সৃষ্টিকর্তা আছেন তাঁর প্রমাণ কি? - শ্রীমদ্ভগবদ গীতা যথাযথ বাংলা

নতুন পোষ্ট

Add

শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

সৃষ্টিকর্তা আছেন তাঁর প্রমাণ কি?

 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

রামপদ অনেক দিন ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে ছিল। নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি আর কাজে ব্যস্ত থাকায় অনেকদিন চুল কাটানো হয় নি। মাথার চুলগুলো বেশ বড় হয়েছে। তাই রামপদ যখন বাড়ি ফিরে এল, সে ঠিক করল আগামীকালই সেলুনে চুল কাঠাতে যাবে।  


রামপদ দীর্ঘদিন ধরে তার পাড়ার একটি নির্দিষ্ট সেলুনের নাপিত অসামঞ্জস্যের সঙ্গে তার খুব ভাল সম্পর্ক। সেলুনে চুল কাটাতে এসে অসামঞ্জস্যের সঙ্গে রামপদ অনেকক্ষণ গল্পগুজবও করে। সে বাড়ি ফিরে পরদিন সকালে সে অসামঞ্জস্যের সেলুনে চুল কাটাতে গেল। 

 

রামপদকে দেখেই অসামঞ্জস্য খুব উৎফুল্লিতভাবে, “আরে আসুন, আসুন, এতদিন কোথায় ছিলেন?” বলে তার কুশল জিজ্ঞাসা করল। অসামঞ্জস্য অন্য এক খরিদ্দারের চুল কাটছিল। রামপদ একটি বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। 

 

অসামঞ্জস্য অন্যের চুল কাটতে কাটতে নানা প্রসঙ্গে কথা বলতে লাগলো রামপদের সঙ্গে। দেশ, কাল, রাজনীতির কথা বলতে বলতে ভগবানের কথাও উঠল। রামপদ ভগবান প্রসঙ্গে বিভিন্ন মহাত্মগণ কি বলেছেন সে কথা বলতে নাপিত অসামঞ্জস্য বলে উঠল। 

 

 অসামঞ্জস্যঃ “না দাদা, ভগবান বলে কিছু নেই।” 

রামপদঃ কেন তুমি ও কথা বলছ? 

 

ইতিমধ্যে অসামঞ্জস্য যার চুল কাটছিল, তার চুল কাটা শেষ হওয়ায় চেয়ারটি খালি হয় এবং রামপদ চুল কাটার জন্য ঐ চেয়ারে গিয়ে বসে। এরপর অসামঞ্জস্য রামপদের গায়ে সেলুনের সাদা চাদর জড়িয়ে তার চুল কাটতে শুরু করে। 

 

রামপদ আবার অসামঞ্জস্যকে জিজ্ঞাসা করলঃ 

রামপদঃ ‘তুমি বললে না তো, কেন ভগবান নেই বলে তুমি ভাবছ?’ 

অসামঞ্জস্যঃ ‘না, ওসব ভগবানের অস্তিত্বে আমি বিশ্বাস করি না।’ 

রামপদঃ ‘কিন্তু কেন তুমি এরকম বলছ, সেটাই তো বলছ না!’ 

 

অসামঞ্জস্যঃ “আপনি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দেখুন, তাহলেই বুঝতে পারবেন কেন ভগবানের অস্তিত্ব নেই। আমাকে বলুন তো, যদি ভগবান থাকতো তাহলে কি এত সংখ্যক রুগ্ন মানুষ থাকতো

 

কত লোক নানা দুঃখ ভগছে! রাস্তায় এত পরিত্যক্ত শিশুরা কি ঘুরে বেড়াতো? ভগবান যদি সত্যিই থাকতো তাহলে মানুষের এত দুঃখ যন্ত্রণা থাকতো না। 

 

 আমি কল্পনা করতে পরি না একজন প্রেমময় ভগবান এই সমস্ত ঘটনা ঘটতে দেওয়া অনুমোদন করতে পারেন।” 

 

রামপদ চুল কাটার চেয়ারে বসে মাথা নীচু করে অসামঞ্জস্যের কথা শুনেই গেল। কিন্তু তখন কোন উত্তর দিল না। কেননা রামপদ মনে করল এখন এসব কথার উত্তর দিতে গেলে কথার পৃষ্টে কথাই শুধু বাড়বে। রামপদ তাই আর কথা বাড়াল না। 

 

 এরপর রামপদের চুল কাটা শেষ হলে সে অসামঞ্জস্যের সেলুন থেকে বেড়িয়ে এল। পথে যেতে যেতে সে দেখল সেলুনের প্রায় কাছেই রাস্তার চার মাথার মোড়ে একটা ময়লা কাপড় জামা পরিহিত লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার দীর্ঘ চুল ও দাড়ি অবিন্যস্ত এবং বোঝা যাচ্ছে দীর্ঘ দিনের অযত্নের ফলে রোংরাও। 

 

 ঐ লোকটিকে দেখে রামপদের কি মনে হল, সে আবার অসামঞ্জস্যের সেলুনে ফিরে আসতে দেখে অসামঞ্জস্য ভাবল রামপদ নিশ্চয়ই কিছু ফেলে গেছে। 

 

অসামঞ্জস্যঃ ‘কি, কিছু ফেলে গেলেন না কি?’ 

 

রামপদঃ ‘না, না, হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেলে। তাই সেটা তোমাকে জানাতে এলাম।’ ‘জানতো, পৃথিবীতে নাপিত বা ক্ষৌরকার বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই।’ 

 

কথাটা শুনে অসামঞ্জস্য একটু ভ্যার‌্যাচাকা খেয়ে গেল। কেন রামপদ হঠাৎ একথা বলছে সে ঠিক বুঝতে পারল না সে বললোঃ 

 

অসামঞ্জস্যঃ ‘কেন একথা বলছেন। এই তো আমিই একজন নাপিত। এইমাত্র আপনার চুল কাটলাম। আপনার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।’ 

 

রামপদঃ ‘না। নাপিত বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই।’

রামপদঃ ‘কেননা নাপিত বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব যদি থাকতো, তহলে রাস্তার ঐ মানুষটির মতো দীর্ঘদিন চুল দাড়ি না কাটা অসহায় লোক দাড়িয়ে থাকতো না।’

 

অসামঞ্জস্যঃ এতে নাপিতের কি দোষ! নাপিতের কাছে যদি কেউ আসে তবেই তো সে তার চুল কাটবে! তাঁকে তো আমার কাছে আসতে হবে।’ .

 

রামপদঃ ঠিক বলেছে তুমি!’ ‘তাকে আসতে হবে। এই আসাটাই হল মুল কথা। তাই ভগবানেরও সস্তিত্ব রয়েছে। তিনি আছেন, কিন্তু মানুষ তাঁর কাছে যায় না বা তাঁর কাছে আসতে চায় না, তাকে খুঁজতে চায় না। আর সেজন্যই পৃথিবীতে এত দুঃখ  দুর্দশা। তাই মানুষের দুঃখ দুর্দশার অবসান ঘটাতে হলে মানুষকেও ভগবানের কাছে আসতে হবে। 

অসামঞ্জস্য আর উত্তর দিতে পারে না। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।  

 
 
 
 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন