বিষ্ণুদূত কর্তৃক অজামিল উদ্ধার কাহিনী

 

বিষ্ণুদূত কর্তৃক অজামিল উদ্ধার কাহিনী

শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেন-"হে রাজন, নীতিশাস্ত্রকুশল বিষ্ণুদূতেরা যমদূতদের মুখে সেই কথা শুনে তার উত্তরে বললেন, 'আহা, কী কষ্ট! যেখানে ধর্মের পালন হওয়া উচিত সেই সভায় অধর্ম প্রবেশ করছে। 

 

যম পাশ থেকে অজামিলের মুক্তি

যাঁরা ধর্মের পালক, তাঁরা অনর্থক একজন নিষ্পাপ ব্যক্তিকে দণ্ড দিচ্ছেন। রাজা অথবা সরকারি কর্মচারীদের পুত্রবৎ স্নেহে প্রজাদের পালন করা উচিত এবং রক্ষা করা উচিত। তাঁদের কর্তব্য শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারে প্রজাদের সদুপদেশ দেওয়া এবং সকলের প্রতি সমদর্শী হওয়া। 

 

যমরাজ তা করেন কারণ তিনি হচ্ছেন সর্বোচ্চ ধর্মাধীশ এবং যাঁরা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তাঁরাও তাই করেন। কিন্তু, তাঁরা যদি ভ্রষ্ট হয়ে যান এবং একজন নিরীহ, নির্দোষ ব্যক্তিকে দণ্ডিত করে পক্ষপাত প্রদর্শন করেন, তা হলে প্রতিপালন এবং সুরক্ষার জন্য প্রজারা কোথায় যাবে? 

 

জনসাধারণ সমাজের নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করে এবং তাদের আচরণের অনুকরণ করে। নেতারা যা স্বীকার করে, প্রজারা তাকে প্রমাণ বলে গ্রহণ করে। সাধারণ মানুষের ধর্ম এবং অধর্মের পার্থক্য নিরূপণ করার জ্ঞান নেই। 

 

 সাধারণ মানুষের অবস্থা ঠিক একটি অবোধ পশুর মতো, যে তার পালনকর্তা প্রভুর উপর সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করে তার কোলে নিশ্চিন্তভাবে নিদ্রা যায়। 

 

 নেতা যদি সত্যি সত্যি সদয়-হৃদয় হন এবং জীবের বিশ্বাসযোগ্য হন, তা হলে কিভাবে তিনি পূর্ণ বিশ্বাস এবং মৈত্রী সহকারে যে তাঁর সর্বতোভাবে শরণাগত হয়েছে, তাকে দণ্ড দিতে পারেন অথবা হত্যা করতে পারেন? অজামিল তাঁর সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন।

প্রকৃতপক্ষে তিনি কেবল এই জীবনের পাপের প্রায়শ্চিত্তই করেননি, বিবশ হয়ে নারায়ণের দিব্য নাম উচ্চারণ করার ফলে তাঁর কোটি কোটি জন্মের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেছে। যদিও তিনি শুদ্ধ নাম উচ্চারণ করেননি, তবুও কেবল নামাভাসের ফলেই তিনি এখন শুদ্ধ হয়ে মুক্তি লাভের যোগ্য হয়েছেন।'"  

 ভগবানের দিব্য নাম জপের মাহাত্ম্য

"পূর্বেও এই অজামিল ভোজনাদি সময়ে 'বৎস নারায়ণ, এখানে এসো' এইভাবে তাঁর পুত্রকে ডেকেছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও না-রা-য়-শ এই চারটি বর্ণ উচ্চারণ করার ফলে, তিনি তাঁর কোটি কোটি বছরের জন্মার্জিত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন। 

 

 

স্বর্ণ অথবা অন্যান্য মূল্যবান বস্তু অপহরণকারী, মদ্যপায়ী, মিত্রদ্রোহী, ব্রহ্মঘাতী, গুরুপত্নীগামী, স্ত্রী-হত্যাকারী, গো-হত্যাকারী, পিতৃ-হত্যাকারী, রাজ-হত্যাকারী এবং অন্য যে সমস্ত মহাপাতকী রয়েছে, শ্রীবিষ্ণুর নাম উচ্চারণই তাদের শ্রেষ্ঠ প্রায়শ্চিত্ত। 

 

 

