোভেন হস্তুং স্বজনমুদ্যতাঃ।।৪৪।।
অনুবাদঃ হায়! কী আশ্চর্যের বিষয় যে, আমরা রাজ্যসুখের লোভে স্বজনদের হত্যা করতে উদ্যত হয়ে মহাপাপ করতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছি। 

যদি মামপ্রতীকারমশস্ত্রং শস্ত্রপাণয়ঃ। 
ধার্তরাষ্ট্রা রণে হন্যুস্তন্মে ক্ষেমতরং ভবেৎ।।৪৫।।
অনুবাদঃ প্রতিরোধ রহিত ও নিরস্ত্র অবস্থায় আমাকে যদি শস্ত্রধারী ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা যুদ্ধে বধ করে, তা হলে আমার অধিকতর মঙ্গলই হবে। 

এবমুক্তার্জুনঃ সংখ্যে রথোপস্থ উপাবিশৎ। 
বিসৃজ্য সশরং চাপং শোকসংবিগ্নমানসঃ।।৪৬।।
অনুবাদঃ সঞ্জয় বললেন- রণক্ষেত্রে এই কথা বলে অর্জুন তাঁর ধনুর্বাণ ত্যাগ করে শোকে ভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করলেন।
 সমাপ্ত

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সকল অধ্যায় সমূহ

 *মঙ্গলাচরণ

 *গীতা-মাহাত্ম্য

২. গীতা-২য় অধ্যায়-সাংখ্য-যোগ

৩. গীতা-৩য় অধ্যায়-কর্মযোগ

৪. গীতা-৪র্থ অধ্যায়-জ্ঞান যোগ

৫. গীতা-৫ম অধ্যায়-কর্মসন্ন্যাস-যোগ

৬. গীতা-ষষ্ঠ-অধ্যায়-ধ্যানযোগ

৭. গীতা-সপ্তম-অধ্যায়-বিজ্ঞান-যোগ

৮. গীতা-অষ্টম-অধ্যায়-অক্ষরব্রহ্ম-যোগ

৯. গীতা-নবম-অধ্যায়-রাজগুহ্য-যোগ

১০. গীতা-দশম-অধ্যায়-বিভূতি-যোগ

১১. গীতা-একাদশ-অধ্যায়-বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ

১২. গীতা-দ্বাদশ অধ্যায়-ভক্তিযোগ

১৩. গীতা-ত্রয়োদশ অধ্যায়-প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেকযোগ

 ১৪. গীতা-চতুর্দশ অধ্যায়-গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ

১৫. গীতা-পঞ্চদশ অধ্যায়-পুরুষোত্তম-যোগ

১৬. গীতা-ষোড়শ অধ্যায়-দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ

১৭. গীতা-সপ্তদশ অধ্যায়-শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ

১৮. গীতা-অষ্টাদশ অধ্যায়-মোক্ষযোগ

Next Post Previous Post
6 Comments
  • Unknown
    Unknown ২২ নভেম্বর, ২০২১ এ ১০:১৬ PM

    🙏🙏প্রনাম জানাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে,শ্রীমদ্ভগবদ গীতাকে

  • Bhakti Vriksha Kolkata
    Bhakti Vriksha Kolkata ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ এ ১০:৫০ AM

    হরেকৃষ্ণ, ধন্যবাদ

  • Unknown
    Unknown ২ এপ্রিল, ২০২২ এ ৯:৫৩ PM

    হরে কৃষ্ণ

  • Roy Dipika
    Roy Dipika ৪ এপ্রিল, ২০২২ এ ১:৫২ PM

    জয় শ্রীমদ্ভগবদগীতা....জয় শ্রী কৃষ্ণ

  • get a free gift card
    get a free gift card ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এ ৪:৪২ AM

    জয় শ্রীমদ্ভগবদগীতা

  • get a free gift card
    get a free gift card ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এ ৪:৪২ AM

    জয় শ্রীমদ্ভগবদগীতা

Add Comment
comment url