সংসার সুখভোগের মহা অরণ্য-মহারাজ ভরতে উপদেশ
এই জগৎতে প্রকৃত সুখভোগ করা যায় না।
মহারাজ পরীক্ষিৎ যখন শুকদেব গোস্বামীকে সংসার- অরণ্যের প্রকৃত অর্থ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তখন তার উত্তরে শুকদেব গোস্বামী বলেছিলেন—“হে রাজন, বণিক সর্বদা ধন উপার্জনে আগ্রহী।
কখনও কখনও সে কাঠ, মাটি আদি স্বল্পমূল্য বস্তু সংগ্রহ করার জন্য অরণ্যে প্রবেশ করে, যাতে নগরে উচ্চ মূল্যে সেগুলি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। তেমনই, বদ্ধ জীব জড়- জাগতিক লাভের জন্য লোলুপ হয়ে এই জড় জগতে প্রবেশ করে।
বেরোবার পথ না জেনে সে ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর প্রদেশে প্রবেশ করে। জড় জগতে প্রবিষ্ট হয়ে শুদ্ধ জীব বিষ্ণু-মায়ায় মোহিত হয়ে বদ্ধ হয়ে পড়ে।
এইভাবে জীব দৈবী মায়ার বশীভূত হয়। স্বতন্ত্র হয়ে এবং অরণ্যে বিভ্রান্ত হয়ে, সে ভগবানের সেবায় সর্বদা যুক্ত ভক্তের সঙ্গ লাভ করতে পারে না। দেহাত্মবুদ্ধিতে আচ্ছন্ন হওয়ার ফলে, সে মায়ার বশীভূত হয়ে একের পর এক বিভিন্ন প্রকার শরীর ধারণ করে এবং সত্ত্ব, রজ ও তমোগুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কর্মে প্রবৃত্ত হয়।
এইভাবে বদ্ধ জীব কখনও স্বর্গে, কখনও মর্তে এবং কখনও নরকে নিম্ন যোনিতে বিচরণ করে এইভাবে সে বিভিন্ন শরীরে নিরন্তর দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করে। তার কর্ম কখনও শুভ, কখনও অশুভ এবং কখনও মিশ্র।
বদ্ধ জীব তার মনোধর্মের ফলে এই সমস্ত দৈহিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়। সে তার মন ও পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়ের ব্যবহার করে এবং তার ফলে সে বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন প্রকার শরীর প্রাপ্ত হয়।
বহিরঙ্গা মায়া শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীনে ইন্দ্রিয়গুলির ব্যবহার করার ফলে, জীব এই জড় জগতে বিভিন্ন দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করে। প্রকৃতপক্ষে সে এই দুঃখ-দুর্দশা থেকে উদ্ধার পেতে চায়, কিন্তু কখনও কখনও বহু কষ্টে দুঃখ-দুর্দশার উপশম হলেও সে সাধারণত ব্যর্থ হয়।
এইভাবে জীবন-সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে, সে ভ্রমরের মতো ভগবান শ্রীবিষ্ণুর শ্রীপাদপদ্মের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত শুদ্ধ ভক্তের শরণ গ্রহণ করতে পারে না। সংসার-অরণ্যে অসংযত ইন্দ্রিয়গুলি ঠিক দস্যুর মতো।
বদ্ধ জীব কৃষ্ণভক্তির বিকাশের জন্য ধন উপার্জন করতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ইন্দ্ৰিয়সুখ ভোগের মাধ্যমে তার অসংযত ইন্দ্রিয়গুলি তার সেই ধন অপহরণ করে নেয়। ইন্দ্রিয়গুলি দস্যুসদৃশ, কারণ দর্শন, ঘ্রাণ, স্বাদ, স্পর্শ, শ্রবণ, বাসনা এবং সংকল্পের দ্বারা অনর্থক তাকে দিয়ে তার অর্থ ব্যয় করায়।
এইভাবে বদ্ধ জীব তার ইন্দ্রিয়সুখ উপভোগ করতে বাধ্য হয় এবং তার ফলে তার সমস্ত ধন ব্যয় হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে এই ধন ধর্ম অনুষ্ঠানের জন্য উপার্জন করা হয়েছিল, কিন্তু দস্যুসদৃশ ইন্দ্রিয়গুলি সেগুলি অপহরণ করে নিয়ে যায়।”
“হে রাজন, এই জড় জগতে স্ত্রী-পুত্র আদি কেবল নামে মাত্রই আত্মীয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ব্যাঘ্র এবং শৃগালের মতো আচরণ করে। মেষপালক যথাসাধ্য তার মেষ সংরক্ষণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যাঘ্র এবং শৃগালেরা বলপূর্বক তাদের অপহরণ করে নেয়।
তেমনই কৃপণ মানুষ যদিও অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে তার ধন আগলে রাখতে চায়, তবুও তার পরিবারের লোকজন তার সমস্ত ধন-সম্পদ বলপূর্বক অপহরণ করে নেয়। কৃষক প্রতি বছর তার ক্ষেত কর্ষণ করে, তৃণ-গুল্ম উৎপাটনের দ্বারা ক্ষেত পরিষ্কার করে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই সমস্ত তৃণ-গুল্মের বীজ দগ্ধ না হওয়ার ফলে, যখন শস্যের চারা বপন করা হয়, তখন তৃণ-গুল্মাদি আবার গজিয়ে ওঠে। লাঙ্গল দিয়ে সেগুলি উপড়ে ফেললেও আবার সেগুলি ঘনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
তেমনই গৃহস্থ-আশ্রম সকাম কর্মের ক্ষেত্র। পারিবারিক জীবন ভোগ করার বাসনা সম্পূর্ণরূপে দগ্ধ না হওয়া পর্যন্ত বার বার তা উদয় হতে থাকে। পাত্র থেকে কর্পূর সরিয়ে নিলেও যেমন সেই পাত্রে কর্পূরের গন্ধ থেকে যায়, তেমনই যতক্ষণ পর্যন্ত বাসনার বীজ নষ্ট না করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সকাম কর্মের নাশ হয় না।
কখনও কখনও বদ্ধ জীব গৃহস্থ-আশ্রমে তার ধন-সম্পদের প্রতি আসক্ত হয়ে দংশ, মশা, শকুনি, মুষিকসদৃশ মানুষদের দ্বারা পীড়িত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে এই সংসার মার্গেই ভ্রমণ করতে থাকে।
অজ্ঞানের ফলে সে কামার্ত হয়ে সকাম কর্মে প্রবৃত্ত হয়। যেহেতু তার মন এই সমস্ত কার্যকলাপে মগ্ন থাকে, তাই এই জড় জগৎ আকাশ- কুসুমের মতো অলীক হলেও তার কাছে তা নিত্য বলে প্রতিভাত হয়।
কখনও কখনও এই গন্ধর্বপুরে বদ্ধ জীব পান, ভোজন ও স্ত্রীসঙ্গ করে। এই সমস্ত বিষয়ের প্রতি অত্যন্ত আসক্ত হয়ে সে মরুভূমিতে মৃগতৃষ্ণার মতো তাদের পিছনে ধাবিত হয়। জীব কখনও কখনও স্বর্ণ নামক পীত বর্ণের বিষ্ঠার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার পিছনে ধাবিত হয়।
এই স্বর্ণ জড় ঐশ্বর্য ও হিংসার উৎস এবং তার ফলে জীব অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ, দ্যূতক্রীড়া, মাংসাহার এবং আসব পানে সমর্থ হয়। যাদের মন রজোগুণের দ্বারা প্রভাবিত তারা স্বর্ণের প্রতি আকৃষ্ট হয়, ঠিক যেমন অরণ্যে শীতার্ত ব্যক্তি আলেয়ার আলোকে অগ্নি বলে মনে করে তার প্রতি ধাবিত হয়।
কখনও কখনও বদ্ধ জীব বাসস্থান, জল, ধন প্রভৃতি জীবনধারণের বস্তুসমূহে অভিনিবিষ্ট হয়ে এই সংসার-অরণ্যে ইতস্তত দৌড়িয়ে বেড়ায়। কখনও কখনও বদ্ধ জীব যেন ঘূর্ণিবায়ুর ধূলির প্রভাবে অন্ধ হয়ে প্রমদার সৌন্দর্য দর্শনে মোহিত হয়।
এবং এইভাবে রমণীর অঙ্কে আরোপিত হয়, তখন তার বিবেক রজোগুণের প্রভাবে অভিভূত হয়ে পড়ে। এইভাবে সে কামবাসনার দ্বারা অন্ধ হয়ে বিধিমার্গের মর্যাদা লঙ্ঘন করে।
সে জানে না যে তার এই অবৈধ আচরণ বিভিন্ন দেবতারা দর্শন করছেন এবং রাতের অন্ধকারে অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ করলেও ভবিষ্যতে সেই জন্য তাকে দণ্ডভোগ করতে হবে। বদ্ধ জীব কখনও কখনও বুঝতে পারে যে, জড় সুখভোগের প্রচেষ্টা নিরর্থক এবং এই জড় জগৎ দুঃখময়।
কিন্তু, প্রবল দেহাত্মবুদ্ধির ফলে তার স্মৃতি নষ্ট হয়ে যায় এবং সে পুনরায় ঠিক একটি পশুর মতো সেই মরীচিকার প্রতি ধাবিত হয়। শত্রু এবং রাজকর্মচারীরা যখন প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষভাবে কঠোর বাক্যের দ্বারা তাকে ভর্ৎসনা করে, তখন বদ্ধ জীব অত্যন্ত দুঃখিত হয়। তার কাছে তা কর্ণশূল এবং হৃদয়-বেদনা উৎপাদন করে।
এই ভর্ৎসনা পেঁচা এবং ঝিল্লীর শব্দের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। জীব পূর্বজন্মার্জিত পুণ্যকর্মের ফলে এই জীবনে জড়-জাগতিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে, কিন্তু সেই পুণ্য ক্ষয় হয়ে গেলে, সে জীবস্মৃত ধনী ব্যক্তিদের আশ্রয় গ্রহণ করে, যারা তাকে এই জীবনে অথবা পরলোকে উভয় পরিস্থিতিতেই কোন রকম সাহায্য করতে পারে না।
এই প্রকার ব্যক্তিদের তুলনা করা হয়েছে অপবিত্র বৃক্ষ-লতা এবং বিষাক্ত কূপের সঙ্গে। কখনও কখনও সংসার- অরণ্যে দুঃখ-কষ্ট নিবৃত্তি সাধনের জন্য বদ্ধ জীব নাস্তিকদের সস্তা আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়। তাদের সঙ্গ প্রভাবে তার বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়।
তা ঠিক অগভীর নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার মতো। তার ফলে তার মাথা ফেটে যায় । তার তাপের উপশম হয় না এবং এইভাবে উভয়দিক দিয়েই সে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে। বিভ্রান্ত বদ্ধ জীব বেদবিরুদ্ধ বাণীর প্রচারকারী তথাকথিত সাধু-সন্ন্যাসীদের শরণাগত হয়।
তার ফলে তাদের কাছ থেকে বর্তমানে অথবা ভবিষ্যতে তার কোন লাভ হয় না। এই জড় জগতে বদ্ধ জীব যখন অন্যদের শোষণ করেও নিজের ভরণ-পোষণ করতে পারে না, তখন সে তার পিতা অথবা পুত্রকে শোষণ করার চেষ্টা করে এবং তাদের অতি তুচ্ছ সম্পদও অপহরণ করে নেয়।
সে যদি তার পিতা, পুত্র অথবা আত্মীয়-স্বজনদের সম্পদ আত্মসাৎ করতে না পারে, তাহলে সে তাদের নানাভাবে কষ্ট দেয়।”
“এই জগতে গৃহস্থ-জীবন ঠিক দাবানলের মতো। সেখানে সুখের লেশ মাত্র নেই এবং ক্রমশ অধিক থেকে অধিকতর দুঃখই কেবল লাভ হয়। গৃহস্থ-জীবনে চিরন্তন সুখ লাভের কোন সম্ভাবনা নেই।
গৃহস্থ-আশ্রমে জড়িয়ে পড়ার ফলে, জীব শোকাগ্নিতে দগ্ধ হয়। কখনও কখনও সে “আমি অত্যন্ত দুর্ভাগা’, ‘পূর্বজন্মে আমি কোন পুণ্যকর্ম করিনি' এই বলে নিজেকে ধিক্কার দেয়।
রাজকর্মচারীরা ঠিক নরখাদক রাক্ষসদের মতো। কখনও কখনও এই সমস্ত রাজকর্মচারীরা প্রতিকূল হয়ে মানুষের সঞ্চিত ধন অপহরণ করে।
তার প্রাণতুল্য প্রিয়তম ধন হারিয়ে জীব সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহ হয়ে পড়ে। বস্তুত, মনে হয় যেন তার মৃত্যু হয়েছে। কখনও কখনও বদ্ধ জীব কল্পনা করে যে, তার পিতা এবং পিতামহ পুনরায় তার পুত্র বা পৌত্ররূপে ফিরে এসেছেন।
এইভাবে সে স্বপ্নসুখতুল্য মনকল্পিত সুখ অনুভব করে। গৃহস্থ আশ্রমে বিবাহ, উপনয়ন ইত্যাদি যজ্ঞ এবং সকাম কর্ম অনুষ্ঠান করার নির্দেশ রয়েছে। এগুলি গৃহস্থদের কর্তব্য।
এই সমস্ত অনুষ্ঠান অত্যন্ত বিস্তৃত এবং ক্লেশদায়ক। সেগুলির তুলনা করা হয়েছে উচ্চ পাহাড়ের সঙ্গে এবং জড়- জাগতিক কার্যকলাপে আসক্ত ব্যক্তিদের তা অতিক্রম করতে হয়।
যে ব্যক্তি এই সমস্ত অনুষ্ঠান করতে চায়, তাকে পাহাড়ে আরোহণ করার সময় কাঁটা এবং কাঁকরের বেদনা সহ্য করতে হয়। এইভাবে বদ্ধ জীব অনন্ত যাতনা ভোগ করে।
কখনও সে দৈহিক ক্ষুধা ও তৃষ্ণার দ্বারা পীড়িত হয়ে ধৈর্যচ্যুত হয় এবং তার প্রিয় স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়। এইভাবে নির্দয় হওয়ার ফলে, সে আরও দুঃখকষ্ট ভোগ করে।”
শ্রীল শুকদেব গোস্বামী মহারাজ পরীক্ষিৎকে বললেন—“হে রাজন্, নিদ্রা ঠিক একটি অজগর সাপের মতো। যারা সংসাররূপ অরণ্যে ভ্রমণ করে, নিদ্রারূপ অজগর সর্প তাদের গিলে খায়। সেই অজগর সপ দংশনে তারা সর্বদা অজ্ঞানের অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে।
তারা নির্জন অরণ্যে পরিত্যক্ত শবের মতো পড়ে থাকে। এইভাবে বদ্ধ জীব বুঝতে পারে না যে, তার জীবনে কি হচ্ছে। সংসার-অরণ্যে বদ্ধ জীব কখনও কখনও সৰ্প এবং অন্যান্য প্রাণীসদৃশ ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তিদের দ্বারা দংশিত হয়।
শত্রুদের ছলনার প্রভাবে বদ্ধ জীবের গর্বরূপ দত্ত ভগ্ন হয়। তখন সে অন্তরে অত্যন্ত ব্যথিত হওয়ার ফলে, ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। তার ফলে সে আরও অসুখী হয় এবং ধীরে ধীরে সে তার বুদ্ধি এবং বিবেক হারিয়ে ফেলে।
তখন সে অন্ধের মতো অজ্ঞানের অন্ধকূপে পতিত হয়। বদ্ধ জীব কখনও ইন্দ্ৰিয়তৃপ্তি সাধনের অতি নগণ্য সুখের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরস্ত্রীগমন করে অথবা অন্যের ধন অপহরণ করে। তার ফলে তাকে গ্রেফতার করা হয় অথবা সেই স্ত্রীর পতি অথবা আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে প্রচণ্ডভাবে প্রহার করে।
এইভাবে অতি অল্প জড় সুখের জন্য ধর্ষণ, পরস্ত্রী হরণ, চুরি ইত্যাদি অপরাধের ফলে কারারুদ্ধ হয়ে নরক-যন্ত্রণা ভোগ করে। পণ্ডিত এবং পরমার্থবাদীরা তাই সকাম কর্মের প্রবৃত্তি মার্গের নিন্দা করেছেন, কারণ তা ইহলোকে এবং পরলোকে দুঃখ-দুর্দশার আদি উৎস এবং জন্মভূমি।
বদ্ধ জীব যদি অপরের দ্রব্য অপহরণ করে কোনও প্রকারে দণ্ডভোগ থেকে রেহাই পায়, তাহলেও দেবদত্ত নামক কোন ব্যক্তি তাকে প্রতারণা করে তার ধন ছিনিয়ে নেয়। তারপর দেবদত্ত থেকেও আবার সেই ধন বিষ্ণুমিত্র নামক ব্যক্তি অপহরণ করে নেয়।
এইভাবে ধন কখনও একস্থানে থাকে না। তা হস্ত থেকে হস্তান্তরিত হয়। চরমে কেউই ধন-সম্পদ ভোগ করতে পারে না এবং তা সর্ব অবস্থাতে ভগবানেরই সম্পত্তি থাকে।
জড়া প্রকৃতির ত্রিতাপ দুঃখের প্রতিকার না করতে পেরে, জীব দুরন্ত চিন্তায় বিষণ্ণ হয়। এই ত্রিতাপ দুঃখ হচ্ছে আধিদৈবিক (যেমন প্রচণ্ড শীত, প্রবল ঝড় ইত্যাদি), অন্য জীবদের দ্বারা প্রদত্ত আধিভৌতিক ক্লেশ এবং দেহ ও মনজাত আধিআত্মিক ক্লেশ।
ধন বিনিময়ের ব্যাপারে যদি কেউ এক কড়ি অথবা তার থেকেও কম বঞ্চনা করে, তাহলে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।”
“এই সংসারে পূর্বোক্ত কষ্টগুলি তো আছেই, আর তা ছাড়া সুখ, দুঃখ, রাগ, দ্বেষ, ভয়, অভিমান, প্রমাদ, শোক, মোহ, লোভ, মাৎসর্য, ঈর্ষা, অপমান, ক্ষুধা, পিপাসা, আধি, ব্যাধি, জন্ম, জরা, মৃত্যু প্রভৃতি বহু কষ্টও রয়েছে।
এগুলি একত্রে বদ্ধ জীবকে দুঃখ-দুর্দশা ছাড়া আর কিছুই প্রদান করে না। কখনও বদ্ধ জীব মূর্তিমতী মায়ারূপিণী পত্নী অথবা বান্ধবীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, তাদের আলিঙ্গন লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তার ফলে তার বিবেক এবং জীবনের চরম লক্ষ্যরূপ বিজ্ঞান তিরোহিত হয়।
তখন পারমার্থিক উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা পরিত্যাগ করে, সেই স্ত্রীর বিলাস-ভবন নির্মাণ করার জন্য ব্যগ্র হয়ে ওঠে। সেই বিলাস-ভবনে আসক্ত হয়ে তার স্ত্রী-পুত্রের সম্ভাষণ, অবলোকন এবং কার্যকলাপের দ্বারা মোহিত হয়।
এইভাবে সে কৃষ্ণভক্তি রহিত হয়ে অপার অন্ধকার নরকে পতিত হয়।” “পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চক্রের নাম হরিচক্র। সেই চক্র হচ্ছে কালচক্র। তা পরমাণু থেকে ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং তা সমস্ত কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
এই কাল নিরস্তর আবর্তিত হচ্ছে এবং ব্রহ্মা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তৃণ পর্যন্ত জীবের আয়ু হরণ করছে। তার ফলে শৈশব, বাল্য, যৌবন, বার্ধক্য ইত্যাদি পরিবর্তনের মাধ্যমে জীব মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এই কালচক্রকে প্রতিহত করা অসম্ভব। পরমেশ্বর ভগবানের অস্ত্র হওয়ার ফলে এই কাল অত্যন্ত কঠোর। কখনও কখনও বদ্ধ জীব মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে, তার আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার লাভের আশায় কারোর পূজা করতে চায় ।
তবুও সে অপ্রতিহত কাল যার আয়ুধ, সেই পরমেশ্বর ভগবানের শরণাগত হয় না। বদ্ধ জীব তার পরিবর্তে অপ্রামাণিক শাস্ত্রবর্ণিত মনুষ্যসৃষ্ট দেবতা বা ভগবানের শরণ গ্রহণ করে।
মনুষ্যসৃষ্ট এই সমস্ত অবতারেরা বাজ, শকুনি, বক এবং কাকের মতো। বৈদিক শাস্ত্রে এদের কোন উল্লেখ নেই। এই সমস্ত শকুনি, বাজ, কাক এবং বকেরা সিংহের আক্রমণ-সদৃশ আসন্ন মৃত্যু থেকে কাউকে রক্ষা করতে পারে না।
যারা এই সমস্ত অপ্রামাণিক মনুষ্যসৃষ্ট দেবতাদের শরণ গ্রহণ করে, তারা মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পায় না।” “ভণ্ড স্বামী, যোগী এবং অবতারেরা, যারা ভগবানে বিশ্বাস করে না তাদের বলা হয় পাষণ্ডী।
তারা স্বয়ং অধঃপতিত এবং প্রতারিত, কারণ তারা পারমার্থিক উন্নতি সাধনের প্রকৃত পন্থা সম্বন্ধে অবগত নয় এবং যারা তাদের কাছে যায়, তারাও নিঃসন্দেহে প্রতারিত হয়।
এইভাবে প্রতারিত হয়ে কেউ যখন বৈদিক বিধির প্রকৃত অনুগামীর (ব্রাহ্মণ অথবা কৃষ্ণভক্তদের) শরণ গ্রহণ করে, তখন তাঁরা তাদের শিক্ষা দেন কিভাবে শ্রুতি এবং স্মৃতির নির্দেশ অনুসারে পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনা করতে হয়।
কিন্তু সেই পন্থা অনুসরণ করতে অক্ষম হয়ে সেই সমস্ত মূঢ় ব্যক্তিরা পুনরায় অধঃপতিত হয় এবং মৈথুন পরায়ণ শূদ্রদের শরণ গ্রহণ করে। বানর ইত্যাদি পশুদের মধ্যে মৈথুনের প্রবণতা অত্যন্ত প্রবল; তাই যে সমস্ত মানুষ মৈথুনপরায়ণ, তাদের বানরের বংশধর বলা যেতে পারে।
এইভাবে বানরের বংশধরেরা পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা করে। তারা সাধারণত শুদ্র বলে পরিচিত। জীবনের উদ্দেশ্য না জেনে তারা অবাধে বিচরণ করে। তারা কেবল পরস্পরের মুখদর্শন করে মুগ্ধ হয়, কারণ তার ফলে তারা ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করে।
তারা সর্বদা গ্রাম্যকর্ম বা জড়-জাগতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় এবং জাগতিক লাভের উদ্দেশ্যে তারা কঠোর পরিশ্রম করে। এইভাবে তারা সম্পূর্ণরূপে ভুলে যায় যে, একদিন তাদের আয়ু শেষ হয়ে যাবে এবং বিবর্তনের চক্রে তারা অধঃপতিত হবে।
বানর যেমন এক গাছ থেকে আর এক গাছে লাফালাফি করে, ঠিক তেমনই বদ্ধ জীব এক দেহ থেকে আর এক দেহে দেহান্তরিত হয়। বানর যেমন অবশেষে শিকারীর জালে বন্দী হয় এবং তখন আর তার বন্ধন মুক্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না, ঠিক তেমনই বদ্ধ জীব ক্ষণস্থায়ী মৈথুন-সুখের প্রতি আসক্ত হয়ে সংসার- বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
সংসার-জীবন বদ্ধ জীবকে ক্ষণস্থায়ী মৈথুন উৎসবে মগ্ন হওয়ার অবসর প্রদান করে এবং তার ফলে সে জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে সম্পূর্ণরূপে অসমর্থ হয়ে পড়ে।”
“এই জড় জগতে বদ্ধ জীব যখন পরমেশ্বর ভগবানের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা ভুলে যায় এবং কৃষ্ণভক্তির অনুশীলন করে না, তখন সে নানা রকম দুষ্কর্ম এবং পাপে প্রবৃত্ত হয়। তখন তাকে ত্রিতাপ দুঃখ ভোগ করতে হয় এবং মৃত্যুরূপ হস্তীর ভয়ে ভীত হয়ে সে অন্ধকার গিরিকন্দরে পতিত হয়।
বদ্ধ জীব প্রবল শীত, প্রচণ্ড ঝড়ঝঞ্ঝা ইত্যাদি বহু প্রকার দৈহিক দুঃখ- কষ্ট ভোগ করে। তাকে আধিদৈবিক, আধিভৌতিক এবং আধ্যাত্মিক দুঃখও ভোগ করতে হয়। যখন সে সেগুলির প্রতিকার করতে অক্ষম হয়, তখন তাকে নানা প্রকার দুঃ খ-দুর্দশা ভোগ করতে হয়।
তার জড় সুখভোগের বাসনা চরিতার্থ না হওয়ার ফলে, সে স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত বিষণ্ণ হয়। বদ্ধ জীবদের মধ্যে যখন অর্থের বিনিময় হয়, তখন প্রতারণার ফলে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।
অতি অল্প লাভের জন্য বদ্ধ জীবদের বন্ধুত্ব শত্রুতায় পর্যবসিত হয়। কখনও কখনও অর্থাভাবের ফলে বদ্ধ জীবের বাসস্থান থাকে না। কখনও কখনও তার বসার মতো স্থানও থাকে না এবং সে আহারাদি একান্ত প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি থেকেও বঞ্চিত হয়।
এইভাবে সে যখন অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত হয়, তখন সৎ উপায়ে প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি সংগ্রহ করতে অক্ষম হয়ে, সে অসৎ উপায়ে অন্যের ধন অপহরণ করতে চায়। সে তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তু পায় না, উপরন্তু সে কেবল অন্যের কাছে অপমানিত হয় এবং তার ফলে অত্যন্ত বিষণ্ণ হয়।
পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও বার বার তাদের বাসনা চরিতার্থ করার জন্য তারা বিবাহ করে। দুর্ভাগ্যবশতত তাদের বিবাহ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বিবাহ-বিচ্ছেদ ইত্যাদির দ্বারা তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
এই সংসার-মার্গ বহুবিধ ক্লেশে পূর্ণ এবং বিবিধ দুঃখ-দুর্দশা বদ্ধ জীবকে সর্বদা পীড়া দেয়। কখনও কখনও তার ক্ষতি হয়, আবার কখনও তার লাভ হয়।
উভয় অবস্থাতেই এই মার্গ বিপদে পূর্ণ। কখনও কখনও বদ্ধ জীব মৃত্যু অথবা অন্য পরিস্থিতির দ্বারা তার পিতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। পিতাকে পরিত্যাগ করে সে তার সন্তান-সন্ততির প্রতি আসক্ত হয়। এইভাবে বদ্ধ জীব মোহাচ্ছন্ন হয় এবং ভীত হয়।
কখনও সে ভয়ে আর্তনাদ করে। কখনও সে তার পরিবারের ভরণ-পোষণ করে সুখী হয় এবং কখনও সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে দান করে।
এইভাবে সে এই জড় জগতের বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং অনাদিকাল ধরে ভগবানের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা ভুলে থাকে। এইভাবে সে বিপদসঙ্কুল সংসার-মার্গে বিচরণ করে এবং কখনই সে সুখী হতে পারে না।
যাঁরা আত্ম-তত্ত্ববিৎ তাঁরা এই ভয়ঙ্কর সংসার-সমুদ্র থেকে উত্তীর্ণ হবার জন্য পরমেশ্বর ভগবানের শরণ গ্রহণ করেন। ভগবদ্ভক্তির পন্থা অবলম্বন না করে কখনও সংসার-বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় না।
অর্থাৎ এই জড় জগতে কেউই সুখী হতে পারে না। তাই কৃষ্ণভক্তির পন্থা অবলম্বন করা অবশ্য কর্তব্য।”
“সমস্ত জীবের সুহৃৎ মহাত্মারা শান্ত চিত্ত। তাঁরা তাঁদের মন এবং ইন্দ্রিয়গুলিকে বশীভূত করেছেন এবং তাঁরা অনায়াসে ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়ার মুক্তির পথ প্রাপ্ত হন।
দুর্ভাগ্যবশত সংসারাসক্ত মানুষেরা তাঁদের সঙ্গ র করতে পারে না। বহু রাজর্ষি ছিলেন যাঁরা যজ্ঞ অনুষ্ঠানে অত্যন্ত পারদর্শী এবং দিগ্বিজয়ী বীর ছিলেন। কিন্তু এত শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারেননি।
তার কারণ হচ্ছে এই সমস্ত মহান রাজারা দেহাত্মবুদ্ধির ভ্রান্ত ধারণা জয় করতে পারেননি। তার ফলে তাঁরা অন্য রাজাদের সঙ্গে শত্রুতা সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন না করেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
বদ্ধ জীব যখন সকাম কর্মরূপ লতাকে আশ্রয় করে, তখন সে তার না পুণ্যকর্মের প্রভাবে স্বর্গলোকে উন্নীত হয়ে নারকীয় ত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে চিরকাল সেখানে থাকতে পারে না।
তার সকাম কর্মের ফল ভোগ করার পর, তাকে পুনরায় মর্ত্যলোকে ফিরে আসতে হয়। এইভাবে সে নিরন্তর ঊর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী হচ্ছে।”
জড় ভরতের উপদেশ সংক্ষেপে বর্ণনা করে, শুকদেব গোস্বামী বললেন—“হে মহারাজ পরীক্ষিৎ, ভগবানের বাহন গরুড় যে পথ অবলম্বন করেন, জড় ভরত প্রদর্শিত পথ তারই মতো, আর সাধারণ রাজারা ঠিক মাছির মতো।
মাছি গরুড়ের মার্গ অনুসরণ করতে পারে না, তেমনই আজ পর্যন্ত কোনও রাজা এবং দিগ্বিজয়ী নেতা মনের দ্বারাও রাজর্ষি ভরতের এই ভক্তিমার্গ অনুসরণে সমর্থ হয়নি।
মহারাজ ভরত তাঁর যৌবনেই উত্তমশ্লোক ভগবানের সেবার লালসায় সবকিছু পরিত্যাগ করেছিলেন। তিনি তাঁর সুন্দরী স্ত্রী, আদরের সন্তান, সুহৃৎ এবং বিশাল সাম্রাজ্য, সবই ত্যাগ করেছিলেন।
যদিও এগুলি ত্যাগ করা অত্যন্ত কঠিন, তবুও মহারাজ ভরত এমনই একজন মহাপুরুষ ছিলেন যে, তিনি মলবৎ সেগুলি পরিত্যাগ করেছিলেন।”
“হে রাজন, ভরত মহারাজের কার্যকলাপ অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। অন্যের পক্ষে যা ত্যাগ করা অত্যন্ত কঠিন তা তিনি ত্যাগ করেছিলেন। তিনি তাঁর রাজ্য, সুন্দরী পত্নী এবং পরিবার পরিত্যাগ করেছিলেন।
দেবতাদেরও প্রার্থনীয় তাঁর অতুল ঐশ্বর্য তিনি ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর মতো মহাপুরুষই মহান ভক্ত হওয়ার যোগ্য ।
তিনি সবকিছু পরিত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন কারণ তিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সৌন্দর্য, ঐশ্বর্য, যশ, জ্ঞান, বল এবং বৈরাগ্যের দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিলেন ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এতই আকর্ষণীয় যে, তাঁর জন্য সমস্ত বাঞ্ছনীয় বস্তু ত্যাগ করা যায়। যাঁদের মন ভগবানের প্রেমময়ী সেবার দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছে, তাঁদের কাছে মুক্তিও তুচ্ছ বলে মনে হয়।
মৃগশরীর প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও মহারাজ ভরত পরমেশ্বর ভগবানকে বিস্মৃত হননি; তাই মৃগশরীর ত্যাগ করার সময় তিনি উচ্চস্বরে এই প্রার্থনাটি করেছিলেন—‘ভগবান সাক্ষাৎ যজ্ঞ পুরুষ। তিনি কর্মসমূহের ফলদাতা।
তিনি ধর্মের রক্ষক, সাক্ষাৎ অষ্টাঙ্গ-যোগমূর্তি, সমস্ত জ্ঞানের উৎস, সমগ্র সৃষ্টির নিয়ন্তা এবং সমস্ত জীবের অন্তর্যামী। তিনি পরম সুন্দর। তাঁর দিব্য প্রেমময়ী সেবায় আমি যেন নিরন্তর যুক্ত থাকতে পারি।
এই আশা নিয়ে তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করে, আমি এই দেহ ত্যাগ করছি।' এই প্রার্থনা উচ্চারণ করে মহারাজ ভরত দেহত্যাগ করেছিলেন। শ্রবণ ও কীর্তনে আগ্রহী ভক্তেরা নিয়মিতভাবে ভরত মহারাজের বিশুদ্ধ চরিত্র আলোচনা করেন এবং তাঁর কার্যকলাপের মহিমা কীর্তন করেন।
কেউ যদি বিনীতভাবে মঙ্গলময় মহারাজ ভরতের কথা শ্রবণ এবং কীর্তন করেন, তাহলে তাঁর পরমায়ু বৃদ্ধি হয়, ধন বৃদ্ধি হয়, যশ লাভ হয়, অনায়াসে স্বর্গলোক প্রাপ্তি হয় অথবা মোক্ষ লাভ হয়।
মহারাজ ভরতের চরিত্র কেবল শ্রবণ এবং কীর্তন করার ফলে সমস্ত অভীষ্ট লাভ হয়। এইভাবে সমস্ত ঐহিক এবং পারমার্থিক বাসনা চরিতার্থ করা যায়।
অন্যের কাছে সেগুলি প্রার্থনা করার আর কোন প্রয়োজন হয় না, কারণ মহারাজ ভরতের জীবন- চরিত কেবল অধ্যয়ন করার ফলে সমস্ত ঈন্সিত বস্তু লাভ করা যায়।”
আরও পড়ুনঃ
* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব
* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা
* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন
* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার
* আমাদের হৃদয়ে ভগবান কোথায় থাকেন?
* শুদ্ধ ভক্তি কি? কোন দেবতার পূজা করলে কি লাভ করা যায়