পুরুষোত্তম মাস ব্রতের মহিমা ও পালনের নিয়ম

 
পুরুষোত্তম মাসের মাহাত্ম্য

পুরুষোত্তম মাস কী? 

বাংলা বর্ষপঞ্জিতে প্রায় দুই থেকে তিন বছর পরপর একটি অধিক মাস দেখা যায়। চান্দ্র ও সৌরবর্ষের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত একটি মাস হিসাব করা হয়। এই অতিরিক্ত মাসটিকেই পুরুষোত্তম মাস বলা হয়।  

ঋগ্বেদ সংহিতায় (১.২৫.৮) এ ত্রয়োদশ মাস বা অধিকমাসের উল্লেখ রয়েছে- “বেদা মাসো...য উপজায়তে”। এটি অনেকটা ইংরেজি অধিবর্ষের মতো। তবে ইংরেজি অধিবর্ষ মাত্র একদিন হয়। কিন্তু অধিক মাস পুরো এক মাস হিসেব করতে হয়। 

আমাদের পালনীয় বিভিন্ন উৎসবসমূহ সাধারণত বছরে বারো মাসব্যাপী বিভিন্ন তিথিভিত্তিক হয়ে থাকে। কিন্তু পুরুষোত্তম বা অধিক মাস যেহেতু বারো মাসের কোনোটির অন্তর্গত নয়, তাই এই মাসে অন্য কোনো উৎসব বা তিথি পড়ে না। অধিমাসে কোনো পালনীয় তিথি বিদ্যমান না থাকার দরুণ কোনো বৈদিক কর্মকান্ড এই মাসে পালিত হয় না। 

স্মার্ত পন্ডিতেরা অধিমাসকে ‘মলমাস’ বা ‘মলিনমাস’ বলে ঘৃণা করেন। অন্যদিকে পরমার্থ-শাস্ত্র এ অধিমাসটিকে সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছে। যেহেতু এ মাসটি সকল প্রকার সকাম কর্ম শূন্য, তাই সেটি হরিভজনের জন্য অধিক উপযোগী। 

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং পরম পবিত্র বৈশাখ, কার্তিক ও মাঘ মাস অপেক্ষা এই অধিমাসকে অধিক মহিমা প্রদান করেছেন এবং একে নিজ নাম ‘পুরুষোত্তম’ দ্বারা অলঙ্কৃত করেছেন। 

এই পুরুষোত্তম মাসে ব্রত পালনের গুরুত্ব বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আচার্যগণ ব্যক্ত করেছেন। বৈদিক শাস্ত্রের বিভিন্ন স্থানে এই ব্রত পালনের নির্দেশ দেখা যায়। প্রতি বছর এই মাসটিকে পাওয়া যায় না, তাই ভক্তগণ অন্যান্য উৎসবের মতো কেবল আনুষ্ঠানিকতার আমেজ নয়, বরং অধিক সংখ্যক নামজপ, প্রদক্ষিণ, পরিক্রমা, শাস্ত্র, অধ্যয়ন, পারায়ণ প্রভৃতি অনুশীলনের মাধ্যমে অতিবাহিত করে থাকেন। 
Hindu House Puja Tempol
বিশেষত বৈষ্ণব সমাজে পুরুষোত্তম মাসের মহিমা অত্যধিক। শ্রীধাম বৃন্দাবনে এ পুরুষোত্তম মাস ভিন্ন মাত্রা সংযোগ করে থাকে। এ মাসে প্রতিদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মন্দিরগুলো উৎসবমুখর হয়ে থাকে। ভক্তগণ মাসব্যাপী গিরি-গোবর্ধন পরিক্রমা করে থাকেন। কেউ কেউ দন্ডবৎ পরিক্রমাও করে থাকেন। 

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বিড জেলার পুরুষোত্তমপুরী নাকে একটি শহর রয়েছে, যা সুপ্রাচীন পুরুষোত্তম মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। পুরুষোত্তম মাসে এখানে মাসব্যাপী উৎসব ও মেলার আয়োজন করা হয় নেপালে কাঠমুন্ডুর চন্দ্রগিরি মিউনিসিপ্যালিটিতে অবস্থিত মাচ্ছেগাওঁ গ্রামে পুপ্রাচীন মচ্ছনারায়ণ (মৎস নারায়ণ) মন্দিরেও সমগ্র মাস জুড়ে উৎসব পালিত হয়। 

