ধ্রুব মহারাজের কাহিনী-গৃহত্যাগ ও বনগমন - শ্রীমদ্ভগবদ গীতা যথাযথ বাংলা

নতুন পোষ্ট

Add

বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩

ধ্রুব মহারাজের কাহিনী-গৃহত্যাগ ও বনগমন

 
ধ্রুব মহারাজের কাহিনী

 ধ্রুব মহারাজের গৃহত্যাগ ও বনগমন


মহাষয় মেত্রেয় বললেন—“সনকাদি চার কুমার, নারদ, ঋভু, হংস, অরুণি এবং যতি—ব্রহ্মার এই সমস্ত পুত্ররা গৃহে অবস্থান না করে ঊর্ধ্বরেতা অর্থাৎ নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী হয়েছিলেন। ব্রহ্মার আর এক পুত্র হচ্ছেন অধর্ম, যাঁর পত্নীর নাম হচ্ছে মিথ্যা। 

 

তাঁদের মিলনের ফলে দম্ভ এবং মায়া নামক দুটি আসুরিক পুত্র এবং কন্যার জন্ম হয়। নিঋতি নামক অসুর যার কোন সন্তান ছিল না, সে ঐ দুটি অসুরকে গ্রহণ করেছিল। হে মহাত্মা! দম্ভ ও মায়া থেকে লোভ এবং শঠতা জন্মায়। 

 

তাদের মিলনের ফলে ক্রোধ এবং হিংসার জন্ম হয় এবং তাদের মিলনের ফলে কলি এবং তার ভগিনী দুরুক্তির জন্ম হয়। হে সাধুশ্রেষ্ঠ! কলি এবং দুরুক্তির মিলনের ফলে মৃত্যু এবং ভীতি নামক সন্তানের জন্ম হয়

 

। মৃত্যু এবং ভীতির মিলনের ফলে যাতনা এবং নিরয় নামক সন্তানের জন্ম হয়। হে বিদুর! আমি সংক্ষেপে প্রলয়ের কারণ বিশ্লেষণ করেছি। যে ব্যক্তি এই বর্ণনা তিনবার শ্রবণ করেন, তাঁর আত্মার সমস্ত কলুষ বিধৌত হয় এবং তিনি পুণ্য অর্জন করেন।”


“হে কুরুশ্রেষ্ঠ! আমি এখন আপনার কাছে স্বায়ম্ভুব মনুর বংশধরদের কথা বর্ণনা করব, যিনি পরমেশ্বর ভগবানের অংশের অংশরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। স্বায়ম্ভুব মনু এবং তাঁর পত্নী শতরূপার উত্তানপাদ এবং প্রিয়ব্রত নামক দুটি পুত্র ছিল।  

 

যেহেতু তাঁরা উভয়েই ছিলেন ভগবান বাসুদেবের অংশের বংশধর, তাই তাঁরা এই ব্রহ্মাণ্ড শাসন করতে এবং প্রজাদের পালন ও রক্ষা করতে অত্যন্ত সমর্থ ছিলেন। মহারাজ উত্তানপাদের সুনীতি এবং সুরুচি নামক দুই পত্নী ছিলেন। 

 

সুরুচি ছিলেন মহারাজের অত্যন্ত প্রিয়; কিন্তু সুনীতি, যাঁর পুত্র ছিলেন ধ্রুব, তিনি রাজার ততটা প্রিয় ছিলেন ন। এক সময় মহারাজ উত্তানপাদ সুরুচির পুত্র উত্তমকে তাঁর অঙ্কে স্থাপন করে আদর করছিলেন, সেই সময় ধ্রুব মহারাজও রাজার কোলে উঠবার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু রাজা তাঁকে বিশেষ সমাদর করেননি। 

 

যখন শিশু ধ্রুব মহারাজ তাঁর পিতার কোলে ওঠার চেষ্টা করছিলেন, তখন তাঁর বিমাতা সুরুচি তাঁর প্রতি অত্যন্ত ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে, অত্যন্ত গর্বিতভাবে রাজাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলেন—হে বৎস! তুমি রাজসিংহাসনে অথবা রাজার কোলে বসার যোগ্য নও। নিঃসন্দেহে তুমি রাজার পুত্র,


কিন্তু যেহেতু তুমি আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করনি, তাই তুমি তোমার পিতার কোলে বসার যোগ্য নও। হে বৎস! তুমি জান না যে, আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ না করে, তুমি অন্য কোন স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছ। তাই তোমার জেনে রাখা উচিত যে, তোমার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ। 

 

তুমি এমন একটি বাসনা পূর্ণ করার চেষ্টা করছ, যা পূর্ণ হওয়া অসম্ভব। তুমি যদি রাজসিংহাসনে আরোহণ করতে চাও, তা হলে তোমাকে কঠোর তপস্যা করতে হবে। প্রথমে তোমাকে পরমেশ্বর ভগবান নারায়ণকে প্রসন্ন করতে হবে এবং তার পর তাঁর কৃপায় তোমাকে পরবর্তী জন্মে আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করতে হবে।”


মৈত্রেয় ঋষি বললেন—“হে বিদুর! তাঁর বিমাতার কর্কশ বাক্যের দ্বারা আহত হয়ে, ধ্রুব মহারাজ দণ্ডাহত সর্পের মতো মহাক্রোধে দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করতে লাগলেন। তিনি যখন দেখলেন যে, তাঁর পিতা কোন প্রতিবাদ না করে নীরব রয়েছেন, তৎক্ষণাৎ তিনি সেই স্থান ত্যাগ করে তাঁর মায়ের কাছে গিয়েছিলেন। 

 

ধ্রুব মহারাজ যখন তাঁর মায়ের কাছে গিয়েছিলেন, তখন ক্রোধে তাঁর অধরোষ্ঠ কম্পিত হচ্ছিল এবং তিনি অত্যন্ত করুণভাবে ক্রন্দন করছিলেন। সুনীতি তখনই তাঁকে তাঁর কোলে তুলে নিয়েছিলেন এবং অন্তঃপুরবাসীরা তাঁর কাছে তখন সুরুচির সমস্ত দুরুক্তির কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেছিলেন। 

 

তার ফলে সুনীতিও অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি দাবাগ্নির মধ্যে স্থিত লতিকার মতো শোকাগ্নিতে দগ্ধ হয়ে রোদন করেছিলেন। তাঁর সপত্নীর বাক্য যতই তাঁর স্মরণপথে উদিত হতে লাগল, ততই তাঁর কমলের মতো সুন্দর মুখমণ্ডল অশ্রুধারায় সিক্ত হয়েছিল এবং তখন তিনি এইভাবে মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। 

 

তিনিও দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করছিলেন এবং সেই দুঃখদায়ক পরিস্থিতি নিরসনের কোন উপায় তাঁর জানা ছিল না। তাই তিনি তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন— ‘হে বৎস! তুমি কখনও অন্যের অমঙ্গল কর না। কেউ যখন অন্যকে দুঃখ দেয়, তখন সে নিজেই সেই কষ্ট ভোগ করে।'


“হে বৎস! সুরুচি যা বলেছে তা ঠিকই, কারণ তোমার পিতা রাজা আমাকে তাঁর পত্নী কেন, তাঁর দাসী বলেও মনে করেন না। আমাকে স্বীকার করতে তিনি লজ্জাবোধ করেন। তাই, তুমি যে একজন দুর্ভাগার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছ এবং তার স্তন পান করে বড় হয়েছ, সেই কথা ঠিকই। 

 

হে বৎস! তোমার বিমাতা সুরুচি তোমাকে যা বলেছেন, তা শুনতে অত্যন্ত কটু হলেও তা সত্য। তাই, তুমি যদি তোমার সৎভাই উত্তমের মতো রাজসিংহাসন লাভ করতে চাও, তা হলে মাৎসর্য পরিত্যাগ করে এখনই তোমার বিমাতার আদেশ পালন করতে চেষ্টা কর। 

 

তুমি অবিলম্বে পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের আরাধনা কর। পরমেশ্বর ভগবান এতই মহান যে, কেবল তাঁর শ্রীপাদপদ্ম আরাধনা করার দ্বারা তোমার প্রপিতামহ ব্রহ্মা এই বিশ্ব সৃষ্টি করার উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জন করেছেন। 

 

যদিও তিনি অজ এবং সমস্ত জীবদের মধ্যে প্রধান, তবুও তিনি তাঁর সেই সুমহান পদ প্রাপ্ত হয়েছেন, কেবলমাত্র সেই ভগবানেরই কৃপায়, যাঁকে মহান যোগীরাও তাঁদের প্রাণবায়ু নিয়ন্ত্রণ করার দ্বারা মন সংযমের মাধ্যমে আরাধনা করেন।  

 

তোমার পিতামহ স্বায়ম্ভুব মনু প্রচুর দানের মাধ্যমে মহান যজ্ঞসমূহ অনুষ্ঠান করে, একনিষ্ঠ ভক্তি সহকারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীহরির আরাধনা করে তাঁকে সন্তুষ্ট করেছিলেন এবং তার ফলে তিনি ভৌতিক সুখ এবং তারপর মুক্তি লাভ করেছিলেন, যা দেবতাদের পূজা করার দ্বারা লাভ করা অসম্ভব। 

 

হে বৎস! তুমিও ভক্তবৎসল ভগবানের শরণ গ্রহণ কর। যাঁরা সংসার-চক্র থেকে মুক্তি লাভের অন্বেষণ করেন, তাঁরাও সর্বদা ভক্তিযোগে ভগবানের চরণকমলের আশ্রয় গ্রহণ করেন। স্বধর্ম অনুশীলনের দ্বারা পবিত্র হয়ে, তুমি তোমার হৃদয়ে ভগবানকে স্থাপন কর এবং অবিচলিত চিত্তে তাঁর সেবায় সর্বদা যুক্ত হও। 

 

হে ধ্রুব ! কমল- নয়ন ভগবান ব্যতীত অন্য আর কাউকে আমি দেখি না, যিনি তোমার দুঃখ অপনোদন করতে পারেন। ব্ৰহ্মা আদি দেবতারা যে লক্ষ্মীদেবীর কৃপা অন্বেষণ করেন, সেই লক্ষ্মীদেবীও পদ্মহস্তে সর্বদা সেই পরমেশ্বর ভগবানের সেবা করার জন্য তৎপর থাকেন।”


মহর্ষি মৈত্রেয় বললেন—“প্রকৃতপক্ষে ধ্রুব মহারাজের অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য তাঁর মাতা সুনীতি তাঁকে সেই উপদেশ দিয়েছিলেন। তাই, সেই সম্বন্ধে গভীরভাবে বিবেচনা করে এবং বুদ্ধির দ্বারা সংকল্প স্থির করে, তিনি তাঁর পিতার গৃহ ত্যাগ করেছিলেন। 

 

মহর্ষি নারদ সেই সংবাদ শুনেছিলেন এবং ধ্রুব মহারাজের কার্যকলাপ সম্বন্ধে জ্ঞাত হয়ে, তিনি বিস্ময়ান্বিত হয়েছিলেন। তিনি ধ্রুবের কাছে গিয়ে তাঁর পবিত্র হস্তের দ্বারা তাঁর মস্তক স্পর্শ করে বলেছিলেন। আহা! 

 

ক্ষত্রিয়দের তেজ কী অদ্ভুত। তারা তাদের সম্মানের স্বপ্ন হানিও সহ্য করতে পারেন না। অনুমান করে দেখুন। এই বালকটি একটি ছোট শিশু, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার বিমাতার দুরুক্তি তার কাছে অসহ্য হয়েছে।”


মহর্ষি নারদ ধ্রুবকে বললেন – “ হে বৎস! তুমি একটি বালক মাত্র, যার এখন খেলাধুলায় আসক্ত থাকার কথা। তোমার সম্মান হানিকর কথায় তুমি এইভাবে বিচলিত হচ্ছে কেন? হে ধ্রুব। তুমি যদি মনে কর যে, তোমার আত্ম-সম্মানের হানি হয়েছে, তা হলেও তোমার অসন্তোষের কোন কারণ নেই। 

 

এই প্রকার অসন্তোষ মায়ারই আর একটি লক্ষণ; প্রতিটি জীবই তার পূর্বকৃত কর্ম অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তাই সুখ এবং দুঃখ ভোগ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার জীবন রয়েছে। পরমেশ্বর ভগবানের গতিবিধি অত্যন্ত বিচিত্র। 

 

বুদ্ধিমান মানুষের কর্তব্য সেই পন্থা অবলম্বন করে, অনুকূল বা প্রতিকূলতার বিচার না করে, সব কিছুই ভগবানের ইচ্ছা বলে মনে করে সন্তুষ্ট থাকা। তুমি তোমার মাতার উপদেশ অনুসারে, ভগবানের কৃপা লাভের জন্য ধ্যানযোগের পন্থা অবলম্বন করতে মনস্থ করেছ, কিন্তু আমার মতে কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে এই প্রকার তপশ্চর্যা সম্ভব নয়। 

 

পরমেশ্বর ভগবানকে সন্তুষ্ট করা অত্যন্ত কঠিন। সমস্ত জড় কলুষ-রহিত হয়ে, বহু তপস্যা করে এবং নিরন্তর সমাধিমগ্ন হয়ে, বহু যোগী জন্ম- জন্মান্তর ধরে চেষ্টা করা সত্ত্বেও ভগবানকে উপলব্ধি করার পথ খুঁজে পাননি। অতএব, হে বৎস! এই বৃথা প্রচেষ্টা থেকে তুমি নিবৃত্ত হও; এই কাজ সফল হবে না। 

 

তোমার পক্ষে এখন গৃহে ফিরে যাওয়াই শ্রেয়স্কর হবে। যখন তুমি বড় হবে, তখন ভগবানের কৃপায় তুমি এই যোগ অনুশীলনের সুযোগ পাবে। তখন তুমি এই কার্য সম্পাদন কর। জীবনের যে-কোন অবস্থাতেই, তা দুঃখদায়ক হোক অথবা সুখদায়ক হোক, পরমেশ্বর ভগবানের পরম ইচ্ছার দ্বারা প্রদত্ত বলে জেনে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। 

 

এইভাবে যে-ব্যক্তি সহিষ্ণু হয়, সে অনায়াসে অজ্ঞানতার অন্ধকার অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। সকলেরই কর্তব্য নিজের থেকে অধিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে দর্শন করে অত্যন্ত আনন্দিত হওয়া; নিজের থেকে কম গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে দর্শন করে তার প্রতি কৃপাপরায়ণ হওয়া; এবং নিজের সমান গুণযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করা। 

 

তা হলে এই জড় জগতের ত্রিতাপ দুঃখ কখনই তাকে অভিভূত করতে পারবে না।”ধ্রুব মহারাজ বললেন – “ হে নারদ ঋষি! যাদের হৃদয় জড় জগতের সুখ এবং দুঃখের দ্বারা বিচলিত, তাদের মনের শান্তি লাভের জন্য আপনি কৃপাপূর্বক যে উপদেশ দিয়েছেন, তা অবশ্যই অত্যন্ত মঙ্গলজনক। 

 

কিন্তু আমি অজ্ঞানের অন্ধকারে আচ্ছন্ন এবং তাই এই প্রকার দর্শন আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেনি। হে প্রভু! আমি অত্যন্ত দুর্বিনীত, তাই আপনার উপদেশ গ্রহণ করছি না, কিন্তু এটি আমার দোষ নয়। ক্ষত্রিয়কুলে জন্মগ্রহণ করার ফলে, আমি এমন হয়েছি। 

 

আমার বিমাতা সুরুচি তাঁর দুরুক্তিরূপ বাণের দ্বারা আমার হৃদয়কে বিদ্ধ করেছেন, তাই আপনার মূল্যবান উপদেশ আমার হৃদয়ে স্থান পাচ্ছে না। হে তত্ত্বজ্ঞানী ব্রাহ্মণ! আমি এমনই একটি পদ অধিকার করতে চাই, যা আজ পর্যন্ত এই ত্রিভুবনের কেউ লাভ করতে পারেননি, এমন কি আমার পিতা এবং পিতামহও পারেননি।

 

আপনি যদি আমাকে অনুগ্রহ করতে চান, তা হলে দয়া করে আপনি আমাকে সেই সৎ পন্থা প্রদর্শন করুন, যা অনুসরণ করে আমি আমার জীবনের সেই উদ্দেশ্য সাধন করতে পারব। হে ভগবন্! আপনি ব্রহ্মার যোগ্য পুত্র এবং আপনি সারা জগতের মঙ্গলের জন্য বীণা বাজিয়ে সর্বত্র বিচরণ করেন। 

 

আপনি ঠিক সূর্যের মতো, যে সূর্য সমস্ত জীবের উপকারের জন্য সারা ব্রহ্মাণ্ডে আবর্তন করে।”মৈত্রেয় ঋষি বললেন— “ধ্রুব মহারাজের উক্তি শ্রবণ করে মহাত্মা নারদ মুনি তাঁর প্রতি অত্যন্ত কৃপাপরায়ণ হয়েছিলেন এবং তার প্রতি তাঁর অহৈতুকী কৃপা প্রদর্শন করার জন্য তিনি নিম্নলিখিত উপদেশ দিয়েছিলেন।”


মহর্ষি নারদ ধ্রুব মহারাজকে বললেন—“তোমার মা সুনীতি তোমাকে যে ভগবদ্ভক্তির পন্থা অনুসরণ করার উপদেশ দিয়েছেন, তা তোমার জন্য সর্বতোভাবে উপযুক্ত। তাই তোমার উচিত ভগবদ্ভক্তিতে পূর্ণরূপে মগ্ন হওয়া। যে ব্যক্তি ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ, এই চতুর্বর্গ কামনা করেন, তাঁর কর্তব্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের ভক্তিতে যুক্ত হওয়া, কারণ তাঁর শ্রীপাদপদ্মের আরাধনার ফলে এই সমস্ত বাসনা পূর্ণ হয়।”


“হে বৎস! তোমার কল্যাণ হোক। তুমি যমুনার তটে মধুবন নামক বনে যাও এবং সেখানে গিয়ে পবিত্র হও। সেখানে যাওয়ার ফলে মানুষ পরমেশ্বর ভগবানের নিকটবর্তী হয়, কারণ ভগবান সেখানে সর্বদা বিরাজ করেন। 

 

নারদ মুনি তাঁকে উপদেশ দিয়েছিলেন—হে বৎস! কালিন্দী বা যমুনার জলে তুমি প্রতিদিন তিনবার স্নান কর, কারণ সেই জল অত্যন্ত শুভ, পবিত্র এবং নির্মল। স্নান করার পর, তুমি অষ্টাঙ্গ-যোগের আবশ্যকীয় বিধিগুলি পালন করে, কোন নির্জন স্থানে আসনে উপবেশন কর। 

 

আসনে উপবেশন করে, প্রাণায়ামের তিনটি অভ্যাস অনুশীলন করে ধীরে ধীরে প্রাণবায়ু, মন এবং ইন্দ্রিয় সংযত কর। এইভাবে সমস্ত জড় কলুষ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে, গভীর ধৈর্য সহকারে পরমেশ্বর ভগবানের ধ্যান শুরু কর। 

 

(এখানে ভগবানের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে।) ভগবানের মুখমণ্ডল অত্যন্ত সুন্দর এবং নিরন্তর প্রসন্ন। ভক্তের দৃষ্টিতে তাঁকে কখনও অপ্রসন্ন বলে মনে হয় না এবং তিনি সর্বদাই তাঁদের কৃপা করতে প্রস্তুত থাকেন। তাঁর নয়ন, তাঁর সুন্দর ভ্রূযুগল, তাঁর উন্নত নাসিকা এবং তাঁর গণ্ডদেশ অত্যন্ত সুন্দর।  

 

তিনি সমস্ত দেবতাদের থেকেও অধিক সুন্দর। ভগবানের রূপ সর্বদাই তরুণ। তাঁর দেহের প্রতিটি অঙ্গ সুন্দরভাবে গঠিত এবং নিখুঁত। তাঁর চক্ষু এবং ওষ্ঠাধর উদীয়মান সূর্যের মতো রক্তিম। তিনি সর্বদাই শরণাগতকে আশ্রয়দান করতে প্রস্তুত এবং যে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি তাঁকে অবলোকন করেন, তিনি পূর্ণ তৃপ্তি অনুভব করেন। 

 

তিনি সর্বদাই শরণাগতের প্রভু হওয়ার যোগ্য, কারণ তিনি হচ্ছেন করুণার সিন্ধু। ভগবান হচ্ছেন শ্রীবৎস বা লক্ষ্মীদেবীর আসনরূপ চিহ্নসমন্বিত এবং তাঁর অঙ্গ কান্তি ঘন নীলবর্ণ। তিনি পুরুষ, তাঁর গলায় বনফুলের মালা এবং তিনি শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্মধারী চতুর্ভুজরূপে নিত্য প্রকটিত। 

 

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবাসুদেবের সমগ্র অঙ্গ রত্নভূষণে বিভূষিত। তাঁর মাথায় রত্নখচিত মুকুট, গলায় কণ্ঠহার এবং হাতে বলয়, তাঁর কণ্ঠে কৌস্তুভ মণি শোভা পাচ্ছে এবং তাঁর পরনে পীত পট্টবস্ত্র। তাঁর নিতম্বদেশ মেখলার দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং চরণযুগল স্বর্ণ-নূপুরে সুশোভিত। 

 

তাঁর দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং আনন্দদায়ক। তিনি সর্বদা শান্ত ও স্নিগ্ধ এবং তাঁর রূপ নয়ন ও মনের আনন্দদায়ক। প্রকৃত যোগী হৃদয়রূপ পদ্মের কর্ণিকায় অবস্থিত ভগবানের চিন্ময় রূপের ধ্যান করেন, যাঁর পদযুগল মণিসদৃশ পদনখের কিরণে উদ্ভাসিত। 

 

ভগবানের মুখমণ্ডল সর্বদাই মধুর হাসিতে উদ্ভাসিত এবং ভক্তের কর্তব্য ভগবানের সেই ভক্তবৎসল রূপ নিরন্তর দর্শন করা। ধ্যানকারীর কর্তব্য সমস্ত বরপ্রদানকারী পরমেশ্বর ভগবানকে এইভাবে দর্শন করা। যিনি এইভাবে সর্বদা ভগবানের মঙ্গলময় রূপের ধ্যানে মনকে একাগ্রীভূত করেন, তিনি অচিরেই সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত হন এবং তিনি কখনও ভগবানের ধ্যান থেকে বিচ্যুত হন না।”


“হে রাজপুত্র! আমি তোমাকে এখন সেই মন্ত্ৰ সম্বন্ধে বলব, যা এই ধ্যানের পন্থায় জপ করা কর্তব্য। সাবধানতার সঙ্গে সাত রাত্রি এই মন্ত্র জপ করলে, অন্তরীক্ষে বিচরণকারী সিদ্ধপুরুষদের দর্শন করা যায়। ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়। 

 

এটি শ্রীকৃষ্ণের আরাধনার দ্বাদশাক্ষর মন্ত্র। ভগবানের শ্রীবিগ্রহ স্থাপিত করে এবং মন্ত্র উচ্চারণ করে ফুল, ফল ও বিবিধ খাদ্যদ্রব্য প্রামাণিক বিধি সহকারে ভগবানকে নিবেদন করা উচিত। তবে তা দেশ, কাল এবং সুবিধা ও অসুবিধা বিবেচনা করে করা উচিত। 

 

শুদ্ধ জল, শুদ্ধ ফুলমালা, ফল, ফুল এবং শাক-সবজির দ্বারা, যা বনে পাওয়া যায়, অথবা নবীন দূর্বাঘাস, পুষ্পের কলি, এমন কি গাছের ছাল দিয়ে পর্যন্ত ভগবানের পূজা করা উচিত, আর যদি সম্ভব হয়, তা হলে তুলসীপত্র নিবেদন করা উচিত, যা পরমেশ্বর ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়। 

 

মাটি, জল, মণ্ড, কাঠ এবং ধাতু ইত্যাদি ভৌতিক উপাদান দিয়ে নির্মিত ভগবানের রূপের আরাধনা করা সম্ভব। বনে মাটি এবং জলের অতিরিক্ত অন্য কিছু দিয়ে অর্চাবিগ্রহ তৈরি করা সম্ভব নয়, তাই তা দিয়ে তৈরি বিগ্রহেরই উপরোক্ত বিধি অনুসারে আরাধনা করা উচিত। 

 

যে ভক্ত পূর্ণরূপে আত্মসংযত, তাঁর অত্যন্ত শান্ত ও স্থিরচিত্ত হওয়া উচিত এবং বনে যে ফলমূল পাওয়া যায়, তা খেয়েই তার সন্তুষ্ট থাকা উচিত। হে ধ্রুব! প্রতিদিন তিনবার ভগবানের শ্রীবিগ্রহের আরাধনা এবং মন্ত্র জপ করা ব্যতীত, তাঁর পরম ইচ্ছা এবং স্বীয় শক্তির দ্বারা প্রদর্শিত ভগবানের বিভিন্ন অবতারের চিন্ময় কার্যকলাপের ধ্যান করাও তোমার কর্তব্য। 

 

নির্দিষ্ট উপচার সহকারে কিভাবে ভগবানের আরাধনা করা উচিত, সেই সম্পর্কে পূর্বতন ভগবদ্ভক্তদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা উচিত, অথবা হৃদয়ের অন্তঃস্থলে মন্ত্র থেকে অভিন্ন ভগবানকে মন্ত্র উচ্চারণের দ্বারা পূজা করা উচিত। 

 

এইভাবে যিনি ঐকান্তিকতা এবং নিষ্ঠা সহকারে কায়মনোবাক্যে ভগবানের সেবা করেন এবং বিধি অনুসারে ভগবদ্ভক্তির কার্যকলাপে যুক্ত, ভগবান তাঁকে তাঁর বাসনা অনুসারে বরদান করেন। ভক্ত যদি জড় ধর্ম, অর্থনৈতিক উন্নতি, ইন্দ্রিয়তৃপ্তি অথবা জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করতে চান, তা হলে ভগবান তাঁকে তাঁর বাসনা অনুসারে সেই ফল প্রদান করেন। 

 

কেউ যদি মুক্তি লাভের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী হন, তা হলে তাঁর পক্ষে দিনের মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টাই ভাবাবিষ্ট হয়ে ভগবানের অপ্রাকৃত প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হওয়া উচিত এবং ইন্দ্রিয় তৃপ্তিজনিত কার্যকলাপ থেকে অবশ্যই দূরে থাকা উচিত।”

 

“রাজপুত্র ধ্রুব মহারাজ যখন এইভাবে দেবর্ষি নারদ কর্তৃক উপদিষ্ট হলেন, তখন তিনি তাঁর শ্রীগুরুদেব নারদ মুনিকে পরিক্রমা করে সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করেছিলেন। তার পর, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মের চিহ্ন দ্বারা অঙ্কিত হওয়ার ফলে, বিশেষভাবে পবিত্র সেই মধুবনের উদ্দেশ্যে তিনি যাত্রা করেছিলেন। 

 

ধ্রুব মহারাজ যখন ভগবদ্ভক্তি সম্পাদনের জন্য মধুবনে গিয়েছিলেন, তখন নারদ মুনি প্রাসাদে রাজা কিভাবে আছেন তা দেখতে যেতে মনস্থ করেছিলেন। নারদ মুনি যখন সেখানে গেলেন, তখন রাজা তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করে যথাযথভাবে অভ্যর্থনা করেছিলেন। 

 

সুখে আসনে উপবিষ্ট হয়ে নারদ মুনি বলেছিলেন– হে মহারাজ! আপনার মুখ অত্য শুষ্ক বলে মনে হচ্ছে এবং আপনি যেন দীর্ঘকাল ধরে কোন বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছেন। কিন্তু কেন এই অবস্থা হয়েছে? আপনার ধর্ম অনুষ্ঠানে, অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে অথবা ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধনে কি কোন বাধ সৃষ্টি হয়েছে?”


রাজা উত্তর দিলেন—“হে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ! আমি অত্যন্ত স্ত্রৈণ এবং আমি এতই অধঃপতিত যে, আমি আমার পঞ্চবর্ষীয় বালকের প্রতিও অত্যন্ত নির্দয় হয়েছি। সে যদিও একজন মহাত্মা এবং ভগবানের এক মহান ভক্ত, তবুও তার মাতা সহ তাকে আমি নির্বাসিত করেছি। 

 

হে  ব্রাহ্মণ! আমার পুত্রের মুখমণ্ডল ঠিক একটি পদ্মফুলের মতো। আমি তার বিপজ্জনক অবস্থার কথা চিন্তা করছি। সে অরক্ষিত এবং সে হয়তো অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। বনের কোথাও সে হয়তো শুয়ে আছে এবং নেকড়েরা তাকে খাওয়ার জন্য হয়তো আক্রমণ করেছে। 

 

হায়! ভেবে  দেখুন আমি আমার স্ত্রীর কত বশীভূত! আমার  নিষ্ঠুরতার কথা একটু কল্পনা করুন! প্রেমবশে আমার সেই সুপুত্র আমার কোলে ওঠার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমি তাকে আদর করিনি, এমন কি ক্ষণিকের জন্যও আমি তাকে স্নেহ-সম্ভাষণ করিনি। 

 

ভেবে দেখুন আমি কত নির্দয়!”দেবর্ষি নারদ উত্তর দিলেন—“হে রাজন্ ! আপনি আপনার পুত্রের জন্য শোক করবেন না। সে পরমেশ্বর ভগবান কর্তৃক পূর্ণরূপে রক্ষিত। আপনি যদিও তার প্রভাব সম্বন্ধে যথাযথভাবে অবগত নন, কিন্তু তার কীর্তি ইতিমধ্যে সারা জগৎ জুড়ে পরিব্যাপ্ত হয়েছে। 

 

হে রাজন! আপনার পুত্র অত্যন্ত সুযোগ্য। সে এমন কার্য সম্পাদন করবে, যা মহান রাজা এবং ঋষিদের পক্ষেও অসম্ভব। অচিরেই সে তার কার্য সম্পাদন করে গৃহে ফিরে আসবে। আপনি জেনে রাখুন যে, সে সারা জগৎ জুড়ে আপনার যশও বিস্তার করবে।”


মহর্ষি মৈত্রেয় বললেন – “নারদ মুনির দ্বারা উপদিষ্ট হয়ে, রাজা উত্তানপাদ তাঁর বিশাল ঐশ্বর্যময় রাজ্যের সমস্ত কার্য পরিত্যাগ করে, কেবল তাঁর পুত্র ধ্রুবের কথা চিন্তা করতে লাগলেন। এদিকে ধ্রুব মহারাজ মধুবনে পৌঁছে, যমুনা নদীতে স্নান করেছিলেন এবং গভীর মনোযোগ সহকারে সেই রাত্রে উপবাস করেছিলেন। 

 

তার পর দেবর্ষি নারদের উপদেশ অনুসারে, তিনি পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনায় মগ্ন হয়েছিলেন। প্রথম মাসে ধ্রুব মহারাজ কেবল তাঁর দেহ ধারণের জন্য, প্রতি তিন দিন অন্তর কেবল কপিখ এবং বদরী ফল ভক্ষণ করেন। 

 

এইভাবে তিনি পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনায় উন্নতি সাধন করতে থাকেন। দ্বিতীয় মাসে ধ্রুব মহারাজ প্রতি ছয় দিন অন্তর কেবল শুষ্ক তৃণ এবং পত্র আহার করতে থাকেন। এইভাবে তিনি ভগবানের আরাধনা করতে থাকেন। 

 

তৃতীয় মাসে প্রতি নয় দিন অন্তর তিনি কেবল জলপান করেছিলেন। এইভাবে পূর্ণরূপে সমাধিমগ্ন হয়ে, তিনি উত্তমশ্লোক পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনা করেছিলেন। চতুর্থ মাসে ধ্রুব মহারাজ প্রাণায়ামের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করেছিলেন এবং তার ফলে তিনি কেবল প্রতি বারো দিন অন্তর শ্বাসগ্রহণ করেছিলেন।

 

এইভাবে সম্পূর্ণরূপে ধ্যানমগ্ন হয়ে, তিনি পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনা করেছিলেন। পঞ্চম মাসে, রাজপুত্র ধ্রুব তাঁর শ্বাস এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন যে, তিনি একটি স্তম্ভের মতো নিশ্চলভাবে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে সমর্থ হয়েছিলেন।  

 

এইভাবে তিনি তাঁর মনকে পরব্রহ্মে সম্পূর্ণরূপে একাগ্র করেছিলেন। তিনি সম্পূর্ণরূপে তাঁর ইন্দ্রিয়সকল ও তাদের বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন এবং এইভাবে তাঁর মনকে অন্য কোন বিষয়ে বিক্ষিপ্ত না হতে দিয়ে, তিনি পরমেশ্বর ভগবানের রূপে একাগ্র করেছিলেন। 

 

ধ্রুব মহারাজ যখন এইভাবে সমগ্র জড় সৃষ্টির আশ্রয় এবং সমস্ত জীবের প্রভু ভগবানকে ধারণ করেছিলেন, তখন ত্রিভুবন কম্পিত হতে শুরু করেছিল। রাজপুত্র ধ্রুব যখন তাঁর এক পায়ের উপর অবিচলিতভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন তাঁর পদাঙ্গুষ্ঠের পীড়নে নিপীড়িতা হয়ে ধরিত্রীর অর্ধাংশ অবনত হয়েছিল,


ঠিক যেমন একটি হাতিকে নৌকায় করে নিয়ে যাওয়ার সময়, তার দক্ষিণ এবং বামপদ পরিবর্তনে নৌকাটি প্রকম্পিত হয়। ধ্রুব মহারাজ যখন তাঁর পূর্ণ একাগ্রতার প্রভাবে, সমগ্র চেতনার উৎস ভগবান শ্রীবিষ্ণুর মতো ভারী হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর দেহের দ্বারগুলি রুদ্ধ করার ফলে, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের শ্বাস রুদ্ধ হয়েছিল। 

 

সমগ্র লোকের সমস্ত মহান দেবতারা এইভাবে রুদ্ধশ্বাস হওয়ার ফলে, পরমেশ্বর ভগবানের শরণ গ্রহণ করেছিলেন।”


দেবতারা বললেন—“হে ভগবান ! আপনি স্থাবর এবং জঙ্গম সমস্ত জীবেদের আশ্রয়। আমরা অনুভব করছি যে, সমস্ত জীবেদের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে গেছে। পূর্বে আমাদের কখনও এই রকম কোন অভিজ্ঞতা হয়নি। যেহেতু আপনি সমস্ত শরণাগত জীবেদের চরম আশ্রয়, তাই আমরা আপনার শরণাগত হয়েছি; দয়া করে আপনি আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করুন।”


পরমেশ্বর ভগবান উত্তর দিয়েছিলেন—“হে দেবতাগণ ! তোমরা বিচলিত হয়ো না। মহারাজ উত্তানপাদের পুত্র, যে এখন সম্পূর্ণরূপে আমার চিন্তায় মগ্ন হয়েছে, তার কঠোর তপস্যা এবং দৃঢ় সংকল্পের ফলে তা হয়েছে। সে ব্রহ্মাণ্ডের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়া রোধ করেছে। তোমরা তোমাদের নিজ নিজ গৃহে এখন নিরাপদে ফিরে যেতে পার। আমি সেই বালকটিকে এই কঠোর তপস্যা থেকে নিরস্ত করব এবং তার ফলে তোমরা এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাবে।”

 

আরও পড়ুন

 

* মাতৃগর্ভে প্রহ্লাদ মহারাজ কি শিখেছিল

 

* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব


* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা 


* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন 


* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন