ধ্রুব মহারাজের সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে গৃহে প্রত্যাবর্তন
মহর্ষি মৈত্রেয় বিদুরকে বললেন—“ভগবান যখন এইভাবে দেবতাদের আশ্বাস দিলেন, তখন তাঁরা সমস্ত ভয় থেকে মুক্ত হয়ে, তাঁকে তাঁদের প্রণতি নিবেদন করে আপন আপন স্বর্গলোকে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।
তারপর পরমেশ্বর ভগবান, যিনি সহস্রশীর্ষা অবতার থেকে - অভিন্ন, তিনি গরুড়পৃষ্ঠে আরোহণ করে তাঁর সেবক ধ্রুবকে দর্শন করার জন্য মধুবনে গিয়েছিলেন। যোগসিদ্ধির প্রভাবে ধ্রুব মহারাজ বিদ্যুতের মতো উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছিল।
ভগবানের যে রূপের ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন, সেই রূপ সহসা অন্তর্হিত হয়েছিল। ধ্রুব মহারাজ তখন অত্যন্ত বিচলিত হয়েছিলেন এবং তাঁর ধ্যান ভঙ্গ হয়েছিল।
কিন্তু তাঁর চক্ষু উন্মীলিত করা মাত্রই তিনি ঠিক যেভাবে তাঁর হৃদয়ে পরমেশ্বর ভগবানকে দর্শন করেছিলেন, ঠিক সেইভাবে তাঁকে তাঁর সম্মুখে দেখতে পেয়েছিলেন। ভগবানকে সম্মুখে দর্শন করে ধ্রুব মহারাজ অত্যন্ত বিহুল হয়েছিলেন এবং শ্রদ্ধা সহকারে তাঁকে প্রণতি নিবেদন করেছিলেন।
তাঁকে দণ্ডবৎ প্রণতি নিবেদন করে, তিনি ভগবৎ প্রেমে মগ্ন হয়েছিলেন। ধ্রুব মহারাজ ভাবাবিষ্ট হয়ে ভগবানকে এমনভাবে দর্শন করছিলেন, যেন তিনি তাঁর চক্ষুর দ্বারা ভগবানের সৌন্দর্য পান করছিলেন, ভগবানের শ্রীপাদপদ্ম চুম্বন করে, তিনি তাঁর বাহুর দ্বারা তাকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
ধ্রুব মহারাজ যদিও ছিলেন একটি ছোট্ট বালক, তবুও তিনি উপযুক্ত শব্দের দ্বারা পরমেশ্বর ভগবানের বন্দনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি ছিলেন অনভিজ্ঞ, তাই তিনি তৎক্ষণাৎ যথাযথভাবে নিজেকে ব্যক্ত করতে পারেননি।
সর্ব অন্তর্যামী পরমেশ্বর ভগবান ধ্রুব মহারাজের সেই বিহুল অবস্থা বুঝতে পেরে, তাঁর অহৈতুকী কৃপার প্রভাবে তাঁর শঙ্খের দ্বারা তাঁর সম্মুখে কৃতাঞ্জলিপুটে দণ্ডায়মান ধ্রুব মহারাজের মস্তক স্পর্শ করেছিলেন। সেই সময় ধ্রুব মহারাজ বৈদিক সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে অবগত হয়েছিলেন এবং পরমতত্ত্বকে ও সমস্ত জীবের সঙ্গে পরমতত্ত্বের সম্পর্ক সম্বন্ধে অবগত হয়েছিলেন।
সর্ব বিখ্যাত বিপুল কীর্তি পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি ভক্তিজনিত প্রেমে পরিপ্লুত হয়ে, ধ্রুব মহারাজ, যিনি ভবিষ্যতে এমন একটি লোক প্রাপ্ত হবেন, যা প্রলয়ের সময়েও বিনষ্ট হবে না, তিনি মননশীল এবং নির্ণয়াত্মক প্রার্থনা নিবেদন করেছিলেন।”
ধ্রুব মহারাজ বললেন — “হে ভগবান ! আপনি সর্বশক্তিমান। আমার অন্তরে প্রবেশ করে আপনি আমার হস্ত, পদ, কর্ণ, ত্বক, আদি সুপ্ত ইন্দ্রিয়গুলিকে জাগরিত করেছেন, বিশেষ করে আমার বাক্ শক্তিকে। আমি আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
হে ভগবান! আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ, কিন্তু আপনার বিভিন্ন শক্তির দ্বারা আপনি চিজগতে এবং জড় জগতে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারে প্রকাশিত হন। আপনি আপনার বহিরঙ্গা শক্তির দ্বারা জড় জগতে মহৎ আদি শক্তি সৃষ্টি করে, পরমাত্মারূপে এই জড় জগতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।
আপনি পরম পুরুষ, এবং জড়া প্রকৃতির ক্ষণস্থায়ী গুণের মাধ্যমে আপনি নানা প্রকার রূপ প্রকাশ করেন, ঠিক যেমন অগ্নি বিভিন্ন আকৃতির কাষ্ঠখণ্ডে প্রবিষ্ট হয়ে বিভিন্নরূপে প্রজ্বলতি হয়। হে প্রভু! ব্রহ্মা পূর্ণরূপে আপনার শরণাগত।
সৃষ্টির আদিতে আপনি তাঁকে জ্ঞান প্রদান করেছিলেন, তার ফলে তিনি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড দর্শন করতে পেরেছিলেন এবং হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন, ঠিক যেমন সুপ্তোত্থিত ব্যক্তি ঘুম থেকে জেগে ওঠার পরেই তার কর্তব্য উপলব্ধি করতে পারে।
আপনি মুক্তিকামীদের একমাত্র আশ্রয় এবং আপনি সমস্ত আর্ত ব্যক্তিদের বন্ধু। অতএব পূর্ণজ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন যে বিজ্ঞ ব্যক্তি, তিনি কিভাবে আপনাকে বিস্মৃত হতে পারেন? যারা এই চামড়ার থলিটির ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য কেবল আপনার পূজা করে, তারা অবশ্যই আপনার মায়াশক্তির দ্বারা প্রভাবিত।
সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার কারণ- স্বরূপ আপনার মতো কল্পবৃক্ষকে পাওয়া সত্ত্বেও, আমার মতো মূর্খ ব্যক্তিরা সেই ইন্দ্রিয়তৃপ্তি লাভের জন্য আপনার কাছে বর প্রার্থনা করে, যা নরকেও লাভ হয়। হে ভগবান! আপনার শ্রীপাদপদ্মের ধ্যানের ফলে, অথবা আপনার শুদ্ধ ভক্তের কাছ থেকে আপনার মহিমা শ্রবণ করার ফলে, যে চিন্ময় আনন্দ লাভ হয়, তা নির্বিশেষ ব্রহ্মে লীন হয়ে গেছে বলে মনে করার বা পরম পদ প্রাপ্ত হওয়ার আনন্দ থেকে অনেক অনেক গুণ অধিক।
যেহেতু ভগবৎ প্রেমানন্দের কাছে ব্রহ্মানন্দও পরাভূত হয়ে যায়, সুতরাং কালরূপ তরবারির দ্বারা বিনষ্ট হয়ে যায় যে ক্ষণস্থায়ী স্বর্গসুখ, সেই সম্বন্ধে আর কি বলার আছে? স্বৰ্গলোকে উন্নীত হলেও কালক্রমে পুনরায় স্বর্গচ্যুত হয়ে মর্ত্যলোকে অধঃপতিত হতে হয়।”
“হে অনন্ত ভগবান ! কৃপা করে আপনি আমাকে আশীর্বাদ করুন, যেন নিরন্তর আপনার সেবায় যুক্ত শুদ্ধ ভক্তদের সঙ্গ আমি লাভ করতে পারি। এই প্রকার দিব্য ভক্তরা সম্পূর্ণরূপে নিষ্কলুষ। আমার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে যে, ভগবদ্ভক্তির প্রভাবে আমি জ্বলন্ত অগ্নির তরঙ্গ- সমন্বিত ভয়ঙ্কর ভবসমুদ্র পার হতে পারব।
তা আমার পক্ষে অত্যন্ত সহজ হবে, কেননা আমি আপনার শাশ্বত দিব্য গুণাবলী এবং লীলাসমূহ শ্রবণ করার জন্য উন্মত্ত হয়েছি। হে কমলনাভ ভগবান! যিনি আপনার শ্রীপাদপদ্মের সৌরভে নিরন্তর লোলুপ ভক্তের সঙ্গ করেন, তিনি কখনও বিষয়াসক্ত মানুষদের অত্যন্ত প্রিয় যে দেহ এবং সেই দেহের সঙ্গে সম্পর্কিত আত্মীয়- স্বজন, সন্তান-সন্ততি, বন্ধুবান্ধব, গৃহ, বিত্ত ও পত্নীর প্রতি আসক্ত হন না।
প্রকৃতপক্ষে তিনি সেইগুলি গ্রাহ্যই করেন না। হে ভগবন্ ! হে অজ! আমি জানি যে, পশু, বৃক্ষ, পক্ষী, সরীসৃপ, দেব, দানব, মানুষ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার জীবাত্মারা মহত্তত্ত্ব থেকে উদ্ভুত ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। আমি জানি যে, সেই জীবাত্মারা কখনও ব্যক্ত এবং কখনও অব্যক্ত; কিন্তু আমি এই প্রকার পরম রূপ কখনও দর্শন করিনি যা আমি এখন দেখছি।
এখন মতবাদ সৃষ্টি করার জন্য তর্ক-বিতর্কের সমাপ্তি হয়েছে। হে ভগবান ! কল্পান্তে ভগবান গর্ভোদকশায়ী বিছু সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড তাঁর উদরের মধ্যে সন্নিবিষ্ট করেন। তিনি শেষনাগের শয্যায় শয়ন করেন এবং তখন তাঁর নাভি থেকে একটি স্বর্ণময় কমল উত্থিত হয় এবং তাতে ব্রহ্মার জন্ম হয়েছিল। আমি বুঝতে পারছি যে, আপনি হচ্ছেন সেই পরমেশ্বর ভগবান।
তাই আমি আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। হে ভগবান! আপনার অখণ্ড চিন্ময় দৃষ্টিপাতের দ্বারা আপনি বুদ্ধির কার্যের সমস্ত অবস্থার পরম সাক্ষী। আপনি নিত্য মুক্ত, আপনার অস্তিত্ব শুদ্ধ সত্ত্বে অবস্থিত এবং পরমাত্মারূপে আপনার অস্তিত্ব অপরিবর্তনীয়। আপনি ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ আদি পরমেশ্বর ভগবান এবং আপনি জড়া প্রকৃতির তিন গুণের শাশ্বত ঈশ্বর।
তাই আপনি সমস্ত সাধারণ জীব থেকে ভিন্ন। শ্রীবিষ্ণুরূপে আপনি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে সর্বতোভাবে পালন করেন এবং আপনি স্বতন্ত্র থাকলেও সমস্ত যজ্ঞফলের ভোক্তা। হে ভগবান! আপনার নির্বিশেষ ব্রহ্মের প্রকাশে দুটি পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব—জ্ঞান এবং অবিদ্যা সতত বিরাজমান।
আপনার বিবিধ শক্তি নিরন্তর প্রকাশিত, কিন্তু নির্বিশেষ ব্রহ্ম, যা অখণ্ড, আদি, অপরিবর্তনীয়, অসীম এবং আনন্দময়, তা হচ্ছে জড় জগতের কারণ। যেহেতু আপনি হচ্ছেন সেই নির্বিশেষ ব্ৰহ্ম, তাই আমি আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন
করি। হে ভগবান! হে পরমেশ্বর। আপান আশীর্বাদের মূর্ত রূপ। তাই, যিনি অন্য সমস্ত বাসনা- রহিত হয়ে ভক্তিযুক্ত চিত্তে আপনার শ্রীপাদপদ্মের আরাধনা করেন তাঁর কাছে রাজপদও নিতান্ত নগণ্য হয়ে যায়। আপনার শ্রীপাদপদ্মের আরাধনা করার এমনই আশীর্বাদ। গাভী যেমন তার নবজাত বৎসকে দুগ্ধদান করে এবং সমস্ত আক্রমণের ভয় থেকে রক্ষা করে পালন করে, আপনিও তেমন আপনার অহৈতুকী কৃপার প্রভাবে, আমার মতো অজ্ঞান ভক্তকে পালন করুন।”
মহর্ষি মৈত্রেয় বললেন – “হে বিদুর! সৎ বাসনায় পূর্ণ অন্তঃকরণ-সমন্বিত ধ্রুব মহারাজ যখন তাঁর প্রার্থনা শেষ করলেন, তখন ভক্তবৎসল ভগবান তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, 'হে রাজপুত্র ধ্রুব! তুমি পবিত্র ব্রত পালন করেছ এবং আমি তোমার অন্তরের বাসনা সম্বন্ধে অবগত।
যদিও তোমার অভিলাষ অত্যন্ত উচ্চ এবং পূর্ণ করা অত্যন্ত কঠিন, তা সত্ত্বেও আমি তোমার সেই বাসনা পূর্ণ করব। তোমার সর্বতোভাবে মঙ্গল হোক। হে ধ্রুব ! আমি তোমাকে ধ্রুবলোক নামক এক উজ্জ্বল গ্রহ প্রদান করব, যার অস্তিত্ব কল্পান্তে প্রলয়ের পরেও অক্ষুণ্ণ থাকবে।
সমস্ত সৌরমণ্ডল, গ্রহ এবং নক্ষত্ররাজি পরিবেষ্টিত সেই লোকে এখনও পর্যন্ত কেউ আধিপত্য করেনি। নভোমণ্ডলের সমস্ত জ্যোতিষ্ক সেই গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে, ঠিক যেমন বলদসমূহ শস্য মাড়াইয়ের সময় মেধীদণ্ডের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। ধর্ম, অগ্নি, কশ্যপ, শুক্র আদি মহর্ষিগণ অধ্যুষিত নক্ষত্ররাজি সেই ধ্রুব নক্ষত্রকে দক্ষিণে রেখে সতত প্রদক্ষিণ করে।
যখন তোমার পিতা তোমার হস্তে রাজ্য ভার সমর্পণ করে বনে গমন করবেন, তখন তুমি ছত্রিশ হাজার বছর ধরে অপ্রতিহতভাবে সমগ্র পৃথিবী শাসন করবে। তোমার সমস্ত ইন্দ্রিয় এখনকার মতোই শক্তিশালী থাকবে। তুমি কখনও বৃদ্ধ হবে না। ”
“ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে, তোমার ভ্রাতা উত্তম মৃগয়া করতে বনে গিয়ে নিহত হবে এবং তখন তোমার বিমাতা সুরুচি তার পুত্রের মৃত্যুতে অত্যন্ত শোকাকুল হয়ে তাকে খুঁজতে বনের মধ্যে দাবানলে প্রবেশ করবে। আমি সমস্ত যজ্ঞের হৃদয়। তুমি বহু মহান যজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হবে এবং প্রভূত দানও করবে।
এইভাবে এই জীবনে জড়-জাগতিক সুখের আশীর্বাদ ভোগ করতে পারবে এবং জীবনান্তে তুমি আমাকে স্মরণ করতে পারবে। হে ধ্রুব! তোমার জড়-জাগতিক জীবনের পর এই শরীরে তুমি আমার লোকে যাবে, যা সর্বদা অন্য সমস্ত গ্রহলোকের অধিবাসীদের দ্বারা নমস্কৃত।
তা সপ্তর্ষিমণ্ডলের ঊর্ধ্বে এবং সেখানে একবার গেলে আর এই জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না।”মহর্ষি মৈত্রেয় বললেন— “বালক ধ্রুব মহারাজ দ্বারা পূজিত এবং সম্মানিত হয়ে এবং তাঁকে তাঁর স্বীয় ধাম প্রদান করে, ভগবান শ্রীবিষ্ণু গরুড়ের পিঠে আরোহণ করে তাঁর স্বীয় ধামে প্রত্যাবর্তন করলেন।
ভগবানের চরণ-কমলের উপাসনার দ্বারা ধ্রুব মহারাজ তাঁর ঈন্সিত ফল লাভ করেছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি প্রসন্ন হননি। এই ভাবে তিনি তাঁর গৃহে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।”
শ্রীবিদুর প্রশ্ন করলেন—“হে ব্রাহ্মণ! ভগবানের ধাম প্রাপ্ত হওয়া অত্যন্ত কঠিন। অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ এবং কৃপাময় ভগবানের প্রসন্নতা বিধানকারী শুদ্ধ ভক্তির দ্বারাই কেবল তা লাভ করা যায়। এক জন্মেই ধ্রুব মহারাজ তা লাভ করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী এবং বিবেকী। তা হলে, কেন তিনি প্রসন্ন হননি?”
মৈত্রেয় উত্তর দিলেন — “ধ্রুব মহারাজের হৃদয় তাঁর বিমাতার বাক্যবাণে বিদ্ধ হওয়ার ফলে, তিনি অত্যন্ত সন্তপ্ত হয়েছিলেন এবং তাই তিনি যখন তাঁর জীবনের লক্ষ্য নির্ধারিত করেছিলেন, তখনও তিনি তাঁর বিমাতার দুর্ব্যবহার ভুলতে পারেননি।
তিনি এই জড় জগৎ থেকে প্রকৃত মুক্তি প্রার্থনা করেননি। তাই তাঁর ভক্তিতে আকৃষ্ট হয়ে পরমেশ্বর ভগবান যখন তাঁর সামনে এসেছিলেন, তখন তাঁর অন্তরের জড় বাসনার জন্য তিনি লজ্জিত হয়েছিলেন।”
“ধ্রুব মহারাজ মনে মনে ভাবলেন—ভগবানের চরণ- কমলের আশ্রয় লাভের প্রচেষ্টা করা কোন সহজ কাজ নয়, কারণ সনন্দন প্রমুখ মহান ব্রহ্মচারীরাও সমাধিতে অষ্টাঙ্গ যোগের সাধনা করে বহু জন্মের পর ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের আশ্রয় লাভ করেছিলেন।
কিন্তু আমি কেবল ছয় মাসের মধ্যেই সেই ফল প্রাপ্ত হয়েছি, কিন্তু তবুও, ভগবান ব্যতীত অন্য বিষয়ে অভিলাষ থাকার ফলে, আমি অধঃপতিত হয়েছি। হায়। দেখ আমি কত দুর্ভাগা! আমি ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের সমীপবর্তী হয়েছিলাম, যিনি জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন অচিরে ছেদন করতে পারেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও, মূর্খতাবশত, আমি তাঁর কাছে এমন বস্তু প্রার্থনা করেছি যা নশ্বর।
স্বর্গের দেবতারা, যাঁদের আবার অধঃপতিত হতে হবে, তাঁরা আমাকে ভগবদ্ভক্তির প্রভাবে বৈকুণ্ঠলোকে উন্নীত হতে দেখে ঈর্ষাপরায়ণ হয়েছেন। এই সমস্ত অসহিষ্ণু দেবতারা আমার বুদ্ধি বিকৃত করে দিয়েছেন এবং তাই আমি নারদ মুনির উপদেশ অনুসারে যথার্থ বর প্রার্থনা করতে পারিনি।”
“ধ্রুব মহারাজ অনুতাপ করেছিলেন—আমি মায়ায় আচ্ছন্ন ছিলাম; প্রকৃত তত্ত্ব সম্বন্ধে অজ্ঞানতার ফলে, আমি মায়ার কোলে নিদ্রিত ছিলাম। দ্বিতীয় অভিনিবেশজনিত ভেদ দর্শনের ফলে, আমি আমার ভাইকে শত্রু বলে মনে করেছিলাম এবং ভ্রান্তিবশত অন্তরে ব্যথিত হয়ে মনে করেছিলাম, “তারা আমার শত্রু।”
পরমেশ্বর ভগবানকে প্রসন্ন করা অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু আমি সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের পরমাত্মাকে প্রসন্ন করা সত্ত্বেও তাঁর কাছে কেবল কয়েকটি অর্থহীন বস্তু প্রার্থনা করেছি। আমার কার্যকলাপ ঠিক একটি মৃত ব্যক্তিকে চিকিৎসা করার মতো। দেখ আমি কি দুর্ভাগা, কারণ, জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন ছেদনকারী পরমেশ্বর ভগবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া সত্ত্বেও আমি কেবল সেই বন্ধনই প্রার্থনা করেছি।
ভগবান যদিও আমাকে তাঁর সেবা-সম্পদ প্রদান করেছিলেন, তবুও নিতান্ত মূর্খতাবশত এবং পুণ্যের অভাববশত, আমি কেবল নাম-যশ এবং জাগতিক উন্নতি কামনা করেছি। আমার অবস্থা ঠিক এক দরিদ্র ব্যক্তির মতো, যিনি এক মহান সম্রাটের কাছে মূর্খতাবশত কেবল একটু খুদ ভিক্ষা করেন, যদিও তাঁর প্রতি প্রসন্নতাবশত সম্রাট তাঁকে যে কোন কিছু দিতে ইচ্ছুক।"
মহর্ষি মৈত্রেয় বললেন- “হে বিদুর। তোমার মতো ব্যক্তিরা, যাঁরা মুকুন্দের (যিনি মুক্তি দান করতে পারেন, সেই পরমেশ্বর ভগবানের) শ্রীপাদপদ্মের শুদ্ধ ভক্ত এবং যাঁরা সর্বদাই তাঁর স্ত্রীপাদপদ্মের মধুর প্রতি অত্যন্ত আসক্ত, তারা সর্বদাই তাঁর স্ত্রীপাদপদ্মের সেবা করেই প্রসন্ন থাকেন।
জীবনের যে-কোন অবস্থাতেই এই প্রকার ভক্তরা সন্তুষ্ট থাকেন এবং তাই তাঁরা ভগবানের কাছে কখনও জড়জাগতিক উন্নতি প্রার্থনা করেন না।”
“মহারাজ উত্তানপাদ যখন শুনলেন যে, পুত্র ধ্রুব গৃহে ফিরে আসছেন, তখন তাঁর মনে হয়েছিল যেন ধ্রুব তাঁর মৃত্যুর পর ফিরে আসছেন। তিনি সেই সংবাদ বিশ্বাস করতে পারেননি, কারণ তিনি ভেবেছিলেন কি করে তা সম্ভব। তিনি নিজেকে অত্যন্ত দুর্ভাগা বলে মনে করেছিলেন এবং তাই তিনি মনে করেছিলেন যে, তাঁর পক্ষে এই প্রকার সৌভাগ্য লাভ করা অসম্ভব।
তিনি যদিও সেই বার্তাবাহকের কথায় বিশ্বাস করতে পারেননি, তবুও দেবর্ষি নারদের বাণীতে তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। তাই সেই সংবাদে তিনি অত্যন্ত বিহ্বল হয়েছিলেন এবং তৎক্ষণাৎ সেই বার্তাবাহকের প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে, তিনি তাকে এক অতি মূল্যবান মুক্তার কণ্ঠহার দান করেছিলেন।
মহারাজ উত্তানপাদ তাঁর হারানো পুত্রের মুখ দর্শন করতে অত্যন্ত উৎসুক হয়ে, তখন অতি উত্তম অশ্বযুক্ত, স্বর্ণভূষিত রথে আরোহণ করে, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, পরিবারের সমস্ত প্রবীণ সদস্যগণ, রাজকর্মচারী, মন্ত্রী এবং অন্তরঙ্গ বন্ধুগণসহ তৎক্ষণাৎ নগরী থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।
শোভাযাত্রা সহকারে তিনি যখন যাচ্ছিলেন, তখন শঙ্খ, দুন্দুভি, বংশী আদি মঙ্গলজনক বাদ্যযন্ত্র ধ্বনিত হচ্ছিল এবং সৌভাগ্যসূচক বৈদিক মন্ত্ৰসমূহ উচ্চারিত হচ্ছিল। মহারাজ উত্তানপাদের উভয় পত্নী সুনীতি এবং সুরুচি এবং তাঁর অন্য পুত্র উত্তম সহ শিবিকায় আরোহণ করে সেই শোভাযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিলেন।
ধ্রুব মহারাজকে উপবনের সন্নিকটে আগত দেখে মহারাজ উত্তানপাদ অতি শীঘ্র তাঁর রথ থেকে অবতরণ করলেন। তিনি তাঁর পুত্র ধ্রুবকে দীর্ঘকাল না দেখার ফলে অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত ছিলেন এবং তাই গভীর প্রেমে তাঁকে আলিঙ্গন করার জন্য তিনি তাঁর হারানো পুত্রের দিকে এগিয়ে গেলেন।
দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে মহারাজ দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তাঁকে আলিঙ্গন করলেন। ধ্রুব মহারাজ কিন্তু পূর্বের মতো ছিলেন না; পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের স্পর্শে তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে পারমার্থিক উন্নতি সাধন করেছিলেন। ধ্রুব মহারাজের সঙ্গে মিলনের ফলে, রাজা উত্তানপাদের দীর্ঘকালের মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছিল এবং তাই তিনি বার বার ধ্রুবের মস্তক আঘ্রাণ করেছিলেন এবং আনন্দাশ্রর দ্বারা তাঁকে স্নান করিয়েছিলেন।
সজ্জনাগ্রগণ্য ধ্রুব মহারাজ প্রথমে তাঁর পিতার চরণযুগল বন্দনা করলেন এবং উত্তানপাদ আশীর্বাদ ও কুশল প্রশ্নাদির দ্বারা তাঁর পুত্রকে সম্ভাষণ করলেন। তার পর ধ্রুব মহারাজ তাঁর মাতৃদ্বয়কে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলেন। ধ্রুব মহারাজের ছোট মা সুরুচি যখন দেখলেন যে, সেই নিষ্পাপ বালকটি তাঁর চরণে প্রণত হয়েছে, তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁকে তুলে নিয়ে আলিঙ্গন করলেন এবং অশ্রু গদ্গদ স্বরে তাঁকে আশীর্বাদ করে বললেন, “হে প্রিয় পুত্র! তুমি চিরজীবী হও!”
জল যেমন স্বাভাবিকভাবেই নিম্নগামী হয়, তেমনই পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি মৈত্রী- ভাবাপন্ন হওয়ার ফলে, দিব্য গুণাবলীতে বিভূষিত ব্যক্তির প্রতি সমস্ত জীব শ্রদ্ধাশীল হয়। উত্তম এবং ধ্রুব মহারাজ দুই ভাইও প্রেমে বিহ্বল হয়ে পরস্পরকে আলিঙ্গন করেছিল।
উভয়ের অঙ্গস্পর্শে তাঁদের দেহ রোমাঞ্চিত হয়েছিল এবং উভয়েই মুহুর্মুহু আনন্দাশ্রু বিসর্জন করেছিলেন। ধ্রুব মহারাজের জননী সুনীতি তাঁর প্রাণের থেকেও অধিক প্রিয় পুত্রের সুকোমল অঙ্গ স্পর্শ করে, গভীর প্রসন্নতায় তাঁর সমস্ত বেদনা বিস্মৃত হয়েছিলেন।
হে বিদুর! বীর প্রসবিনী সুনীতির স্তনযুগল থেকে ক্ষরিত দুগ্ধের সঙ্গে তাঁর অশ্রুধারা মিশ্রিত হয়ে ধ্রুব মহারাজের সমগ্র অঙ্গ সিক্ত করেছিল। সেটি ছিল। একটি অত্যন্ত শুভ লক্ষণ।”
পুরবাসীরা রাজমহিষী সুনীতির প্রশংসা করে বললেন — “হে রাজ্ঞী! দীর্ঘকাল পূর্বে আপনার প্রিয় পুত্র হারিয়ে গিয়েছিল এবং আপনার মহা সৌভাগ্যের ফলে, এখন তাঁকে ফিরে পেয়েছেন। আপনার এই পুত্র দীর্ঘকাল আপনাকে রক্ষা করবে এবং আপনার সমস্ত শোক দূর করবে।
হে রানী! আপনি নিশ্চয়ই পরমেশ্বর ভগবানের পূজা করেছেন, যিনি তাঁর ভক্তদের মহা বিপদ থেকে রক্ষা করেন। যাঁরা নিরন্তর তাঁর ধ্যান করেন, তাঁরা জন্ম-মৃত্যুর পথ অতিক্রম করেন। এই প্রকার সিদ্ধি লাভ করা অত্যন্ত কঠিন।”
“হে বিদুর! এইভাবে সকলে যখন ধ্রুব মহারাজের প্রশংসা করছিলেন, তখন রাজা অত্যন্ত আনন্দিত নং হয়েছিলেন এবং ধ্রুব ও তাঁর ভ্রাতা উত্তমকে একটি হস্তিনীর পৃষ্ঠে আরোহণ করিয়ে তিনি তাঁর রাজধানীতে ফিরে গিয়েছিলেন, যেখানে সকলেই তাঁর প্রশংসা করছিল।
সমগ্র নগরী ফুল ও ফলের গুচ্ছসমন্বিত কদলী বৃক্ষের স্তম্ভ এবং নবীন গুবাক তরুর দ্বারা সাজানো হয়েছিল এবং প্রাসাদদ্বারে মকর-তোরণ রচিত হয়েছিল। প্রতিটি দ্বার আম্রপল্লব, বস্ত্র, মাল্য ও মুক্তাদামের দ্বারা সুসজ্জিত ছিল এবং বহির্দেশে সারি সারি জলপূর্ণ কলস এবং তার সামনে দীপাবলী শোভা পাচ্ছিল।
নগরীর সমস্ত প্রাসাদ নগরদ্বার এবং প্রাচীর স্বর্ণময় পরিচ্ছদে বিভূষিত হয়েছিল। প্রাসাদের শিখরগুলি উজ্জ্বলভাবে শোভা পাচ্ছিল এবং নগরীর চতুর্দিকে উড়ে বেড়াচ্ছিল যে সমস্ত বিমান, সেগুলির শিখরগুলিও অত্যন্ত সুন্দরভাবে শোভা পাচ্ছিল।
নগরের সমস্ত চত্বর, রাজপথ, গলি এবং রাস্তার মোড়ে বসবার উচ্চ স্থানগুলি খুব ভাল করে পরিষ্কার করা হয়েছিল এবং চন্দন জলে সিক্ত করা হয়েছিল; আর খই, যব, ধান, ফুল, ফল এবং অন্য অনেক প্রকার মাঙ্গলিক উপহার সামগ্রী নগরীর সর্বত্র ছড়ানো হয়েছিল।
এইভাবে যখন ধ্রুব মহারাজ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সমস্ত সতী পুরললনাগণ তাঁকে দর্শন করার জন্য সমবেত হয়েছিলেন এবং বাৎসল্য স্নেহে তাঁরা তাঁকে আশীর্বাদ করে তাঁর উপর শ্বেত সর্ষপ, যব, দই, জল, দুর্বা, ফল এবং ফুল বর্ষণ করেছিলেন। এইভাবে ধ্রুব মহারাজ তাঁদের মনোহর গীত শ্রবণ করতে করতে তাঁর পিতার প্রাসাদে প্রবেশ করেছিলেন।”
“তার পর ধ্রুব মহারাজ বহু মূল্যবান মণিরত্নে সজ্জিত তাঁর পিতার প্রাসাদে বাস করেছিলেন। তাঁর স্নেহশীল
পিতা অত্যন্ত আদরের সঙ্গে তাঁকে লালন-পালন করেছিলেন এবং তিনি সেই প্রাসাদে স্বর্গের দেবতাদের মতো সুখে বাস করতে লাগলেন।
সেই প্রাসাদে দুগ্ধফেননিভ অত্যন্ত শুভ্র হস্তিদন্ত নির্মিত, স্বর্ণময় পরিচ্ছদ-বিশিষ্ট শয্যা, মহামূল্য আসন এবং সোনার আসবাবপত্র বিদ্যমান ছিল। সেই রাজপ্রাসাদ মরকত আদি মণিরত্ন-খচিত স্ফটিকের প্রাচীরের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল এবং তাতে হাতে প্রদীপ্ত রত্নময় দীপসমন্বিত সুন্দর স্ত্রীমূর্তিখচিত ছিল।
রাজার প্রাসাদ উদ্যানসমূহের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল, যেখানে স্বর্গলোক থেকে নিয়ে আসা বহু বৃক্ষ ছিল। সেই বৃক্ষে বিহঙ্গ-মিথুন সুস্বরে কুজন করছিল এবং মধুপানোন্মত্ত মধুকরেরা গুনগুন স্বরে গান। করছিল। সেখানকার সরোবরগুলি পান্নার তৈরি সোপানাবলীর দ্বারা শোভিত ছিল, তাতে পদ্ম, উৎপল ও কুমুদরাজি প্রস্ফুটিত ছিল এবং হংস, কারণ্ডব, চক্রবাক, সারস ইত্যাদি পক্ষীকুল সেই জলে বিহার করছিল।
রাজর্ষি উত্তানপাদ তাঁর পুত্র ধ্রুবের মহিমা শ্রবণ করে এবং তাঁর প্রভাব দর্শন করে অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলেন, কারণ ধ্রুবের কার্যকলাপ ছিল আশ্চর্যতম। তারপর মহারাজ উত্তানপাদ বিচার করে দেখলেন যে, ধ্রুব মহারাজ রাজ্য পরিচালনার উপযুক্ত বয়স প্রাপ্ত হয়েছেন এবং মন্ত্রীরা সম্মত আছেন এবং প্রজারাও তাঁর প্রতি বিশেষ অনুরক্ত, তখন তিনি ধ্রুবকে সারা পৃথিবীর সম্রাটের পদে অভিষিক্ত করলেন।
তাঁর বৃদ্ধাবস্থা বিবেচনা করে এবং তাঁর আত্মার কল্যাণের কথা চিন্তা করে, মহারাজ উত্তানপাদ বিষয়ের প্রতি বিরক্ত হয়ে বনে গমন করলেন।”
আরও পড়ুনঃ
* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব
* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা
* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন
* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার
* আমাদের হৃদয়ে ভগবান কোথায় থাকেন?
* শুদ্ধ ভক্তি কি? কোন দেবতার পূজা করলে কি লাভ করা যায়