সুখী হওয়ার পন্থা কি
সুখী হওয়ার সরলতম পন্থা
আমাদের দুঃখ-ক্লেশের পরম কারণ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করাকে বলা হয় ব্রহ্ম-জিজ্ঞাসা, পরম সত্য সম্বন্ধে অনুসন্ধান বেদান্তসূত্রের শুরুতেই বলা হয়েছে- অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসাঃ “এই মানবজীবন প্রাপ্ত হওয়ার পর ব্রহ্ম সম্বন্ধে, পরমতত্ত্ব সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা উচিত।”
আমাদের মানবজীবন লাভের এ সুযোগটির সদ্ব্যবহার করা উচিত। পরমসত্য সম্বন্ধে অনুসন্ধান না করে, কীভাবে এ দুর্দশাময় জড়জাগতিক জীবনের পরিসমাপ্তি করা যায়, তার চেষ্ট না করে কেবল পশুদের মতো বেঁচে থাকা আমাদের উচিত নয়।
অবশ্য আমরা প্রকৃতপক্ষে আমাদের নিজস্ব দুঃখ-কষ্ট বন্ধ করার চেষ্টা করছি, অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়াসে কঠোর পরিশ্রম করার মধ্য দিয়ে। কেন আমরা অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করি, কেননা আমরা মনে করি, “যদি আমি কিছু টাকার সংস্থান করতে পারি, আমার দুঃখ লাঘব হবে”। সুতরাং, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই চলছে এবং প্রত্যেকেই ইন্দ্রিয়তৃপ্তির দ্বারা সুখী হওয়ার চেষ্টা করছে।
কিন্তু এ ইন্দ্ৰিয়তৃপ্তি প্রকৃত সুখ নয়। প্রকৃত সুখ হচ্ছে চিন্ময় সুখ, যা শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার মাধ্যমে লাভ করা যায়। তাই প্রকৃত সুখ। জড়জাগতিক সুখ কেবল সুখের প্রতিফলন মাত্র, বিকৃত সুখ।
জড়জাগতিক সুখ মরুভূমিতে মরীচিকায় দৃষ্ট জলের মতো। মরুভূমিতে জল নেই, কিন্তু যখন কোনো তৃষ্ণার্ত পশু মরুভূমিতে মরীচিকায় জল দেখতে পায়, সে তার প্রতি ধাবিত হয় এবং সে মৃত্যুবরণ করে। আমরা জানি, মরুভূমিতে কোনো জল নেই।
সেখানে 'জল' বলে যা প্রতীয়মান হয় তা কেবল সূর্যালোকের প্রতিফলন মাত্র। কিন্তু পশুরা তা জানে না। ঠিক তেমনি মানবজীবনের অর্থ ইন্দ্রিয়তৃপ্তির মাধ্যমে সুখভোগের প্রয়াস বর্জন করা, যা মরুভূমিতে মরীচিকা ছাড়া আর কিছু নয়
এবং প্রকৃত সুখ চিন্ময় সুখের জন্য প্রয়াসী হওয়া।
কেবল হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তনের মাধ্যমে আমরা এ উচ্চতর সুখের স্তরে আসতে পারি, চিন্ময় সুখ আস্বাদন করতে পারি। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ, কীর্তন একটি সরল পন্থা, তবুও তা আমাদের জড়জগতের দুঃখ-ক্লেশ থেকে চিরতরে মুক্ত করতে পারে। আমাদের হৃদয় অনেক কলুষিত থাকার ফলে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করতে হচ্ছে।
আমরা ঠিক অপরাধীর মতো, যার হৃদয়ে অনেক কলুষ রয়েছে। সে মনে করে, “আমি যদি এটা লাভ করতে পারি, তাহলে আমি সুখী হব।” আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে অপরাধ করে। যে চোর, সে জানে যে, সে যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, তবে তাকে শাস্তি পেতে হবে, কিন্তু তবুও সে চুরি করতে যায়, চুরি করে। কেন? নুনং প্রমত্ত- সে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে আর কিছুই নয়।
সুতরাং আমাদের চিত্তকে, হৃদয়কে সমস্ত কলুষিত বাসনা থেকে মুক্ত করতে হবে, নির্মল করতে হবে, যে বাসনাগুলো আমাদের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য কর্ম করতে বলপূর্বক প্ররোচিত করছে এবং আমরা দুঃখভোগ করছি। এ যুগে চিত্ত শোধন, হৃদয়ের নির্মলতা লাভ অত্যন্ত সহজ- কেবল হরেকৃষ্ণ কীর্তন করুন আর কিছুই নয়।
এই হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অবদান। চেতোদপর্ণমার্জনং ভব মহাদাবাগ্নি নির্বাপনম্। আপনি যদি হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করেন, অবিরাম এক দেহ থেকে আরেক দেহে দেহান্তরিত হয়ে চলার ফলে উৎপন্ন দুর্দশা ভোগ থেকে আপনি বিমুক্ত হবেন। দিব্য নাম কীর্তন এত সরল একটি পন্থা। এখানে জাতি, বর্ণ, সম্প্রদায়, ধর্ম, সামাজিক অবস্থা এসবের কোনো প্রশ্ন নেই।
ভগবানের কৃপায়, প্রত্যেকেরই জিহ্বা রয়েছে, কান রয়েছে। সুতরাং, প্রত্যেকেই জপ করতে পারে- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে। কেবল হরেকৃষ্ণ কীর্তন করুন এবং সুখী হোন।
আরও পড়ুন
* আত্মা ও দেহের পার্থক্য এবং এবং আমাদের দুঃখের প্রকৃত কি?* সুখ অর্থে নয় সন্তুষ্টিতে
* মহাজন উপদেশ-শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজ
*মহাজন উপদেশ-শ্রী যমরাজ
* জীবনে সাফল্য পেতে চান! তাহলে মেনে চলুন এই দশটি টিপস
* চানক্য পন্ডিতের অমূল্য বাণী যা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে
* মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী
* মহাজন উপদেশ-শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজ
*মহাজন উপদেশ-শ্রী যমরাজ
* জীবনে সাফল্য পেতে চান! তাহলে মেনে চলুন এই দশটি টিপস
* চানক্য পন্ডিতের অমূল্য বাণী যা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে
* মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী