হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র মালায় জপ করার নিয়ম ও মাহাত্ম্য
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের মাহাত্ম্য
প্রভু বলে,- “কৃষ্ণ ভক্তি হউক সবার।
কৃষ্ণনাম-গুন বই না বলিহ আর।।”
আপনে সবারে প্রভু করে উপদেশে।
কৃষ্ণনাম মহামন্ত্র শুনহ’ হরিষে।।
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
প্রভু বলে,- “কহিলাম এই মহামন্ত্র।
ইহা জপ’ গিয়া সবে করিয়া নির্বন্ধ।।
ইহা হৈতে সর্ব-সিদ্ধি হইবে সবার।
সর্বক্ষণ বল’ ইথে বিধি নাহি আর।।” (চৈঃভাঃ)
কৃষ্ণ নাম মহামন্ত্রের এইত’ স্বভাব।
যেই জপে, তার কৃষ্ণে উপজয়ে ভাব।। (চৈঃ চঃ)
“প্রত্যেক ভক্তের জন্য নাম জপ অপরিহার্য। চৈতন্য মহাপ্রভু প্রতিদিন সুনির্দিষ্ট সংখ্যকবার মহামন্ত্র জপ করতেন। ষড়গোস্বামীগণ চৈতন্য মহাপ্রভুর পদাঙ্ক অনুসরণ করতেন।
হরিদাস ঠাকুরও এই নীতিমালা অনুসরণ করতেন। অন্যান্য দায়িত্ব পালন ছাড়াও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অনুসারী ভক্তদেরকে প্রতিদিন অবশ্যই কমপক্ষে ১৬ মালা জপ করা উচিত। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘও নাম জপের এই সংখ্যা নির্ধারিত করেছেন।
হরিদাস ঠাকুর প্রতিদিন তিন লক্ষ্য নাম জপ করতেন। ১৬ মালা জপ করলে প্রায় ২৮ হজার নাম জপ করা হয়। হরিদাস ঠাকুর অথবা অন্যান্য গোস্বামীদের অনুকরণ করার দরকার নেই। তবে প্রতিদিন সুনির্দিষ্ট সংখ্যকবার নাম জপ প্রত্যেক ভক্তের অবশ্য কর্তব্য।
বৈষ্ণব গুরুর নির্দেশে কাউকে অন্যান্য দায়িত্বও পালন করতে হতে পারে। কিন্তু তাকে অবশ্যই প্রতমতঃ বৈষ্ণব গুরুর সুনির্দিষ্ট সংখ্যকবার মালা জপ করার আদেশ পালন করতে হবে।
আমাদের কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলনে আমরা স্থির করছি যে শিক্ষানবীশরা প্রতিদিন কম পক্ষে ১৬ মালা জপ করবে।
যদি কেউ কৃষ্ণকে মনে রাখতে চায় এবং ভুলে যেতে না চায়, তবে প্রতিদিন নাম জপ একান্তভাবেই প্রয়োজন। সকল বাধ্যবাধকতার মধ্যে কমপক্ষে প্রতিদিন ১৬ মালা নাম জপ সংক্রান্ত গুরুর আদেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মালা জপের নিয়ম
জপের সাথে উপর নীচের দুই ওষ্ঠ এবং জিহ্বার ক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের সাথে এই তিনটি প্রত্যঙ্গ অবশ্যই সক্রিয় থাকতে হবে।
‘হরে কৃষ্ণ’ শব্দগুলো অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে শুনতে পাওয়ার মত করে উচ্চারণ করা উচিৎ। কোন কোন সময় কেউ কেউ ওষ্ঠদ্বয় ও জিহ্বার সাহায্যে সঠিক উচ্চারণে জপ করার পরিবর্তে কোন মতে একটা যান্ত্রিক শব্দ মুখ দিয়ে বের করে।
জপ অত্যন্ত সহজ। তবে নিষ্ঠার সাথে এর অনুশীলন করতে হয়। হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র অবশ্যই এই ভাবে জপ করা উচিৎ যাতে উচ্চারণকারী নিজে সে শব্দ শুনতে পায়।”(শ্রীল প্রভুপাদ)
জপমালার ব্যবহারের নিয়ম
প্রধানতঃ তুলসী গাছ দিয়ে জপমালা তৈরী করা হয়। নিম অথবা বেলগাছ দিয়েও জপমলা বানানো যায়। ডান হতে ধরে জপ করতে হয়।
জপ মালায় ১০৮ টি গুটি থাকে, একদিকে বড় গুটি অন্য দিকে ছোট গুটি থাকে। বড় গুটি এবং ছোট গুটির সংযোগ স্থলে একটি ঘটের মতো গুটি থাকে, যাকে মেরুগুটি বলা হয়।
হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ শুরু করার পূর্বে ডানহাত দিয়ে মেরুগুটি ধরে একবার অথবা তিনবার পঞ্চতত্ত্ব মন্ত্র ( জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ, শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্ত বৃন্দ) জপ করতে হয়।
তারপর তর্জণী আঙ্গুলি স্পর্শ না করে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে বড় দিকের প্রথম গুটিটি ধরে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে” সুস্পষ্ট ভাবে উচ্চারণ করে জপ করতে হয়, যাতে নিজের কানে শোনা যায়।
তারপর দ্বিতীয় গুটি ধরে জপ করতে করতে মেরুগুটির পার্শে ছোট গুটির কাছে পৌছবেন। পুণরায় মেরুগুটি ধরে পঞ্চতত্ত্ব মন্ত্র বলতে হবে। এখন আপনার এক মালা জপ হয়ে গেল।
পুণরায় যখন মালা শুরু দিকের প্রথম গুটিটি ধরে পূর্বের মতো হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে করতে ছোট থেকে বড়গুটির দিকে এগোবেন, মনে রাখবেন একটি গুটিতে যতক্ষণ পুরো হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ না হচ্ছে ততক্ষণ দ্বিতীয় গুটিতে এগোবেন না।
এই ভাবে আপনি প্রতিদিন এক, দুই, চার, আট অথবা ষোল মালা জপ করতে পারেন। নিয়মিত নির্দিষ্ট সংখ্যকবার জপ অভ্যাস করার পর কারও সেই সংখ্যা কমানো উচিৎ নয় বরং প্রতিদিন কমপক্ষে ১৬ মালা জপ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর উচিৎ মালার সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
এই ভাবে আপনি প্রতিদিন এক, দুই, চার, আট অথবা ষোল মালা জপ করতে পারেন। নিয়মিত নির্দিষ্ট সংখ্যকবার জপ অভ্যাস করার পর কারও সেই সংখ্যা কমানো উচিৎ নয় বরং প্রতিদিন কমপক্ষে ১৬ মালা জপ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর উচিৎ মালার সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
জপমালা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়, মালাকে জপ ব্যাগের মধ্যে রাখবেন। ব্যাগ ময়লা হলে সাবান দিয়ে ধুয়ে দেবেন। জপমালা নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করবেন না।
Kub sundor