ধর্মের গোপন রহস্য
ধর্মের গোপন রহস্য উদঘাটনের নায়কেরা সায়ম্ভুব মনু
শ্রীদ্ভগবদ্গীতার বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি, এক সহস্র চতুর্যুগে ব্রহ্মার একদিন সম্পূর্ণ হয়। এই এক দিনকে বলা হয় এক কল্প। ব্রহ্মান্ডের ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে, কালচক্রের প্রভাবে, ব্রহ্মার একদিনে ক্রমান্বয়ে চতুর্দশ মনুর আবির্ভাব হয়।
একজন মনুর সমগ্র শাসন কালকে বলে এক মন্বন্তর। ব্রহ্মার বর্তমান দিনের প্রথম মনুর নাম স্বায়ম্ভুব মনু। স্বয়ম্ভু ব্রহ্মার অঙ্গজাত বলে ব্রহ্মার এই দিনের প্রথম মনুকে স্বায়ম্ভুব মনু বলা হয়।
বর্তমান সময়, ব্রহ্মার একদিনের বর্ণনা, শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথমার্ধ স্বায়ম্ভুব মনু ও তাঁর বংশধরদের গৌরবান্বিত ইতিহাসের বর্ণনাতেই অতিবাহিত হয়েছে।
মনু হচ্ছেন মানব জাতির পিতা। মনু থেকেই ইংরেজি শব্দ ‘ম্যান’ বা সংস্কৃত শব্দ ‘মনুষ্য’ এসেছে। মানব সমাজকে পরিচালিত করার জন্য তিনি ‘মনু সংহিতা’ নামক গ্রন্থ প্রদান করেছেন। শাস্ত্রের বর্ণনা থেকে আমরা ব্রহ্মান্ডের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে পারি।
ব্রহ্মান্ডের এই ব্যবস্থাপনার কাজে মনু, তাঁর পুত্রগণ, ঋষিগণ ভগবানের আদেশ অনুসারে কার্য করেন। ঋষিগণ ভগবানের আদেশ অনুসারে বৈদিক জ্ঞান ও সনাতন ধর্মের পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
মনুর কর্তব্য ধর্ম সংস্থাপন করা। মনু এবং তাঁদের বংশধরদের দ্বারা সমগ্র ব্রহ্মান্ড পালিত হয়। ইন্দ্রগণ স্বর্গের বিভিন্ন শাসক। দেবতাদের সহায়তায় তাঁরা ত্রিভুবন শাসন করেন।
প্রতি মন্বন্তরে, নতুন জীবাত্মারা মনু, মনুপুত্র, ইন্দ্রাদি দেবতা এবং সপ্তর্ষিদের পদ গ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে কোন ২৪ ঘন্টা চলমান কারখানার কাজ সাধারণত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত থাকে। একটি পর্যায় শেষ হলে সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার, পর্যবেক্ষক দল ও শ্রমিকগণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হন।
সেই রকমই প্রতি মনন্তরে ব্রহ্মান্ডের ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত জীবত্মারা নতুন যোগ্য জীবাত্মাদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হন। বৈদিক শাস্ত্রে পূর্বতন মনুদের ইতিহাস বর্ণিত রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ মনুদের বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণীও লিপিবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু এই চৌদ্দজন মনুর প্রথম জন স্বায়ম্ভুব মনু ভগবানের শুদ্ধ ভক্তরূপে, মহাজন রূপে বিখ্যাত।
স্বায়ম্ভুব মনুর জন্ম
পূর্ববর্তী প্রবন্ধগুলিতে আমরা আলোচনা করেছিলাম ব্রহ্মার প্রথম মানসপুত্রগণ ছিলেন চতুস্কুমার। তাঁরা সৃষ্টিকার্যে অংশ গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে, ব্রহ্মার ক্রোধ থেকে রুদ্রের সৃষ্টি হয়েছিল।
তারপর ব্রহ্মা থেকে প্রজাপতি সমূহ ও নারদ মুনির আবির্ভাব হয়েছিল। অতঃপর সমগ্র বৈদিক জ্ঞান ব্রহ্মা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
মহা বীর্যবান ঋষিদের উপস্থিতি সত্ত্বেও, জনসংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হওয়ায় ব্রহ্মা গভীর চিন্তামগ্ন হয়েছিলেন। এমন সময় তাঁর দেহ থেকে আরও দুইটি মূর্তি প্রকাশিত হয়েছিল একটি মূর্তি ছিল শ্মশ্রু সমন্বিত এবং অপর মূর্তির বক্ষস্থল ছিল স্ফীত।
ব্রহ্মার দেহ বলে প্রসিদ্ধ, এই দুটি সদ্য বিভক্ত দেহ যৌন সম্পর্কের দ্বারা যুক্ত হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে যিনি পুরুষ তিনি স্বায়ম্ভুব মনু নামে পরিচিত হন এবং যিনি স্ত্রী তিনি মহাত্মা মনুর মহিষী শতরূপা নামে পরিচিতা হন।
সেই সময় থেকে মৈথুন ধর্মের দ্বারা প্রজাসমূহ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে লাগল। যথাসময়ে স্বায়ম্ভুব মনু শতরূপা থেকে পাঁচটি সন্তান প্রাপ্ত হয়েছিলেন।- দুই পুত্র প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ এবং তিনটি কন্যা আকুতি, দেবহুতি ও প্রসূতি।
মনুর প্রশংসা করে, তাঁর জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়ে, বিদুর মৈত্রেয় ঋষির কাছে প্রশ্ন করেছিলেন- “হে সাধুশ্রেষ্ঠ! আদি রাজরাজেশ্বর মনু ছিলেন ভগবান শ্রীহরির মহান ভক্ত এবং তাঁর উদাত্ত চরিত্র ও কার্যকলাপ শ্রবণযোগ্য, দয়া করে আপনি তা বর্ণনা করুন। আমি তা শুনতে অত্যন্ত উৎসুক।”
স্বায়ম্ভুব মনুর সেবান্মুখতা
নিযুক্ত করা হয়, ইন্দ্রিয়গুলি চিন্ময়ত্ত্ব লাভ করে। ভগবানের শুদ্ধভক্ত প্রত্যেক মুহূ তে ভগবানের সেবায় নিয়োজিত হতে উদ্গ্রীব হয়ে থাকেন। স্বায়ম্ভুব মনুর মধ্যে এই গুণটি অত্যন্ত লক্ষণীয় ।
মানব জাতির পিতা মনু তাঁর পত্নীসহ আবির্ভূত হয়ে সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের উৎস ব্রহ্মার প্রতি প্রণাম নিবেদন করার পর বলেছিলেন “আপনি সমস্ত জীবের পিতা এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের উৎস, কেননা তারা সকলে আপনার থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
দয়া করে আপনি আমাদের আদেশ করুন, কিভাবে আমরা আপনার সেবা করতে পারি। হে পূজনীয়, আপনি আমাদের কর্মদক্ষতা অনুসারে কর্তব্য সম্পাদন করার নির্দেশ দান করুন, যাতে আমরা তা অনুসরণ করে ইহলোকে যশোলাভ করতে পারি এবং পরলোকে সদ্গতি প্রাপ্ত হতে পারি।”
এ প্রসঙ্গে আমরা দেখতে পাই, মনু সততার সঙ্গে ব্রহ্মাকে তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। যদিও তিনি সেবা করতে আগ্রহী একই সঙ্গে তিনি তার কর্মদক্ষতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও সচেতন। এটি ভক্তিতে পরিণতির লক্ষণ।
ব্রহ্মা মনুর প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে বলেছিলেন, “হে বীর! পিতার সঙ্গে পুত্রের সম্পর্কের আদর্শ দৃষ্টান্ত তুমি প্রদান করেছ। গুরুজনদের প্রতি এই প্রকার শ্রদ্ধা বাঞ্ছনীয়। যিনি ঈর্ষার সীমার অতীত এবং সংযতচিত্ত, তিনি মহানন্দে পিতার আদেশ স্বীকার করেন এবং তাঁর পূর্ণ ক্ষমতা অনুসারে তা পালন করেন।'
তারপর ব্রহ্মা মনুকে তাঁর পত্নীর গর্ভে তাঁরই মতো গুণাবলী সম্পন্ন সন্তান উৎপাদন করতে উৎসাহিত করেছিলেন। আরও বলেছিলেন ভগবদ্ ভক্তির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করতে এবং যজ্ঞ অনুষ্ঠানের দ্বারা ভগবানের আরাধনা করতে।
ব্ৰহ্মা মনুকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, জড় জগতে জীবেদের যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করাই হবে তাঁর ব্রহ্মার প্রতি সেবা, আর ভগবান কৃষ্ণ ও বদ্ধজীবদের সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হতে দেখলে মনুর প্রতি অত্যন্ত প্রসন্ন হবেন। এইভাবে আমরা দেখতে পাই মহাজনেরা জড়জাগতিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও কখনও প্রকৃত উদ্দেশ্য
স্বায়ম্ভুব মনুর দৈনন্দিন জীবন
সর্ব সম্পদ সমন্বিত বহিষ্মতী নগরী ছিল স্বায়ম্ভুব মনুর রাজধানী। ভগবান শ্রীবিষ্ণু যখন বরাহরূপ ধারণ করেছিলেন তখন তাঁর রোম এই স্থানে পতিত হয়েছিল। স্বায়ম্ভুব মনু তাঁর পত্নী ও প্রজাগণসহ জীবন উপভোগ করেছিলেন।
তিনি ধর্মবিরুদ্ধ কার্যকলাপ সম্পূর্ণ রূপে বর্জন করে, তাঁর বাসনা পূর্ণ করেছিলেন। সস্ত্রীক সুরগায়করা তাঁর সৎকীর্তি সমূহের গান করতেন এবং প্রতিদিন প্রত্যূষে তিনি প্রেমাসক্ত চিত্তে ভগবানের মহিমা কীর্তন শ্রবণ করতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত রাজর্ষি।
তার ফলে, যদিও তাঁর এক মন্বন্তর ব্যাপী দীর্ঘ আয়ু সমাপ্ত হয়ে এসেছিল, তবুও ক্ষণিকের জন্যও তার ব্যর্থ অপচয় তিনি সর্বদা ভগবানের লীলা শ্রবণ, মনন, লেখন ও কীর্তনে মগ্ন ছিলেন । কিভাবে অতুল ঐশ্বর্যের মধ্য বসবাস করেও, তার দ্বারা বিন্দুমাত্র প্রভাবিত না হয়ে, বাসুদেবের চেতনায় নিমগ্ন হয়ে জীবন অতিবাহিত করা যায়, তা স্বায়ম্ভুব মনুর কাছ থেকে শিক্ষণীয়।
স্বায়ম্ভুব মনুর কোমল হৃদয়
সাধারণত ভক্তিহীন তপস্বী, জ্ঞানী ও যোগীদের হৃদয় কঠিন হয়ে থাকে। কিন্তু যদিও ভগবানের শুদ্ধ ভক্তেরা জড় জাগতিক দুঃখ ও সুখের অতীত, তাদের হৃদয় ভগবানের প্রতি প্রেমে আর্দ্র হওয়ায় কোমল হয়।
স্বায়ম্ভুব মনু তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা দেবহূতিকে, ভগবানের আর এক শুদ্ধ ভক্ত বহু গুণান্বিত কর্দম মুনির পত্নী রূপে সম্প্রদান করেছিলেন। এই ঘটনা সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতের বর্ণনা থেকে আমাদের কাছে স্বায়ম্ভুব মনুর কোমল হৃদয়ের রূপটি গোচরীভূত হয়।
মনু ও শতরূপা প্রীতি ভরে বহুমূল্য অলঙ্কার, বসন এবং গৃহের বিবিধ উপকরণ যৌতুক স্বরূপ নবদম্পতিকে প্ৰদান করেছিলেন। এইভাবে স্বায়ম্ভুব মনু তাঁর দায়িত্ব থেকে মুক্ত হলেও, তাঁর মন বিচ্ছেদ বেদনায় ব্যথিত হয়েছিল। তিনি তাঁর দুই বাহু দিয়ে তাঁর কন্যাকে আলিঙ্গন করেছিলেন।
তারপর, কন্যার বিরহ সহ্য করতে না পেরে 'হে মাত! হে বৎস’ এইভাবে সম্বোধন করতে করতে, অশ্রুজলে তাঁর কন্যার মস্তক সিক্ত করেছিলেন।
এইভাবে আমরা দেখতে পাই, ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত একই সঙ্গে আদর্শ গৃহস্থ, আদর্শ পিতা, আদর্শ সম্রাট রূপে আচরণ করতে পারেন, কিন্তু কখনই জড় সকাম কর্ম, পরিবার বা সাম্রাজ্যের প্রতি আসক্ত হন না। শুদ্ধ ভক্তের আকর্ষণ সর্বাকর্ষক শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ।
দক্ষ প্রশাসক
প্রতিটি মন্বন্তরে মনু ও তাঁর পুত্রগণের দ্বারা সমস্ত ব্ৰহ্মাণ্ড পালিত হয়। স্বায়ম্ভুব মনুর পৌত্র ধ্রুব মহারাজ মনুর পুত্র উত্তানপাদের পর ছত্রিশ হাজার বছর পৃথিবী শাসন করেছিলেন। ধ্রুব মহারাজ মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নারদমুনির অনুপ্রেরণায় ভক্তি তপস্যার দ্বারা ভগবানের সাক্ষাৎ দর্শন লাভ করেছিলেন।
সে কথা আমরা সবাই জানি। ধ্রুব মহারাজের কনিষ্ঠ ভ্রাতা উত্তম। তিনি এক মৃগয়ায় গিয়ে, হিমালয় পর্বতে বলবান যক্ষের দ্বারা নিহত হয়েছিলেন। সেই সংবাদ পেয়ে ধ্রুব মহারাজ শোকে এবং ক্রোধে আবির্ভূত হয়ে, তাঁর রথে চড়ে যক্ষপুরী বিজয় করতে যাত্রা করেছিলেন।
যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করার পরও ধ্রুব মহারাজ ক্ষান্ত না হয়ে প্রবলভাবে আক্রমণ জারি রেখেছিলেন। ফলতঃ অনেক নিরপরাধ যক্ষ প্রাণ হারাচ্ছিলেন। যখন স্বায়ম্ভুব মনু দেখলেন যে, তাঁর পৌত্র ধ্রুব এমন অনেক যক্ষদের বধ করছে যারা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী নয়,
তখন তিনি অত্যন্ত কৃপাপরবশ হয়ে মহর্ষিগণসহ ধ্রুব মহারাজের কাছে এসে তাঁকে সৎ উপদেশ দিয়েছিলেন-'হে বৎস! এই যুদ্ধ বন্ধ কর। অনর্থক ক্রুদ্ধ হওয়া সমীচীন নয়, তা হচ্ছে নারকীয় জীবনের পথ, প্রকৃতপক্ষে যারা অপরাধী নয়, সেই সমস্ত যক্ষদের হত্যা করে এখন তুমি তোমার সীমা অতিক্রম করছ।”
তারপর ক্রমান্বয়ে কয়েকটি শ্লোকের মাধ্যমে স্বায়ম্ভুব মনু ধ্রুবকে আত্মতত্ত্ব, জড় জগতের অনিত্যতা এবং কালরূপে ভগবানই যে সর্ব সংহার-কর্তা তা বুঝিয়ে বলেছিলেন।
তিনি আরও বলেছিলেন, প্রত্যেক জীব তার নিজ কর্মের অধীন, সুতরাং যক্ষদের হত্যাকারী বলে মনে করে অতিরোষ প্রদর্শন করার কোন অর্থ নেই। সব শেষে মনু ধ্রুব মহারাজকে তাঁর চেতনা ভগবানে নিবদ্ধ করতে বলেছিলেন কারণ ভগবানের প্রতি
উপসংহার
স্বায়ম্ভুব মনুর দুই কন্যা আকুতি এবং দেবহূতির গর্ভে ভগবান যথাক্রমে যজ্ঞমূর্তি এবং কপিল নামে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁরা ধর্ম ও জ্ঞান উপদেশ দিয়েছিলেন। স্বায়ম্ভুব মনু স্বভাবতই ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের প্রতি অনাসক্ত ছিলেন ।
তাই তিনি রাজ্যভোগ ত্যাগ করে, তপস্যা করবার জন্য পত্নীসহ বনে প্রবেশ করেছিলেন। তারপর সুনন্দা নদীর তীরে এক পায়ে ভূমি স্পর্শ করে একশ বছর ঘোর তপস্যা করেছিলেন,
তপস্যা করবার সময় তিনি মনে মনে ভগবান সম্বন্ধে স্বগতোক্তি করছিলেন। তাঁর এই মনে মনে বলা শ্লোকগুলি শ্রীমদ্ভাগবতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তার মধ্যে শেষ শ্লোকটি হলো-
তমীহমানং নিরহঙ্কৃতং বুধং নিরাশিষং পূর্ণমনন্যচোদিতম্ । নৃঞ শিক্ষয়ন্তং নিজবাসংস্থিতং প্রভুং প্রপদ্যেহখিলধর্মভাবনম্ ॥
(শ্রীমদ্ভাগবত ৮/১/১৬) অর্থাৎ, ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঠিক একজন সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করলেও, কখনও তিনি তাঁর কর্মের ফল ভোগ করার বাসনা করেন না।
তিনি পূর্ণ জ্ঞানময়, সমস্ত জড় বাসনা থেকে মুক্ত, - অচ্যুত এবং সম্পূর্ণ রূপে স্বতন্ত্র। মানব সমাজের পরম শিক্ষক রূপে তিনি তাঁর নিজের মার্গ শিক্ষা দেন এবং সেই ভাবে তিনি প্রকৃত পন্থা প্রবর্তন 5 করেন। আমি সকলকে তাঁর প্রদর্শিত এই পন্থা অনুসরণ করতে অনুরোধ করি।'
এইভাবে মনুকে সমাধিস্থ হতে দেখে রাক্ষস এবং অসুরেরা ক্ষুধার্ত হয়ে তাঁকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল। সেই সময় অন্তর্যামী বিষ্ণু যক্ষ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
তারপর তিনি যাম নামক তাঁর পুত্র ও অন্যান্য দেবতাদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে সেই সমস্ত রাক্ষস এবং অসুরদের সংহার করেছিলেন ।
স্বায়ম্ভুব মনু নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসী নন। তিনি গৃহস্থ উপরন্তু সমগ্র বিশ্বের সম্রাট। তা সত্ত্বেও তিনি কৃষ্ণভক্তির ফলে অন্যতম মহাজন রূপে শ্রীম দ্ভাগবতে কীর্তিত।
সুতরাং কৃষ্ণভক্তি কোন জড় অবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়, এটি জড় হেতু বিহীন, অপ্রতিরোধ্য, প্রত্যেক জীবাত্মার শাশ্বত বৃত্তি যা স্রোতস্বিনী গঙ্গার মতোই মুকুন্দের দিকে ধাবিত হয় ।
আরও পড়ুনঃ
* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব
* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা
* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন
* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার
* আমাদের হৃদয়ে ভগবান কোথায় থাকেন?
* শুদ্ধ ভক্তি কি? কোন দেবতার পূজা করলে কি লাভ করা যায়