ভগবান সর্ব কারণের কারণ
ভগবান সবকিছু কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন
শ্রীনারদমুনি ব্রহ্মাকে বললেন—“হে দেবাদিদেব! আপনি সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে প্রথম জন্মা, আমি আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
কৃপা করে আপনি আমাকে দিব্য জ্ঞান দান করুন, যা মানুষকে আত্মা এবং পরমাত্মার তত্ত্ব বিশেষভাবে জ্ঞাপন করে।”
“হে পিতা! কৃপা করে আপনি আমাকে এই ব্যক্ত জগতে বাস্তবিক লক্ষণসমূহ বর্ণনা করুন। তার আশ্রয় কি? কিভাবে তার সৃষ্টি হয়েছে? কিভাবে তার সংরক্ষণ হয়? এবং কার নিয়ন্ত্রণে এই সবকিছু সম্পাদিত হচ্ছে?
হে পিতা, এই সব কিছুই আপনি বিজ্ঞানসম্মতভাবে জানেন কেননা পূর্বে আপনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, ভবিষ্যতে যা কিছু সৃষ্টি হবে এবং বর্তমানে যা কিছু সৃষ্টি হচ্ছে, এবং এই ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু রয়েছে তা সবই আপনার হস্তস্থিত একটি আমলকীর মতো।
হে পিতা! আপনার জ্ঞানের উৎস কি? আপনি কার আশ্রয়ে রয়েছেন? এবং কার অধীনে আপনি কার্য করছেন? আপনার বাস্তবিক স্থিতি কি? আপনি কি আপনার শক্তির দ্বারা জড় উপাদানের সাহায্যে সমস্ত জীবদের সৃষ্টি করেন?
মাকড়সা যেমন অনায়াসে কারো দ্বারা পরাভূত না হয়ে জাল সৃষ্টি করে, আপনিও তেমন অন্য কারো সাহায্য ব্যতীত, আপনার স্বয়ংসম্পূর্ণ শক্তির প্রভাবে সৃষ্টি করেন। নাম, রূপ, গুণ ইত্যাদির মাধ্যমে বিশেষ বস্তু সম্বন্ধে আমরা যা কিছু জানতে পারি, তা উৎকৃষ্ট, নিকৃষ্ট অথবা সমান হোক অথবা নিত্য বা অনিত্য হোক,
তা সবই আপনি ছাড়া আর কারো দ্বারা সৃষ্টি হয়নি, আপনি এতই মহান্। আপনি যদিও সৃষ্টির ব্যাপারে অত্যন্ত শক্তিশালী, তথাপি আপনি যে পূর্ণরূপে অনুশাসন অনুসরণ করে কঠোর তপস্যা করেছেন সে কথা ভেবে আমরা আশ্চর্যান্বিত চিত্তে অনুমান করি যে,
আপনার থেকেও অধিক শক্তিশালী আর কেউ একজন রয়েছেন। হে পিতা! আপনি সবকিছু জানেন, এবং আপনি সকলের নিয়ন্তা। তাই আমি যে সমস্ত প্রশ্ন আপনার কাছে করেছি, আপনি কৃপা করে আমাকে তার উত্তর দিন যাতে আমি আপনার শিষ্যরূপে তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারি।"
ঋষি ব্রহ্মা বললেন- “হে বৎস নারদ, সকলের প্রতি কৃপাপরবশ হয়ে (এমনকি আমার প্রতিও) তুমি এই সমস্ত প্রশ্নগুলি করেছ, কেননা তার ফলে পরমেশ্বর ভগবানের পরাক্রম দর্শন করে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
তুমি আমার সম্বন্ধে যা বলেছ তা মিথ্যা নয়, কেননা যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ আমার থেকে পরতর পরম সত্য পরমেশ্বর ভগবান সম্বন্ধে অবগত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে অবশ্যই আমার বীর্যবর্তী কার্যকলাপ দর্শন করে মোহিত হয়।
ভগবান তাঁর স্বীয় জ্যোতি (রহ্মজ্যোতি) দ্বারা জগৎ সৃষ্টি করার পর তাঁরই শক্তিতে সেই ভগবৎ প্রকাশিত বস্তুকে আমি পুনরায় সৃষ্টির দ্বারা প্রকাশ করি, ঠিক যেমন সূর্য, অগ্নি, চষ্ট, আকাশ, প্রভাবশালী গ্রহসমূহ, নক্ষত্ৰ আদি প্রকাশিত হয়।
আমি পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি এবং তাঁর ধ্যান করি, যাঁর দুর্জয় মায়া অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, তারা আমাকে পরম নিয়ন্তা বলে মনে করে।
ভগবানের মায়া শক্তি তাঁর কার্যকলাপের জন্য লজ্জাবোধ করার ফলে ভগবানের সম্মুখে আসতে পারেন না। কিন্তু যে সমস্ত জীব মায়ার দ্বারা মোহিত হয়েছে, তারা সর্বদাই 'আমি' এবং 'আমার' এই চিন্তায় মগ্ন হয়ে সর্বক্ষণ প্রলাপ করে।
সৃষ্টির পাঁচটি মৌলিক উপাদান বা পঞ্চ মহাভূত, কর্ম, শাশ্বত কাল, জীবের স্বভাব এবং জীব, এই সমস্তই পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেবের বিভিন্ন অংশ, এবং বাসুদেব থেকে এদের কোন ভিন্ন সত্তা নেই। সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র পরমেশ্বর ভগবান নারায়ণ কর্তৃক প্রণীত হয়েছে এবং সেগুলি তাঁরই নিমিত্ত;
সমস্ত দেবতারা তাঁরই অঙ্গ থেকে উদ্ভূত এবং তাঁরা সকলেই তাঁর সেবক, স্বর্গ আদি বিভিন্ন লোকসমূহ তাঁরই জন্য এবং বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য কেবল তাঁরই সন্তুষ্টি বিধান করা।
সর্বপ্রকার ধ্যান এবং যোগ হচ্ছে নারায়ণকে জানবার বিভিন্ন উপায়, সর্বপ্রকার তপশ্চর্যার উদ্দেশ্য হচ্ছে নারায়ণকে প্রাপ্ত হওয়া। দিব্য জ্ঞানের সংস্কৃতির উদ্দেশ্য হচ্ছে নারায়ণের দর্শন লাভ করা এবং মুক্তির চরম অবস্থা হচ্ছে নারায়ণের ধামে প্রবেশ করা।
তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, সর্বব্যাপ্ত পরমাত্মারূপ তাঁর দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে তিনি পূর্বেই যা সৃষ্টি করেছেন আমি কেবল তা পুনঃপ্রকাশ করি। এমনকি আমিও তাঁরই সৃষ্টি।
পরমেশ্বর ভগবানের স্বরূপ শুদ্ধ চিন্ময় এবং তা সমস্ত জড় গুণের অতীত, তথাপি জড় জগতের সৃষ্টি, পালন এবং ধ্বংসের জন্য তিনি তাঁর বহিরঙ্গা শক্তির মাধ্যমে সত্ত্ব, রজো এবং তমো নামক প্রকৃতির তিনটি গুণ স্বীকার করেন।
প্রকৃতির এই তিনটি গুণ দ্রব্য, জ্ঞান এবং ক্রিয়ারূপে প্রকাশিত হয়ে নিত্য শাশ্বত জীবকে তার সমস্ত কার্যকলাপের জন্য দায়ী করে তাকে কার্য এবং কারণের বন্ধনে আবদ্ধ করে।”
“হে ব্রাহ্মণ নারদ! সেই পরম স্রষ্টা পরমেশ্বর ভগবান প্রকৃতির তিনটি গুণের দ্বারা প্রভাবিত বদ্ধ জীবের জড় ইন্দ্রিয়ের অগোচর। তিনি সকলের, এমনকি আমারও নিয়ন্তা। সমস্ত শক্তির নিয়ন্তা ভগবান, তার শক্তির দ্বারা নিত্যকাল, সমস্ত জীবের অদৃষ্ট এবং তাদের স্বভাব সৃষ্টি করেন, এবং তিনি পুনরায় স্বতন্ত্রভাবে তাদের নিজের মধ্যে বিলীন করে দেন।
প্রথম পুরুষ অবতারের (কারণার্ণবশায়ী বিষ্ণু) পর মহত্তত্ত্ব বা জড় সৃষ্টির তত্ত্ব প্রকাশিত হয়, তারপর কাল প্রকট হয়, এবং কালক্রমে তিনটি গুণ প্রকাশিত হয়, প্রকৃতির অর্থ হচ্ছে তিনটি গুণের অভিব্যক্তি।
সেগুলি কার্যে রূপান্তরিত হয়। মহত্তত্ব বিক্ষুব্ধ হওয়ার ফলে জড় কার্যকলাপের উদ্ভব হয়। প্রথমে সত্ত্বগুণ এবং রজোগুণের রূপান্তর হয় এবং তারপর তমোগুণের প্রভাবে দ্রব্য, জ্ঞান এবং ক্রিয়াশক্তির উদ্ভব হয়।
আত্মকেন্দ্রিক অহঙ্কার তিন রূপে রুপান্তরিত হয়ে বৈকারিক, তৈজস এবং তামস অর্থাৎ সাত্ত্বিক অহঙ্কার, রাজস অহঙ্কার ও তামস অহঙ্কার এই তিন প্রকারে উদ্ভূত হয়। তামস অহঙ্কার থেকে দ্রব্য শক্তি,
রাজস অহঙ্কার থেকে ক্রিয়া শক্তি এবং সাত্ত্বিক অহঙ্কার থেকে জ্ঞানশক্তি প্রকাশ হয়। হে নারদ, তুমি তা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম।
তামস অহঙ্কার থেকে প্রথমে পঞ্চ মহাভূতের প্রথম উপাদান আকাশের উৎপত্তি হয়েছে। সেই আকাশের সূক্ষ্মরূপ হচ্ছে শব্দ, ঠিক যেমন দ্রষ্টার সঙ্গে দৃশ্যের সম্পর্ক। আকাশের রূপান্তরের ফলে স্পর্শ গুণযুক্ত বায়ুর উৎপত্তি হয়েছে,
এবং কারণরূপে তাতে আকাশের সম্বন্ধ থাকাতে বায়ুতেও শব্দগুণ রয়েছে। বায়ুই দেহধারণ, ইন্দ্রিয় অনুভূতি, মানসিক বল ও শরীরের শক্তির হেতু কাল, কর্ম ও স্বভাববশত বায়ুর বিকারের ফলে আগুন উৎপন্ন হয়।
আগুনের গুণ রূপ। আকাশ ও বায়ু তেজের কারণ হওয়াতে তেজেও রূপসহ শব্দ ও স্পর্শ গুণ বিরাজিত। আগুনের বিকারের ফলে রসাত্মক জলের উৎপত্তি হয়। জলে আকাশ, বায়ু ও তেজের কারণরূপ সম্বন্ধ থাকাতে তাতে যথাক্রমে শব্দ, স্পর্শ ও রূপ বর্তমান।
জলের বিকার থেকে মাটি উৎপন্ন হয়। মাটির স্বাভাবিক গুণ গন্ধ। এই মাটিতে আকাশ, বায়ু, তেজ ও জলের কারণরূপ সম্বন্ধ থাকাতে মাটিতে সেগুলির গুণ শব্দ, স্পর্শ, রূপ ও রস বর্তমান।
বৈকারিক অহঙ্কার থেকে মন উদ্ভূত হয়ে ব্যক্ত হয়েছে, সেই সঙ্গে শরীরের গতি নিয়ন্ত্রক দশটি দেবতাও প্রকট হয়েছেন। এই সমস্ত দেবতারা হচ্ছেন দিকসমূহের নিঃস্ত, বায়ুর নিয়ন্তা পাকাদের, সূর্যদেব, দক্ষ প্রজাপতির পিতা, অশ্বিনী কুমারদ্বয়, দেবরাজ ইন্দ্র, স্বর্গের শ্রীবিগ্রহ উপেন্দ্র, আদিত্যদেবগণের প্রধান মিত্র এবং প্রজাপতি ব্রহ্মা।
রাজস অহঙ্কার বিকার প্রাপ্ত হলে তা থেকে আনশক্তি বৃদ্ধি এবং ক্রিয়াশক্তি প্রাণসহ কর্ণ, ত্বক, নাসিকা, চক্ষু, জিহ্বা, বাক্, পাণি, উপস্থ, পাদ এবং পায়ু এই দশটি ইন্দ্রিয়ের উৎপত্তি হয়। "
"হে শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মবিদ নারন। এই সমস্ত সৃষ্ট অংশগুলি, যথা পঞ্চ মহাভূত, ইন্দ্রিয়-সমূহ, মন এবং প্রকৃতির গুণগুলি যতক্ষণ পর্যন্ত না মিলিত হয়, ততক্ষণ শরীর সৃষ্টি সম্ভব হয় না।
এইভাবে ভগবানের শক্তির দ্বারা এইগুলি একত্রিত হওয়ার ফলে সৃষ্টির মুখ্য এবং গৌণ কারণসমূহ স্বীকার করে এই ব্রহ্মাণ্ড প্রকট হয়েছে। এইভাবে সমস্ত ব্ৰহ্মাণ্ডসমূহ হাজার হাজার বছর কারণ সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত ছিল।
তারপর সমস্ত জীবের ঈশ্বর ভগবান তাদের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে সেগুলিকে পূর্ণরূপে সজীব করেন। যদিও ভগবান (মহাবিষ্ণু) কারণ সমুদ্রে শায়িত রয়েছেন, তথাপি তিনি তার থেকে নির্গত হয়ে নিজেকে হিরণ্যগর্ভরূপে বিভক্ত করে প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ডে প্রবেশ করেছেন এবং শত-সহস্র পাদ, হস্ত, মুখ, অক্ষি, মস্তক ইত্যাদি সহ বিরাটরূপ পরিগ্রহ করেছেন।
বড় বড় দার্শনিকেরা কল্পনা করে যে ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত লোকসমূহ ভগবানের বিরাটরূপে ঊর্ধ্ব এবং নিম্ন ভাগের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের প্রদর্শন। ব্রাহ্মণেরা ভগবানের মুখ, ক্ষত্রিয়েরা তাঁর বাহু, বৈশ্যরা তাঁর জঙ্ঘা এবং শূদ্রেরা তাঁর পদ যুগল থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
পৃথিবীর স্তর পর্যন্ত সমস্ত অধঃলোক তাঁর পদযুগলে অবস্থিত। তার ঊর্ধ্বে ভুবলোক তাঁর নাভিদেশে অবস্থিত। তারও ঊর্ধ্বে দেবতাদের বাসস্থান স্বর্গলোক তাঁর হৃদয়ে অবস্থিত এবং মহান মুনি-ঋষিরা যেখানে বিরাজ করেন সেই মহলোক তাঁর বক্ষে অবস্থিত বলে কথিত হয়েছে।
সেই বিরাট পুরুষের গ্রীবাদেশে জনলোক অবস্থিত, স্তনদ্বয় তপোলোক এবং মস্তকে এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ লোক সত্যলোক অবস্থিত। তার ঊর্ধ্বে যে বৈকুণ্ঠলোক তা নিত্য (অর্থাৎ এই সৃষ্ট জগতের অন্তর্বর্তী নয়)।”
"হে পুত্র নারদ, আমার থেকে অবগত হও যে ব্রহ্মাণ্ডের চতুর্দশ ভুবনের মধ্যে সাতটি হচ্ছে অধঃলোক। অতল নামক প্রথম লোকটি সেই বিরাট পুরুষের কটিদেশে অবস্থিত, দ্বিতীয়লোক বিতল তাঁর ঊরুদ্বয়ে অবস্থিত, তৃতীয়লোক সুতল তাঁর জানুদ্বয়ে অবস্থিত, চতুর্থলোক তলাতল তাঁর জঙ্ঘাদ্বয়ে অবস্থিত, পঞ্চমলোক মহাতল তার গুদয়ে অবস্থিত, ষষ্ঠ রসাতল তার পদদ্বয়ের অগ্রভাগে অবস্থিত এবং সপ্তমলোক পাতাল তাঁর পদতলে অবস্থিত।
এইভাবে ভগবানের বিরাট রূপ সমস্ত লোকে পূর্ণ। অন্যেরা ব্রহ্মাণ্ডের সমগ্র লোকসমূহকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করতে পারে। যথা, ভগবানের বিরাট রূপের পদযুগলে অবস্থিত পাতাল লোক থেকে শুরু করে এই পৃথিবী পর্যন্ত ভুলোক, নাভিদেশে । অবস্থিত ভুবলোক, এবং বক্ষ থেকে শুরু করে মস্তক - পর্যন্ত স্বৰ্গলোক নামক ঊর্ধ্বলোকসমূহ। "
আরও পড়ুনঃ
* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব
* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা
* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন
* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার
* আমাদের হৃদয়ে ভগবান কোথায় থাকেন?
* শুদ্ধ ভক্তি কি? কোন দেবতার পূজা করলে কি লাভ করা যায়