দামোদর ও কাার্তিক মাসের ব্রতের মাহাত্ম্য - শ্রীমদ্ভগবদ গীতা যথাযথ বাংলা

নতুন পোষ্ট

Add

শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১

দামোদর ও কাার্তিক মাসের ব্রতের মাহাত্ম্য

 
দামোদর মাসের মাহাত্ম্য

 কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য


স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বর্ননা করা হয়েছে- 

  • সর্বতীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল, কার্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না। 
  • একদিকে সর্বতীর্থ, দক্ষিণাসহ সর্বযজ্ঞ, পুস্করে বাস, কুরুক্ষেত্রে ও হিমাচলে বাস, মেরুতুল্য সুবর্ণ দান। হে বৎস! অন্যদিকে সর্বদা কেশবপ্রিয় কার্তিক মাস। 
  • কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যে কিছু পুণ্য করা হয়। হে নারদ! তোমার নিকট সত্য বলছি, তা সকল অক্ষয় হয়। 
  • কার্তিকের সমান মাস নাই, সর্তযুগের সমান যুগ নাই, বেদের সমান শাস্ত্র নাই। গঙ্গার সমান তীর্থ নাই। 
  • সর্বদা বৈষ্ণবগণের প্রিয় কার্তিক শ্রেষ্ঠ মাস। কার্তিকে উৎপন্ন সকল বস্তু বৈষ্ণবগণ ভক্তিপূর্বক সেবা করেন, হে মহামুনে! বৈষ্ণব নরকস্থ সকল পিতৃগণকে উদ্ধার করেন। 

পদ্মপুরাণে কার্তিক মাসের মাহাত্মে বর্ণনা করা হয়েছে-


  • যেমন দামোদর ভক্তবৎসল সর্বজনবিদিত, তার এই দামোদর মাস সেইরুপ ভক্তবৎসল; স্বল্প সেবাকেও বহু করে নেন। 
  • কার্তিকে দ্বীপদান দ্বারা এই পরমেশ্বর শ্রীহরি প্রীত হন, প্রদত্ত দীপ প্রবোধন ফলেও শ্রীহরি সুগতি দান করেন। 
স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে বর্ণনা করা হয়েছে-
  • বারাণসীতে, কুরুক্ষেত্রে, নৈমিষারণ্যে, পুষ্করে ও অর্বুদতীর্থে গমন করে যে ফল লাভ হয়, কার্তিকে ব্রত করে সেই ফল লাভ হয়। 
  • হে মুনিশার্দুল! কার্তিকে নিজশক্তি অনুসারে বিষ্ণুব্রত শাস্ত্রবিধিমত যিনি করেন, সংসার-মুক্তি তাঁর হস্তগত। 
  • হে দ্বিজোত্তম! কার্তিকে নিজশক্তি অনুসারে বিষ্ণুব্রত শাস্ত্রবিধিমত যিনি করেন, সংসার-মুক্তি তাঁর হস্তগত। 
  • হে দ্বিজোত্তম! কার্তিকে অন্নাদি দান, হোম, তপস্যা, জপ যা কিছু করলে তা অক্ষয় ফলপ্রদ বলে কাথিত। 
  • কার্তিকে পলাশ পত্রে ভোজন দ্বারা মানব সর্বকামফল ও সর্বতীর্থ ফল লাভ করে এবং নরক দর্শন করে না। 

কার্তিকে শাস্ত্রালোচনার মাহাত্ম্য স্কন্দপুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে-


  • যে মানব কার্তিক মাস গীতা শাস্ত্রাভ্যাস দ্বারা যাপন করে, হে শ্রীনারদ! তার সংসারে পুনরাগমন দেখি না। 
  • যাঁরা কার্তিকে নিয়মপূর্বক ভক্তিভরে শ্রীহরিকথা শ্রবণ করেন, শ্লোকার্ধ বা শ্লোকপাদ হলেও তাঁরা শত গাভীদান ফল পান। 
  • হে মুনিশার্দুল! কার্তিকে মঙ্গলার্থ বা লোভ বুদ্ধিতে যিনি হরিকথা কীর্তন করেন, তিনি শতকুল  উদ্ধার করেন। 
  • যিনি কার্তিকে নিত্য শাস্ত্রচর্চায় যাপন করেন তিনি সর্বপাপ নিঃশেষে দগ্ধ করে অযুত যজ্ঞের ফল লাভ করেন। 
  • হে মুনিশ্রষ্ঠ! কার্তিকে ‍যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন, তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ থেকে নিস্তার পান। 
  • হে মুনে! যিনি কার্তিকে যত্নসহ নিত্য শ্রীমদ্ভাগবতের একটি শ্লোকও পাঠ করেন, তিনি অষ্টাদশপুরাণ পাঠের ফল পান। 

কার্তিক মাসে আকাশ প্রদীপ নিবেদনের মাহাত্ম্য


প্রাচীনকালে শঙ্খ নামে এক অসুর ছিল, যে সমুদ্র বা সাগরের পুত্র ছিল। সে বলপূর্বক ইন্দ্ৰলোক সহ সমস্তলোক অধিকার করে  নিয়েছিল। সব দেবতারা এই অসুরের ভয়ে নিজ-নিজ লোক পরিত্যাগ করে একটি গুহায় আত্মগোপন করেছিল। 


শঙ্খাসুর ভাবলো-‘যদিও আমি দেব সকলকে পরাস্ত করেছি, তথাপি তাঁদেরকে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী বলে মনে হয়।'


সে উপলব্ধি করল যে, দেবতারা বৈদিক মন্ত্রসমূহ থেকে শক্তি আহরণ করেন ও ভাবলো-‘আমি বেদসমূহ লুণ্ঠন করব যাতে দেবতারা হীনবল হয়ে পড়েন। এই চেতনা নিয়ে শঙ্খাসুর ব্রহ্মার ধাম সত্যলোক থেকে বেদসমূহ লুণ্ঠন করে নিল। 


অসুর কর্তৃক লুণ্ঠিত হবার কালে মূর্তিমান দেবতাসমূহ ভীত হয়ে তার নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে পলায়ন করল ও যজ্ঞ, মন্ত্র ও বীজসমূহ সহ  জলে মিশে গেল । শঙ্খাসুর বেদের সন্ধানে সমুদ্রে প্রবেশ করলে তাদের কোথাও পেল না। 


 এই সংকটে দেবতারা যোগনিদ্রায় নিদ্রিত শ্রীভগবানের সমীপবর্তী হয়ে তাঁর স্তব করলেন। তাঁদের স্তব শুনে শ্রীভগবান  জাগ্রত হয়ে বললেন—'হে দেবগণ! আপনাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে  আমি আপনাদের বরদান করতে ইচ্ছুক। 


আপনারা আমাকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জাগ্রত করেছেন। এই কারণেই এই তিথি আমার কাছে অত্যন্ত প্রসন্নতা বিধায়ক ও সম্মানাই।


শঙ্খাসুর দ্বারা লুণ্ঠিত বেদসমূহ সমুদ্রে লীন হয়ে আছে। আমি  এই শঙ্খাসুরকে সংহারপূর্বক আপনাদেরকে বেদ এনে দেব। কার্তিক মাসে প্রাতঃস্নান মাত্রই যজ্ঞের পবিত্র বারিতে‘অবভূত্থস্নান’ বলে গণ্য হবে। 


আজ থেকে কার্তিক মাসে আমি জলে অবস্থান করব। মুনিবৃন্দের সঙ্গে আপনারা সকল দেবতাগণ অনুগ্রহপূর্বক আমার সহিত জলে প্রবেশ করুন। এই বলে শ্রীভগবান মৎস্যরূপ ধারণ করে আকাশ থেকে জলে প্রবেশ করলেন।


শঙ্খাসুরকে সংহার করে শ্রীভগবান বদরীবনে বা হিমালয়ের বদরীকাশ্রমে আগমন করলেন। সেখানে তিনি সকল ঋষিগণকে আদেশ করলেন, ‘হে মুণিঋষিগণ! আপনারা সকলে অবিলম্বে সমুদ্রে প্রবেশপূর্বক জল থেকে বৈদিক মন্ত্রসমূহ সংগ্রহ করুন। ইতিমধ্যে আমি দেবগণসহ প্রয়াগে অবস্থান করব।'


শ্রীভগবানের এই আদেশ প্রাপ্ত হয়ে সকল মহর্ষিবৃন্দ তাঁদের তপস্যাবলের দ্বারা যজ্ঞ ও অন্য মন্ত্রাদিসহ বেদসমূহকে উদ্ধার করলেন। 


সেইদিন অবধি ঋষিগণ যে-যে মন্ত্রগুলি উদ্ধার করলেন তাদের সহিত যুক্ত হলেন ও প্রত্যেকে সেই-সেই মন্ত্রের ঋষি রূপে পরিচিত হলেন। অতঃপর সকল ঋষিগণ এক সঙ্গে প্রয়াগে গিয়ে শ্রীভগবানকে দর্শন করলেন। 


তথায় সকল বেদমন্ত্রসমূহ তারা শ্রীবিষ্ণু ও ব্রহ্মাকে অর্পণ করলেন। বেদসমূহের পুনঃপ্রাপ্তিতে ব্রহ্মা অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন ও তিনি সকল দেবঋষিসহ প্রয়াগে এক অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করলেন।


কার্তিক মাসে দীপদানের মাহাত্ম্য

  • কার্তিকে নিমেষার্ধকাল দীপদান ফলে সহস্রকোটিকল্প অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয়। 
  • হে বিপ্রেন্দ্র! কার্তিকে কেশবপ্রিয় দীপদানের মাহাত্ম্যে শ্রবণ কর, দীপদান দ্বারা পৃথিবীতে আর পুনর্জন্ম হয় না। 
  • কুরুক্ষেত্রে সূর্যগ্রহণে, চন্দ্রগ্রহণে নর্মদাতে যে স্নানফল, কার্তিকে দীপদানে তা কোটিগুণ ফল হয়। 
  • কার্তিকে যার দীপ, ঘৃত বা তিলতৈল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত হয়। হে মুনিবর তার অশ্বমেধ যজ্ঞে কি ফল?
  • কার্তিকে জনার্দনে দীপদান ফলে মন্ত্রহীন, ক্রিয়াহীন, শৌচহীন সকলেই সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। 
  • কার্তিকে কেশবের অগ্রে যিনি দীপ দান করেন, তার সর্বযজ্ঞ দ্বারা যজন ও সর্বতীর্থে স্নান হয়। 
  • মেরু মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপসমূহ করলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ হয়, এতে সন্দেহ নাই। 
  • কার্তিকে বাসুদেবের সম্মুখে গৃহে বা আয়তনে দীপদানে মহাফল বৈকুন্ঠলোক প্রাপ্ত হয়। 
  • যিনি কার্তিক মাসে মধুসূদনের অগ্রে দীপদান করছেন, তিনিই মনুষ্যলোকে জন্ম সার্থক করেছেন। তিনি ধন্য, তিনি কীর্তিমান। 
  • কার্তিকে অতি অল্পকাল মাত্র দীপদানে যে ফল, তা যজ্ঞশত দ্বারা বা তীর্থশত স্নান দ্বারা প্রাপ্য নয়। 
  • হে নারদ! ত্রিভুবনে এমন কোনো পাপ নাই, যা কার্তিকে শ্রীকেশবের অগ্রে দীপদান দ্বারা শোধন করতে পারে না। 
  • কার্তিকে শ্রীবাসুদেবের অগ্রে দীপদান করে সকল বাধা মুক্ত হয়ে নিত্যধাম প্রাপ্ত হয়। 
  • যিনি কার্তিক মাসে কর্পূর দ্বারা দীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, বিশেষতঃ দ্বাদশীতে তার পুণ্য তোমাকে বলছি। হে নারদ! তার কুলে যারা জন্মেছে  এবং যারা জন্মাবে,  আর যারা বহু অতীতে যাদের সংখ্যা নাই, তারা চক্রপাণি শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদে দেবলোকে ইচ্ছামতো সুদীর্ঘকাল ক্রীড়া করে সকলে মুক্তিলাভ করবে। 
  • কার্তিকে বৈষ্ণবগৃহে যে মানব দীপদান করে, তারও সর্বদা ধন, পুত্র, যশ, কীর্তি হয়। 
  • যেমন মন্থন দ্বারা সর্বকোষ্ঠে অগ্নি দৃষ্ট হন, সেইরূপ দীপদান প্রভাবে ধর্ম সর্বত্র দৃশ্য হন, এতে সংশয় নাই। 
  • হে বিপ্রেন্দ্র! নির্ধন ব্যক্তিরও আত্মবিক্রয় করে কার্তিকে পূর্ণিমা যাবৎ দীপদান কর্তব্য। 
  • হে মুনে! কার্তিকে বিষ্ণুমন্দিরে যে মূঢ়ব্যক্তি দীপদান না করে সে বৈষ্ণব মধ্যে স্বীকৃত নয়। 
পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে
*কার্তিকে শ্রীহরিমন্দিরে যিনি অখন্ড দীপ দান করেন, তিনি শ্রীহরিধামে দিব্যজ্যোতিঃ শ্রেষ্ঠ বিমানে ক্রীড়া করেন। 
 
 

কার্ত্তিক ব্রতের মহিমা

কার্ত্তিক ব্রত মাহাত্মের নানাবিধ বর্ণনা আছে ও কার্ত্তিক মাসে অনুসরণযোগ্য বিভিন্ন বিধিনিষেধও আছে। শ্রীল সনাতন গোস্বামী স্কন্দপুরাণ, পদ্মপুরাণ আদি বিভিন্ন পুরাণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর ‘হরিভক্তিবিলাস’ গ্রন্থে কার্ত্তিক ব্রতের বর্ণনা দিয়েছেন। সেইসব বর্ণনার কিছু অংশ নিম্নে প্রদত্ত হল:-

 
কার্ত্তিকব্রতেরমহিমা

‘সকল তীর্থ, যজ্ঞ, দক্ষিণা, পুষ্করে, কুরুক্ষেত্রে ও হিমালয়ে বসবাসের পুণ্য ও মেরুসদৃশ স্বর্ণস্তুপ দানের পুণ্য এ সবই শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় কার্ত্তিক মাসের মধ্যে অবস্থান করে।’ ‘কার্ত্তিক মাসে শ্রীবিষ্ণুর যে সেবাই করা হয় তা সবই নিত্য। 
 
 
হে নারদ, আমি তোমাকে সত্য বলছি।’ ‘কার্ত্তিক হল সব মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, পুণ্যকর্মসমূহের মধ্যে পুণ্যতম, যা-কিছু শুদ্ধ করে তার মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধকারী।’ ‘কার্ত্তিকের তুল্য মাস নেই। সত্যযুগের ন্যায় যুগ নেই। বেদের সমান শাস্ত্র নেই। গঙ্গার ন্যায় পুণ্যস্থান নেই।’ ‘কার্ত্তিক মাস শ্রেষ্ঠ। 
 
কার্ত্তিক সর্বদা বৈষ্ণবগণের প্রিয়। হে মহর্ষি, যে বৈষ্ণব ভক্তিসহকারে কার্ত্তিকের পরিচর্য্যা করেন তিনি পূর্বপুরুষগণকে নরক থেকে উদ্ধার করেন।

 
পদ্মপুরাণে কথিত হয়েছে :

দ্বাদশ মাসের মধ্যে কার্ত্তিকই শ্রীহরির সর্বাধিক প্রিয়। এই সময়ে যিনি এমনকি শ্রীবিষ্ণুর সামান্য আরাধনাও করেন, কার্ত্তিকমাস তাঁকে শ্রীবিষ্ণুর অপ্রাকৃত ধামে বাস প্রদান করে। ‘সবাই জানে, ভগবান দামোদর তাঁর ভক্তগণকে ভালবাসেন। 
 
 
শ্রীদামোদর মাস, এই কার্ত্তিক মাসও ভক্তদের ভালবাসেন। কার্ত্তিকমাস সামান্যতম ভক্তিকেও প্রচুর ও গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কার্ত্তিক মাসে একটিমাত্র প্রদীপ নিবেদনেও প্রসন্ন হন। যারা দামোদরের উদ্দেশ্যে দীপদানের ব্যাপারে অন্যদেরকে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে সাহায্য করেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এমনকি তাঁদেরও মহিমান্বিত করেন।
 
 
 
স্কন্দপুরাণে কথিত হয়েছে : ‘কার্ত্তিক মাসে দান, যজ্ঞ, জপ ও তপস্যা করা হলে, হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ, তা অক্ষয় ফল প্রদান করে।’ অধিকন্তু বলা হয়েছে : ‘হে নারদ, আমি স্বয়ং দেখেছি যে কোন ব্যক্তি কার্ত্তিক মাসে মহানন্দে ভগবদ্গীতা পাঠ করলে তিনি জন্ম মৃত্যুময় এই পৃথিবীতে আর প্রত্যাবর্তন করেন না।’ 
 
 
‘যে ব্যক্তি কার্ত্তিক মাসে শ্রীবিষ্ণু সহস্রনাম ও গজেন্দ্র মোক্ষণ লীলা পাঠ করেন, তাঁর পুনর্জন্ম হয় না।’ ‘হে মহর্ষি, অনুগ্রহপূর্বক অন্য সমস্ত ধর্মাচরণ পরিত্যাগপূর্বক কার্ত্তিকমাসে কেবলমাত্র ভগবান কেশবের বিগ্রহের সমক্ষে পবিত্র শাস্ত্রসমূহ শ্রবণ করুন।’

 
পদ্মপুরাণে কথিত হয়েছে : কার্ত্তিক মাসে ভূমিতে শয়ন, ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বন, পলাশ পত্রের উপর হবিষ্যান্ন আহার ও শ্রীদামোদরের আরাধনা করা কর্তব্য। এইরূপে সর্বপাপমুক্ত হয়ে ভগবদ্ধামে সারূপ্যমুক্তি লাভ করে শ্রীহরির সাক্ষাৎ সেবানন্দ লাভ হয়।’

 
অধিকন্তু বলা হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি সমগ্র কার্ত্তিকমাস ব্যাপী প্রত্যুষে ওঠেন, স্নান করেন, ইন্দ্রিয় সংযত রাখেন, শান্ত থাকেন, জপ করেন ও শুধুমাত্র হবিষ্যান্ন গ্রহণ করেন, তিনি সর্বপাপমুক্ত হন।’

 
‘যে ব্যক্তি সমগ্র কার্ত্তিক মাসে দিনে একবার মাত্র আহার করেন, তিনি অতি বিখ্যাত, শক্তিশালী ও নায়কোচিত হয়ে ওঠেন।’ ‘যে ব্যক্তি কার্ত্তিক মাসে পলাশপত্রের উপর ভোজন করেন তিনি সর্বপাপমুক্ত হন। যে জন শ্রীহরির প্রসাদভোজী হন তাঁর মোক্ষলাভ হয়। 
 
 
যে ব্যক্তি যোগ্য ব্রাহ্মণ নন, তার পক্ষে পলাশ বৃক্ষের মাঝখানের পাতায় ভোজন করা উচিত নয়।’
আরো বলা হয়েছে : কার্ত্তিকমাসে যিনি সর্বশক্তিমান ভগবান শ্রীহরির আরাধনা করেন, শ্রীভগবান তাঁর সহস্র-সহস্র অপরাধ ও বহু ভয়াবহ পাপকর্ম মার্জনা করেন।’ 

 
‘যে ব্যক্তি শ্রীবিষ্ণুকে ঘৃত ও শর্করাযুক্ত সুস্বাদু পরমান্ন নিবেদন করে সেই প্রসাদ গ্রহণ করেন, তিনি দৈনিক মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠানের ফল প্রাপ্ত হন।’

 
শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামাকে ব্যাখ্যা করে বলছেন :

“যারা কার্ত্তিক মাসে স্নান, রাত্রি জাগরণ, দীপদান ও তুলসীবন সংরক্ষণ করেন তাঁরা শ্রীবিষ্ণুর ন্যায় দিব্যদেহ লাভ করেন।”

 
যারা তিনদিবস মাত্র এসকল পুণ্যকর্ম করেন, দেবগণও তাঁদের সর্বপ্রকারে সম্মানিত করেন। যারা সমগ্র জীবন এইসকল পুণ্যকর্মের অনুষ্ঠান করে এসেছেন তাঁদের আর কি কথা?
 
 
আকাশদীপেরমহিমা

পদ্মপুরাণে উক্ত হয়েছে :‘যে ব্যক্তি কার্ত্তিক মাসে উচ্চাকাশে মহাদীপ প্রদান করেন তিনি সমস্ত কুটুম্বগণসহ বিষ্ণুলোকে গমন করেন।’

 
আকাশে দীপদানের মন্ত্র

 
‘নমোহনস্তায় বেধসে ’ (পরমস্রষ্টা অনন্তদেবকে প্রণাম করি) মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে ভক্তগণ আকাশে ভগবান দামোদর ও সৌভাগ্যদেবীকে দীপ-নিবেদন করেন।

 
কিছু সুনির্দিষ্ট স্থানে কার্ত্তিকব্রত পালনের মাহাত্ম্য

 
পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে:
‘কেউ যে স্থানেই থাকুন না কেন, কার্ত্তিকমাসে স্নান, দান ও বিশেষতঃ শ্রীভগবানের আরাধনার মাধ্যমে অগ্নিহোত্র যজ্ঞানুষ্ঠানের ফললাভ করবেন।’

 
কার্ত্তিক ব্রত পালনের ফল দশলক্ষ গুণ বর্ধিত হয় যখন তা কুরুক্ষেত্রে বা গঙ্গাতটে অনুষ্ঠিত হয়। পুষ্কর তীর্থে তার ফল আরো অধিক। কার্ত্তিক মাসে দ্বারকায় স্নান ও ভগবৎ আরাধনার ফলে কৃষ্ণলোকপ্রাপ্তি ঘটে।’ ‘হে মুনিগণ, অন্যান্য তীর্থনগরীও অনুরূপ ফলপ্রদান করে। মথুরামণ্ডলের কথা ভিন্ন কারণ শ্রীকৃষ্ণ মথুরামণ্ডলেই দামোদরলীলা প্রকাশ করেছিলেন।’

 
‘মথুরায় কার্ত্তিক ব্রত পালনের ফলে কৃষ্ণপ্রেম লাভ হয়। এইরূপে মথুরায় সর্বোত্তম ফললাভ হয়। যেরূপ মাঘ মাসে প্রয়াগের সেবা ও বৈশাখ মাসে গঙ্গার সেবা করণীয়, তদ্রুপ কার্ত্তিক মাসে মথুরায় সেবা কর্তব্য। কার্ত্তিকে মথুরার সেবা অপেক্ষা কিছুই অধিক উত্তম নয়।’ 
 
 
যাঁরা কার্ত্তিক মাসে মথুরায় স্নানপূর্বক দামোদরের আরাধনা করেন, তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের ন্যায় চিদ্দেহ লাভ করেন। এই বিষয় সন্দেহাতীত।’

 
‘হে ব্রাহ্মণ, মথুরায় কার্ত্তিক মাস অতিবাহিত করার ভাগ্য অতি দুর্লভ। যারা কার্ত্তিকে মথুরায় দামোদরের আরাধনা করেন, শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের নিকট স্বীয় অপ্রাকৃতরূপ প্রকাশ করেন।’

 
‘যে সকল ভক্তগণ অন্যত্র তাঁর আরাধনা করেন, শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের সুখ ও মোক্ষ প্রদান করেন বটে, কিন্তু ভক্তি প্রদান করেন না, কারণ ভক্তি তাঁকে তাঁর ভক্তের ভৃত্যে পরিণত করে।’
 
 
তথাপি কার্ত্তিক মাসে মথুরায় একবার মাত্র দামোদর আরাধিত হলে অনায়াসে সেই ভক্তি লাভ করা যায়।’
 
 

কার্ত্তিক মাসে করণীয় কর্তব্যসমূহ


 
কার্ত্তিক মাহাত্ম্যে শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামাকে বলছেন: ‘আশ্বিন মাসের শুক্লা একাদশী থেকে শুরু হওয়া কার্ত্তিকব্রত কঠোরভাবে পালনীয়।’ ‘এই ব্রতানুসারে শেষরাত্রিতে জাগ্রত হয়ে স্তবদ্বারা বিগ্রহকে জাগ্রত করে আরতি নিবেদন করা উচিত।’
 
 
‘প্রাতে বৈষ্ণবসঙ্গে পরমানন্দে শ্রীবিষ্ণুভক্তি বিষয়ক ধর্মকথা শ্রবণ ও বিষ্ণুর গুণকীর্ত্তন করে শ্রীবিষ্ণুকে আরতি নিবেদন করা কর্তব্য।’ ‘অতঃপর নদী বা অন্য জলাশয়ে গমন করে আচমন পূর্বক সঙ্কল্প মন্ত্র ও প্রার্থনামন্ত্র উচ্চারণ করে যথাযথভাবে শ্রীভগবানকে অর্ঘ্যপ্রদান করা উচিত।’ 

 
২০ অক্টোবর হতে শুরু - লক্ষ্মী পূর্ণিমা হতে রাস পূর্ণিমা মানে ১৯ শে নভেম্বর পর্যন্ত।
এই মাসে সাত্ত্বিক আহার এর বিধি রয়েছে এক কথায় নিরামিষ আহারের কথা বর্ণিত আছে।

 
দামোদর মাস বা কার্তিক মাস সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাস ভগবান বিষ্ণুর মাস বলে খ্যাত।

 
‘হে শ্রীদামোদর, হে ভক্তগণের দুর্দশা বিনাশকারী প্রভু, হে সর্বেশ্বরেশ্বর, আপনাকে ও রাধারাণীকে প্রসন্ন করার জন্য আমি কার্ত্তিকমাসে প্রতিদিবস প্রাতঃস্নান করব।’

 
‘কার্ত্তিকব্রতের অংশগুলি হল:
 
(১) শ্রীহরির প্রীতার্থে রাত্রিজাগরণ,
(২) প্রাতঃস্নান,
(৩) তুলসী-সেবা,
(৪) যথাযথরূপে ব্রত সমাপন ও
(৫) দীপদান।’
‘যে ব্যক্তি কার্ত্তিকমাসে এই পঞ্চব্রত অনুসরণ করেন, তিনি এই গ্রন্থে ইতিপূর্বে বর্ণিত সুখ ও মোক্ষরূপ পূর্ণফল লাভ করেন।’ 
 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন