হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র নামের মাহাত্ম্য ও প্রকৃত অর্থ কি?
ব্রহ্মা কর্তৃক হরে কৃষ্ণ নাম মাহাত্ম্য বর্ণন
পদ্মপুরাণে উত্তরখন্ডের ৭১ তম অধ্যায়ে পরমেশ্বর ভগবানের দিব্য নামের মহিমা খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। একসময় নারদ মুনি পিতা ব্রহ্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার লক্ষ্যৈ সিদ্ধ-চারণ-সেবিত মেরু পর্বতের শিখরে গমন করেন। সেখানে গিয়ে নারদ মুনি ব্রহ্মাকে নকস্কারপূর্বক বললেন- হে প্রভু, পরমেশ্বর ভগবানের নামের যেরূপ শক্তি আছে, আপনি তা কৃপাপূর্বক বলুন। তাঁর নাম মহিমা কী প্রকার? যিনি সেই অব্যয় পুরুষ, তিনিই সাক্ষাৎ বিশ্বেশ্বর নারায়ণ, হরি, পরমাত্মা ও সর্বজীবের অন্তর্যামী হৃষিকেশ। এই অসার কলিযুগে মূঢ় নরগণ মায়ামোহিত হয়েই ভগবান অধোক্ষজকে জানতে পারে না।
অস্মিন্ কলৌ বিশেষণ নামোচ্চারণপূর্ব্বকম্।
ভক্তিঃ কার্য্যা যথা বৎস তথা ত্বং শ্রোতুমর্হসি।।৯।।
দৃষ্টং পরেষাং পাপানামনুক্তানাং বিশোধনম্।
বিষ্ণোর্জিষ্ণোঃ প্রযত্নেন স্মরণং পাপনাশনম্।।১০।।
মিথ্যা জ্ঞাত্বা ততঃ সর্ব্বং হরের্নাম পঠন্ জপন্।
সর্ব্বপাপবিনির্ম্মুক্তো যাতি বিষ্ণোঃ পরং পদম্।।১১।।
যে বদন্তি নরা নিত্যং হরিরিত্যক্ষরদ্বয়ম্।
তস্যোচ্চারণমাত্রেণ বিমুক্তাস্তে ন সংশয়ঃ।।১২।।
প্রায়শ্চিত্তানি সর্ব্বাণি কৃষ্ণানুস্মরণং পরম।
ব্রহ্মা বললেন, হে বৎস, এই কলিযুগে নামোচ্চারণপূর্বক ভগবানে যাতে বিশেষভাবে ভক্তি স্থাপন করতে হয়, তুমি তা শ্রবণ করো। দেখা যায়, যত্নপূর্বক জয়শীল বিষ্ণুর স্মরণ মাত্রই অন্য অনুক্ত পাপসকলও ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। যে ব্যক্তি মিথ্যা বুঝিয়াও হরির নাম পাঠ ও জপ করে, সেও সর্বপাপ হতে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুর পরম পদে উপনীত হয়ে থাকে। যেসকল নর “হরি-এই অক্ষরদ্বয় নিত্য উচ্চারণ করে, সেই উচ্চারণ মাত্রই সে মুক্ত হয়, সন্দেহ নেই। কৃষ্ণানুস্মরণই পরম প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ। মানব প্রাতে, মধ্যাহ্নে ও সায়াহ্নে নারায়ণ স্মরণ করে তৎক্ষাৎ পাপমুক্ত হয়ে থাকে।
বিষ্ণুর স্মরণমাত্রই সমস্ত ক্লেশ দুরীভূত হয়। বিষ্ণুর নাম কীর্তনে স্বর্গপ্রাপ্তি এবং মুক্তিপ্রাপ্তিও হয়ে থাকে। জপ, হোম ও অর্চনাদি ব্যাপারে বাসুদেবেই যার মন নিবিষ্ট, তার অনুষ্ঠিত জপাদি চতুর্দশ ইন্দ্রের অধিকারকাল পর্যন্ত অক্ষয় বলে জানবে। কোথায় পুনরাবৃত্তি লক্ষণ স্বর্গগমন আর কোথায়ই বা মুক্তিমূলক বাসুদেবনাম-জপ! যেখানে ‘নমো নারায়ণায়’ বলে আবর্তবিস্তারপূর্বক প্রাচী সরস্বতী প্রতিভাত হচ্ছেন, সেই মুখই পরম তীর্থ।
অতএব, দিবারাত্র বিষ্ণুস্মরণেই নর ক্ষীণকলিকল্মষ হয়ে নরকে প্রয়াণ করে না। হে সুব্রত, এটি আমি ত্রিসত্য করেই বলছি।
নামোচ্চারণমাত্রেণ মহাপাপাৎ প্রমুচ্যতে।
রাম রামেতি রামেতি রামেতি চ পুনর্জপন।।২০।।
নর নামোচ্চারণ মাত্রই মহাপাপ হতে মুক্ত হয়। বারবার রাম রাম জপ করলে চন্ডাল ব্যক্তিও শুদ্ধচিত্ত হয়ে থাকে। নামোচ্চারণ মাত্রই মানবের কুরুক্ষেত্র, গয়া, কাশী ও দ্বারকা প্রভৃতি সবতীর্থের সেবা করা হয়।
কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি কৃষ্ণেতি ইতি বা যো জপন্ পঠন
ইহ লোকং পরিত্যজ্য মোদতে বিষ্ণুসন্নিধৌ।
যিনি কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ এই নাম জপ ও কীর্তন করেন তিনি অন্তে ইহলোক পরিহারপূর্বক কৃষ্ণসন্নিধানে বিহার করে থাকেন। হে বিপ্র, যে জন সর্বদা সহর্ষে ‘নৃসিংহ’ এই নাম জপ ও পাঠ করেম সেই মহাভাগবত পুরুষ মহাপাপ হতেও মুক্ত হয়ে থাকেন।
ধ্যায়ন্ কৃতে যজন্ যজ্ঞৈস্ত্রেতায়াং দ্বাপরেহর্চ্চয়ন
যদাপ্নোতি তদাপ্নোতি কলৌ সঙ্কীর্ত্ত্য কেশবম্
এতজজ্ঞাত্বা নিমগ্নাশ্চ জগদাত্মনি কেশবে।।২৫।।
সত্য যুগে ধ্যান, ত্রেতায় যজ্ঞানুষ্ঠান ও দ্বাপরে অর্চনা করে নর যে ফল প্রাপ্ত হয়, কলিকালে কেবল কেশবনামোচ্চারণেই সেই ফল হয়ে থাকে। এটি বুঝতে পেরে জনগণ বিশ্বাত্মা কেশবে চিত্ত নিবেশ করবে; এতেই তারা সর্ব পাপ হতে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুর পরম পদে উপনীত হবে। মৎস, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রামচন্দ্র, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি পৃথিবীতে ভগবানের এই দশাবতার কীর্তিত, তাঁদের নামোচ্চারণমাত্র ব্রহ্মহত্যাকারীও শুদ্ধিলাভ করে। প্রভাতে যে কোনোরূপে বিষ্ণুর নাম পাঠ, জপ ও ধ্যান করলে নর মুক্তি প্রাপ্ত হয়, এতে সন্দেহ মাত্র নাই। উইকিপিডিয়াতে এই সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কলিসন্তরণ উপনিষদে ব্রহ্মা নারদকে বলেন, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য নামসমন্বিত যে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র-
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
এই মহামন্ত্র নিত্য জপকীর্তন করাই এই কলিযুগের যুগধর্ম। হরি শব্দের অর্থ ‘যিনি হরণ করেণ’ অর্থাৎ ভগবান আমাদের সকল জড়-জাগতিক কামনা বাসনা হরণ করে শুদ্ধ ভক্তি দান করেন।
মহাদেব বললেন, হে নারদ, পঞ্চরাত্র নামে এক অনুপম জ্ঞান পূর্বে গোলেকে বিরজার তটে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে প্রদান করেছিলেন, তারপর নিরাময় ব্রহ্মলোকে ব্রহ্মা আমাকে সেই জ্ঞান প্রদান করেন, সেই সর্ব-অভীষ্ট সর্বজ্ঞানপ্রদ পবিত্র জ্ঞান আমি তোমাকে দান করছি, পরে তুমি ব্যাসদেবকে প্রদান করবে। আর সেই ব্যাসদেব তার পুত্র শুকদেবকে দান করবে।
হে নারদ, এই জ্ঞান সবার আদি, সর্ববেদের সার, অতি মনোহর। জগৎ সংসারে যত মত আছে, যত মন্ত্র আছে, যত কর্ম আছে, যত কর্মচক্র আছে, সেই সমস্ত কিছুর সারাৎসার, সর্বকর্মচক্রের মুক্তির পন্থা হচ্ছে একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মসেবা। নিখিল মহাবিশ্বে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই নিত্য বিদ্যমান। আর অন্য সমস্ত কিছুই তাঁর প্রয়োজন সিদ্ধির জন্যই উৎপন্ন হয়েছে। বিশ্বের সবাই তাঁরই মায়ায় মোহিত। এক কৃষ্ণ তাঁর অনন্ত রূপ, তাঁর অনন্ত গুণ, তাঁর অনন্ত কীর্তি এবং তাঁর অনন্ত জ্ঞান।
হে নারদ, তাঁর সৃষ্ট জড় বিচিত্র বিশ্বও অনন্ত। এই বিশ্বের সব জায়গা ক্ষুদ্র, বৃহৎ, মধ্যম শ্রেণীর নানা জাতীয় জীবে পরিপূর্ণ। সেই জীবগুলি কর্মশীল। কর্মের ফলস্বরূপ তারা সুখ-দুঃখ ভোগ করছে। সবান্তরাত্মা ভগবান প্রত্যেক জীবের সাক্ষীরূপে বিদ্যমান। জীবের বুদ্ধি আছে। সেই বুদ্ধিশক্তি নিদ্রা, তন্দ্রা, দয়া, শ্রদ্ধা, তুষ্টি, পুষ্টি, ক্ষমা,ক্ষুধা, লজ্জা, তৃষ্ণা, ইচ্ছা, চিন্তা, জরা, প্রভৃতি নাম ধারণ করে।
অনুচরেরা যেমন রাজার অনুগামী হয়, সেরকম এই সব শক্তি জীবের অনুগামী হয়ে থাকে। চিন্তা ও জরা সর্বদা জীবের শোভা ও পুষ্টির ব্যাঘাত করে। ব্রহ্মান্ডমধ্যে জীব যে স্থুল দেহ ধারণ করে কর্ম করছে সেই দেহটি পাঞ্চভৌতিক অর্থাৎ মাটি, জল, আগুন, বাতস ও আকাশ দিয়ে তৈরি। এই দেহ ধ্বংস হলে দেহটি পঞ্চভূতের মধ্যে মিশে যায়। প্রায় জীবই এই জগৎ সংসারে ভ্রান্তিবশে মায়ামোহিত হয়ে রোদন করতে থাকে। কিন্তু যারা সাধু ব্যক্তি, তাঁরা নিত্য সত্য অভয়প্রদ এবং জন্মমৃত্যুজরা-অপহারী শ্রীকৃষ্ণের চরণকমল সেবা করেন।
হে নারদ, এই বিশ্ব স্বপ্নের মতো অনিত্য। অতএব এতে বিমোহিত না হয়ে আনন্দের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম ভজনা করো। এই হচ্ছে প্রথম জ্ঞান।
এবার দ্বিতীয় জ্ঞানের কথা শ্রবণ করো। জ্ঞানী ব্যাক্তিরা মুক্তি বাসনা করেন। সাধূ পন্ডিত ব্যক্তিদের পরামামুক্তি সততেই বাঞ্চিত। কিন্তু সমস্ত মুক্তি শ্রীকৃষ্ণভক্তির কাছে অত্যন্ত তুচ্ছ বিষয়। মুক্তি কৃষ্ণভক্তির ষোলভাগের একভাগও আকর্ষণীয় নয়। কৃষ্ণভক্ত-সংসর্গের ফলে কারও হৃদয়ে ঐকান্তিক কৃষ্ণভক্তি জাগ্রত হয়।
মাঠের মাঝে বৃক্ষের বীজ যেমন অঙ্কুরিত হয় জল পেলে, তেমনই হৃদয় মধ্যে ভক্তিবৃক্ষের অঙ্কুর প্রকাশিত হয় ভক্তসঙ্গ পেলে। ভক্তসঙ্গে কৃষ্ণকথা আলাপে ভক্তি জাগ্রত হয়। আবার রৌদ্র মধ্যে অঙ্কুর যেমন শুকিয়ে যায়, তেমনই অভক্তজনের সঙ্গে সর্বদা সংলাপে ভক্তি শুষ্কতা প্রাপ্ত হয়। এই জন্যে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সর্বদা ভক্তজনের সঙ্গে আলাপ করেন।
হে নারদ, সোনা যেমন নিকৃষ্ট ধাতুর সংযোগে মলিনতা প্রাপ্ত হয়, তেমনই সৎ ব্যক্তিও সংসারের দুর্বুদ্ধি লোকের সংস্পর্শে মন্দ হয়ে যায়। এজন্য সর্বদা নিরন্তর ভক্তিপূর্বক শ্রীকৃষ্ণভজনে যুক্ত থাকাই কর্তব্য।
ভক্তিপূর্বক কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণবের কাছ থেকে তার কৃষ্ণমন্ত্র গ্রহণ করা উচিত। কখনও অভক্ত অবৈষ্ণবের কাছ থেকে নয়। সংসারে যারা কৃষ্ণনিন্দুক, কৃষ্ণবিমুখ, কৃষ্ণভক্ত নিন্দুক, তারা অশুচি ও পাপিষ্ঠ। কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত ব্যক্তি শত পুরুষ সহ নেজেকে উদ্ধার করে।
হে নারদ, পূর্বে কৃষ্ণের আলয় গোলোকে বিরজাতীরে ক্ষীরের মতো অমল জলে আমি শ্রীকৃষ্ণ মন্ত্র জপ করেছি। নিত্য আমি কৃষ্ণমত্র জপ করি। পার্বতী, কার্তিক গনেশ সবসময়ই কৃষ্ণনাম কীর্তন করে থাকে।
হে নারদ, লোকে দুর্দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলে ও স্মরণ করে। মেঘে আচ্ছন্ন অন্ধকার দিনকে আমি দুর্দিন বলি না। যেই দিন কৃষ্ণকথা হয় না, আমি সেই দিনকে দুর্দিন বলে থাকি। লোকে কোনও কর্মে অসফল হলে দুঃখিত হয়, হাহুতাশ করে। কিন্তু হে নারদ, যেই দিন ক্ষণকালও অমৃত্যতুল্য কৃষ্ণকথা হয় না, শ্রীকৃষ্ণের কীর্তনবিহীন সেই দিনটিকে নিষ্ফল বলে মানি এবং কাল সেদিনের অনর্থক আয়ু হরণ করে। কৃষ্ণকথাই আনন্দময়, কৃষ্ণকথাই মঙ্গলময়।
হে নারদ, সাপেরা গরুড়কে দেখলে যেমন পালিয়ে যায়, পাপরাশিও তেমনই কৃষ্ণতীর্তনকারীর কাছ থেকে পালিয়ে যায়। পূর্বে ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে কৃষ্ণমন্ত্র লাভ করেন, তাতে সৃষ্টির কারণভূত নির্মল জ্ঞান প্রাপ্ত হন। বিধাতা নাম প্রাপ্ত হন। কৃষ্ণমন্ত্র কোটিবার জপ করতে করতে অনন্দদেবের সহস্র মস্তক হয়।
হে নারদ, পূর্বে একসময় কৃষ্ণপ্রিয়া রাধিকার গর্ভে এক স্বর্ণময় ডিম্ব উৎপন্ন হয়, গোলোকধাম থেকে আগত সেই ডিম্ব দ্বিখন্ডিত হয়ে ভেঙ্গে যায় এবং মহার্ণবে পতিত হয়। সেই ডিম্ব থেকে মহাবিষ্ণু আবির্ভূত হয়ে মহাজলে শয়ন করলেন। মহাবিষ্ণুর লোমকূপ থেকে আলাদা আলাদা ভাবে পৃথক জলরাশি উদ্ভব হয়ে সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হল। সেগুলি সপ্ত আবরণীযুক্ত এক-একটি ব্রহ্মান্ড।
ব্রহ্মান্ডের মধ্যে মধ্যস্থানে ভূলোক। ভূলোকের ঊর্ধ্বদিকে যথাক্রমে ভুবর্লোক, স্বর্গলোক, জনলোক, মহর্লোক, তপোলোক ও সত্যলোক। আর ভুলোকের নিম্নদিকে যথাক্রমে অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল ও পাতাললোক রয়েছে। সত্যলোকের বামদিকে ধ্রুবলোক, পাতাললোকের ডানদিকে নরক লোক রয়েছে।
হে নারদ, মধ্যস্থানের ভূলোকে ভারতবর্ষ বিখ্যাত। ভারতবর্ষের মধ্যে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়। ভারতবর্ষ যেরূপ মাহাত্ম্যপূর্ণ, অন্য স্থান ততটা নয়। বহু পুণ্যফলে কারও ভারতবর্ষে মনুষ্য জন্ম লাভের সৌভাগ্য হয়। মানুষদের মধ্যে তাঁরাই মহান বা বিদ্ধান, যাঁরা শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্ম ভজনা করেন। মানবজীবন পেয়েও জীব যদি শ্রীকৃষ্ণভজনা না করে তবে তার চেয়ে আর বিড়ম্বনা কি? শ্রীকৃষ্ণভজনহীন তার জন্ম অনর্থক, তার গর্ভযাতনা বৃথা, তার অনিত্য শরীর নিষ্ফল, তার জীবন ব্যর্থ। সে জীবম্মৃত।
হে নারদ, এই ভারতে যে ব্যক্তি প্রত্যহ শ্রীহরির পাদোদক ও নৈবদ্য ভক্ষণ করেন, কৃষ্ণমন্ত্র গ্রহণ করেন, তিনি জীবম্মুক্ত হন। তাঁর পদধুলিতে পৃথিবী পবিত্রা হন।
শ্রীশিবজি শ্রীনারদমুনির কাছে হরিনাম মাহাত্ম্য বর্ণন
একসময়, স্বর্গের মন্দাকিনীর তীরে শ্রীনারদমুনি মহাদেবের কাছে শ্রীকৃষ্ণমন্ত্র লাভ করলেন। তারপর নারদ ও মহাদেব শিব এব স্থানে এসে পৌছলেন যেখানে পার্বতীদেবী, কার্ত্তিক ও গণেশ বসেছিলেন। সেখানে মহাকাল, নন্দী, বীরভদ্র, সিদ্ধ মহর্ষিগণ ও সনকাদি মুনিগণ এসে বসলেন। বাক্যালাপে প্রসঙ্গ ক্রমে নারদমুনি মহাদেবকে বললেন, হে ভগবান, যে জ্ঞান কর্মফলচক্তে আবদ্ধ করায় না, যে জ্ঞান সর্ববেদের সার, সেই বিষয়ে আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে বলুন।মহাদেব বললেন, হে নারদ, পঞ্চরাত্র নামে এক অনুপম জ্ঞান পূর্বে গোলেকে বিরজার তটে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে প্রদান করেছিলেন, তারপর নিরাময় ব্রহ্মলোকে ব্রহ্মা আমাকে সেই জ্ঞান প্রদান করেন, সেই সর্ব-অভীষ্ট সর্বজ্ঞানপ্রদ পবিত্র জ্ঞান আমি তোমাকে দান করছি, পরে তুমি ব্যাসদেবকে প্রদান করবে। আর সেই ব্যাসদেব তার পুত্র শুকদেবকে দান করবে।
হে নারদ, এই জ্ঞান সবার আদি, সর্ববেদের সার, অতি মনোহর। জগৎ সংসারে যত মত আছে, যত মন্ত্র আছে, যত কর্ম আছে, যত কর্মচক্র আছে, সেই সমস্ত কিছুর সারাৎসার, সর্বকর্মচক্রের মুক্তির পন্থা হচ্ছে একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মসেবা। নিখিল মহাবিশ্বে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই নিত্য বিদ্যমান। আর অন্য সমস্ত কিছুই তাঁর প্রয়োজন সিদ্ধির জন্যই উৎপন্ন হয়েছে। বিশ্বের সবাই তাঁরই মায়ায় মোহিত। এক কৃষ্ণ তাঁর অনন্ত রূপ, তাঁর অনন্ত গুণ, তাঁর অনন্ত কীর্তি এবং তাঁর অনন্ত জ্ঞান।
হে নারদ, তাঁর সৃষ্ট জড় বিচিত্র বিশ্বও অনন্ত। এই বিশ্বের সব জায়গা ক্ষুদ্র, বৃহৎ, মধ্যম শ্রেণীর নানা জাতীয় জীবে পরিপূর্ণ। সেই জীবগুলি কর্মশীল। কর্মের ফলস্বরূপ তারা সুখ-দুঃখ ভোগ করছে। সবান্তরাত্মা ভগবান প্রত্যেক জীবের সাক্ষীরূপে বিদ্যমান। জীবের বুদ্ধি আছে। সেই বুদ্ধিশক্তি নিদ্রা, তন্দ্রা, দয়া, শ্রদ্ধা, তুষ্টি, পুষ্টি, ক্ষমা,ক্ষুধা, লজ্জা, তৃষ্ণা, ইচ্ছা, চিন্তা, জরা, প্রভৃতি নাম ধারণ করে।
অনুচরেরা যেমন রাজার অনুগামী হয়, সেরকম এই সব শক্তি জীবের অনুগামী হয়ে থাকে। চিন্তা ও জরা সর্বদা জীবের শোভা ও পুষ্টির ব্যাঘাত করে। ব্রহ্মান্ডমধ্যে জীব যে স্থুল দেহ ধারণ করে কর্ম করছে সেই দেহটি পাঞ্চভৌতিক অর্থাৎ মাটি, জল, আগুন, বাতস ও আকাশ দিয়ে তৈরি। এই দেহ ধ্বংস হলে দেহটি পঞ্চভূতের মধ্যে মিশে যায়। প্রায় জীবই এই জগৎ সংসারে ভ্রান্তিবশে মায়ামোহিত হয়ে রোদন করতে থাকে। কিন্তু যারা সাধু ব্যক্তি, তাঁরা নিত্য সত্য অভয়প্রদ এবং জন্মমৃত্যুজরা-অপহারী শ্রীকৃষ্ণের চরণকমল সেবা করেন।
হে নারদ, এই বিশ্ব স্বপ্নের মতো অনিত্য। অতএব এতে বিমোহিত না হয়ে আনন্দের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম ভজনা করো। এই হচ্ছে প্রথম জ্ঞান।
এবার দ্বিতীয় জ্ঞানের কথা শ্রবণ করো। জ্ঞানী ব্যাক্তিরা মুক্তি বাসনা করেন। সাধূ পন্ডিত ব্যক্তিদের পরামামুক্তি সততেই বাঞ্চিত। কিন্তু সমস্ত মুক্তি শ্রীকৃষ্ণভক্তির কাছে অত্যন্ত তুচ্ছ বিষয়। মুক্তি কৃষ্ণভক্তির ষোলভাগের একভাগও আকর্ষণীয় নয়। কৃষ্ণভক্ত-সংসর্গের ফলে কারও হৃদয়ে ঐকান্তিক কৃষ্ণভক্তি জাগ্রত হয়।
মাঠের মাঝে বৃক্ষের বীজ যেমন অঙ্কুরিত হয় জল পেলে, তেমনই হৃদয় মধ্যে ভক্তিবৃক্ষের অঙ্কুর প্রকাশিত হয় ভক্তসঙ্গ পেলে। ভক্তসঙ্গে কৃষ্ণকথা আলাপে ভক্তি জাগ্রত হয়। আবার রৌদ্র মধ্যে অঙ্কুর যেমন শুকিয়ে যায়, তেমনই অভক্তজনের সঙ্গে সর্বদা সংলাপে ভক্তি শুষ্কতা প্রাপ্ত হয়। এই জন্যে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সর্বদা ভক্তজনের সঙ্গে আলাপ করেন।
হে নারদ, সোনা যেমন নিকৃষ্ট ধাতুর সংযোগে মলিনতা প্রাপ্ত হয়, তেমনই সৎ ব্যক্তিও সংসারের দুর্বুদ্ধি লোকের সংস্পর্শে মন্দ হয়ে যায়। এজন্য সর্বদা নিরন্তর ভক্তিপূর্বক শ্রীকৃষ্ণভজনে যুক্ত থাকাই কর্তব্য।
ভক্তিপূর্বক কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণবের কাছ থেকে তার কৃষ্ণমন্ত্র গ্রহণ করা উচিত। কখনও অভক্ত অবৈষ্ণবের কাছ থেকে নয়। সংসারে যারা কৃষ্ণনিন্দুক, কৃষ্ণবিমুখ, কৃষ্ণভক্ত নিন্দুক, তারা অশুচি ও পাপিষ্ঠ। কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত ব্যক্তি শত পুরুষ সহ নেজেকে উদ্ধার করে।
হে নারদ, পূর্বে কৃষ্ণের আলয় গোলোকে বিরজাতীরে ক্ষীরের মতো অমল জলে আমি শ্রীকৃষ্ণ মন্ত্র জপ করেছি। নিত্য আমি কৃষ্ণমত্র জপ করি। পার্বতী, কার্তিক গনেশ সবসময়ই কৃষ্ণনাম কীর্তন করে থাকে।
হে নারদ, লোকে দুর্দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলে ও স্মরণ করে। মেঘে আচ্ছন্ন অন্ধকার দিনকে আমি দুর্দিন বলি না। যেই দিন কৃষ্ণকথা হয় না, আমি সেই দিনকে দুর্দিন বলে থাকি। লোকে কোনও কর্মে অসফল হলে দুঃখিত হয়, হাহুতাশ করে। কিন্তু হে নারদ, যেই দিন ক্ষণকালও অমৃত্যতুল্য কৃষ্ণকথা হয় না, শ্রীকৃষ্ণের কীর্তনবিহীন সেই দিনটিকে নিষ্ফল বলে মানি এবং কাল সেদিনের অনর্থক আয়ু হরণ করে। কৃষ্ণকথাই আনন্দময়, কৃষ্ণকথাই মঙ্গলময়।
হে নারদ, সাপেরা গরুড়কে দেখলে যেমন পালিয়ে যায়, পাপরাশিও তেমনই কৃষ্ণতীর্তনকারীর কাছ থেকে পালিয়ে যায়। পূর্বে ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে কৃষ্ণমন্ত্র লাভ করেন, তাতে সৃষ্টির কারণভূত নির্মল জ্ঞান প্রাপ্ত হন। বিধাতা নাম প্রাপ্ত হন। কৃষ্ণমন্ত্র কোটিবার জপ করতে করতে অনন্দদেবের সহস্র মস্তক হয়।
হে নারদ, পূর্বে একসময় কৃষ্ণপ্রিয়া রাধিকার গর্ভে এক স্বর্ণময় ডিম্ব উৎপন্ন হয়, গোলোকধাম থেকে আগত সেই ডিম্ব দ্বিখন্ডিত হয়ে ভেঙ্গে যায় এবং মহার্ণবে পতিত হয়। সেই ডিম্ব থেকে মহাবিষ্ণু আবির্ভূত হয়ে মহাজলে শয়ন করলেন। মহাবিষ্ণুর লোমকূপ থেকে আলাদা আলাদা ভাবে পৃথক জলরাশি উদ্ভব হয়ে সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হল। সেগুলি সপ্ত আবরণীযুক্ত এক-একটি ব্রহ্মান্ড।
ব্রহ্মান্ডের মধ্যে মধ্যস্থানে ভূলোক। ভূলোকের ঊর্ধ্বদিকে যথাক্রমে ভুবর্লোক, স্বর্গলোক, জনলোক, মহর্লোক, তপোলোক ও সত্যলোক। আর ভুলোকের নিম্নদিকে যথাক্রমে অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, মহাতল, রসাতল ও পাতাললোক রয়েছে। সত্যলোকের বামদিকে ধ্রুবলোক, পাতাললোকের ডানদিকে নরক লোক রয়েছে।
হে নারদ, মধ্যস্থানের ভূলোকে ভারতবর্ষ বিখ্যাত। ভারতবর্ষের মধ্যে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়। ভারতবর্ষ যেরূপ মাহাত্ম্যপূর্ণ, অন্য স্থান ততটা নয়। বহু পুণ্যফলে কারও ভারতবর্ষে মনুষ্য জন্ম লাভের সৌভাগ্য হয়। মানুষদের মধ্যে তাঁরাই মহান বা বিদ্ধান, যাঁরা শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্ম ভজনা করেন। মানবজীবন পেয়েও জীব যদি শ্রীকৃষ্ণভজনা না করে তবে তার চেয়ে আর বিড়ম্বনা কি? শ্রীকৃষ্ণভজনহীন তার জন্ম অনর্থক, তার গর্ভযাতনা বৃথা, তার অনিত্য শরীর নিষ্ফল, তার জীবন ব্যর্থ। সে জীবম্মৃত।
হে নারদ, এই ভারতে যে ব্যক্তি প্রত্যহ শ্রীহরির পাদোদক ও নৈবদ্য ভক্ষণ করেন, কৃষ্ণমন্ত্র গ্রহণ করেন, তিনি জীবম্মুক্ত হন। তাঁর পদধুলিতে পৃথিবী পবিত্রা হন।
হে নারদ, এবার তৃতীয় জ্ঞানের কথা শ্রবণ করো। শ্রীকৃষ্ণের অনন্ত গুণের কথা কেউই বর্ণনা করতে সমর্থ নয়। যা তুমি শুনতে পাবে, সবই কিঞ্চিৎ কথা মাত্র। আমি শুধু এইটুকু জানি যে, শ্রীকৃষ্ণ অপেক্ষা আর কেউই আদিপুরুষ নেই, আর কেউই পরম আরাধ্য নেই। তাঁর অপেক্ষা জ্ঞানী বা যোগীও কেউ নেই। তাঁর অপেক্ষা সবার পরিপালক জনকও আর কেউ নেই। তাঁর অপেক্ষা বলবানম কীর্তিমান, দয়ালু ও ভক্তবৎসল আর কেউ নেই। যে মায়াদেবী অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডকে মোহিত করেন তিনিও শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে স্তব করতে অক্ষম এবং অতি ভীতা হন। বাক্যের অধিষ্ঠাত্রী স্বরস্বতীদেবীও শ্রীকৃষ্ণের স্তব করতে সমর্থ না হয়ে জড়প্রায় হয়ে যান।
হে নারদ, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ জীবের হিত বাসনায় গুরুরূপ ধারণ করে থাকেন কিংবা কাউকে তাঁর প্রতিনিধি করে প্রেরণ করেন। গুরুদেব তুষ্ট হলে স্বয়ং ভগবানও তুষ্ট হন। ভগবান তুষ্ট হলে ত্রিজগৎ তুষ্ট হয়। গুরুই ব্রহ্মা, গুরুই বিষ্ণু, গুরুই মহাদেব। হরি রুষ্ট হলে গুরুদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর অনুগামীকে রক্ষা করতে সমর্থ হন। কিন্তু গুরুদেব রুষ্ট হলে কেউই তাকে রক্ষা করতে সমর্থ নয়।
হে নারদ, যা থেকে কৃষ্ণভক্তি জন্মে তাকেই মন্ত্র বলা যায়। কৃষ্ণই বন্ধু, কৃষ্ণই পিতা। আর কৃষ্ণভক্তিই মৈত্রী ও জননী। গুরুদেব কৃষ্ণপ্রাপ্তির পথ প্রদর্শন করান। হে নারদ, তুমি প্রকৃতির অতীত রাধানাথ শ্রীকৃষ্ণকে ভজনা করো। জগতে যে ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণভক্তি অনুশীলন শিক্ষা না দিয়ে অন্য পথ প্রদর্শন করেন, তিনি কখনই গুরু নন। তাঁকে পারমার্থিক গুরুরুপে কখনই গ্রহণ করা উচিত নয়। অধিকন্তু তাঁকে মহা শত্রু বলে মনে করা কর্তব্য। কৃষ্ণভক্তি পন্থা অনুসরণহীন ব্যক্তি যিনি গুরুর আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে নিত্য আরাধিত হন, তিনি শিষ্যহত্যার ফল লাভ করেন। আর সেই তথাকথিত শিষ্যের জন্মও বিফল হয়।
এই আমি তোমাকে চতুর্থ জ্ঞানের কথা বললাম।
নারদ প্রশ্ন করলেন, হে ভগবান, ভক্তরা কৃষ্ণভক্তি করে, যোগীরা জ্যোতির ধ্যান করে, এই দুইয়ের মধ্যে কোনটি যথার্থ পথ?
আরও পড়ুনঃ হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করার নিয়ম
শিব বললেন, যাঁরা নিগুণ ব্রহ্মে বিলীন হতে চায়, তারাই ব্রহ্মজ্যোতির ধ্যান করে। তাঁরা ভগবানের শরীর বা আকার স্বীকার করে না। কেননা শরীর মানেই জড়, ব্রহ্ম মানেই চিন্ময়; দেহমাত্রই গুণে আসক্ত, অতএব নিগুণ চিন্ময়ত্বের সম্ভাবনা নেই- এই জ্ঞান তারা কেবল ব্রহ্মজ্যোতির ধ্যান করে। কিন্তু সনৎকুমার প্রভৃতি আমাদের দ্বারা তা আদৌ সম্মত নয়। সমস্ত ব্রহ্মজ্যোতির উৎস হচ্ছেন সনাতন পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ। তাই ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করেন, নিরাকার ব্রহ্মজ্যোতির ধ্যান করেন না। শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গজ্যোতিই নিরাকার বলা যায়। সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান-আরাধনা করাই যথার্থ পন্থা।
আরও পড়ুন
* শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রেমধর্ম* শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সকল অধ্যায় সমূহ
* রাধাকৃষ্ণের সম্পর্কের প্রকৃত রহস্য
* শিব কে? শিবের হলাহল কন্ঠে ধারণ, শিব তত্ত্ব।
* অষ্টাঙ্গযোগ, কুন্ডলিনী ও ভক্তি
অসারণ