শাস্ত্রে বিভিন্ন রকমের পাপ ও দোষের প্রতিকারক রূপে এই পুরুষোত্তম ব্রতের বিধান থাকলেও, ভক্তগণ শ্রীহরির প্রীতিবিধানার্থেই এ ব্রত পালন করে থাকেন। সকাম কর্মের বাসনা নিয়েও এ মাসে কিঞ্চিৎমাত্র ভক্তিমূলক সেবায় অংশগ্রহণ করলে তা শ্রীকৃষ্ণপাদপদ্মে ভক্তি প্রদান করে, যার মাধ্যমে জীব ভবন।ধন মুক্ত হয়ে ভগবানের কাছে ফিরে যেতে পারে। 

পুরুষোত্তম মাস কেন ও কখন আবির্ভূত হয়?


 গড়ে প্রতি সৌরমাসের দৈর্ঘ্য ৩০ দিন, ১০ ঘন্টা, ৩০ মিনিট, ৪৬ সেকেন্ড। ১ সৌরবর্ষের মোট ৩৬৫.২৫৮৭ দিন। গড়ে প্রতি চান্দ্রমাস ২৯ দিন, ১২ ঘন্টা, ৪৪ মিনিট, ৩ সেকেন্ড পূর্ণ হয়। একটি চান্দ্র বছরে মোট ৩৬০টি তিথি থাকে। 

লক্ষণীয় যে, প্রতি চান্দ্রমাস ও সৌরমাসের দৈর্ঘের পার্থক্যের কারণে প্রতি মাসে ১৯ থেকে ২৬ ঘন্টার (গড়ে ২৩ ঘন্টা, ৩৭ মিনিট ও ২৮ সেকেন্ড) একটি ব্যবধান থেকে যায়। অর্থাৎ চান্দ্রবর্ষের ৩৬০টি তিথিতে সর্বমোট ৩৫৪.৩৬ সৌরদিন লাগে। 

ফলে প্রতি বছর চান্দ্র ও সৌরমাসের মধ্যে ১০ দিন, ২১ ঘন্টা, ৩৫ মিনিটের পার্থক্য হয়। এই অতিরিক্ত ১০ দিন ২১ ঘন্টা (২৯.৫৩X১০.৬৩) গড়ে ২.৭১ বছর বা ৩২.৫ মাসে সমন্বয় করা হয়। ৩২টি সৌরমাসের জন্য ৩৩টি চান্দ্রমাস। মোটকথা, চান্দ্র ও সৌর বর্ষের মধ্যে সমন্বয় রাখার জন্য তিনটি সৌর বছরের মধ্যে একটি অতিরিক্ত মাস সমন্বয় করতে হয়। 

সাধারণত, প্রতি ১৯ বছরে ৭টি অধিমাস হয়। এটি নির্ভর করে গ্রহসঞ্চারের সময়ের ওপর ভিত্তি করে। কখনো সেটি ২৮ মাস, কখনো ৩১, ৩২, ৩৩ মাস হতে পারে। এজন্য মহাভারতে প্রতি পাঁচ বছরে দুটি অতিরিক্ত মাসের কথা বলা হয়েছে। 

প্রতি তিনবছর পর পর এমন সময় আসে যখন সূর্যের একটি রাশিতে ভ্রমণের সময়ে বা একটি সৌরমাসে দুটি অমাবস্যা বা তিনটি প্রতিপদ চলে আসে। প্রথমে প্রতিপদের পর থেকে অধিক মাস শুরু হয়। দ্বিতীয় অমাবস্যা পরবর্তী প্রতিপদ থেকে প্রকৃত সৌরমাস হিসাব করা হয়। 

অধিক মাসে সৌর সংক্রান্তি হয় না। অধিক মাসকে সৌরবছরের কোনো একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করে না, বরং মাসজুড়ে একটি নির্দিষ্ট রাশিতেই অবস্থান করে, তাহলে সেই মাসটির নাম পরবর্তী মাসের নাম অনুসারে হয় এবং এর সাথে ‘অধিক’ শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়। 

কয়েক বছর পর পুনরায় আমরা সবচেয়ে পবিত্র মাস পরুষোত্তম মাস উদযাপন করার মহৎ সুযোগ লাভ করেছি। শাস্ত্র এবং আমাদের পূর্বতন আচার্যগণ বলেন, এই মাসে আমাদের কেবল আধ্যাত্মিক কর্মই করতে হবে। তাই ওঁ বিষ্ণুপাদ ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের গৌড়ীয় পত্রিকার ১৪ই জুলাই ১৯২৮ সংখ্যার একটি প্রবন্ধ হতে এবং শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের কিছু উদ্ধৃতি (পুরাণ অনুসারে ব্রতের বর্ণনা ও কীভাবে ব্রত পালন করতে হবে অংশে) শ্রীল জয়পতাকা স্বামীর বিবৃতি থেকে উল্লেখ করা হলো। 

 
ভগবানের ছবি

পুরাণ অনুসারে পুরুষোত্তম ব্রতের বর্ণনা


বৃহন্নারদীয় পুরাণে পুরুষোত্তম মাসের কথা বর্ণিত হয়েছে। সকল মাসের প্রধান অধিমাস একসময় দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে স্বভাবজাত বিনম্রতার সহিত বৈকুণ্ঠে নারায়ণের নিকটে এলেন এবং তাঁর অবস্থার বর্ণনা দিলেন। ক্রমান্বয়ে নারায়ণ অধিমাসকে তাঁর সাথে করে গোলেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট নিয়ে গেলেন। কৃষ্ণ, মলমাসের দুঃখের কথা শুনে, করুণাপূর্ণ হয়ে নিম্নরূপ বললেন-

কৃষ্ণ বললেন, “হে রমাপতি, জগতে আমি যেভাবে পুরুষোত্তম নামে পরিচিত, এই অধিমাসও তেমনি সারা বিশ্বে পুরুষোত্তম মাস নামে খ্যাত হবে। আমার সকল গুণ এই মাসের মাঝে প্রবেশ করবে। আমারই মতো, এই মাস সকল মাসের মাঝে শ্রেষ্ঠ হবে। এই মাস পূজনীয় এবং স্তুতির দ্বারা প্রশংসার যোগ্য। অন্য সকল মাস সকাম, জাগতিক বাসনায় পরিপূর্ণ। এই মাস নিষ্কাম, জাগতিক বাসনাবিহীন। 

যদি কেউ অকাম বা জাগতিক বাসনা ব্যতীত, অথবা সকাম বা জাগতিক বাসনাযুক্ত হয়ে এই মাসের আরাধনা করে, তাহলে তার সকল কর্মফল নিঃশেষ হয়ে যায় এবং সে আমাকে লাভ করে। আমার ভক্তেরা অনেক সময় অপরাধ করে ফেলে, কিন্তু এই মাসে কোনো অপরাধ হয় না। 

এই মাসে যারা সবচেয়ে নির্বোধ এবং কোনো জপ ও দান প্রভৃতি করে না, নিজের পারমার্থিক উন্নতির জন্য যারা কোনো কর্ম করে না এবং যারা স্নানাদি করে না এবং যারা দেবতাগণ, পবিত্র ধাম ও ব্রাহ্মণদের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ, এ সকল দুষ্ট, অসাধু, মন্দভাগ্য লোকেরা অন্যের সম্পদের ওপর জীবন নির্বাহ করে, তারা তাদের স্বপ্নেও সুখ লাভ করে না। এই পুরুষোত্তম মাসে যিনি প্রেম ও ভক্তিসহকারে আমার আরাধনা করেন, তিনি সম্পদ ও পুত্রাদি লাভ করে, সুখ ভোগ করে, অবশেষে গোলোকবাসী হয়।” 

পুরুষোত্তম মাসের ব্রত কিভাবে পালন করতে হবে? 

সর্বোচ্চ যত্ন সহকারে পুরুষোত্তম ভগবানের সেবা করুন। পুরুষোত্তমের প্রতি এ সেবাই সর্বোচ্চ সাধনা এবং সর্ববৃহৎ ফল দান করে। ভক্তির সাথে মন্ত্র উচ্চারণ করুন, যেমন-গোবর্ধনধরং মন্ত্র (গোবর্ধনধরং বন্দে গোপাল গোপরূপিণম গোকুলোৎসকমীশানং গোবিন্দ গোপিকাপ্রিয়ম) 

এবং এভাবে আপনি পুরুষোত্তমদেবকে লাভ করবেন। রাধারাণীর সাথে কৃষ্ণের ধ্যান করুন, যিনি নবঘনশ্যাম বর্ণ ধারণ করে দুই হাতে মুরলী ধারণ করেছেন এবং পীত বসন পরিধান করেন। যেভাবে দামোদরব্রত পালন করা হয়, সেভাবেই এ ব্রত পালন করা উচিত। 

পুরুষোত্তমের প্রীতির জন্য ঘৃতপ্রদীপ বা সামর্থ্য না থাকলে অন্তত তিলের তৈলের প্রদীপ দান করা উচিত। সম্ভব হলে, ব্রতপালকারীর ব্রাহ্মমুহূর্তের পূর্বে স্নান করা উচিত। এরপর আচমন করে গোপীচন্দন দ্বারা তিলক, শঙ্খ ও চক্র ধারণ করা উচিত। এ মাসে রাধা-কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে আরাধনা করা উচিত। পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই মাসের প্রধান আরাধ্যদেব। আরো সেবা আছে যা এই মাসে করা যেতে পারে, 

যেমন- শ্রীকৃষ্ণকে ষোড়শ উপচার দ্বারা পূজা করা, ভোরে স্নান করা, ভক্তিভরে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ করা, শালগ্রাম শিলার অর্চন করা ইত্যাদি। যিনি এই ব্রত পালন করেন, তার মাঝে সকল পবিত্র ধাম ও দেবতা বাস করেন। এই মাসে বৈষ্ণবদের সেবা করা অত্যন্ত মাহাত্মপূর্ণ। যারা সাধারণত ভগবতধর্ম পালনে শতভাগ সময় অতিবাহিত করেন, তারা এই পুরুষোত্তম মাসে শ্রীভবত প্রসাদ গ্রহণ, হরি-শ্রমণ কীর্তনে যুক্তি হওয়া উচিত। 

যারা শতভাগ ভক্তিমূলক সেবায় জড়িত নয়, তাদের জন্য ব্রত পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি ও নিয়ম রয়েছে। অনেকে এই মাসে হবিষ্যদ্রব্য গ্রহণ করে। সূত গোস্বামী বলেন- দুর্ভাগ্য এড়াতে এ মাসে ব্রত পালন করা উচিত। 

এ মাসের সূচনা তিথি হলো অমাবস্যা এবং সমাপ্তি তিথি হচ্ছে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি। আশা করি, আপনারা এই পুরুষোত্তম মাসের সূফল গ্রহণ করবেন, নিজেদের আধ্যাত্মিক চেতনার উন্নতি সাধন করবেন এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও শ্রীল প্রভুপাদের প্রতি আরো অনেক সেবা সম্পাদন করবেন। 


পুরুষোত্তম মাসে করণীয়

স্মার্থগণ পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাসকে ‘মলমাস’ বলে এই মাসে সমস্ত শুভকার্য পরিত্যাগ করে থাকেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই মাসকে পামার্থিক মঙ্গলের জন্য অন্য সকল মাস থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে নির্ণয় করেছেন। তিনি নিজের নামানুসারে এই মাসের নাম ‘পুরুষোত্তম’ মাস রেখেছেন। শ্রীবাল্মীকি-দৃঢ়ধম্বা সংবাদে উক্ত আছে, 
পুরুষোত্তম মাস্য দৈবতং পুরুষোত্তমঃ। 
তস্মাৎ সম্পজয়েদ্ভক্ত্যা শ্রদ্ধয়া পুরুষোত্তম।।
হে দৃঢ়ধম্বা, পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণই পুরুষোত্তম মাসের অধিদেবতা। অতএব সেই মাসে প্রতিদিন ভক্তিশ্রদ্ধাপূর্বক পুরুষোত্তম কৃষ্ণকে ষোড়শোপাচারে পূজা করবে। 

নৈমিষক্ষেত্রে শ্রীসূত গোস্বামী সমবেত ঋষিদেরকে বললেন- “ভারতভূমিতে জন্মলাভ করে যে গৃহাসক্ত নরাধমগণ শ্রীপুরুষোত্তম ব্রতকথা শ্রবণ ও ব্রত পালন করে না, সেই দুর্ভাগাগণ জন্ম-মৃত্যু এবং পুত্র-মিত্র, কলত্র ও নিজজন বিয়োগজনিত দুঃখভাগী হয়। হে দ্বিজবরগণ এই পুরুষোত্তম মাসে বৃথা কাব্যালঙ্কারাদি আলোচনা করবে না; পরশয্যায় শয়ন এবং অনিত্য বিষয়ালাপ করবে না; পরনিন্দা, পরান্নভোজন ও পরকার্য করবে না; বিত্তশাঠ্য করলে রৌরব (নরকে) গমনের কারণ হয়। প্রতিদিন বৈষ্ণব ব্রাহ্মণাদিগকে উত্তম ভোজন দিবে। ব্রতী নিজে দিবসের উষ্টম ভাগে ভোজন করবে। ইন্দ্রদ্যুম্ন, যৌবনাশ্ব ও ভগীরথ প্রমুখ রাজগণ শ্রীপুরুষোত্তমকে আরাধনা করে ভগবৎসামীপ্য লাভ করেছিলেন। 

সর্বপ্রকার যত্নের সাথে পুরুষোত্তমের সেবা করবে। এই সেবা সকল সাধন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং সর্বার্থফলপ্রদ। ‘গোবর্দ্ধন ধরং’ এই মন্ত্র জপ করে কৌন্ডীন্য মুনি শ্রীপুরুষোত্তমকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। নবঘন-দ্বিভুজ মুরলীধর, পীতাম্বর শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীরাধার সহিত নিয়ত ধ্যান করতে হবে। ‍যিনি পুরুষোত্তম মাসে ভক্তিপূর্বক এরূপ করেন, তিনি সর্বাভীষ্ট লাভ করেন।” 

ব্রত কথাটির অর্থ সংকল্প। নিরাহার, ফলাহার বা হবিষ্যদ্রব্য আহার, দীপদান, প্রণাম, পরিক্রমা, ভগবন্নাম জপ-কীর্তন, গীতা-ভাগবতাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন বা শ্রবণ ইত্যাদি ব্রতের একেকটি অঙ্গ বিশেষ। পুরুষোত্তম মাসে পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রীতিবিধানার্থে সামর্থ্যানুসারে ব্রত তথা সংকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। 

কীভাবে সময়ের সর্বোচ্চ উপযোগ করে ভগবানের সেবা করা যায় সেটাই সংকল্প হওয়া উচিত। তবে সর্বাগ্রে এটা খেয়াল রাখা উচিত যে, নিয়মগুলো (ব্রতের সংকল্প) যেন শুধু লোকদেখানো বা নিয়মাগ্রহ না হয়ে থাকে। ব্রতের সময়সীমা পর্যন্ত যেন সেগুলো পালন করা যায় সেটাও বিবেচনা করতে হবে। 

পুরুষোত্তম মাস অবজ্ঞা অনুচিত

যাজ্ঞসেনী দ্রৌপদী পূর্বজন্মে ছিলেন মেধাঋষির কন্যা। যৌবনেই তিনি আত্মীয়স্বজন সবাইকে হারান। একসময় ঋষিকন্যা দুর্বাসা মুনিকে তাঁর দুঃখের কথা জানালে তিনি তাকে পুরুষোত্তম মাসের মহিমা বললেন এবং এ দুঃখ নিবৃত্তির জন্য পুরুষোত্তম ব্রত পালনের পরামর্শ দেন। কিন্তু ঋষিকন্যা তাঁর কথা অবিশ্বাস করেন এবং পুরুষোত্তম মাসকে মলিন মাস ভেবে অবজ্ঞা করেন। 

ফলে পতি কামনায় দীর্ঘ তপস্যার পর তিনি শিবের কাছ থেকে পঞ্চপতি লাভের বর প্রাপ্ত হন এবং দ্রৌপদীরূপে কুরু-রাজসভায় তিনি ভীষণভাবে অপমানিত ও রাজ্য- বিতারিত হন। অবশেষে পরমেশ্বর ভগাবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে পঞ্চপান্ডব সহ দ্রৌপদী পুরুষোত্তম ব্রত পালন করে তাদের হারানো রাজ্য এবং অন্তিমে কৃষ্ণলোক প্রাপ্ত হন। 

অতএব, সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষোত্তম মাসকে মল মাস ভেবে কখনো অবজ্ঞা করা উচিত নয়, বরং যথাযথ মর্যাদাপূর্বক এ মাসের অধিষ্ঠাতৃ ভগবান পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের প্রীতিবিধানার্থে সামর্থ্যানুসারে ব্রত পালন করা উচিত। 
 
 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url