আমাদের সুপ্ত চেতনার পুনর্জাগরণ

হরেকৃষ্ণ কৃর্ত্তন

 চেতনার পুনর্জাগরণ 

 
 আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবানের দিব্য নাম কীর্তনের সরল পন্থার মাধ্যমে মানবজাতির মধ্যে পারমার্থিক চেতনার পুনর্জাগরণ। মানবজীবনের উদ্দেশ্য এই জড় অস্তিত্বের দুর্দশাগুলোর সমাপ্তি ঘটানো। আমাদের বর্তমান সমাজ জড় জাগতিক উন্নতি সাধনের মাধ্যমে এ সমস্ত দুঃখ-দুর্দশাকে দূর করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যাপক জড়ীয় প্রগতি সত্ত্বেও মানবসমাজ শান্তিপূর্ণ নয়। 
 
কারণ মানুষ মূলত জীবসত্তা, আত্মা। আত্মার উপস্থিতির ফলেই জড় শরীর পূর্ণাঙ্গ দেহে বিকশিত হয়। আত্মাই মূল জীবনীশক্তি। অবশ্য জীবনীশক্তির অন্তরালে পারমার্থিক সত্তা আত্মার অস্তিত্বের কথা জড়-জাগতিক বিজ্ঞানীরা স্বীকার করতে চাইবেন না। 
 
কিন্তু এ জীবনীশক্তি দেহের অভ্যন্তরে বিরাজিত আত্মা বলে স্বীকার করার চেয়ে শ্রেয়তর আর কোনো উপলব্ধি নেই। 
 
দেহ অবিরাম পরিবর্তনশীল- এক রূপ থেকে অন্য রুপ, তারপর অন্য রূপ- এভাবে শরীর পরিবর্তন হয় না। এই সত্যটি আমরা এমনকি নিজেদের জীবনেও উপলব্ধি করতে পারি। মাতৃগর্ভে আমাদের এ জড় দেহের উদ্ভবের শুরু থেকে আমাদের দেহ এক রূপ থেকে অন্য রূপে প্রতি সেকেন্ডে, প্রতি মিনিটে পরিবর্তিত হয়ে চলছে। এই প্রক্রিয়াকে সাধারণভাবে বলা হয় বৃদ্ধি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা শরীরের পরিবর্তন। 
 
এই পৃথিবীতে আমরা দিন, রাত ও ঋতুর পরিবর্তন দেখতে পাই। আদিম মানসিকতার মানুষেরা অজ্ঞতাবশত এই পরিবর্তনগুলোকে সূর্য ঘুরছে বলে মনে করবে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, শীত ঋতুর সময় আদিম মানুষেরা মনে করে যে, সূর্য আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে এবং তারা কথনো কথনো ভাবে যে, রাতে সূর্য মৃত হয়ে যায়। 
 
অপেক্ষাকৃত উন্নত জ্ঞান লাভ করে আমরা উপলব্ধি করি যে, এভাবে সূর্যের আলোর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। দিন-রাত্রি ও ঋতুর এসব পরিবর্তন পৃথিবী ও সূর্যের বিভিন্নরকম অবস্থান ও গতির ফল মাত্র। 
 
একইভাবে, আমরা দেহের পরিবর্তন অনুভব করি- ভ্রুণ থেকে শিশু, শিশু থেকে যুবক, যবক থেকে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি, তারপর বার্ধক্য, তারপর দেহের মৃত্যু। স্বল্প মেধাসম্পন্ন মানুষ মনে করতে পারে যে, মৃত্যুর পর চিরকালের জন্য আত্মার বিনাশ ঘটে, ঠিক যেমন আদিম উপজাতিরা মনে করে যে, সূর্যাস্তের পর সূর্যের মৃত্যু হয়। প্রকৃতপক্ষে, সূর্য তখন পৃথিবীর অন্য আরেকটি অংশে উদিত হচ্ছে। 
 
ঠিক তেমনি এক দেহের মৃত্যুর পর আত্মা আরেক ধরনের শরীর গ্রহণ করছে।  যখন একটি জীর্ণ পোশাকের মতো শরীর বার্ধক্যগ্রস্ত হয়, জীর্ণ হয়, তখন তা আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না, আত্মা তখন আরেকটি শরীর গ্রহণ করি। ঠিক যেমন আমরা পোশাক জীর্ণ হয়ে গেলে তা পরিত্যাগ করে নতুন পোশাক গ্রহণ করি। আধুনিক সভ্যতা কার্যত এই সত্য সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। 
 
মানুষ আত্মার স্বরূপগত অবস্থান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষাদানের কেন্দ্রগুলোতে জ্ঞানের বিভিন্ন ধরনের শাখা রয়েছে, বিভাগ রয়েছে, কিন্তু িএসব বিভাগের উদ্দেশ্য জড়া প্রকৃতির সূক্ষ্ম নিয়ম-কানুনগুলো অবগত হওয়া। জড় দেহের শরীরবিদ্যাগত অবস্থা জানার জন্য মেডিকেল রিসার্চ ল্যাবরেটরি রেয়েছে, কিন্তু আত্মার স্বরূপগত অবস্থার সম্বন্ধে জানার জন্য কোনোরকম শিক্ষা এখন নেই। জড় সভ্যতার এটি সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা বা ক্রুটি, আর কেবলমাত্র আত্মার একটি বাহ্যিক অভিব্যক্তি মাত্র। 
 
তাই এ কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ মূলত আত্মার এই বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে, কোনো গোঁড়ামীপূর্ণভাবে নয়, সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিক্তিক এবং দার্শনিক উপলব্ধি প্রদানের মাধ্যমে।
---হরে কৃষ্ণ--- 
 
 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url