কলির প্রভাবে মহারাজ পরীক্ষিৎ ব্রাহ্মণ বালকের দ্বারা অভিশপ্ত হওয়ার কারণ
পরীক্ষিৎ মহারাজ কে কলির প্রথম প্রহার
শ্রীসূত গোস্বামী বললেন—“মহারাজ পরীক্ষিৎ মাতৃগর্ভে অবস্থানকালে, দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামার ব্রহ্মাস্ত্র দ্বারা দগ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অদ্ভুতকর্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপায় মৃত্যুমুখে নিপতিত হননি।
অধিকন্তু, মহারাজ পরীক্ষিৎ সর্বদা জ্ঞাতসারে পরমেশ্বর ভগবানের শরণাগত ছিলেন এবং তাই তিনি ব্রাহ্মণের অভিশাপে তক্ষক দংশনে প্রাণ সঙ্কট হলেও সেই ভয়ে বিচলিত হননি।
তারপর, সমস্ত সঙ্গ পরিত্যাগ করে মহারাজ পরীক্ষিৎ ব্যাসদেবের পুত্র শুকদেব গোস্বামীর শরণাগত হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব বরণ করেছিলেন এবং ভগবানের তত্ত্ব সম্যক্ভাবে অবগত হয়ে গঙ্গার তীরে তাঁর দেহ ত্যাগ করেছিলেন।
তাঁর এরকম হওয়া বিচিত্র নয়, কেননা যাঁরা উত্তমশ্লোক ভগবানের বার্তাতেই অবিরত রত থাকেন, যাঁরা নিরন্তর ভগবানের কথারূপ সেই অমৃত পান করেন এবং তাঁর চরণ কমল স্মরণ করেন, জীবনের অন্তিম সময়েও তাঁদের বুদ্ধি-
বিভ্রম হয় না। অভিমন্যুনন্দন মহারাজ পরীক্ষিৎ যতদিন এই পৃথিবীর একচ্ছত্র সম্রাট ছিলেন, ততদিন কলি এই পৃথিবীর সর্বত্র প্রবিষ্ট হলেও তার প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়নি।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেদিন যে মুহূর্তে এই ধরাধাম পরিত্যাগ করেছিলেন, অধর্মের আশ্রয় কলি সেই দিন সেই মূহূর্তেই এখানে প্রবেশ করেছিল। মহারাজ পরীক্ষিৎ ছিলেন মধুকরের মতো সারগ্রাহী।
তিনি খুব ভালভাবেই জানতেন যে, এই কলিযুগে শুভ কর্ম সম্পাদন করার ইচ্ছামাত্রই তার ফল পাওয়া যায়, কিন্তু অশুভ কর্মসমূহের ক্ষেত্রে সেরূপ হয় না, সেগুলি অনুষ্ঠিত হলেই ফল দান করে।
তাই তিনি কলিযুগের প্রতি বিদ্বেষী ছিলেন না। মহারাজ পরীক্ষিৎ বিবেচনা করেছিলেন যে, নির্বোধ মানুষেরাই কেবল কলিকে অত্যন্ত শক্তিশালী বলে মনে করবে, কিন্তু যারা আত্মসংযত তাদের কলি থেকে কোন ভয় থাকবে না।
মহারাজ পরীক্ষিৎ ছিলেন সিংহের মতো পরাক্রমশালী এবং তিনি মূর্খ এবং অসতর্ক ব্যক্তিদের রক্ষা করেছিলেন। হে ঋষিবৃন্দ, আপনারা আমাকে যে প্রশ্ন করেছিলেন, সেই অনুসারে আমি আপনাদের মহারাজ পরীক্ষিতের পবিত্র ইতিহাসের প্রসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা বর্ণনা করেছি।
যাঁরা তাঁদের জীবনের পূর্ণ সিদ্ধি অভিলাষী, তাঁদের অবশ্যই শ্রদ্ধাবনত চিত্তে অদ্ভুতকর্মা পরমেশ্বর ভগবানের অপ্রাকৃত গুণ এবং কার্যকলাপ সম্বন্ধীয় কথা শ্রবণ করা কর্তব্য।"
ঋষিরা বললেন—“হে সৌম্য সূত গোস্বামী। আপনি দীর্ঘায়ু হন এবং অনন্ত যশ লাভ করুন, কেননা আপনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কার্যকলাপ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন।
আমাদের মতো মরণশীল জীবেদের কাছে তা ঠিক অমৃতের মতো। আমরা যে যজ্ঞ অনুষ্ঠান করছি, সেই অনুষ্ঠানে ভুলত্রুটিজনিত বহুবিধ বিঘ্নের সম্ভাবনা, তাই আমরা জানি না নিশ্চিতভাবে তার ফল লাভ করা যাবে কি না।
ধুমের দ্বারা বিবর্ণ আমাদের দেহকে আপনি শ্রীগোবিন্দের চরণারবিন্দের অমৃত পান করিয়েছেন। ভগবৎসঙ্গীর সঙ্গে নিমেষমাত্র সঙ্গ করার ফলে জীবের যে অসীম মঙ্গল সাধিত হয়, তার সঙ্গে স্বর্গ বা মোক্ষেরও তুলনা করা যায় না, তখন মরণশীল মানুষের জাগতিক সমৃদ্ধির কথা আর কি বলার আছে।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ (গোবিন্দ) পরম শ্রেষ্ঠ মহাত্মাদের একমাত্র আশ্রয়। শিব, ব্রহ্মা প্রমুখ যোগেশ্বরেরাও তাঁর অপ্রাকৃত গুণসমূহের ইয়ত্তা করতে পারেন না। কোনও রসজ্ঞ ব্যক্তি কি তাঁর মহিমা শ্রবণ করে কখনো পূর্ণরূপে তৃপ্ত হতে পারেন?
হে সুত গোস্বামী, আপনি বিদ্বান এবং ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত, কারণ ভগবানের সেবাই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই আপনি দয়া করে আমাদের ভগবানের লীলাসমূহ বর্ণনা করুন, যা সমস্ত ভৌতিক বিচার ধারার অতীত, কেননা, সেই বাণী গ্রহণ করতে আমরা ঐকান্তিকভাবে আগ্রহী।
হে সূত গোস্বামী, সেই মহাভাগবত মহারাজ পরীক্ষিৎ ব্যাসনন্দন শুকদেবের কাছে যে ভগবৎ তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে গরুড়ধ্বজ শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম প্রাপ্তিরূপ মোক্ষফল লাভ করেছিলেন, সে কথা আপনি দয়া করে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন।
দয়া করে আপনি আমাদের কাছে সেই অনন্ত সত্তার মহিমা বর্ণনা করুন, কেননা তা পবিত্রকারী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। তা মহারাজ পরীক্ষিতকে শোনানো হয়েছিল এবং তা ভক্তিযোগে পূর্ণ হওয়ার ফলে ভগবানের শুদ্ধ ভক্তদের অত্যন্ত প্রিয়।
” শ্রীসুত গোস্বামী বললেন – “আহা! যদিও আমরা সঙ্কর বর্ণোদ্ভূত তথাপি জ্ঞানবৃদ্ধ মহাপুরুষদের সেবা করার ফলেই কেবল সফলজন্মা হয়েছি। এই প্রকার মহাত্মাদের সঙ্গে কেবল বার্তালাপ করার ফলেই নিম্নকুলে জন্মজনিত অযোগ্যতা অচিরেই বিদূরিত হয়ে যায়।
আর যাঁরা মহান্ ভক্তের নির্দেশ অনুসারে অসীম শক্তিসম্পন্ন অনন্তের দিব্য নাম কীর্তন করেন, তাঁদের কি কথা? পরমেশ্বর ভগবানের শক্তি অনন্ত এবং গুণাবলী দিব্য, তাঁর নাম অনন্ত।
এখানে প্রতিপন্ন হল যে, পরমেশ্বর ভগবান অনন্ত এবং কেউই তাঁর সমতুল্য নন। তাই কেউই যথেষ্টভাবে তাঁর সম্বন্ধে বলতে পারেন না। মহান্ দেবতার অনেক প্রার্থনা করেও যে লক্ষ্মীদেবীর কৃপা লাভ করতে পারেন না, সেই লক্ষ্মীদেবী ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের সেবা করেন, যদিও ভগবান এই প্রকার সেবার আকাঙ্ক্ষী নন।
ব্রহ্মা যাঁর পাদনখ নিঃসৃত সলিল সংগ্রহ করে অর্ধ্যস্বরূপ তা মহাদেবকে নিবেদন করেন (গঙ্গা রূপে), এবং যা মহাদেবসহ সমগ্র জগতকে পবিত্র করছেন, এই জগতে সেই মুকুন্দ ভিন্ন অন্য কে ভগবৎ শব্দবাচ্য হতে পারেন?
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণে আসক্ত আত্ম-সংযত ব্যক্তিরা সহসা স্থূল দেহ এবং সূক্ষ্ম মন সহ জড়জাগতিক আসক্তি পরিত্যাগ করে সন্ন্যাস আশ্রমের চরম সিদ্ধি পারমহংস্যত্ব প্রাপ্তির জন্য গৃহত্যাগ করে চলে যান, যার ফলে অহিংসা তথা বৈরাগ্য স্বাভাবিকভাবে সম্পাদিত হয়।”
“হে সূর্যসদৃশ দীপ্তিমান ঋষিগণ! শ্রীবিষ্ণুর অপ্রাকৃত লীলা আমি আমার জ্ঞান অনুসারে যথাসাধ্য বর্ণনা করার চেষ্টা করব। পাখিরা যেমন তাদের শক্তি অনুসারে আকাশে বিচরণ করে, তেমনই পণ্ডিতেরাও তাঁদের উপলব্ধি অনুসারে ভগবানের লীলা কীর্তন করেন।”
“এক সময় মহারাজ পরীক্ষিৎ শরাসনে শর যোজন করে মৃগয়ার্থে বনে মৃগের অনুসরণ করতে করতে অত্যন্ত ক্লান্ত এবং ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লেন। জলাশয়ের অন্বেষণ করতে করতে তিনি শমীক ঋষির প্রসিদ্ধ আশ্রমে প্রবিষ্ট হলেন এবং দেখলেন যে, এক মুনি নয়ন নিমীলিত করে প্রশান্তভাবে উপবেশন করে আছেন।
সেই মুনির ইন্দ্রিয়, প্রাণ, মন এবং বুদ্ধি সমস্তই জড় বিষয় থেকে প্রত্যাহৃত হয়েছিল, এবং তিনি জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি এই ত্রিবিধ অবস্থার অতীত তুরীয় পদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন বলে তিনি ব্রহ্মভূত ও নির্বিকার ছিলেন।
সমাধিস্থ সেই মুনির দেহ ইতস্তত বিক্ষিপ্ত জটা এবং প্রথম মৃগচর্মের দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। তৃষ্ণায় রাজার তালু পর্যন্ত বিশুদ্ধ হয়ে পড়েছিল, তাই তিনি সেই সমাধিস্থ মুনির কাছে জল প্রার্থনা করেছিলেন।
রাজা যখন দেখলেন যে, মুনি তাঁকে তৃণাসন, স্থান, অর্ঘ্য কিছুই প্রদান করলেন না, এমন কি প্রিয় বচনে সম্ভাষণও করলেন না; তখন তিনি নিজেকে অবমানিত মনে করে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। হে ব্রাহ্মণগণ! ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত মহারাজ পরীক্ষিতের সেই ব্রহ্মর্ষির প্রতি ক্রোধ এবং মৎসরতা ছিল সম্পূর্ণ অভূতপূর্ব।
পূর্বে রাজা কখনো এরকম আচরণ করেননি। এইভাবে অপমানিত হয়ে মহারাজ পরীক্ষিৎ ক্রোধবশত ব্রহ্মর্ষির স্কন্ধদেশে একটি মৃত সর্প ধনুকের অগ্রভাগ দ্বারা স্থাপন করে তাঁর রাজপ্রাসাদে প্রত্যাবর্তন করলেন।
গৃহে প্রত্যাবর্তন করে তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন, সেই ঋষি কি সত্যি সত্যি তাঁর ইন্দ্রিয়সমূহ একাগ্র করে নির্মীলিত নেত্রে ধ্যান করছিলেন, নাকি, একজন ক্ষত্রবন্ধুকে অভ্যর্থনা না করার জন্য সমাধিমগ্ন হওয়ার ভান করছিলেন।”
“সেই মুনির একটি পুত্র ছিল, সে ব্রাহ্মণপুত্র হওয়ার ফলে অত্যন্ত শক্তিমান ছিল। সে যখন অন্য বালকদের সঙ্গে খেলা করছিল, তখন সে জানতে পারে রাজা কিভাবে তাঁর পিতাকে লাঞ্ছিত করেছে।
তৎক্ষণাৎ সেই ব্রাহ্মণবালক শৃঙ্গী বলল, “দেখ! শাসকেরা কি রকম পাপ আচরণপরায়ণ হয়েছে। কাক এবং দ্বাররক্ষক কুকুরের সঙ্গে যাদের তুলনা হতে পারে, আজ কি না তারাই প্রভুর প্রতি পাপাচরণে প্রবৃত্ত হয়েছে!
ব্রাহ্মণেরা ক্ষত্রবন্ধুদের গৃহরক্ষক কুকুর বলেই নিরূপিত করেছে। তারা অবশ্যই দ্বারদেশে থাকবে। আজ তারা কিসের ভিত্তিতে গৃহে প্রবেশ করে প্রভুর সঙ্গে এক পাত্রে ভোজন করার সাহস পায়?
সকলের পরম শাসক পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বধামে গমন করেছেন বলে এই সমস্ত উচ্ছৃঙ্খল লোকেরা তাদের প্রভাব বিস্তার করছে। তাই আমি তাদের দণ্ডদান করছি। তোমরা আমার শক্তি দেখ।'
ঋষিবালক শৃঙ্গীর চক্ষুদ্বয় ক্রোধে আরক্ত হয়েছিল, সে তার খেলার সাথীদের সঙ্গে এইভাবে কথা বলতে বলতে কৌশিকী নদীর জলে আচমন করে বজ্রোপম বাক্য উচ্চারণ করল। সেই ব্রাহ্মণের পুত্র রাজাকে অভিশাপ দিল, ‘যে কুলাঙ্গার মর্যাদা লঙ্ঘন করে আমার পিতাকে এইভাবে অবমাননা করেছে, আমার আদেশক্রমে তক্ষক সর্গ সপ্তম দিনে তাঁকে দংশন করবে। "
ঋষিকুমার এই বলে আশ্রমে প্রত্যাগমন করল এবং তাঁর পিতার গলদেশে মৃত সৰ্প দেখে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে উচ্চস্বরে রোদন করতে লাগল—“হে ব্রাহ্মণগণ! অঙ্গিরা মুনির গোত্র উদ্ভুত সেই শমীক ঋষি তাঁর পুত্রের ক্রন্দন শ্রবণ করে ধীরে ধীরে তাঁর নেত্রদ্বয় উন্মীলিত করলেন এবং তাঁর গলদেশে এক মৃত সৰ্প দেখতে পেলেন।
তিনি সেই সাপটিকে একপাশে ছুঁড়ে ফেলে তাঁর পুত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, বৎস! কি জন্য তুমি ক্রন্দন করছ? কেউ কি তোমার অনিষ্ট করেছে? সে কথা শুনে ঋষিবালক তাঁর পিতাকে সমস্ত বৃত্তান্ত বলেছিল।”
“তাঁর পুত্র অভিসম্পাতের অনুপযুক্ত সেই মহারাজ পরীক্ষিতকে শাপ দিয়েছে শুনে সেই ব্রাহ্মণ শমীক ঋষি তাঁর পুত্রকে প্রশংসা করলেন না। পক্ষান্তরে, তিনি পুত্রকে বললেন, আহা কী দুঃখের বিষয়! তুমি মহা পাপ করেছ। তুমি লঘু অপরাধে গুরুতর দণ্ড প্রদান করেছ।
হে বৎস! তোমার বুদ্ধি অপরিণত এবং তাই যে রাজা নরশ্রেষ্ঠ ও বিষ্ণুতুল্য বলে বিদিত, যাঁর দুর্বিষহ তেজের প্রভাবে সমস্ত প্রজারা সুরক্ষিত হয়ে নির্ভয়ে সুখৈশ্বর্য ভোগ করে, তাঁকে সাধারণ মানুষের সমতুল্য বলে মনে করা তোমার উচিত হয়নি।
হে বৎস, চক্রধারী শ্রীভগবানের প্রতিনিধি হচ্ছেন রাজা। সেই রাজা অন্তর্হিত হলে এই পৃথিবীতে প্রচুর চোরের প্রাদুর্ভাব হবে এবং প্রজারা রক্ষকবিহীন মেষপালের মতো মুহূর্তের মধ্যে বিনষ্ট হবে। রাজতন্ত্রের সমাপ্তির ফলে দস্যু ও দুর্বৃত্ত কর্তৃক জনসাধারণের সম্পত্তি লুণ্ঠিত হওয়ার ফলে ভয়ঙ্কর সামাজিক সঙ্কট দেখা দেবে।
মানুষ পরস্পরকে বিনাশ করবে এবং পশু, স্ত্রী ও ধন অপহরণ করবে। আর এই সমস্ত পাপের জন্য আমরা দায়ী হব। তখন মানুষ বেদ বিহিত বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার প্রগতিশীল সভ্যতা থেকে বিচ্যুত হবে।
তার ফলে তারা কেবল অর্থনৈতিক উন্নতি ও ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধনের চেষ্টাতেই মগ্ন থাকবে। সেই জন্যে বর্ণসঙ্করের সৃষ্টি হবে। তারা কুকুর ও বানরের মতো সন্তানসন্ততি উৎপাদন করবে। ধর্মরক্ষক, মহাযশস্বী, পরম ভাগবত, অশ্বমেধ যজ্ঞকারী রাজর্ষি ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও পরিশ্রমে কাতর হয়ে বিপন্নভাবে আমাদের কাছে আগত সেই পরীক্ষিৎ মহারাজ কোন মতেই আমাদের অভিশাপের পাত্র নন।”
“তখন সেই ঋষি, সর্বব্যাপ্ত পরমেশ্বর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলেন তিনি যেন তাঁর বুদ্ধিহীন অপরিণত বালকপুত্রকে ক্ষমা করেন, যে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত তাঁর মহান ভক্তকে অভিশাপ দিয়ে মহা অপরাধ করেছে।
ভগবানের ভক্ত এতই সহিষ্ণু যে, যদি তাঁরা অপমানিত, প্রতারিত, অভিশপ্ত, বিচলিত, উপেক্ষিত, এমন কি নিহতও হন, তা হলেও তাঁরা কখনো প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবেন না।
সেই মুনিশ্রেষ্ঠ শমীক তাঁর পুত্রের অপরাধ চিন্তা করে এইভাবে অনুতাপ করতে লাগলেন, কিন্তু তিনি নিজে যে রাজার দ্বারা অপমানিত হয়েছিলেন সেই অপরাধের কথা একবারও চিন্তা করলেন না। সংসারে প্রায়ই সাধুরা অন্য কর্তৃক সুখ-দুঃখ প্রাপ্ত হলেও তাতে বিহ্বল হন না, কেননা তাঁরা সুখ-দুঃখ আদি গুণে অনাসক্ত।”......হরে কৃষ্ণ......
আরও পড়ুনঃ
* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব
* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা
* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন
* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার