রামচন্দ্র বনবাসে যাওয়ার ৩টি রহস্য-bangla ramayan-বাংলা রামায়ন কথা
রামচন্দ্র বনবাসে যাওয়ার ৩টি রহস্য-bangla ramayan kotha
কমলাপতি দাস ব্রহ্মচারী
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমর্ধমস্য তদান্মনং সৃজাম্যহম্।।
হে ভারত! যখনই ধর্মের অর্ধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবর্তীর্ণ হই।(গীতা ৪/৭) ঠিক একইভাবে ভগবান রামচন্দ্র এই জগতে এসেছিলেন ইন্দ্র, গন্ধর্ব, সিদ্ধ, চারণ এমনকি ব্রহ্মাজীর মতো ভক্তদের আহ্বানে মহাপরাক্রমশালী অসুর রাবণের হাত থেকে জগৎকে রক্ষা করার জন্য এবং নিজের জীবনের আচরণের মাধ্যমে ধর্ম সংস্থাপন করার জন্য।
ভগবান রামচন্দ্রের পৃথিবীতে লীলা বিলাস
ভগবান রামচন্দ্র এই জগতে ১১ হাজার বৎসর প্রকট ছিলেন। তাঁর প্রতিটি কার্যকলাপের মাধ্যমেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। বিশেষ ভাবে তাঁর করুণা প্রতিটি জীবের প্রতি এমন কি মাতা কৈকেয়ীর প্রতিও। ভগবান যখন মাতা কৈকেয়ীর শ্রীমুখ হতে শুনলেন, “হে রাম, তোমাকে চৌদ্দ বৎসরের জন্য বনবাসে যেতে হবে আর ভরত রাজসিংহাসনে বসবে।” একথা শোনা মাত্রই ভগবান শ্রীরামচন্দ্র প্রতিকূল বিষয়টিকে অনুকূল ভাবে গ্রহণ করে বললেন
“হে মাতা, আমি কত ভাগ্যবান, আপনি কত করুণাময়ী। আমি কিভাবে আপনাকে ধন্যবাদ দেবো আমি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমি ১৪ বৎসর মুনি-ঋষিদের সঙ্গ করতে পারবো। তাঁদের মুখপদ্ধ হতে হরিকথা প্রবণ করতে পারবো এবং তাঁদের নিজের হাতে সেবা করতে পারবো। তাঁরা অরণ্যে থাকে যেখানে কোন রণ নাই, কেবল আনন্দ আর আনন্দ।”
প্রথমত রাম চেয়েছিলেন মা কৈকেয়ী যাতে কোন দুঃখ না পান।আর দ্বিতীয়ত, তিনি চিন্তা করলেন পিতৃ আদেশ পালন করাটাই জীবনের লক্ষ্য। তৃতীয়ত, তিনি চিন্তা করলেন অযোধ্যা রাজ্যের বাইরে যাওয়ার এই হচ্ছে উপযুক্ত সময়। আমাকে বহু রাক্ষসদের বধ করে তাদের উদ্ধার করতে হবে। এইভাবে চিন্তা করে মা কৈকেয়ীকে প্রণাম করে তাঁর কাছ থেকে আশীর্বাদ গহণ করলেন। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে কিভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতক অনুকূলভাবে গ্রহণ করেছেন? শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর এর সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। কেউ যদি ভগবানের চরণে শরণাগত হয় তখন তার পক্ষে এটি খুব সহজ হয়ে যায়।
শরণাগত মানে ভগবান যা করেন তা মঙ্গলের জন্য করেন; সেটিকে সহজে গ্রহণ করা। একবার বিভীষণ ভগবানকে শুধুমাত্র ভক্তি দিয়ে প্রণাম করেছিলেন ভগবান রামচন্দ্র বললেন “হে বিভীষণ, তুমি যে আমায় প্রণাম করলে তার বিনিময়ে আমি তোমায় লঙ্কার রাজসিংহাসনে বসাব।” সেই সময় সুগ্রীব শুনে বললেন-“হে প্রভু, যদি লঙ্কার রাজা রাবণ এসে আপনাকে ভক্তি দিয়ে প্রণাম করেন তাহলে আপনি কি করবেন?” তখন ভগবান রামচন্দ্র হাসতে হাসতে বললেন “আমি রাবণকে আলিঙ্গন করে অযোধ্যার রাজসিংহাসনে বসাব।”
অর্থাৎ যিনি ভগবানের চরণে আশ্রয় নিয়েছেন তাকে ভগবান কখনই ত্যাগ করতে পারেন না। একবার ভগবান রামচন্দ্র বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময় সীতা মা ‘প্রভুর শ্রীচরণ কমলে একটি কাঁটা বার করে দিচ্ছিলেন। ঐ সময় প্রভু রামচন্দ্রের নিদ্রা ভেঙ্গে গিয়েছিল তখন ভগবান রামচন্দ্র মা সীতাকে বললেন “যে আমার চরণে আশ্রয় গ্রহণ করে তাকে আমি কখনই পরিত্যাগ করি না। এমনকি একটি কাঁটা হলেও না।”
তাই আমরা দেখতে পাই গজেন্দ্র মোক্ষ লীলায় কুমীর গজেন্দ্রের চরণ কামড়িয়ে ধরেছিল, ভগবান কিন্তু সে কুমীরকে কৃপা করেন কারণ ভগবান চিন্তা করলেন, আমার ভক্তের চরণ ধরেছে সে কত ভাগ্যবান তাই তাকে আগে কৃপা করলেন। ভগবান রামচন্দ্র এতই করূণাময়. তিনি যখন জটায়ুর শ্রীমুখ হতে সীতা মাকে রাবণ অপহরণ বার্তা শুনলেন এবং সীতাদেবীকে রক্ষা করার জন্য জটায়ু কিভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন।
তখন ভগবান রামচন্দ্র সীতামায়ের কথা ভুলে গিয়ে এক দৃষ্টিতে জটায়ুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। অবশেষে যখন জটায়ু ‘রাম’ নাম উচ্চারণ করে দেহত্যাগ করলেন তখন ভগবান রামচন্দ্র অনর্গল অশ্রুপাত করতে লাগলেন। অবশেষে চিতা সাজিয়ে জটায়ুর দেহকে দাহ করেন এবং তার উদ্দেশ্যে গোদাবরী নদীতে তর্পন ক্রিয়া সম্পাদন করলেন। ভগবানের একটি নাম ‘অচ্যুত’।
যদি কেউ ভগবানের কিঞ্চিৎ মাত্র সেবা করে ভগবান তার প্রতিদান দিতে কখনও চ্যুতি হন না। যখন ভগবান রামচন্দ্র ‘১৪ বৎসর বনবাসের পর অযোধ্যায় ফিরে এলেন তখন তিন মা তা মিলে বহু পদ রান্না করতেন কিন্তু ভগবান রামচন্দ্র যখন সকলের সাথে একসাথে খেতে বসতেন। তখন দুই তিন গ্রাস খাবার পর তিনি খুব কান্না করতেন। আর সকলে মিলে এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় ভগবান বললেন, আমার খাওয়ার সময় জটায়ুর কথা এবং সবরীর কথা মনে পড়ে যায় তখন আর আমি খেতে পারি না। সেই সময় অযোধ্যাবাসীগণ জানতে পারলেন যখন ‘প্রভু’র কেউ কোন সেবা করে থাকেন প্রভু রামচন্দ্র তার প্রতি এত ঋণী হন কান্না করেও তার ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। ভগবান জীবের প্রতি এতই কৃপালু তা প্রমাণ করলেন।
এমনকি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতা জগন্নাথ এমনকি শ্রীচৈতন্য পহাপ্রভুর পিতা জগন্নাথ মিশ্র অপ্রকটের সময় তাঁর পুত্র নিমাই যখন কান্না করছিলেন, “হে পিতা, কে আমাকে দেখবে, কাকে আমি পিতা বলব।” তখন জগন্নাথ মিশ্র বললেন “হে পুত্র তুমি চিন্তা করো না, তোমার দায়িত্ব আমি ভগবান রামচন্দ্রের উপর দিলাম উনি তোমাকে দেখবে।” বাৎসল্য রসে এমনভাবে জগন্নাথ মিশ্র নিমগ্ন ছিলেন, তাঁর পুত্র নিমাই যে স্বয়ং ভগবান রামচন্দ্রই, সে কথা ভূলে গিয়েছিলেন। এভাবে ভগবান রামচন্দ্র যে প্রকৃত করুণাময় সে কথা সকল মানুষই এক বাক্যে স্বীকার করেন।
তাই এখনও লোকের মুখে মুখে শোনা যায় কবে রামরাজ্য ফিরে আসবে। একবার ভগবান রামচন্দ্র ভ্রমণ কালে নবদ্বীপের মোদদ্রুম দ্বীপে এসেছিলেন। সেই সময় মৃদু হাসাতেই মা সীতাদেবী জিজ্ঞাসা করলেন, হাসির কারণ কি? সেই উত্তরে তিনি বললেন, এই জায়গায় আমি কলিযুগে লীলা বিলাস করব। তোমাকে ছেড়ে আমি সন্ন্যাস নেব।- হরে কৃষ্ণ..
* রামচন্দ্র বনবাসে যাওয়ার ৩টি রহস্য
*শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সকল অধ্যায় সমূহ
* তুলসী মাহাত্ম-বৃক্ষ হয়েও তুলসী কেন পূজনীয়া?
“হে মাতা, আমি কত ভাগ্যবান, আপনি কত করুণাময়ী। আমি কিভাবে আপনাকে ধন্যবাদ দেবো আমি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমি ১৪ বৎসর মুনি-ঋষিদের সঙ্গ করতে পারবো। তাঁদের মুখপদ্ধ হতে হরিকথা প্রবণ করতে পারবো এবং তাঁদের নিজের হাতে সেবা করতে পারবো। তাঁরা অরণ্যে থাকে যেখানে কোন রণ নাই, কেবল আনন্দ আর আনন্দ।”
প্রথমত রাম চেয়েছিলেন মা কৈকেয়ী যাতে কোন দুঃখ না পান।আর দ্বিতীয়ত, তিনি চিন্তা করলেন পিতৃ আদেশ পালন করাটাই জীবনের লক্ষ্য। তৃতীয়ত, তিনি চিন্তা করলেন অযোধ্যা রাজ্যের বাইরে যাওয়ার এই হচ্ছে উপযুক্ত সময়। আমাকে বহু রাক্ষসদের বধ করে তাদের উদ্ধার করতে হবে। এইভাবে চিন্তা করে মা কৈকেয়ীকে প্রণাম করে তাঁর কাছ থেকে আশীর্বাদ গহণ করলেন। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে কিভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতক অনুকূলভাবে গ্রহণ করেছেন? শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর এর সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। কেউ যদি ভগবানের চরণে শরণাগত হয় তখন তার পক্ষে এটি খুব সহজ হয়ে যায়।
“মারবি রাখবি যো ইচ্ছা তোহারা।
নিত্য দাস প্রতি তুয়া অধিকারা।”
ভগবান রামচন্দ্রের করুনা
শরণাগত মানে ভগবান যা করেন তা মঙ্গলের জন্য করেন; সেটিকে সহজে গ্রহণ করা। একবার বিভীষণ ভগবানকে শুধুমাত্র ভক্তি দিয়ে প্রণাম করেছিলেন ভগবান রামচন্দ্র বললেন “হে বিভীষণ, তুমি যে আমায় প্রণাম করলে তার বিনিময়ে আমি তোমায় লঙ্কার রাজসিংহাসনে বসাব।” সেই সময় সুগ্রীব শুনে বললেন-“হে প্রভু, যদি লঙ্কার রাজা রাবণ এসে আপনাকে ভক্তি দিয়ে প্রণাম করেন তাহলে আপনি কি করবেন?” তখন ভগবান রামচন্দ্র হাসতে হাসতে বললেন “আমি রাবণকে আলিঙ্গন করে অযোধ্যার রাজসিংহাসনে বসাব।”
অর্থাৎ যিনি ভগবানের চরণে আশ্রয় নিয়েছেন তাকে ভগবান কখনই ত্যাগ করতে পারেন না। একবার ভগবান রামচন্দ্র বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময় সীতা মা ‘প্রভুর শ্রীচরণ কমলে একটি কাঁটা বার করে দিচ্ছিলেন। ঐ সময় প্রভু রামচন্দ্রের নিদ্রা ভেঙ্গে গিয়েছিল তখন ভগবান রামচন্দ্র মা সীতাকে বললেন “যে আমার চরণে আশ্রয় গ্রহণ করে তাকে আমি কখনই পরিত্যাগ করি না। এমনকি একটি কাঁটা হলেও না।”
তাই আমরা দেখতে পাই গজেন্দ্র মোক্ষ লীলায় কুমীর গজেন্দ্রের চরণ কামড়িয়ে ধরেছিল, ভগবান কিন্তু সে কুমীরকে কৃপা করেন কারণ ভগবান চিন্তা করলেন, আমার ভক্তের চরণ ধরেছে সে কত ভাগ্যবান তাই তাকে আগে কৃপা করলেন। ভগবান রামচন্দ্র এতই করূণাময়. তিনি যখন জটায়ুর শ্রীমুখ হতে সীতা মাকে রাবণ অপহরণ বার্তা শুনলেন এবং সীতাদেবীকে রক্ষা করার জন্য জটায়ু কিভাবে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন।
তখন ভগবান রামচন্দ্র সীতামায়ের কথা ভুলে গিয়ে এক দৃষ্টিতে জটায়ুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। অবশেষে যখন জটায়ু ‘রাম’ নাম উচ্চারণ করে দেহত্যাগ করলেন তখন ভগবান রামচন্দ্র অনর্গল অশ্রুপাত করতে লাগলেন। অবশেষে চিতা সাজিয়ে জটায়ুর দেহকে দাহ করেন এবং তার উদ্দেশ্যে গোদাবরী নদীতে তর্পন ক্রিয়া সম্পাদন করলেন। ভগবানের একটি নাম ‘অচ্যুত’।
যদি কেউ ভগবানের কিঞ্চিৎ মাত্র সেবা করে ভগবান তার প্রতিদান দিতে কখনও চ্যুতি হন না। যখন ভগবান রামচন্দ্র ‘১৪ বৎসর বনবাসের পর অযোধ্যায় ফিরে এলেন তখন তিন মা তা মিলে বহু পদ রান্না করতেন কিন্তু ভগবান রামচন্দ্র যখন সকলের সাথে একসাথে খেতে বসতেন। তখন দুই তিন গ্রাস খাবার পর তিনি খুব কান্না করতেন। আর সকলে মিলে এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় ভগবান বললেন, আমার খাওয়ার সময় জটায়ুর কথা এবং সবরীর কথা মনে পড়ে যায় তখন আর আমি খেতে পারি না। সেই সময় অযোধ্যাবাসীগণ জানতে পারলেন যখন ‘প্রভু’র কেউ কোন সেবা করে থাকেন প্রভু রামচন্দ্র তার প্রতি এত ঋণী হন কান্না করেও তার ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। ভগবান জীবের প্রতি এতই কৃপালু তা প্রমাণ করলেন।
এমনকি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতা জগন্নাথ এমনকি শ্রীচৈতন্য পহাপ্রভুর পিতা জগন্নাথ মিশ্র অপ্রকটের সময় তাঁর পুত্র নিমাই যখন কান্না করছিলেন, “হে পিতা, কে আমাকে দেখবে, কাকে আমি পিতা বলব।” তখন জগন্নাথ মিশ্র বললেন “হে পুত্র তুমি চিন্তা করো না, তোমার দায়িত্ব আমি ভগবান রামচন্দ্রের উপর দিলাম উনি তোমাকে দেখবে।” বাৎসল্য রসে এমনভাবে জগন্নাথ মিশ্র নিমগ্ন ছিলেন, তাঁর পুত্র নিমাই যে স্বয়ং ভগবান রামচন্দ্রই, সে কথা ভূলে গিয়েছিলেন। এভাবে ভগবান রামচন্দ্র যে প্রকৃত করুণাময় সে কথা সকল মানুষই এক বাক্যে স্বীকার করেন।
তাই এখনও লোকের মুখে মুখে শোনা যায় কবে রামরাজ্য ফিরে আসবে। একবার ভগবান রামচন্দ্র ভ্রমণ কালে নবদ্বীপের মোদদ্রুম দ্বীপে এসেছিলেন। সেই সময় মৃদু হাসাতেই মা সীতাদেবী জিজ্ঞাসা করলেন, হাসির কারণ কি? সেই উত্তরে তিনি বললেন, এই জায়গায় আমি কলিযুগে লীলা বিলাস করব। তোমাকে ছেড়ে আমি সন্ন্যাস নেব।- হরে কৃষ্ণ..
আরও পড়ুন
*শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সকল অধ্যায় সমূহ
* তুলসী মাহাত্ম-বৃক্ষ হয়েও তুলসী কেন পূজনীয়া?