জীবের গতি সম্বন্ধে ভগবান কপিলদেবের উপদেশ
জীবের গতি সম্বন্ধে ভগবান কপিলদেবের উপদেশ
ভগবান বললেন—“পরমেশ্বরের অধ্যক্ষতায় জীবাত্মা তার পূর্বকৃত কর্মের ফল অনুসারে, বিশেষ প্রকার শরীর ধারণের জন্য, পুরুষের রেতকণা আশ্রয় করে স্ত্রীর গর্ভে প্রবেশ করে। সেই রেতকণা গর্ভে পতিত হলে, এক রাত্রে শোণিতের সঙ্গে মিশ্রিত হয়,
পঞ্চ রাত্রিতে বুদ্বুদের আকার প্রাপ্ত হয়, দশ দিনের মধ্যে তা বৃদ্ধি পেয়ে বদরী ফলের মতো হয় এবং তার পর ধীরে ধীরে তা মাংসপিণ্ডে অথবা অণ্ডে পরিণত হয়।
এক মাসের মধ্যে তার মস্তক গঠিত হয় এবং দুই মাসের মধ্যে তার হাত, পা এবং অন্যান্য অঙ্গ গঠিত হয। তিন মাসের মধ্যে তার নখ, আঙ্গুল, লোম, অস্থি ও চর্ম প্রকাশিত হয় এবং সেই সঙ্গে জননেন্দ্রিয় ও দেহের ছিদ্রগুলি যথা—চক্ষু, নাক, কান, মুখ ও পায়ু প্রকটিত হয়।
গর্ভ ধারণের চার মাসের মধ্যে শরীরের সপ্ত ধাতুর উদয় হয়, সেগুলি হচ্ছে— ত্বক, মাংস, রুধির, মেদ, অস্থি, মজ্জা এবং শুক্র। পঞ্চ মাসের মধ্যে তার ক্ষুধা এবং তৃষ্ণার অনুভব হতে শুরু করে এবং ষষ্ঠ মাসে জরায়ুর দ্বারা আবৃত ভ্রূণ দক্ষিণ কুক্ষিতে ভ্রমণ করে।
মাতৃভুক্ত অন্নপানাদির দ্বারা সেই ভ্রূণ বর্ধিত হতে থাকে এবং সব রকম কৃমি কীটের উৎপত্তিস্থল, অত্যন্ত জঘন্য সেই মল-মূত্রের গর্তে তাকে থাকতে হয়। উদরস্থ ক্ষুধার্ত কৃমিরা তার সুকোমল দেহটিকে সর্বক্ষণ ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকে।
তার ফলে সে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করে, বার বার মূর্ছিত হতে থাকে। মাতার ভুক্ত তিক্ত, তীব্র, অত্যন্ত লবণাক্ত অথবা অত্যন্ত টক খাদ্যের দ্বারা শিশু তার সর্বাঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করে।
ভিতরে জরায়ুর দ্বারা আবৃত এবং বাইরে নাড়ির দ্বারা বেষ্টিত হয়ে, পৃষ্ঠ ও গ্রীবাদেশ ধনুকের মতো বাঁকা অবস্থায় এবং তার মস্তক উদরের সঙ্গে সংলগ্ন অবস্থায়, সে মাতার উদরের এক পাশে অবস্থান করে। শিশুটি তখন পিঞ্জরস্থ পক্ষীর মতো অঙ্গ সঞ্চালনে অসমর্থ হয়ে, গর্ভের মধ্যে বাস করে।
সে যদি ভাগ্যবান হয়, তখন তার পূর্বের শত জন্মের সমস্ত দুঃখ-দুর্দশার কথা তার স্মরণ হয় এবং সে তখন দীর্ঘনিঃশ্বাস পরিত্যাগ করে। সেই অবস্থায় মনের শান্তি লাভ করা কি করে সম্ভব?
গর্ভ ধারণের সাত মাস পর তার চেতনা লাভ হয়, তখন প্রসবের কয়েক সপ্তাহ পূর্ব থেকে যে প্রসব- বায়ু নীচের দিকে চাপ দিতে থাকে, সেই বায়ুর দ্বারা চালিত হয় এবং সেই নোংরা জঘন্য উদরে জাত কৃমির মতো সে এক স্থানে স্থির হয়ে থাকতে পারে না।
সেই ভয়ার্ত অবস্থায়, সপ্ত ধাতুর আবরণে বদ্ধ জীব হাত জোড় করে ভগবানের স্তব করতে শুরু করে, যিনি তাকে সেই অবস্থায় স্থাপন করেছেন। মানব-দেহ প্রাপ্ত আত্মা বলতে থাকে—আমি পরমেশ্বর ভগবানের চরণ-কমলের শরণাগত হলাম,
যিনি তাঁর বিভিন্ন নিত্য স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে, এই পৃথিবীপৃষ্ঠে বিচরণ করেন। আমি কেবল তাঁরই শরণ গ্রহণ করি, কারণ তিনি আমাকে সর্বতোভাবে অভয় প্রদান করতে পারেন এবং তাঁর থেকে আমি জীবনের এই অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছি, যা আমার পাপকর্মের জন্য সর্বতোভাবে উপযুক্ত।”
“বিশুদ্ধ আত্মা আমি আমার কর্মের বন্ধনে, মায়ার ব্যবস্থাপনায় মাতৃ-জঠরে শায়িত রয়েছি। আমি তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি, যিনি এখানে আমারই সঙ্গে রয়েছেন, কিন্তু তিনি অবিকারী এবং অপরিবর্তনশীল।
তিনি অসীম কিন্তু সন্তপ্ত হৃদয়ে তাঁকে দর্শন করা যায়। তাঁকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। আমি এই পঞ্চভূতাত্মক জড় শরীর ধারণ করার ফলে, পরমেশ্বর ভগবানের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি এবং তাই আমি প্রকৃতপক্ষে চিন্ময় হওয়া সত্ত্বেও,
আমার গুণ এবং ইন্দ্রিয়ের অপব্যবহার হচ্ছে। যেহেতু পরমেশ্বর ভগবান এই প্রকার জড় শরীর রহিত, তাই তিনি জীব এবং জড়া প্রকৃতির অতীত এবং যেহেতু তিনি সর্বদাই তাঁর চিন্ময় গুণে মহিমান্বিত, তাই আমি তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
মনুষ্য শরীর প্রাপ্ত আত্মা প্রার্থনা করে—জীব মায়ার বশীভূত হয়ে, সংসার- চক্রে তার অস্তিত্বের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। ভগবানের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা ভুলে যাওয়ার ফলেই, সে এই ভাবে বদ্ধ হয়ে পড়ে। অতএব, ভগবানের কৃপা ব্যতীত, সে কিভাবে পুনরায় ভগবানের অপ্রাকৃত প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হতে পারে ?”
“পরমেশ্বর ভগবান, যিনি তাঁর অংশ অন্তর্যামী পরমাত্মারূপে সকলের হৃদয়ে বিরাজ করছেন, তিনি ছাড়া আর কে সমস্ত স্থাবর এবং জঙ্গম বস্তুদের পরিচালনা করতে পারেন? তিনি অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ, কালের এই তিনটি অবস্থায় বিরাজ করেন।
তাঁরই নির্দেশনায় বদ্ধ জীব বিভিন্ন কার্যকলাপে যুক্ত হয় এবং বদ্ধ জীবনের ত্রিতাপ দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, আমাদের কেবল তাঁরই শরণাগত হতে হবে।
তার মায়ের উদরে রক্ত, মল এবং মূত্রের কূপে পতিত হয়ে এবং তার মায়ের জঠরাগ্নিতে দগ্ধ হয়ে, দেহী জীবাত্মা সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে মাস গণনা করে এবং প্রার্থনা করে, “হে ভগবান ! এই হতভাগ্য জীব কখন এই কারাগার থেকে মুক্ত হবে?'
হে ভগবান ! আপনার অহৈতুকী কৃপায়, যদিও আমি মাত্র দশ মাস বয়স্ক, তবুও আমার চেতনা জাগরিত হয়েছে। এই অহৈতুকী কৃপার জন্য, পতিত জীবের বন্ধু পরমেশ্বর ভগবানকে কৃতাঞ্জলিপুটে প্রার্থনা নিবেদন করা ছাড়া,
আমার কৃতজ্ঞতা নিবেদন করার আর কোন উপায় নেই। অন্য প্রকার শরীরে জীব কেবল তার সহজাত প্রবৃত্তিই অনুভব করে, সে তার সেই বিশেষ শরীরের সুখকর এবং দুঃখদায়ক ইন্দ্রিয় অনুভূতিই কেবল অনুভব করে।
কিন্তু আমি এমন একটি শরীর পেয়েছি, যাতে আমি আমার ইন্দ্রিয় দমন করে আমার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অবগত হতে পারি; তাই আমি পরমেশ্বর ভগবানকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি,
যাঁর আশীর্বাদে আমি এই দেহ লাভ করেছি এবং যাঁর কৃপায় আমি অন্তরে এবং বাইরে তাঁকে দর্শন করতে পারি। অতএব, হে প্রভু! যদিও আমি একটি ভয়ঙ্কর অবস্থায় বাস করছি, তবুও জড়-জাগতিক জীবনের অন্ধকূপে পুনরায় পতিত হওয়ার জন্য, আমি আমার মাতৃগর্ভ থেকে নির্গত হতে চাই না।
আপনার বহিরঙ্গা প্রকৃতি দৈবীমায়া তৎক্ষণাৎ নবজাত শিশুকে আচ্ছন্ন করবে এবং সে তৎক্ষণাৎ মিথ্যা পরিচিতির দ্বারা প্রভাবিত হবে, যা থেকে নিরন্তর জন্ম-মৃত্যুর আবর্তিত হওয়ার সূচনা হয়।
অতএব, আর ব্যাকুল না হয়ে, আমি আমার বন্ধুরূপী নির্মল চেতনার সাহায্যে, অজ্ঞানের অন্ধকার থেকে নিজেকে উদ্ধার করব। কেবল ভগবান শ্রীবিষ্ণুর শ্রীপাদপদ্ম আমার মনের মধ্যে ধারণ করে, বার বার জন্ম এবং মৃত্যুর জন্য অনেক মাতার গর্ভে প্রবেশ করা থেকে নিজেকে উদ্ধার করব।”
ना “গর্ভে অবস্থান কালে, দশ মাস বয়স্ক গর্ভস্থ জীব এইভাবে বাসনা করে। কিন্তু যখন সে এই ভাবে ই ভগবানের স্তব করে, তখন প্রসবের কারণীভূত বায়ু তাকে অধোমুখী করে ভূমিষ্ঠ হওয়ার জন্য প্রেরণ করে।
অকস্মাৎ সেই বায়ুর দ্বারা অধঃক্ষিপ্ত হয়ে এবং অধোমস্তক হয়ে, অতি কষ্টে সেই শিশু বেরিয়ে আসে, সেই সময় অসহ্য বেদনায় তার শ্বাস রুদ্ধ হয় এবং স্মৃতি যা বিলুপ্ত হয়। শিশু রক্তাক্ত কলেবরে ভূমিতে পতিত হয়ে, স বিষ্ঠাজাত কৃমির মতো অঙ্গ সঞ্চালন করতে থাকে।
সে ই তার উচ্চতর জ্ঞান হারিয়ে, মায়ার প্রভাবে ক্রন্দন করতে থাকে। গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসার পর, শিশু মি প্রতিপালিত হয় সেই সমস্ত ব্যক্তিদের দ্বারা, যারা বুঝতে পারে না সে কি চায়। তাকে যা দেওয়া হয় তা প্রত্যাখ্যান করতে অসমর্থ হয়ে,
সে এক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিতে পতিত হয়। স্বেদজাত কীটসমূহে পূৰ্ণ ময়লা বিছানায় শায়িত সেই দুর্ভাগা শিশুটি চুলকানি থেকে আরাম পাওয়ার জন্য তার অঙ্গ চুলকাতে পারে না, তার উঠে বসা, দাঁড়ানো অথবা চলাফেরা করা তো দূরের কথা।
অত্যন্ত কোমল ত্বক-বিশিষ্ট সেই শিশুটিকে তার অসহায় অবস্থায় ডাঁশ, মশা, ছারপোকা ইত্যাদি U কামড়াতে থাকে, ঠিক যেমন ছোট কৃমি বড় কৃমিকে দংশন করে। বিগতজ্ঞান শিশুটি তখন উচ্চস্বরে ক্রন্দন করতে থাকে।
এইভাবে শিশুটি নানা রকম দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে, তার শৈশব অবস্থা অতিক্রম করে বাল্যাবস্থায় পদার্পণ করে। বাল্যাবস্থায়ও সে অপ্রাপ্য বস্তুর বাসনা করে এবং তা না পেয়ে সে দুঃখ অনুভব করে।
এবং এইভাবে অজ্ঞানতাবশত, সে ক্রুদ্ধ এবং দুঃখিত হয়। দেহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, আত্মার বিনাশের জন্য, জীব তার অভিমান এবং ক্রোধ বর্ধিত করতে থাকে এবং তার ফলে তারই মতো অন্যান্য কামুক ব্যক্তিদের সঙ্গে তার শত্রুতার সৃষ্টি হয়।
এই প্রকার অজ্ঞানের ফলে, জীব পঞ্চভূতের দ্বারা নির্মিত জড় দেহটিকে তার স্বরূপ বলে মনে করে। এই ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে, সে সমস্ত অনিত্য বস্তুকে 'আমার' বলে মনে করে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতে তার অজ্ঞান বৃদ্ধি করে।
জীবের যে দেহটি তার নিরস্তর ক্লেশের কারণ এবং অজ্ঞান ও সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে যা তার অনুগমন করে, সেই দেহটির জন্য সে নানা রকম কর্ম করে, যা তার নিরন্তর জন্ম-মৃত্যুর চক্রে পতিত হওয়ার কারণ হয় ।
অতএব, জীব যদি কামুক ব্যক্তিদের সঙ্গ প্রভাবে যৌন সুখ এবং জিহ্বার স্বাদ চরিতার্থ করার জন্য অসৎ পথ অবলম্বন করে, তা হলে তাকে পুনরায় নরকে প্রবেশ করতে হয় ।
অসৎ সঙ্গের প্রভাবে সত্য, শৌচ, দয়া, মৌন, পারমার্থিক বুদ্ধি, লজ্জা, তপস্যা, যশ, ক্ষমা, মনঃসংযম, ইন্দ্রিয়- সংযম, সৌভাগ্য আদি সমস্ত সদ্গুণ নষ্ট হয়ে যায়। এই প্রকার অশান্ত, আত্মজ্ঞান-রহিত, মূঢ়, অত্যন্ত শোচনীয় এবং কামিনীকুলের হাতে ক্রীড়ামৃগের ন্যায় অসাধু ব্যক্তির সঙ্গ করা কখনই কর্তব্য নয়।”
“স্ত্রীসঙ্গ এবং স্ত্রীসঙ্গীর সঙ্গ জীবের যে-প্রকার মোহ ও বন্ধন সৃষ্টি করে, অন্য কোন বস্তুর সংসর্গে সেই রকম হয় না।
ব্রহ্মা তাঁর নিজের কন্যাকে দর্শন করে তার রূপ-লাবণ্যে মোহিত হয়েছিলেন এবং সে যখন মৃগীরূপ ধারণ করে, তখন ব্রহ্মা মৃগরূপ ধারণ করে নির্লজ্জের মতো তার পিছনে পিছনে ধাবিত হয়েছিলেন।
ব্রহ্মার সৃষ্ট সমস্ত জীবের মধ্যে, যথা—মনুষ্য, দেবতা এবং পশুদের মধ্যে নারায়ণ ঋষি ব্যতীত আর কেউই স্ত্রীরূপী মায়ার আকর্ষণের দ্বারা বিমুগ্ধ না হয়ে থাকতে পারে না।
স্ত্রী রূপিনী আমার মায়ার প্রভাব দেখুন, যে কেবল তার ভ্রূভঙ্গির দ্বারা এই জগতের সর্ব শ্রেষ্ঠ বীরদের তার পদাবনত করে রাখে। যিনি যোগের সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা লাভ করতে চান এবং আমার সেবার দ্বারা যিনি আত্ম- উপলব্ধি লাভ করেছেন,
তাঁদের কখনই সুন্দরী রমণীর সঙ্গ করা উচিত নয়, কারণ শাস্ত্রে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ভক্তের জন্য নারী নরকের দ্বার স্বরূপ।
ভগবানের নির্মিতা নারী মায়ার প্রতিনিধি এবং যে ব্যক্তি সেবা অঙ্গীকার করে এই মায়ার সঙ্গ করে, তার নিশ্চিতভাবে জেনে রাখা উচিত যে, তা তৃণাচ্ছাদিত কূপের মতো তার মৃত্যু-স্বরূপ। জীব তার পূর্বজন্মে নারীর প্রতি আসক্ত হওয়ার ফলে,
এই জন্মে স্ত্রীরূপ প্রাপ্ত হয়েছে এবং মোহবশত পুরুষরূপী মায়াকে সম্পদ, সন্তান, গৃহ আদির প্রদাতা বলে মনে করে। ব্যাধের সঙ্গীত যেমন মৃগের পক্ষে মৃত্যুর কারণ, তেমনই পতি, পুত্র, গৃহ ইত্যাদিকে ভগবানের বহিরঙ্গা শক্তির দ্বারা তার মৃত্যুর আয়োজন বলে স্ত্রীর মনে করা উচিত।
বিশেষ ধরনের শরীর হওয়ার ফলে, বিষয়াসক্ত জীব তার সকাম কর্ম অনুসারে, এক লোক থেকে আর এক লোকে ভ্রমণ করে। এইভাবে সে সকাম কর্মে লিপ্ত হয়ে, নিরন্তর তার ফল ভোগ করে। এইভাবে জীব তার কর্ম অনুসারে, জড় মন এবং ইন্দ্রিয়-সমন্বিত একটি উপযুক্ত শরীর প্রাপ্ত হয়।
যখন বিশেষ কর্মের ফল সমাপ্ত হয়, সেই সমাপ্তিকে বলা হয় মৃত্যু এবং যখন কোন বিশেষ কর্মফলের শুরু হয়, সেই শুরুকে বলা হয় জন্ম। দর্শন স্নায়ুর রোগগ্রস্ত হওয়ার ফলে, চক্ষু যখন রঙ অথবা রূপ দর্শনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন দর্শনেন্দ্রিয় মৃতপ্রায় হয়ে যায়।
তখন চক্ষু এবং দৃশ্য উভয়ের দ্রষ্টা জীব তার দর্শনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তেমনই, বস্তুর অনুভূতির স্থূল জড় শরীর যখন অনুভব করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখন তাকে বলা হয় মৃত্যু।
জীব যখন তার জড় দেহকে তার স্বরূপ বলে দর্শন করতে শুরু করে, তাকে বলা হয় জন্ম। অতএব, মৃত্যুর ভয়ে ভীত হওয়া উচিত নয়, দেহকে আত্মা বলেও মনে করা উচিত নয়, জীবনের আবশ্যকতাগুলি বর্ধিত করে সেইগুলি উপভোগ করার চেষ্টা করাও উচিত নয়।
জীবের বাস্তবিক প্রকৃতি উপলব্ধি করে আসক্তি-রহিত হয়ে এবং উদ্দেশ্যে স্থির হয়ে এই জগতে বিচরণ করা উচিত।
সম্যক দৃষ্টি- সমন্বিত হয়ে, ভগবদ্ভক্তির দ্বারা শক্তি-সমন্বিত হয়ে এবং জড় পরিচয়ের প্রতি উদাসীন হয়ে, যুক্তির দ্বারা এই মায়িক জগতে জড় দেহটি প্রত্যর্পণ করা উচিত তার ফলে এই জড় জগতের প্রতি উদাসীন হওয়া যায়।”
আরও পড়ুন
* মাতৃগর্ভে প্রহ্লাদ মহারাজ কি শিখেছিল
* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব
* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা
* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন
* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার