ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন-নীতিশিক্ষা
নীতিশিক্ষা গল্প
বহুকাল পূর্বে রাজা দানবীর এক সুবিশাল সাম্রাজ্য শাসন করতেন। তার বুদ্ধিমন্ত নামে এক বিজ্ঞ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল এবং ভগবানের প্রতি ভক্তিপরায়ণ। দানবীরও ছিলেন সদগুণসম্পন্ন রাজা। অনেক প্রজা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য তার নিকট আসতো।
তিনি ভক্তদের সহস্র গাভী দান করতেন এবং তাদের চারণক্ষেত্র সরবরাহ করতেন। তার এই স্বভাব দশৃন করে লোকেরা তাকে দানবীর নামে সম্বোধন করতো।
রাজসভার নৈমিত্তিক কার্যাবলিতে রাজা দানবীর ভাবলেন, তার দ্বারাই সবকিছু প্রদান করছেন। অপরপক্ষে, মন্ত্রী ভগবানকে সবকিছুর নিয়ন্তারূপে দর্শন করতেন। তিনি জানতেন যে, কেবল ভগবানের ইচ্ছাতেই সবকিছু সংঘটিত হচ্ছে। এসকল বিভেদ সত্ত্বেও রাজা মন্ত্রীর প্রশংসা করতেন এবং তারা ছিলেন খুব ভালো বন্ধু। রাজা যখন মৃগয়ার জন্য বনে যেতেন, মন্ত্রীও তার সঙ্গী হতেন।
একবার তারা যখন শিকারে গিয়েছিলেন, রাজা একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাতের একটি আঙ্গুল হারিয়েছিলেন। মন্ত্রী রাজার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলেন এবং তাকে প্রবোধ দান করার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন “প্রিয় রাজা দানবীর, একে ভগবানের ইচ্ছা বলে গ্রহণ করুন। ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন। তাই আপনার হারানো আঙ্গুলের জন্য উদ্বিগ্ন হবেন না। এর থেকে নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।” রাজা ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন এবং সেজন্য তিনি তার ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।
তিনি বুদ্ধিমন্তকে চর মেরে বললেন, “শান্ত হও, অদূরদর্শী লোক।” বুদ্ধিমন্ত ভগবানের কৃপা সম্পর্কে বলতে চেষ্টা করলেন। রাজা চিৎকার করছিলেন, “প্রহরী! ওকে বন্দী কর এবং কারাগারে আটকে রাখ।”
দানবীর সেদিনের জন্য তার শিকারের পরিকল্পনা বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং তিনি তার ঘোড়াগুলো নিয়ে গভীর বনের মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন।
ইতোমধ্যে, বনের কেন্দ্রে ভয়ংকর ডাকাতের একটি দল অবস্থান করছিল। তারা একজন মানুষকে হত্যা করে দেবী কালীল নিকট উৎসর্গ করতে চেয়েছিল। তারা রাজাকে বন্দী করেছিল, তাকে শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধেছিল এবং টেনে উৎসর্গের স্থানে নিয়ে গেল।
যখন খরগ দিয়ে রাজা দানবীরের মস্তক কাটার ভয়ংকর মুহূর্তটি এলো, তখন ডাকাতদের একজন দেখল যে রাজার হাতে ব্যান্ডেজ। হঠাৎ নেতা উচ্চঃস্বরে চিৎকার করলেন, “হে মা! এই লোক সম্পূর্ণ নয়। তার একটি আঙ্গুল কাটা। তাকে বলি দেওয়া যাবে না। আমরা কোনো অসম্পূর্ণ মানুষকে দেবীর নিকট উৎসর্গ করতে পারব না। এতে দেবী অসন্তুষ্ট হবেন।” হতাশ হয়ে ডাকাতেরা দানবীরকে ছেড়ে দিল।
রাজা তার মন্ত্রীর কথাগুলো স্মরণ করতে করতে তৎক্ষণাৎ তার রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তিনি সরাসরি কারাগারে গেলেন এবং বুদ্ধিমন্তকে মুক্তি দিলেন। তিনি মন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
“বুদ্ধিমন্ত আমি তোমার কথাগুলো ভুলতে পারব না। তুমি যথার্থই বলেছিলে। কিন্তু আমাকে এখন বল, তোমার কথামতো সবকিছু যদি ভগবানের কৃপা অনুসারে সংঘটিত হয়, তাহলে ভগবান কেন তোমাকে কারাগারে রাখলেন?
“প্রিয় রাজন, ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না? আপনি যদি আমাকে কারাগারে না রাখতেন, ডাকাতেরা আপনার পরিবর্তে আমাকে বলি দিয়ে দিত।” সেই মুহূর্তে রাজা দানবীর দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করেছিলেন যে তা নিশ্চিতভাবে ভগবানেরই কৃপা।
অনেকসময় বিভিন্ন কষ্ট পেয়ে আমরা নানা প্রকার নেতিবাচক মন্তব্য করে বসি। তার চেয়ে এর পেছনে ভগবানের যথার্থ পরিকল্পনা দর্শনের জন্য অপেক্ষা করা বরং আমাদের জন্য ভালো। কেননা ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন। ------হরে কৃষ্ণ------
* সুখ অর্থে নয় সন্তুষ্টিতে
* মহাজন উপদেশ-শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজ
*মহাজন উপদেশ-শ্রী যমরাজ
* জীবনে সাফল্য পেতে চান! তাহলে মেনে চলুন এই দশটি টিপস
* চানক্য পন্ডিতের অমূল্য বাণী যা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে
* মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী
* মহাজন উপদেশ-শ্রীপ্রহ্লাদ মহারাজ
*মহাজন উপদেশ-শ্রী যমরাজ
* জীবনে সাফল্য পেতে চান! তাহলে মেনে চলুন এই দশটি টিপস
* চানক্য পন্ডিতের অমূল্য বাণী যা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে
* মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী