ভগবান কে? ভগবানকে নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন?

 

 

ভগবান কে? ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব

 ভগবানকে নিয়ে কেন সারা জগৎ আজ বিভ্রান্ত! অবশ্যেই বিভ্রান্ত হবে, কারণ ভগবান কে নিয়ে মুনি-ঋষিরাও পর্যন্ত বিভ্রান্ত। পরম ব্রহ্ম এরকম একটি বিষয় গুহ্যতম বড় বড় মুনি-ঋষি দেবতারাও পর্যন্ত বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আর সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হবে তাতে আশ্চর্যের কি আছে! 


আর বিশেষ করে কলিযুগের মানুষ ভগবানকে নিয়ে বিভ্রান্ত হবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে! আমরা পৌছালাম বৃন্দাবনের কৃষ্ণের কাছে। বৃন্দাবনের কৃষ্ণ তাঁর সাথে ভক্তের ভাব আদান-প্রদানের যে সম্পর্ক তার মধ্যে আবার বিভিন্ন প্রকার ভাগ রয়েছে।- 

 

আস্তিক-নাস্তিক, সাকার-নিরাকার, একেশ্বর-বহুঈশ্বর, দেবতা-ভগবান, বিষ্ণু-কৃষ্ণ, দ্বারকা কৃষ্ণ-মথুরা কৃষ্ণ-বৃন্দাবন কৃষ্ণ। বিভিন্ন রসের বিভাগ-শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মাধুর্য রস। রসের তারতম্য অনুসারে প্রেমের সম্পর্ক।  


দাস্য প্রেম- ভগবানের প্রকি সম্রমতা রয়েছে। আমি তোমার দাস, ভগবান থেকে আমি ছোট এই বুদ্ধি। 

সখ্য প্রেম- আমি ভগবানের সমান ও ভগবান আমার বন্ধু। কৃষ্ণ আর আমি সমান। 

বাৎসল্য প্রেম- বাৎসল্য রসে স্নেহের ভাব। বাৎসল্য প্রেমে ভক্ত মনে করছে আমি কৃষ্ণের চেয়ে বড়। আমি কৃষ্ণকে শাসন, র্ভৎসনা ও তাড়না করবো। 

 

ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যে বিষয়টি দিয়ে গিয়েছেন তা সমাজে সাধারণ মানুষের কাছে কেন বিভ্রান্তিকর! বর্ননা করা হচ্ছে মহাপ্রভু একটা অতি উন্নত মহান জিনিস দিয়ে গিয়েছে যেটা সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রের সার কথা হলেও বেদ-বেদান্তে সুস্পষ্ট বর্ননা নেই।  

 

যার ফলে মানুষ বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছে। আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ব্রজ-লীলার গুরুত্ব বা প্রধান্য দিয়ে থাকি রাধারানী কৃষ্ণের সঙ্গে যে লীলা বিলাস তা শ্রীল প্রভুপাদও বলেছেন, ‘এই রাধা-কৃষ্ণ দুইটি (চরিত্র) খুবই বিভ্রান্তিকর!’ এই তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করা সহজ নয়। বিশেষ করে ‘রাধারাণীর তত্ত্ব’। 


আস্তিক ও নাস্তিক কি? 

পৃথিবীতে যদিও আমরা মানব সমাজকে হিন্দু, খ্রীস্টান, ইহুদী ইত্যাদি ধর্ম ভিত্তিতে আমরা বিভাজন করেছি। ভারত, বাংলাদেশ, আমেরিকা, ইউরোপ ভিত্তিতে বিভাজন করেছি। 

ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, প্রফেসর বিভিন্নভাবে আমরা সমাজকে বিভাজন করেছি। কিন্তু বস্তুত দেখতে গেলে পুরো মনুষ্য সমাজকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ‘আস্তিক’ আরেকটি হচ্ছে ‘নাস্তিক’। ‘আস্তিক’ মানে যারা ভগবানকে বিশ্বাস করে। 

‘নাস্তিক’ মানে যারা ভগবানে বিশ্বাস করে না। যারা নাস্তিক তারা এক প্রকার শান্তিতে আছে কেননা তাদের জন্য আর কোনো গুরুত্বের বিষয় নেই, কোনো মতান্তর, মতভেদ, তর্ক নেই এবং ভগবান নেই! কথা শেষ ব্যাস! 

কিন্তু নাস্তিক থেকে যারা আস্তিক তাদের অবস্থা আরো জটিল, কঠিন ও আরো সমস্যাবহুল। নাস্তক মূর্খ মানুষের বোঝে না কিন্তু যারা বিভিন্ন প্রকারের বোঝে। ভগবান আছে, সেই ভগবানটি কে? এইটা নিয়ে বিরাট বড় সমস্যা। 


সাকার ও নিরাকার কি? 

আস্তিকদের মধ্যে দুটো দল। সাকার মানে হলো কেউ মনে করে, “ভগবানের রূপ আছে, ভগবান সবিশেষ তত্ত্ব, ভগবানের গুণ আছে।”  আরেক দল মনে করে, “ভগবান নিরাকার, ভগবানের রূপ নেই, তিনি নির্বিশেষ, নির্গুণা, নিরাকার ও নিরঞ্জন।” তারা নিরাকারবাদী 

ভালো করে বিচার করে দেখলে বুঝতে পারবো সারা পৃথিবীর মানুষ নিরাকারবাদী। আমার মনে হয় ৯৯% হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ইহুদি সব নিরাকারবাদী ভগবানের রূপে বিশ্বাস করে না। 

শুধু অণ্য ধর্মালম্বীরা ভগবানে বিশ্বাস করে তা নয় আমাদের হিন্দু  ধর্মেও অধিকাংশ লোক ভগবানকে নিরাকার বলে মনে করে। যদিও তারা ভগবানকে পূজা করে কিন্তু তাদের ধারণা হলো ভগবান আসছে নিরাকার থেকে। 

বেদ-বেদান্তে নিরাকারের অনেক সূত্র বর্ণনা করা হয়েছে। শঙ্করাচার্য সহ বড় বড় আচার্যরা নিরাকারের কথা বলেছে। 
 

ভগবান এক না বহু 

যারা সাকার রূপকে মানে তাদের ভগবানকে  নিয়ে প্রশ্ন আসে-ভগবান এক না বহু? তাদের মধ্যে যারা ঈশ্বরবাদী অর্থাৎ ঈশ্বরকে মানে তাদের মধ্যেও রয়েছে মতান্তর একেশ্বরবাদ না বহুঈশ্বরবাদ। অন্যসব ধর্মের মানুষেরা স্রষ্টা এক হিসেবে মানে। সনাতনধর্মে বহু উপাসনা রয়েছে ৩৩ কোটি দেবতার উপাসনা রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে সাকার উপাসক যারা তার মধ্যে কিছু দেবতা উপাসক আছে, কিছু ভগবান উপাসক আছে। সাকার দুটি দল হল। শাস্ত্রে পঞ্চোপাসনার কথা বলা হয়েছে। 

১. বিষ্ণুর যারা উপাসনা করে তারা বৈষ্ণব। 
২. শক্তি যারা উপাসনা করে তারা শাক্ত। 
৩. শিবের যারা উপাসনা করে তার শৈব। 
৪. গণপতির যারা উপাসনা করে তারা গণপৈত্ত। 
৫. সূর্য দেবের যারা উপাসনা করে তারা সৌর। 
 
এখানে একটা সমস্যা এসে গেছে অন্য সব সম্প্রদায় বলছে, ভগবান এক, আর আমরা বলছি অনেক তার সমাধানটা কি? আমরা সনাতন শিক্ষাকে ভালোভাবে অনুধাবন করে দেখতে পারি শ্রুতি শিক্ষা অনুসারে ভগবান বহু নয় তাই বলা আছে একমেব অদ্বিতীয়ং, এক বৈ দ্বিতীয় নাস্তি, পরমব্রহ্ম হচ্ছে এক। পরমব্রহ্ম দুই হতে পারে না। তাহলে আপনাদের সমাজে বহু উপাসনা আছে এটা কোথা থেকে আসলো? 
 
শ্রুতি শাস্ত্রে বলা হয়েছে- ভগবান হচ্ছে এক কিন্তু এক ভগবান বহুরুপে আত্মপ্রকাশ করছেন। একটা বিভ্রান্ত সৃষ্টি হচ্ছে জটিল ধরনের। বেদে বলা হয়েছে এক ভগবান বহু রুপে আত্মপ্রকাশ করেছেন এতো বৈষম্য মতবাদ এবং বিভিন্ন প্রকার বিভ্রান্তি ও মতবাদ সৃষ্টি হয়েছে।  
 
এক ভগবান বহুরুপে আত্মপ্রকাশ করেছে মানে কিছু কিছু ধর্ম প্রচারকেরা মনে করছেন “এক ভগবান বহু জীবাত্মা রূপে অর্থাৎ বহু মানুষ রুপে আত্মপ্রকাশ করছেন। 
 
তাই হিন্দু সমাজে এই প্রকার মতবাদ রছেয়ে “মানব সবাই মাধব সেবা” “যেই জীব সেই শিব” আমরা সবাই ভগবান” তাদের ধারনা হচ্ছে “আমরা  সবাই ভগবান মায়ার বশবর্তী হয়ে আমরা সবাই ভুলে গেছি আমরা ভগবান বলে যখন মায়ামুক্ত হয়ে যাবো তখন আমি বুঝতে পারবো আমি ভগবান।” 
 
এই এক বিরাট ধারনা আমাদের সমাজে রয়েছে। ভগবান জীব নয়, জীবাত্মা ভগবানের অংশ- ‘মমৈবাংশ জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ’।(গীতা15/7) ভগবান কৃষ্ণ সনাতন শব্দটি ব্যবহার করেছে সে সব সময় নিত্য সনাতন হয়ে থাকবেন কিন্তু লোকেরা এই তত্ত্ব না বুঝে বলে আমরা ভগভানের সাথে এক হয়ে যাবো। একটা ভ্রান্ত ধারণা এসে গেলো 
 
‘সব মানুষই ভগবান’। তারপর শোনা যায় ‘ভগবান এক, জীব অনেক। দেবতা ভগবান এক, ভগবান দেবতা রূপে আত্মপ্রকাশ করছেন। ভগবান কে? রাম, বামন, নৃসিংহ এনারা হচ্ছে ভগবান।  

দেবতা তেত্রিশ কোটি, ভগবান কয়জন? ব্রহ্মসংহিতা অনুযায়ী অনাদি অনন্তরূপং-ভগবানের অনন্ত রূপ রয়েছে। ভগবান যদি অনন্ত হয় তাহলে এক বৈ দ্বিতীয় নাস্তি হলো কি করে? পরমব্রহ্ম এক হবে কি করে? 

ভগবান অনন্ত স্বরূপ। তাহলে কোনটা এক? ভগবানের অনন্ত প্রকাশ অনন্ত স্বরূপ কিন্তু এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং। কিন্তু একজন আছে ‍যিনি দুটো হয় না সেটা স্বয়ং ভগবান। একজন “কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং” (ভাগবত১/৩/২৮) 

“একলে ঈশ্বর কৃষ্ণ, আরসব ভৃত্য।” (চৈ.চ আদি) “এই কথার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকছে ভগবান হচ্ছে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। যখন আমরা ভগবানের অনন্ত স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করছি তারমধ্যে দুটো রূপ। যারা বৈষ্ণব তারা বিষ্ণু ভক্ত, কেউ রাম ভক্ত, কেউ নৃসিংহদেবের ভক্ত, কেউ কৃষ্ণ ভক্ত। 

আরও পড়ুন
 
 
 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url