কেবল ভগবান শ্রীবিষ্ণুর দিব্য নাম উচ্চারণের ফলেই এই প্রকার পাপীরা ভগবানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং ভগবান তখন মনে করেন, 'যেহেতু এই ব্যক্তি আমার নাম উচ্চারণ করেছে, তাই আমার কর্তব্য হচ্ছে তাকে রক্ষা করা।' 

 

 

ভগবান শ্রীহরির দিব্য নাম একবার উচ্চারণ করে মানুষ যেভাবে নির্মল হয়, বৈদিক ব্রত অথবা প্রায়শ্চিত্ত করার ফলে সেইভাবে নির্মল হওয়া যায় না। 

 

 

যদিও প্রায়শ্চিত্ত করার ফলে পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়, কিন্তু তার ফলে ভগবদ্ভক্তির উন্মেষ হয় না। কিন্তু ভগবানের নাম উচ্চারণের ফলে, ভগবানের যশ, গুণ, বৈশিষ্ট্য, লীলা, পরিকর আদির স্মরণ হয়। 

 

 

ধর্মশাস্ত্রে যে প্রায়শ্চিত্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার দ্বারা হৃদয় সম্পূর্ণরূপে নির্মল হয় না, কারণ প্রায়শ্চিত্তের পরে মানুষের মন আবার জড়-জাগতিক কার্যকলাপের দিকে ধাবিত হয়। অতএব, যারা সকাম কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার অভিলাষী, তাদের পক্ষে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করা অর্থাৎ ভগবানের নাম, যশ এবং লীলার মহিমা কীর্তনই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রায়শ্চিত্ত বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কারণ এই কীর্তন হৃদয়ের সমস্ত কলুষ সর্বতোভাবে বিধৌত করে। 

 

 

মৃত্যুর সময় এই অজামিল অসহায় হয়ে অতি উচ্চস্বরে ভগবানের নারায়ণ নাম উচ্চারণ করেছেন। কেবল সেই নামোচ্চারণই সমস্ত পাপময় জীবনের কর্মফল থেকে ইতিমধ্যেই তাঁকে মুক্ত করেছে। 

 

 

অতএব, হে যমদূতগণ, তাঁকে নরকে দণ্ডভোগ করার জন্য তোমাদের প্রভুর কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না। অন্য বস্তুকে লক্ষ্য করে হোক, পরিহাসছলে হোক, সংগীত বিনোদনের জন্য হোক অথবা অশ্রদ্ধার সঙ্গেই হোক, ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন করার ফলে তৎক্ষণাৎ অশেষ পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

 

 

শাস্ত্রতত্ত্ববিদ মহাজনেরা সেই কথা স্বীকার করেছেন। - উচ্চ গৃহ থেকে পতিত হয়ে, পথে যেতে যেতে পা পিছলে পড়ে হাড় ভেঙে যাওয়ার ফলে, সর্প দংশনের ফলে, প্রবল জ্বরে পীড়িত হয়ে অথবা অস্ত্রের দ্বারা আহত হয়ে, মরণোন্মুখ ব্যক্তি যদি অবশেও দিব্য হরিনাম উচ্চারণ করে, তা হলে সে পাপী হলেও তাকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। 

 

 

মহর্ষিরা বিশেষ বিচার করে গুরু পাপের শুরু এবং লঘু পাপের লঘু প্রায়শ্চিত্ত বিধান করেছেন। কিন্তু হরিনাম কীর্তনের ফলে লঘু-গুরু নির্বিশেষে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি লাভ হয়। 

 

 

যদিও তপস্যা, দান, ব্রত প্রভৃতি প্রায়শ্চিত্তের দ্বারা পাপীর পাপসমূহ বিনষ্ট হয়, তবুও সেই সমস্ত পুণ্যকর্ম হৃদয়ের কর্মবাসনা সমূলে উৎপাটিত করতে পারে না। কিন্তু কেউ যদি ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের সেবা করেন, তা হলে তৎক্ষণাৎ কর্ম-বাসনারূপ সমস্ত কলুষ থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হন। 

 

 

অগ্নি যেমন তৃণরাশি ভস্মীভূত করে, তেমনই জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে উত্তমশ্লোক ভগবানের নাম কীর্তন করলে, সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়ে যায়। কেউ যদি কোন ওষুধের শক্তি সম্বন্ধে অবগত না হয়ে সেই ওষুধ সেবন করে অথবা তাকে জোর করে সেবন করানো হয়, তা হলে সে ওষুধের প্রভাব না জানলেও তা ক্রিয়া করবে, কারণ সেই ওষুধের শক্তি রোগীর জ্ঞানের উপর নির্ভর করে না। 

 

 

তেমনই, ভগবানের দিব্য নাম কীর্তনের প্রভাব না জানলেও কেউ যদি জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে তা উচ্চারণ করে, তার ফল সে প্রাপ্ত হবে।"

 

 

শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেন-"হে রাজন, বিষ্ণুদূতেরা এইভাবে অত্যন্ত সুন্দরভাবে যুক্তি-তর্কের দ্বারা ভাগবত-ধর্মের সিদ্ধান্ত বিচার করে ব্রাহ্মণ অজামিলকে যমদূতদের বন্ধন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং আসন্ন মৃত্যু থেকে পরিত্রাণ করেছিলেন।"

 


"হে অরিনিসূদন মহারাজ পরীক্ষিৎ, এই ভাবে বিষ্ণুদূতদের প্রত্যুত্তর শুনে, যমদূতেরা যমরাজের কাছে গিয়ে তাঁকে সমস্ত বৃত্তান্ত সবিস্তারে বর্ণনা করেছিল। যমদূতদের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ব্রাহ্মণ অজামিল ভয়মুক্ত হয়েছিলেন এবং প্রকৃতিস্থ হয়েছিলেন। 

 

 

তিনি তখন নতমস্তকে বিষ্ণুদূতদের শ্রীপাদপদ্মে তাঁর সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করেছিলেন। তাঁদের দর্শন করে তাঁর তখন পরম আনন্দ হয়েছিল, কারণ তাঁরা তাঁকে যমদূতদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।"

 

 

"হে নিষ্পাপ মহারাজ পরীক্ষিৎ, মহাপুরুষ শ্রীভগবানের অনুচর বিষ্ণুদূতেরা দেখলেন যে, অজামিল কিছু বলতে চাইছেন। তাই তাঁরা সহসা তাঁর সামনে থেকে অন্তর্হিত হয়ে গেলেন। যমদূত এবং বিষ্ণুদূতদের কথোপকথন শ্রবণ করে অজামিল বুঝতে পেরেছিলেন জড়া প্রকৃতির তিন গুণের অধীন ধর্ম কি। 

 

 

সেই তত্ত্ব তিন বেদে বর্ণিত হয়েছে। তিনি জীব এবং ভগবানের সম্পর্ক সম্বন্ধীয় চিন্ময় গুণাতীত ভাগবত-ধর্ম সম্বন্ধেও অবগত হয়েছিলেন। 

 

 

অধিকন্তু, তিনি ভগবানের নাম, যশ, গুণ, লীলা আদি মহিমাও শ্রবণ করেছিলেন। এইভাবে তিনি পূর্ণরূপে শুদ্ধ ভক্তে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর তখন পূর্বকৃত পাপকর্মের কথা স্মরণ হয়েছিল এবং সেই জন্য তিনি অত্যন্ত অনুতপ্ত হয়েছিলেন।"

 


অজামিল বললেন- "হায়, আমার ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে আমি কতই না অধঃপতিত হয়েছিলাম। আমি আমার ব্রাহ্মণোচিত গুণ হারিয়ে একটি বেশ্যার গর্ভে সন্তান উৎপাদন করেছি। হায়, আমাকে ধিক। 

 

 

আমি এতই পাপী যে, আমি আমার কুলে কলঙ্ক লেপন করেছি। আমি আমার তরুণী সাধ্বী স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে সুরাপায়িণী এক বেশ্যার সঙ্গে রত হয়েছি। আমাকে ধিক। আমার পিতা-মাতা বৃদ্ধ ছিলেন এবং তাঁদের দেখাশুনা করার জন্য কোন পুত্র বা বন্ধু ছিল না। 

 

 

যেহেতু আমি তাঁদের রক্ষণাবেক্ষণ করিনি, তাই তাঁদের নানা দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। হায়, একজন জঘন্য নীচ অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির মতো আমি তাঁদের সেই অবস্থায় ফেলে রেখেছিলাম। 

 

 

এই প্রকার কার্যকলাপের পরিণতি এখন আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। আমার মতো পাপীকে অবশ্যই ধর্মনীতি ভঙ্গকারী এবং অত্যন্ত কামুক ব্যক্তিদের জন্য যে ভয়ঙ্কর নরক রয়েছে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে, যেখানে তাদের দুঃসহ যন্ত্রণাভোগ করতে হয়। 

 

 

আমি কি স্বপ্ন দেখছিলাম, না তা বাস্তব ছিল? আমি দেখেছিলাম ভয়ঙ্কর দর্শন পুরুষেরা হাতে দড়ি নিয়ে আমাকে বেঁধে নিয়ে যেতে এসেছিল। তারা এখন কোথায় গেছে? আর সেই অত্যন্ত সুন্দর দর্শন চারজন সিদ্ধপুরুষ, যাঁরা আমাকে বন্ধনমুক্ত করেছিলেন এবং পৃথিবীর অধঃদেশে নরকে নীয়মান পাশবদ্ধ আমাকে উদ্ধার করেছিলেন, তাঁরা কোথায় গেলেন?

 

 

পাপের সমুদ্রে নিমজ্জিত আমি অবশ্যই অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং দুর্ভাগা, কিন্তু তা সত্ত্বেও, আমার পূর্বকৃত সুকৃতির ফলে আমি সেই চারজন অতি উত্তম পুরুষের দর্শন লাভ করেছি, যাঁরা আমাকে উদ্ধার করতে এসেছিলেন। 

 

 

তাঁদের আগমনের ফলে আমার চিত্ত অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছে। আমার পূর্ব সুকৃতি না থাকলে, অত্যন্ত অশুচি, বেশ্যাপতি আমি কিভাবে মৃত্যুর সময় বৈকুণ্ঠপতি ভগবানের দিব্য নাম উচ্চারণ করার সৌভাগ্য অর্জন করলাম? তা নিশ্চয় সম্ভব হত না।"

 

 

"কোথায় আমি-নির্লজ্জ, বঞ্চক, ব্রাহ্মণত্ব-নাশক মূর্তিমান পাপ, আর কোথায় এই মঙ্গলস্বরূপ শ্রীভগবানের নারায়ণ নাম? সেই মহাপাপী আমি যখন এই সৌভাগ্য অর্জন করেছি, তখন আমি আমার মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয় সংযত করে সর্বদা ভগবদ্ভক্তি পরায়ণ হব, যাতে আমাকে পুনরায় এই গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন সংসার-জীবনে পতিত হতে না হয়। 

 

 

দেহাত্মবুদ্ধি থেকে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের বাসনার উদয় হয় এবং তার ফলে জীব নানা প্রকার পাপ এবং পূণ্যকর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এটিই জড় বন্ধনের কারণ। এখন আমি নিজেকে এই জড় বন্ধন থেকে মুক্ত করব। 

 

 

ভগবানের মায়াই রমণীরূপে আমাকে বশীভূত করেছে, অত্যন্ত অধঃপতিত আমি সেই মায়ার দ্বারা মোহাচ্ছন্ন হয়ে রমণীর বশীভূত পশুর মতো নৃত্য করেছি। এখন আমি আমার সমস্ত ভোগবাসনা পরিত্যাগ করে এই মোহ থেকে মুক্ত হব। 

 

 

আমি সমস্ত জীবের প্রতি সুহাৎ, হিতকারী ও করুণ হব এবং সর্বদা কৃষ্ণভাবনায় মগ্ন থাকব। ভক্তসঙ্গে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করার ফলে, আমার হৃদয় এখন পবিত্র হয়েছে। তাই আমি আর ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের মিথ্যা প্রলোভনে যুক্ত হব না। 

 

 

এখন আমি পরম সত্যে স্থির হয়েছি, তাই আমি আর আমার দেহকে আমার স্বরূপ বলে মনে করব না। আমি দেহাদিতে 'আমি' এবং 'আমার' ধারণা ত্যাগ করে শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মে আমার মনকে নিবিষ্ট করব।"

 


"ক্ষণমাত্র ভক্তসঙ্গ (বিষ্ণুদূতদের সঙ্গ) প্রভাবে অজামিল দৃঢ়সংকল্প সহকারে দেহাত্মবুদ্ধি থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। এইভাবে সমস্ত জড় আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে তিনি হরিদ্বারে গমন করেছিলেন। 

 

 

হরিদ্বারে অজামিল একটি বিষ্ণুর মন্দিরে আশ্রয় গ্রহণ করে ভক্তিযোগ সাধনে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পূর্ণরূপে সংযত করে তাঁর মন ভগবানের সেবায় পূর্ণরূপে নিবিষ্ট করেছিলেন। 

 

 

অজামিল পূর্ণরূপে ভগবদ্ভক্তিতে যুক্ত হয়েছিলেন। এইভাবে তিনি তাঁর মনকে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের বিষয় থেকে বিযুক্ত করেছিলেন এবং ভগবানের সচ্চিদানন্দ রূপের ধ্যানে পূর্ণরূপে মগ্ন হয়েছিলেন। 

 

 

যখন তাঁর বুদ্ধি এবং মন ভগবানের শ্রীরূপে নিবদ্ধ হয়েছিল, তখন ব্রাহ্মহ্মণ অজামিল আবার তাঁর সম্মুখে চারজন দিব্য পুরুষকে দেখতে পেলেন। তাঁদের তিনি পূর্বদৃষ্ট চারজন পুরুষ বলে চিনতে পেরে, মস্তক অবনত করে প্রণাম করলেন। 

 

 

বিষ্ণুদূতদের দর্শন করে অজামিল হরিদ্বারে গঙ্গার তীরে তাঁর জড় দেহ ত্যাগ করেছিলেন। তিনি তাঁর চিন্ময় স্বরূপ প্রাপ্ত হয়েছিলেন, যা ভগবৎ পার্ষদের উপযুক্ত ছিল। বিষ্ণুদূতদের সঙ্গে স্বর্ণনির্মিত বিমানে আরোহণ করে, অজামিল আকাশ-মার্গে লক্ষ্মীপতি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর ধামে গমন করেছিলেন।"

 

 

"অজামিল ছিলেন ব্রাহ্মণ কিন্তু অসৎসঙ্গের ফলে তিনি ব্রাহ্মণোচিত অনুষ্ঠান এবং ধর্ম পরিত্যাগ করেছিলেন। অধঃপতিত হয়ে তিনি চৌর্যবৃত্তি, সুরাপান এবং অন্যান্য সমস্ত জঘন্য কার্যে লিপ্ত হয়েছিলেন। 

 

 

তিনি একটি বেশ্যাকেও একজন রক্ষিতারূপে রেখেছিলেন। তার ফলে যমদূতেরা তাঁকে নরকে নিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু নারায়ণের নামাভাস উচ্চারণের প্রভাবে তিনি তৎক্ষণাৎ যমপাশ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। 

 

 

অতএব যাঁরা জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার অভিলাষী, তাঁদের কর্তব্য, যে ভগবানের শ্রীপাদপদ্মে সমস্ত পবিত্র তীর্থ বিরাজ করে, সেই ভগবানের নাম, যশ, রূপ, লীলা আদির মহিমা কীর্তন করার পন্থা অবলম্বন করা। 

 

 

পুণ্য প্রায়শ্চিত্ত, মনোধর্মী জ্ঞান এবং অষ্টাঙ্গ যোগে ধ্যান আদি অন্যান্য পন্থায় যথার্থ লাভ হয় না, কারণ এই সমস্ত পন্থা অনুশীলন করার পরেও রজ এবং তমোগুণের দ্বারা কলুষিত মনকে সংযত করতে সমর্থ না হওয়ার ফলে, মানুষ পুনরায় সকাম কর্মে লিপ্ত হয়। 

 

 

যেহেতু এই অত্যন্ত গোপনীয় ঐতিহাসিক কাহিনীর সমস্ত পাপ দূর করার শক্তি রয়েছে, তাই যদি কেউ বিশ্বাস এবং ভক্তি সহকারে তা শ্রবণ করেন অথবা বর্ণনা করেন, তা হলে জড় দেহ সমন্বিত হওয়া সত্ত্বেও এবং মহাপাপী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে আর নরকগামী হতে হয় না।

  

 

প্রকৃতপক্ষে, যমদূতেরা তাঁকে দর্শন পর্যন্ত করতে পারে না। তাঁর দেহ ত্যাগ করার পর তিনি ভগবদ্ধামে ফিরে যান, যেখানে তিনি শ্রদ্ধা সহকারে সমাদৃত এবং পুজিত হন। 

 

উপসংহার 

 

মৃত্যুর সময় অজামিল তাঁর পুত্রকে সম্বোধন করে, ভগবানের দিব্য নাম উচ্চারণ করার ফলে ভগবদ্ধামে ফিরে গিয়েছিলেন, অতএব যাঁরা শ্রদ্ধা সহকারে এবং নিরপরাধে ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন করেন, তাঁরা যে ভগবদ্ধামে ফিরে যাবেন, সেই সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ থাকতে পারে?"

 

আরও পড়ুন 

 

* হরিনাম জপের বিজ্ঞানভিত্তিক সুফল 

 

* ধ্রুব মহারাজের কাহিনী-গৃহত্যাগ ও বনগমন 

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url