বালী বধ ন্যায় নাকি অন্যায়-বাংলা রামায়ন কথা-valmiki ramayana katha
বালীর অভিযোগ
বালী যখন ভগবান রামচন্দ্রের তীরের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ধরাশায়ী হলো, তখন সে নিম্নোক্ত বাক্য প্রয়োগের দ্বারা রামচন্দ্রকে অভিযুক্ত করেছিল। “হে রঘুকূল তিলক, আমি এখানে তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমি ইতিমধ্যেই অন্য একজনের সঙ্গে যুদ্ধে নিযুক্ত ছিলাম, আর তখনই তুমি আমাকে আক্রমণ করেছ। আমি জানি না এই কর্মের দ্বারা তুমি কী সাফল্য বা সুনাম অর্জন করলে।
হে রাজপুত্র, যদি তুমি আমার সামনে এসে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে, তবে আমি নিশ্চিতরূপে তোমাকে যমরাজের আলয়ে পাঠাতাম। সাপ যেভাবে ঘুমন্ত মানুষকে তার অজান্তে এসে কামড় দিয়ে তার মৃত্যু ঘটায়, ঠিক তেমনিভাবে তুমিও নিজেকে লুকিয়ে রেখে আমার মতো একজন যুদ্ধরত সৈনিককে আঘাত করেছে। আর ফলে তুমি ভয়ানক পাপের ভাগী হয়েছে। সুতারাং আজ যদি আমি মরেও যাই, আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু তুমি শুধু আমাকে বলো, আমাকে এভাবে হত্যা করার এহেন কর্মকে তুমি কীভাবে ন্যায্যতা প্রদান করবে?
ভগবান রামচন্দ্র উত্তর দিলেন- “হে বানর রাজ, তুমি জীবনের চারটি লক্ষ্য সম্পর্কে কিছুই জানো না- ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ (ধর্ম, অর্থনৈতিক উন্নতি, ইন্দ্রিয় তৃপ্তি এবং মুক্তি)। তাহলে তুমি কেন শিশুসুলভ ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে আমাকে এ ধরনের কথা বলছ? কর্মের জটিলতা সম্পর্কে উপলব্ধি না করেই, একটি চপলমতি বানরকে যেভাবে উপদেশ দাও, তুমি আমাকেও তাই দিতে চাচ্ছ?” “পাহাড়-পর্বত, বন-উদ্যান সমন্বিত এই গ্রহ বর্তমানে ইক্ষাকু রাজবংশের রাজাদের অধীনে রয়েছে।
সুতরাং যেকোনো ব্যক্তি-হোক সে পশু, পাখি অথবা মানুষ-তাদের শাস্তি প্রদান অথবা ক্ষমা করে দেয়ার অধিকার তাঁদের রয়েছে। রাজা ভরতের নির্দেশ অনুসারে- ধর্মের আইন লঙ্ঘনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে আমরা তাদের এভাবেই তারণ করে থাকি।” তোমার সারা জীবনে তুমি শুধু কাম আর ইন্দ্রিয়তৃপ্তিকেই প্রশ্রয় দিয়েছ। রাজার জন্য উপযুক্ত কোনো পথেই তুমি কখনো অবিচলিত ছিলে না।
হে রাজপুত্র, যদি তুমি আমার সামনে এসে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে, তবে আমি নিশ্চিতরূপে তোমাকে যমরাজের আলয়ে পাঠাতাম। সাপ যেভাবে ঘুমন্ত মানুষকে তার অজান্তে এসে কামড় দিয়ে তার মৃত্যু ঘটায়, ঠিক তেমনিভাবে তুমিও নিজেকে লুকিয়ে রেখে আমার মতো একজন যুদ্ধরত সৈনিককে আঘাত করেছে। আর ফলে তুমি ভয়ানক পাপের ভাগী হয়েছে। সুতারাং আজ যদি আমি মরেও যাই, আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু তুমি শুধু আমাকে বলো, আমাকে এভাবে হত্যা করার এহেন কর্মকে তুমি কীভাবে ন্যায্যতা প্রদান করবে?
ভগবান রামচন্দ্র উত্তর দিলেন- “হে বানর রাজ, তুমি জীবনের চারটি লক্ষ্য সম্পর্কে কিছুই জানো না- ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ (ধর্ম, অর্থনৈতিক উন্নতি, ইন্দ্রিয় তৃপ্তি এবং মুক্তি)। তাহলে তুমি কেন শিশুসুলভ ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে আমাকে এ ধরনের কথা বলছ? কর্মের জটিলতা সম্পর্কে উপলব্ধি না করেই, একটি চপলমতি বানরকে যেভাবে উপদেশ দাও, তুমি আমাকেও তাই দিতে চাচ্ছ?” “পাহাড়-পর্বত, বন-উদ্যান সমন্বিত এই গ্রহ বর্তমানে ইক্ষাকু রাজবংশের রাজাদের অধীনে রয়েছে।
সুতরাং যেকোনো ব্যক্তি-হোক সে পশু, পাখি অথবা মানুষ-তাদের শাস্তি প্রদান অথবা ক্ষমা করে দেয়ার অধিকার তাঁদের রয়েছে। রাজা ভরতের নির্দেশ অনুসারে- ধর্মের আইন লঙ্ঘনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে আমরা তাদের এভাবেই তারণ করে থাকি।” তোমার সারা জীবনে তুমি শুধু কাম আর ইন্দ্রিয়তৃপ্তিকেই প্রশ্রয় দিয়েছ। রাজার জন্য উপযুক্ত কোনো পথেই তুমি কখনো অবিচলিত ছিলে না।
তুমি সর্বদাই ধর্মের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছ এবং তোমার অধার্মিক কাজের জন্য তুমি সর্বদা সাধুদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছ। তুমি অসৎ এবং সবসময় তোমার সমমনা অসৎ চরিত্রের অন্যান্য বানরদের সঙ্গ করেছ। একজন জন্মান্ধ ব্যক্তি যেমন অন্য আরেকটি অন্ধ ব্যক্তির কাছে নির্দেশনা দেয়ার জন্য বলে, তুমিও তেমনি এসমস্ত অজ্ঞ বানরদের সঙ্গে পরামর্শ করতে। সুতরাং প্রকৃত ধর্ম কী তা নির্ধারণ করতে তুমি কিভাবে সমর্থ হবে? এর সারমর্ম কী তা তুমি কীভাবে উপলব্ধি করবে? তুমি জিজ্ঞেস করেছ কেন আমি তোমাকে এভাবে হত্যা করেছি। তাই দয়া করে এই কারণগুলো শোন, আর অনুভব করার চেষ্টা কর।
ছোট ভাইয়ের পত্নীর সঙ্গে অবস্থান
তুমি তোমার ছোট ভাইয়ের পত্নীর সঙ্গে সহাবস্থান করার কারণে সনাতন ধর্ম কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, কারণ সে ছিল তোমার ভগ্নীর মতো। “যে ব্যক্তি তার ভগ্নী, মাতা অথবা ভ্রাতার পত্নীর প্রতি কামপূর্ণ আচরণ করে, তাকে হত্যা করার নির্দেশ শাস্ত্রে দেয়া হয়েছে। কারণ এটাই তার উপযুক্ত শাস্তি।” আমি একটি উন্নত ক্ষত্রিয় বংশে জন্মগ্রহণ করেছি, তাই আমি তোমার পাপকে ক্ষমা করতে পারি না।যেহেতু তুমি ধর্ম থেকে পথ ভ্রষ্ট হয়েছ, তবে আমি কী করে তোমাকে উপেক্ষা করতে পারি।” “আমি সুগ্রীবের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেছি। তাই লক্ষণের জন্য আমার যেরূপ স্নেহ রয়েছে, সুগ্রীবের জন্যও আমার একই অনুভূতি রয়েছে। সে আমাকে সাহায্য করতে রাজী হয়েছে। তাই আমি তাকে কথা দিয়েছি, তার রাজ্য এবং পত্নীকে ফিরে পেতে আমি তাঁকে সাহায্য করব। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে আমি তার নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধও হয়েছি। এই যখন পরিস্থিতি, তখন আমার মতো একজন ব্যক্তি কী করে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারে?
যে ব্যক্তি ধর্মকে অনুসরণ করে, বিপদের সময় তার বন্ধুকে সাহায্য করা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই তোমাকে শাস্তি দেয়া ধর্মের বিপরীত কিছু নয়।” “তুমি নিজে একজন রাজা হয়ে যদি ধর্মকে অনুসরণ করতে, তবে আজ আমি যা করেছি, তুমিও তাই করতে। মন বলেছেন, “যদি কোনো ব্যক্তি পাপ করে এবং রাজা কর্তৃক তাঁকে দেয়া দন্ডকে সে স্বেচ্ছায় ভোগ করে, তবে সে পাপমুক্ত হয়ে পরিশোধিত হয় এবং কোনো সাধু ব্যক্তির মতো সেও স্বর্গে গমন করে।” যখন রাজা কোনো পাপীকে শাস্তি দেয়, তখন সেই পাপ থেকে সে মুক্ত হয়। উপরন্তু রাজা যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তবে স্বয়ং রাজাকেই সেসমস্ত পাপপূর্ণ কর্মের প্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হয়। পূর্বে কোনো এক শূদ্রও ঠিক একই ধরনের পাপ করেছিল এবং তাকেও আমার পূর্বপুরুষ মান্ধতা কর্তৃক শাস্ত্র অনুযায়ী কঠিন দন্ড ভোগ করতে হয়েছিল।”
ক্ষত্রিয়দের প্রাণী শিকার করার অধিকার রয়েছে( বাংলা রামায়ন কথা)
“এক রাজা বিশাল জাল পেতে, ফাঁদ পেতে কিংবা চোরা গর্ত খনন করে ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে হরিণ পালকে শিকার করতে পারে, এটা বিবেচনা না করেই যে, তারা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে, নাকি নিকটন্থ কোথাও নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে বিশ্রাম গ্রহণ করছে। ক্ষত্রিয় সচেতন অথবা অসচেতন প্রাণী কিংবা অন্য দিকে মুখ করা যেকোনো প্রণীকে বধ করতে পারে। অধিকন্তু, এধরনের শিকার তাদের জন্য পাপের কারণ নয়। অতএব, এটা কোনো ব্যাপার নয় যে, আমি তোমার সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে তোমাকে বধ করেছি কি না; এতে কোনো পাপ নেই, কারণ তুমি একটি বানর প্রকৃতির শরীর ধারণ করে আছ।”
বালীর মুক্তি (রামায়ন কথা)
ভগবান রামচন্দের শ্রীমুখ থেকে এসকল কথা শ্রবণ করার পর বালী ভগবান রামচন্দ্রের প্রতি তার বাহ্যিক ভুল ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করল। বানররাজ বালী তার দু’হাত জোর করে ভগবানের উদ্দেশ্যে বললেন- “হে পুরুষোত্তম, তুমি যা বলেছ তাই সত্য; এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মিথ্যা অহংকারের বশবর্তী হয়ে আমি তোমার প্রতি যেসব অপরাধমূলক বাক্য প্রয়োগ করেছি, তার জন্য দয়া করে আমাকে ক্ষমা কর। হে রঘুকূল চন্দ্র, তুমিই ধর্মের প্রকৃত নির্ভরশীলদের মঙ্গল সাধনের ব্যাপারে সর্বদাই সজাগ। তোমার বুদ্ধি কখনো মায়াগ্রস্থ হয় না, তা সর্বদাই শুদ্ধ, তুমি কার্য-কারণের নিগূঢ়তার বিষয়ে সর্বজ্ঞ। হে ধর্মজ্ঞ, আমি ধর্মত্যাগী পশুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, তবুও আজ আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি, দয়া করে আমাকে রক্ষা কর।”এরপর বালী তার পুত্র অঙ্গদকে রক্ষা করার জন্য ভগবান রামচন্দ্রের নিকট প্রার্থনা করল এবং স্বচ্ছন্দে সমগ্র রাজ্য সুগ্রীবের নিকট হস্তান্তর করল। অতপর বালী অঙ্গদকে নির্দেশ দিল- “আমার প্রিয় পুত্র, আমি এখন চলে যাচ্ছি, তুমি সবসময় সুগ্রীবের অনুগত হয়ে থাকবে। বিবেচনা করে কাজ করবে, সুখ-দুঃখের দৈতভাবকে সমজ্ঞান করবে। অতিরিক্ত আসক্তি বা ঘৃণা এড়িয়ে চলো, কারণ উভয়ের চূড়ান্ত পরিণতি অধঃপতনের দিকে পরিচালিত করে।” এটা বলার পর মহান বানর যোদ্ধা বালী তার দেহ ত্যাগ করল।---------------হরেকৃষ্ণ--------------