জীবনে সুখী হওয়ার উপায় কী

জীবনে কিভাবে সুখি হওয়া যায়

 সুখ মানে কি

আমাদের জীবনে ৫০ ভাগ সুখ হচ্ছে বংশানুক্রমিক। জীবনে সুখী হওয়ার উপায় কী, তা নিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান নিয়ে চলা গবেষণা দেখায় যে; আামাদের পরিস্থিতি মাত্র ১০ ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের সুখের মাত্রাকে প্রভাবিত করে।  The How of Happiness গ্রন্থের লেখিকা Sonja Lyubomirsky গবেষণায় এক দারুন বিষয় দেখিয়েছেন যে অর্থ, সম্পদ এসব মাত্র ১০ ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের সুখী করতে পারে। সাধারণ মানুষ মনে করে ৯০-৯৫ ভাগ। 


প্রকৃতিগত ভাবে আমাদের মধ্যে অনেকেই অন্যদের থেকে সুখী। তার মানে হচ্ছে যে আপনার কাছে খুব কম সম্পদ এবং সুখ থাকতে পারে। একজন ব্যক্তির জাগতিক অবস্থা তা মাত্র ১০ ভাগ পরিবর্তন করতে পারে। 


তার মানে কি এই যে, আমাদের সুখ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে? আমরা বাকি ৫০ ভাগ নিয়ে কাজ করতে পারি আমাদের চেতনাকে উন্নত করার মাধ্যমে। 

সুখ কি?

যদি আমরা আরও অধিক আধ্যাত্মিক হতে চাই তবে আমাদের প্রথমে দেখতে হবে আমরা কিভাবে তৈরি হয়েছি সে জিনিসটি চাওয়ার জন্য, যা আসলে আমাদের প্রয়োজন নেই। সন্তুষ্টি হচ্ছে আধ্যাত্মিকতার পরিচায়ক এবং যারা তাদের চেতনাকে উন্নত করতে চায় তাদের জন্য একটি অনুশীলন। 

 

সমস্যা হচ্ছে এই যে আমরা প্রতিদিন এত এত বার্তা দ্বারা ঠেঁসে যাই যা আমাদেরকে বলে জীবন হচ্ছে অসম্পূর্ণ, কারণ এই জিনিসটি বা সেবাটি নেই। “যত বেশি তত ভাল” তা হচ্ছে জড় জাগতিক সংস্কৃতির মূলমন্ত্র। ক্রমোন্নতি, অর্থ এগুলো খারাপ নয়। এটি তখনই কঠিন যখন আপনি জানেন না আপনার পরবর্তী বেলার খাবার  কোথা থেকে আসবে। 


কিন্তু গবেষণা বলে যে, আমাদের যা প্রয়োজন তা যদি আমাদের থাকে এবং ধনী হই, তাহলে তা আমাদের সুখের যে মাত্রা তাকে তেমন প্রভাবিত করতে পারে না। এটি একটি ভ্রান্তি যে, অধিক অর্থ থাকলে আমরা সুখ কিনে নিতে পারব (বিশেষ করে এটি আমাদের অধিক আরাম এবং ইন্দ্রিয় সুখ কিনে নিতে পারে)।  


বরং গবেষণা বলে যে, যারা বেশি বেশি কেনাকাটা করে, শেষে তারা ক্রয়জনিত হতাশায় থাকে। এটি একটি বাজে চক্র, কারণ তারাই বেশি কেনাকাটা করে যারা আসলে হতাশ। আভ্যন্তরীণভাবে অসম্পূর্ণ অনুভব করা লোকেরা ভাবে এসব কার্য তাদেরকে সুখী হতে সাহায্য করবে। 


প্রশ্ন হল, আপনি যা চান তা পেলে কি সত্যিই আপনি সুখী হন অথবা নাকি এই চাহিদাকে দূরে সরিয়ে আপনি আরও বেশি সুখী হবেন? 


ইতোমধ্যে আমরা সুখী


আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে আমাদের সুখ আসলে আমাদের অভ্যন্তরে রয়েছে। আমদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমরা সুখী। তাই আমাদের বাইরে আনন্দ খোঁজার কোন দরকার নেই। 
 

আপনি অবাক হতে পারেন কেন? যদি সুখ আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আমরা সবসময় সুখী নই কেন? কেননা সুখ নিয়ে আপনি মিথ্যা জানেন। আমাদের মনোবৃত্তি আমরা এমন করে ফেলেছি যে, অপর পাশের ঘাসটাই সবুজ’। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানেই ঘাস বেশি সবুজ আগে যেখানে ছিলাম সেখান থেকে। 
 
 
আর এখন আমরা ভবিষ্যতে আরও কত সবুজ হবে তা খুঁজছি। সান ফ্রান্সিসকো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোতত্ত্ববিদ ভূগোল” নিয়ে আলোচনা করেছেন- “যখন আপনি এমন ব্যক্তিদের সঙ্গ করবেন যাদের আপনার চাইতে অনেক বেশি আছে এবং অনেক উপভোগ করছেন তখন আপনিও তাদের যা আছে তা পেতে চাইবেন। কিন্তু ফলাফল কি? 
 
 
অধ্যাপক হাউয়েল বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফলাফল হচ্ছে আবেগিক খরচ, বর্ধিষ্ণু দায়, ক্ষয়িষ্ণু সঞ্চয়, হতাশা, সামাজিক উদ্বিগ্নতা স্বল্প মানসিক সন্তষ্টি এবং আরও অনেক অনাকাঙ্খিত ফলাফল। কেউ কি চিন্তা করেছে যে প্রতিবেশীর সাথে সর্বদা মিলে থাকতে গেলেও কিছু অস্বাস্থ্যকর বিষয় রয়েছে? 


ধনী দেশ, হতাশ জনগণ

আমরা কেন এমন জিনিসের পিছনে দৌড়ায় যা আমাদেরকে সন্তুষ্ট করবে না বা বাজে। আমরা এমন ভাবে তৈরি হেয়ছি যে আমরা বিশ্বাস করি যত বেশি তত ভাল, সেটা এমনকি যৌনতা, মাদক এবং গান বাজনা। আমাদের শুধুমাত্র বেশি যৌনতা চাই, মাদক চাই অথবা ফুর্তি চাই। 
 
 
বাহ্যিক আনন্দ পাওয়ার জন্য  আমাদের এই আকুতির মানে হচ্ছে যে আমরা বিশ্বাস করি আমাদের যথার্থ পরিমাণে নেই। যদি সুখী হওয়ার বিষয় অধিক জিনিস এবং অধিক সফলতার মধ্যে নিহিত থাকতম তাহলে ধনী দেশগুলোই ব্রহ্মান্ডের সবচাইতে সুখী দেশ হত কিন্তু তারা তা নয়। বরং ধনী দেশগুলোর লোকজন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের দেশগুলো থেকে অনেক বেশি হতাশ। 
 
 
বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থা অনুসারে, হতাশা হচ্ছে বিশ্বের চতুর্থ বড় রোগ। ড. রাস হেরিস লিখেছেন, “প্রতি সপ্তাহেই এক দশমাংশ বয়ঃপ্রাপ্ত জনগণ হতাশায় ভুগছে এবং প্রতি পাঁচজনে একজন তাদের জীবনের কোন না কোন অংশে হতাশ। প্রতি দুই জনের একজন জীবনের কোন এক পর্যায়ে আত্মহত্যার কথা বিবেচনা করে নেয় এবং দুই সপ্তাহ বা তারও অধিক এ্র অবস্থায় থাকে। আর প্রতিদিন দশজনে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে ফেলে।   


তার মানে এই যে, আপনি প্রতিনিয়ত যাদের দেখছেন তাদের মধ্যে অর্ধেকই আত্মহত্যার কথা ভাবে এবং সেই দশজনের মধ্যে একজন প্রকৃতপক্ষে তা করার চেষ্টা করে। আমাদেরে এখনও যা আছে তা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যা ছিল, তার চাইতে অনেক বেশি, এমনকি আমরা এখন এমন বিলাসে আছি যা তখনকার রাজাদেরই কেবল থাকত। 


যত অধিক তত ভাল

অনলাইনে, টি শার্টে, বিলবোর্ডে, বাস স্টপে, ম্যাগাজিনে, টিভিতে, রেডিওতে সব জায়গায়। আমাদের জানাচ্ছে যে যত বেশি তোমার থাকবে ততই তুমি সুখী হবে- এই ধরণের ছলনাপূর্ণ মনোভাব আমাদের ভোগের যন্ত্রে রূপান্তর করেছে সে সব জিনিস কেনার জন্য যা আমাদের দরকার নেই। 


কেন? কারণ অর্থনীতির জন্য লোভ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার লোভকে উত্তেজিত করা মানে আপনার ক্রেডিট কার্ড টেনে বের করা। কিভাবে চাহিদাগুলো সামাজিকভাবে তৈরি হয়েছে তা বুঝতে হলে আপনাকে ভাবতে হবে যে আপনি আরও ১৫০ বছর আগে জন্ম নিয়েছেন। আপনি কি চেয়েছিলেন? একটি স্মার্টফোন? একটি কম্পিউটার? এক জোড়া নাইকি? অবশ্যই না। 


যদি এসব জিনিস ১৫০ বছর আগেও থাকতো তবে আমরা প্রযুক্তির দ্বারা আরও কম আসক্ত হতাম। কারণ, বাজারজাতকরণ তখন এখনকার মতো ব্যাপক এবং আকর্ষণীয় ছিল না। 


ভেবে দেখুন আমাদের মধ্যে এরকম কত বাসনা আছে যা আসলে আমাদের নয় তা আমাদের উপর বপন করা হয়েছে। আমাদের সুখে থাকার ধারণা সামাজিক ভাবে শর্তশঙ্কুল। 


আমি কিছু দিন আগে একটি পুরনো জিনিসের দোকানে গিয়েছিলাম এবং একটি পুরনো বোতল যা প্রায় আঠার শতকের, তা নিয়ে দেখলাম যে সেটি ওজন বৃদ্ধি করার ঔষদ। কেন ওজন বৃদ্ধি বোতলে বিজ্ঞাপন করা হয়েছে যে তুমি ফুলে গেলে দেখতে কতটা সুন্দর লাগবে ( গরিবেরা চিকন কারণ তারা কঠোর পরিশ্রম করে এবং ভাল খাবার খেতে পারে না।) 


এই নেতিবাচক জাগতিকতা হচ্ছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়। আমেরিকা, যারা পুরো বিশ্বের ৫ শতাংশ মাত্র তারা বিশ্বের ২৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে ফেলে। লোভ সম্ভবত অর্থনীতির জন্য খুব ভাল। কিন্তু কেন আমরা ২০০ বছর ধরে এই মানবসভ্যতাকে নষ্ট করে দিচ্ছি, যদিও অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, সাথে সাথে পরিবেশ বিপর্যয়ও পাচ্ছে। আর আমাদের যা দরকার নেই তা কিনে আমরা তাতে সামিল হচ্ছি। 


আমাদের খুব অল্প দরকার

কতটুকু পর্যাপ্ত? গবেষণা বলে আমাদের যা আছে তার প্রায় ২০ ভাগ দিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারি। আমি এটি পরীক্ষিত ভাবে বলতে পরি কারণ আমি বছরের ছয় মাসই পরিভ্রমণ করি এবং আমার যা দরকার তা একটি সময় ভারতের একটি ছোট্র গ্রামে বাস করি। 
 
সেখানে অধিকার বিচ্ছিন্ন মানুষ এবং তাদের সুখের মাত্রা দেখেছি। আমি দেখি তারা কুঁড়েঘরে বাস করছে কিন্তু তাদের চোখে মুখে আনন্দের ঝলকানি যা ঐশ্বর্যের পাহাড়েও বসে পাওয়া যায় না। যখন আপনি গ্রামবাসীদের জীবনধারা দেখবেন আমার প্রথম মনোভাব হবে যে, “তাদের জীবন নিশ্চয়ই কষ্টের এবং অসুখী।” কিন্তু যখন আপনি তাদের সাথে মিশবেন তখন বুঝতে পারবেন আপনার ধারণা ভুল। 
 
 
আমি পাশ্চাত্যবাসীদের ভারতে তীর্থস্থানে নিয়ে যাই এবং আমি তাদেরকে সেই সব গ্রামের সুখী মানুষদেরকে দেখাতে ভালবাসি। তখন তাদের হৃদয়ে এই এই অনুভূতি হয় যে তারা তাদের থেকেও সুখী। কোন প্রকার প্রযুক্তি, শৈল্পিক কাপড় এবং আরাম আয়েশের জিনিস ছাড়া; যা আমাদেরকে ভোগী বানিয়েছে। বুদ্ধিমান হলে বুঝতে হবে যে সুখ কিনতে পাওয়ার মত কোন জিনিস নয়। 
 
 

সম্পদ আমাদের হৃদয় পরিবর্তন করতে পারে না। 

আরামদায়ক জীবন আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারে না যে, আপনি কখনো দুর্ভোগে পড়বেন না। আমি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার সুন্দর গৃহে আরামে থাকতে পারি যতক্ষণ পর্যন্ত আমি হতাশাকে জয় করতে পারছি। যদি আমি ক্রোধী হই বা বিরক্ত হই, স্বার্থপর হই বা ঈর্ষান্বিত হই তাহলে আমি সুখী হতে পারব না। এমনকি আমি যা চাই তাও পাব না। 
 
 
যদি আমরা দয়া, করুণা এবং ক্ষমা অনুশীলন করি তাতে আমরা নিজেদের এক উন্নত চেতনা প্রদান করে আশীর্বাদপুষ্ট করছি। যখন আমরা ভাল কিছু করি তখন আমরা ভাল অনুভব করি। ভাল কিছু না করে ভাল কিছু পাওয়ার চেষ্টা করা প্রকৃতিবিরোধী একটি কার্য এবং তাই তা অসম্ভব। অতিরিক্ত কেনাকাটা, বিনোদন এবং অ্যালকোহল সেবন এই সবই হচ্ছে এভাবে সুখ উপভোগ করার মত।  
 
 
শ্রীমদ্ভাগবতে বলি মহারাজের ঘটনা রয়েছে। সসাগড়া পৃথিবীর রাজা ভগবানকে দান করছেন, যিনি একজন ভিখারী হিসেবে এসেছিলেন। তিনি শুধুমাত্র ত্রিপাদ্ ভূমি ভিক্ষা চেয়েছিলেন। রাজা তখন ভগবানকে বলেছিলেন “আমি আপনাকে সারা পৃথিবী দান করতে পারি। কেন আপনি আরও বেশি চাইছেন না।” ভিখারীর বেশে ভগবান বিষ্ণু রাজাকে পরীক্ষা করতে এসেছিলেন এবং বললেন, 
 
 
“যদি  কেউ অল্পতে সন্তুষ্ট হতে শিখে তবে তাকে সারা বিশ্ব প্রদান করেও সন্তুষ করা সম্ভব নয়। তাই আমি যদি আপনার দেওয়া এই সামান্য দানে সন্তুষ্ট হতে না পারি তবে আপনি আমাকে কত বেশি দিবেন তা আমার কাছে কোন বিষয় হবে না, আমি আরও চাইব। 


ভগবদ্গীতাতেও সেই একই ধরনের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে। আনন্দ হচ্ছে ঠিক একটি মাদকের মত। আমরা যত পাই তত চাই এবং যেই আমাদের আরাম এবং ইন্দ্রিয় তৃপ্তির বিষয়গুলো বৃদ্ধি পাবে, আমরা সেগুলোকে নতুন নতুন মাত্রায় ব্যবহার করব। 

 
সেগুলো আমাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং আমাদের নিজেদের পরিতৃপ্তি করার জন্য আরও প্রয়োজন হবে। জাগতিক আকাঙ্খাকে গীতায় আগুনে তেল ঢালার সাথে তুলনা করেছেন। আমরা যত যোগ করব তত আগুন বাড়বে এবং চুলকানির মত যত আমরা  চুলকাব ততই চুলকানি বাড়তে থাকবে। 
 
 

অন্যকে সুখী করার মাধ্যমে নিজে সুখী হওয়া 

দীর্ঘমেয়াদী কিংবা গভীর সুখ খুঁজে পাওয়া চ্যালেঞ্জের বিষয় এবং অনির্দিষ্ট। সুখ খুঁজে পাওয়ার সব চাইতে বড় বাঁধা হচ্ছে তা পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা। একবার এক ভারতীয় সাধুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন তিনি সুখী হওয়ার প্রয়াস ত্যাগ করেছেন। উত্তরে তিনি বললেন “আমি যত বেশি পাওয়ার প্রয়াস করি আমি তত কম পাই।” 
 
 
তিনি বললেন যদি তুমি সুখী হতে চাও তবে তোমার প্রয়াস করা উচিত নয়। বলা হয়ে থাকে সুখ হচ্ছে প্রজাপতির মত, তুমি যখনি ধরতে যাবে সে উড়ে চলে যাবে। আর যখন তুমি সোজা দাঁড়িয়ে থাককে তা তোমার কাঁধে এসে বসবে। 
 
 
প্রাচীন সংস্কৃত শ্লোক বলে যে আমাদের অপরিহার্য মনোভাব হচ্ছে সেবা করা আর যখন আমরা তা করি আমরা প্রকৃত সুখী হই। মূলতঃ আধ্যাত্মিকতার নির্যাস হচ্ছে সেবা। কর্মের আইন হচ্ছে তুমি তাই পাবে যা তুমি দিবে। সুতরাং অন্যদের সুখী করলে আপনাকে নিজের সুখ নিয়ে ভাবতে হবে না। 
 
 
বেদে ঘোষণা করা হয়েছে অন্যের জন্য নিজের স্বার্থ ত্যাগ করা হচ্ছে দিব্য। তারও দৈবী সম্পদ এবং দিব্য গুণাবলী গঠন করার ব্যাপারে বলে। আধ্যাত্মিক অনুশীলন ব্যক্তিগত ত্যাগ এবং অন্যের সেবা এবং শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত। 
 

 

অন্য কি আমাদের সুখী করতে পারে?  

 সুখ প্রকৃতিগতভাবে এবং দৈবী কার্যবলীর দ্বারা আমরা পেতে পারি। 
১. লোকেদের এবং পরিস্থিতির প্রশংসাঃ বর্তমানের পরিস্থিতি এবং চারপাশের ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া, যাদের আপনার চাইতে কম আছে তারা আপনার প্রতি ঈর্ষান্বিত। 

২. গ্রহণ করুনঃ যে বিষয়গুলো আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না তা গ্রহণ করুন। 

৩. অহংকার বর্জনঃ আমি সঠিক এই মনোভাব বর্জন করা। 

৪. ছেড়ে দিনঃ ক্ষমা করুন এবং সমালোচনা, অপবাদ এবং কুসংস্কারকে যেতে দিন। 

৫. আপনার ধর্ম করুনঃ প্রশংসা বা সুনামের জন্য না করে সেবা হিসেবে করুন। 

৬. জ্ঞান অর্জনের জন্যঃ  “নিজেকে জানাই হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের শুরু” 
 
৭. দৈনিক আধ্যাত্নিক সংযোগঃ নিয়মিত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন। 
 
 

আনন্দকে উপলব্ধি করুন 

আপনি যদি পবিত্র শিক্ষা বিশেষ করে প্রাচ্যের শিক্ষা গ্রহণ করেন আপনি অপরিহার্যভাবে আধ্যাত্মিক আনন্দ উপলব্ধি করতে পারবেন- এক অপ্রাকৃত আনন্দ যা জগতে দুর্লভ সেটি তখনই সম্পব যখন আত্মা পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয়। যখন মানুষ এই ধরণের আনন্দ লাভ করে, তখন সে বাহিরে সুখ খোঁজা ছেড়ে দেয়। 
 
 
এর জন্যই যোগীরা এবং ধার্মিক ব্যক্তিরা যে কোন পরিস্থিতিতে সদা সন্তুষ্ট। ভগবদ্গীতায় আছে ব্যাখ্যা করে যেম “সেই আনন্দময় অবস্থায় অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অপ্রাকৃত সুখ অনুভূত হয়। এই পারমার্থিক চেতনায় অবস্থিত হলে যোগী আত্মা তত্ত্বজ্ঞান থেকে বিচলিত হন না এবং তখন আর অন্য কোন কিছু লাভই এর থেকে অধিক বলে মনে হয় না। 
 
 
এই অবস্থায় স্থিত হলে চরম বিপর্যয়েও চিত্ত বিচলিত হয় না। জড় জগতের সংযোগ জনিত সমস্ত দুঃখ দুর্দশা থেকে এটিই হচ্ছে প্রকৃত মুক্তি”।
 
 
আরও পড়ুন
 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url