শঙ্খ বাজানোর উপকারিতা
পূজায় কেন শঙ্খ বাজানো হয়
পূজায় তিনবার শঙ্খ বাজানো হয়। তিনবার শঙ্খ বাজানোর পিছনে গভীর কারণ রয়েছে। সেই কারণে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই প্রথা মাফিক সাধারণত তিনবারই বাজানো হয় শঙ্খ।
শাস্ত্র মতে নিত্য পূজোর পরে যদি নিয়ম করে তিনবার শঙ্খ বাজানো যায়, তা হলে গৃহস্থের অন্ধরে অশুভ শক্তির প্রভাব কমতে থাকে এবং শুভ শক্তির মাত্রা বাড়ে।
কিন্তু কেন এমন নিয়ম? জেনে নিন এর পিছনে রয়েছে অদ্ভুত কারণ। সেই কারণে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই প্রথা মাফিক সাধারণত তিনবারই বাজানো হয় শঙ্খ।
শাস্ত্রে বলা হয়, বাড়িতে শঙ্খ তিনবারই বাজানো উচিত। তিনবারের বেশি শঙ্খ বাজানো উচিত নয়। কারণ তাতে অশুভ শক্তির প্রবেশ ঘটে। এই তিনবার এই তিনবার শঙ্খ বাজানোর পিছনে গভীর কারণ রয়েছে।
সনাতন ধর্মে শঙ্খ ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক। সৃষ্টির শুরুতে সমুদ্রগর্ভ থেকে পালনকর্তা ভগবান বিষ্ণু ও দেবতাদের তৈরি ঘূর্ণাবর্তের মধ্য থেকে অস্ত্ররূপে শঙ্খকে হাতে ধরে আবির্ভাব হয় ভগবান বিষ্ণুর।
শঙ্খ ধন ও প্রতিপত্তির দেবী মা লক্ষীর আব্রু। “ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ” মতে, শঙ্খ ভগবান বিষ্ণু এবং মাতা লক্ষীর অধিষ্ঠানকারী মন্দির। আরতিতে দুই ধরনের শঙ্খ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
একটি সাধারণত বাজানো হয় পূজোর শুরুতে শঙ্খনাদ ধ্বনি উচ্চারণে আর অন্যটি পূজোর সামগ্রী হিসেবে, পূজোর রীতিনীতি পালনে প্রয়োজন হয়।
কিন্তু কখনই পূজোর আগে বাজানোর জন্যে ব্যবহৃত শঙ্খটি পূজোর কাজে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। শাস্ত্রে রয়েছে, তিনবার শঙ্খ বাজালে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর এই তিন দেবতার সঙ্গে সমস্ত দেবদেবীরা আমন্ত্রিত হন।
কিন্তু তিনবারের বেশি শঙ্খ বাজালে দেবতাদের সাথে অসুরকে নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়। সমুদ্র মন্থনের সময় অসুরেরা চারবার শঙ্খধ্বনি করে ‘বলি অসুুর’কে নিমন্ত্রণ পাঠিয়ে জাগ্রত করেছিল।
তাই, তিনবারের বেশি শঙ্খ বাজালে সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের দেবতা মহাদেব, বিষ্ণু ও ব্রহ্মার পাশাপাশি আসুরিক শক্তিও নিমন্ত্রণ পেয়ে আপনার গৃহে প্রবেশ করে।
অসুরকে নিমন্ত্রণের ফলস্বরূপ আপনার ও আপনার পরিবারের ওপর নেমে আসতে পারে এইসব দেবতাদের অভিশাপ। তাই শাস্ত্রে তিনবার করেই শঙ্খ বাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
বলা হয়, দেবাদিদেব মহাদেব এবং সূর্যদেবের স্নানের কাজে কখনোই শঙ্খ ব্যবহার করা যাবে না। কখনই মন্দিরের দ্বার শঙ্খ ধ্বনির উচ্চারণ ব্যতীত খোলা উচিৎ নয়।
বামাবর্তী শঙ্খ বাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। যেহেতু শঙ্খনী জাতীয় শঙ্খ ব্যবহার নিষিদ্ধ, তাই এগুলো কালো জাদু, যাকে বলা হয় “অঘোরী বিদ্যা” কিম্বা অপদেবতার আরাধনায় কাজে লাগানো হয়।
শঙ্খ বাজানোর উপকারিতা
বয়স রাখে নিয়ন্ত্রণে, শক্ত করে পেশী, সনাতন সংস্কৃতিতে শঙ্খ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব বাড়িতেই পাওয়া যাবে শঙ্খ। লোকবিশ্বাস, নেতিবাচক শক্তি দূর করে শঙ্খ। ঘরে ভরে ওঠে ইতিবাচক শক্তিতে।
শঙ্খ ছাড়া যে কোন পুজোই অসম্পূর্ণ। পৃথিবীর বহু দেশেই শঙ্খ বাজানোর রেওয়াজ চলে আসছে। শঙ্খ বাজালে শরীরের নানা উপকারও হয়।
সন্ধ্যারতির পর শঙ্খ বাজানো হয় প্রতিটি বাড়িতে। যুগ যুগ ধরে বাংলায় চলে আসছে এই রীতি। বাংলা সংস্কৃতির অঙ্গ শঙ্খ।
গীতায় শঙ্খনাদ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সনাতন সংস্কৃতিতে শঙ্খ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত শঙ্খ বাজালে মুখে বলিরেখা কমে। ত্বক টানটান হয়। বয়সের ছাপ পড়ে না। আসলে নিয়মিত শঙ্খ বাজালে মুখের পেশিতে চাপ পড়ে।
নিয়মিত শঙ্খ বাজালে লাভবান হয় ফুসফুসও। ফুসফুসের পেশির ব্যায়াম হয়। বাড়ে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা।
মূত্রনালী, মূত্রথলি, তলপেট, ডায়াফ্রাম, ঘাড়, কাঁধের পেশির জন্য খুব কার্যকর নিয়মিত শঙ্খনাদ।
পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষেত্রেও উপকারী শঙ্খ। নিয়মিত শঙ্খ বাজালে পেটের সমস্যাও কমে। অবসাদ থেকে মুক্তি মেলে বলে মনে করা হয়।
শঙ্খ বাজালে মলদ্বারের পেশীগুলি শক্তিশালী ওয়ে ওঠে। নানা রোগের মোকাবিলা করা যায়।থইরয়েড গ্রন্থি এবং ভোকাল কর্ডের ব্যায়াম হয়। এই সব দাবির নেপথ্যে কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তবে শঙ্খ বাজালে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না।
কীভাবে শঙ্খ বাজাবেন?
শঙ্খ বাজাতে চাইলেই হয় না। শেখাটা জরুরি। তাই বড়দের কাছে আগে শিখে নেওয়া উচিত। ঠিকঠাক না করতে পারলে কান ও চোখের পেশির ক্ষতি হতে পারে।
সাধারণত অনেকেই ভুল করে ফেলেন, নাকের পরিবর্তে মুখ দিয়ে শ্বাস নেন। মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে চলে যায় পেটে। আর পেট পেট বায়ু ধরে রাখতে পারে না।
তাই শঙ্খ বাজানোর সময় নাক দিয়ে শ্বাস নিচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন। উচ্চ রক্তচাপ, হার্নিয়া বা গ্লুকোমা থাকলে শঙ্খ বাজাবেন না।
শাস্ত্র মতে শঙ্খে ফুঁ দিলে সুখ-সমৃদ্ধি সহ আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়। অন্যদিকে বিজ্ঞানীদের মতে শঙ্খ বাজিয়ে অনেক রোগ নিরাময় হয়।
সনাতন ধর্মে শঙ্খের আওয়াজের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি শুভ ও মঙ্গলজনক কাজে অবশ্যই শঙ্খ বাজানো হয়। অনেক বাড়িতেই পুজোর সময় মানুষ নিয়মিত শঙ্খ বাজায়।
প্রতিদিন শঙ্খ ফুঁ দিলে মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয় এবং এর ফলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রেণে থাকে।
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে বাড়ির দুর্বল দিকে শঙ্খ রাখলে যশ, সম্পদ বৃদ্ধি ও উন্নতি হয়। কথিত আছে বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে শঙ্খ রাখলে শিক্ষায় সাফল্য পাওয়া যায়। শঙ্খের খোসায় রাখা জল পান করলে হাড় মজবুত হয় এবং দাঁদ সুস্থ থাকে।
মনে রাখবেন শঙ্খ যেন বাড়ির নোংরা স্খানে রাখা না হয়। বসবার ঘরে শঙ্খ দক্ষিণ দিকে রাখুন। এতে আপনার নাম হবে সর্বত্র। যদি আপনার সম্পর্কের মধ্যে প্রতিদিনি ঝগড়া হয়, তাহলে বসার ঘরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে শঙ্খ রাখুন।
এতে করে সম্পর্ক মধুর হয়ে উঠবে। শঙ্খ বাজালে মুখের মাংসপেশি প্রসারিত হয়, যার ফলে সূক্ষ্ম রেখা দূর হয়।
শঙ্খ বাজানোর নিয়ম
* ভগবানের আরাধনা করার সময় শঙ্খ ভুলেও বাজাবেন না। এতে করে সেই পূজোর কোন শুভ ফল দেয় না।
* বাড়িতে যদি শঙ্খ থাকে তবে একটি নয় দুটি শঙ্খ রাখুন। একটি শঙ্খ ফুঁকের জন্য এবং অন্যটি অভিষেক করার জন্য রাখুন।
* এটা বিশ্বাস করা হয় যে শঙ্খ থেকে ভগবান বিষ্ণুকে জল নিবেদন করা শুভ। কিন্তু ভগবান শিব ও সূর্যদেবকে ভুলেও শঙ্খ থেকে জল নিবেদন করবেন না।
শঙ্খধ্বনি বিজয়ের সূচক
দিব্য শঙ্খধ্বনি ঘোষণা করল যে, কুরুপক্ষের যুদ্ধজয়ের কোন আশাই নেই, কারণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পান্ডবপক্ষে যোগদান করেছেন।
জয়ন্তু পান্ডুপুত্রাণাং যেষাং পক্ষে জনার্দনঃ। পান্ডবদের জয় অবধারিত, কারণ জনার্দন শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের পক্ষে যোগ দিয়েছেন।
ভগবান যে পক্ষে যোগদান করেন, সৌভাগ্য-লক্ষী সর্বদাই তাঁর পতির অনুগামী। তাই বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের দিব্য শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে ঘোষিত হল যে, অর্জুনের জন্য বিজয় ও সৌভাগ্য প্রতীক্ষা করছে।
আরও পড়ুন
* আত্মা ও দেহের পার্থক্য এবং এবং আমাদের দুঃখের প্রকৃত কি?* মহাজন উপদেশ-শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজ
*মহাজন উপদেশ-শ্রী যমরাজ
* জীবনে সাফল্য পেতে চান! তাহলে মেনে চলুন এই দশটি টিপস
* চানক্য পন্ডিতের অমূল্য বাণী যা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে
* মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী