নারায়ণ কবচ - শ্রীমদ্ভগবদ গীতা যথাযথ বাংলা

নতুন পোষ্ট

Add

শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩

নারায়ণ কবচ

 

 নারায়ণ কবচ

মহারাজ পরীক্ষিৎ শুকদেব গোস্বামীকে জিজ্ঞাসা করলেন—“হে প্রভু, যে বিষ্ণুমন্ত্রের দ্বারা রক্ষিত হয়ে, দেবরাজ ইন্দ্র অনায়াসে বাহন সহ শত্রু সৈন্যদের জয় করে ত্রিলোকের ঐশ্বর্য ভোগ করেছিলেন, সেই বিষয়ে আমাকে বলুন। 

 

যে নারায়ণ-কবচের দ্বারা রক্ষিত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র যুদ্ধে বধোদ্যত শত্রুদের জয় করেছিলেন, সেই সম্বন্ধেও আমাকে বলুন।”


শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেন—“দেবগণ কর্তৃক পুরোহিতরূপে নিযুক্ত বিশ্বরূপের কাছে দেবতাদের রাজা ইন্দ্র নারায়ণ-কবচ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি যা বলেছিলেন, তা আমি বলছি, একাগ্র চিত্তে তা শ্রবণ করুন।”


বিশ্বরূপ বললেন—“যদি কোন ভয় উপস্থিত হয়, তা হলে হাত এবং পা ভালভাবে ধুয়ে তারপর, ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা  যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ / শ্রীবিষ্ণু শ্রীবিষ্ণু শ্রীবিষ্ণু—এই মন্ত্র উচ্চারণ করে আচমন করবে। 

 

তারপর কুশ গ্রহণ করে উত্তরমুখে মৌন অবলম্বনপূর্বক বসে শুদ্ধভাবে অষ্টাক্ষর মন্ত্রের দ্বারা দেহের আটটি অঙ্গে অঙ্গন্যাস করবে এবং দ্বাদশ অক্ষর মন্ত্রের দ্বারা করন্যাস করে নারায়ণ-কবচের দ্বারা নিম্নোক্তভাবে নিজেকে বন্ধন করবে। 

 

প্রথমে, ওঁ নমো নারায়ণায়—এই অষ্টাক্ষর মন্ত্র উচ্চারণ করে হস্তের দ্বারা শরীরের আটটি অঙ্গ—পদদ্বয়, জানুদ্বয়, ঊরুদ্বয়, হৃদয়, উদর, বক্ষঃস্থল, মুখ ও মস্তক যথাক্রমে স্পর্শ করবে।  

 

তারপর বিপরীতভাবে অর্থাৎ ‘য়’ থেকে ‘ও’ পর্যন্ত বর্ণসমূহ পা থেকে মাথা পর্যন্ত সংহার-ন্যাস করে পুনরায় ‘ওঁ’ থেকে ‘য়’ পর্যন্ত বর্ণসকল মাথা থেকে পা পর্যন্ত ক্রমে উৎপত্তি-ন্যাস করবে। এইভাবে উৎপত্তি ন্যাস এবং সংহার-ন্যাস করা কর্তব্য। 

 

তারপর ‘ওঁ’ নমো ভগবতে বাসুদেবায়' এই দ্বাদশ অক্ষর মন্ত্রে করন্যাস করবে। এই মন্ত্রের এক-একটি অক্ষর প্রণব যুক্ত করে, ডান হাতের তর্জনী থেকে শুরু করে বাম হাতের তর্জনী পর্যন্ত এই আটটি আঙ্গুলে আটটি বর্ণ ন্যাস করবে। 

 

তারপর অবশিষ্ট চারটি অক্ষর দুই হাতের অঙ্গুষ্ঠের দুটি পর্বে ন্যাস করবে। তারপর ‘ওঁ বিষ্ণবে নমঃ'—এই ছয় অক্ষর সমন্বিত মন্ত্র ন্যাস করতে হবে, যথা হৃদয়ে ‘ওঁ—এই বর্ণ ন্যাস করবে, পরে মস্তকে ‘বি’—এই বর্ণ, ভ্রূযুগলের মধ্যে 'ষ'-কার, শিখাগুচ্ছে ‘ণ’- কার, নেত্রদ্বয়ের মধ্যে 'বে' ন্যাস করবে। 

 

তারপর মন্ত্রজপকর্তা ‘ন’-কার তাঁর দেহের সমস্ত সন্ধিস্থলে ন্যাস করে ‘ম’-কারকে অস্ত্ররূপে চিন্তা করে ধ্যান করবে। এইভাবে তিনি স্বয়ং মন্ত্রমূর্তি হবেন। তারপর অন্তিম ‘ম’- কারের সঙ্গে বিসর্গ যুক্ত করে, পূর্ব দিক থেকে শুরু করে সর্বদিকে ‘মঃ অস্ত্রায় ফট্’–এই মন্ত্র উচ্চারণ করবেন। 

 

এইভাবে সমস্ত দিক এই মন্ত্ররূপ কবচের দ্বারা বন্ধন করা হবে। এই ন্যাস সমাপ্তির পর নিজেকে ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ এবং ধ্যেয় পরমেশ্বর ভগবানের সঙ্গে গুণগতভাবে এক বলে চিন্তা করতে হবে। তারপর নারায়ণ কবচ নামক মন্ত্ৰ জপ করবে। 

 

যিনি গরুড়ের পৃষ্ঠদেশে আসীন হয়ে তাঁর শ্রীপাদপদ্মের দ্বারা তাকে স্পর্শ করছেন এবং যিনি আট হাতে শঙ্খ, চক্র, ঢাল, খগ, গদা, বাণ, ধনুক এবং পাশ ধারণ করে বিরাজ করছেন, সেই পরমেশ্বর ভগবান তাঁর আট হাতের দ্বারা আমাকে সর্বদা রক্ষা করুন। 

 

তিনি সর্বশক্তিমান, কারণ তিনি অণিমা, লঘিমা আদি অষ্ট ঐশ্বর্য সমন্বিত। জলে বরুণ দেবতার পার্ষদ হিংস্র জলজন্তুদের থেকে মৎস্যরূপী ভগবান আমাকে রক্ষা করুন। মায়াবলে যিনি বামনরূপ ধারণ করেছিলেন, সেই ভগবান বামনদেব আমাকে স্থলে রক্ষা করুন। 

 

ভগবানের যে বিরাটস্বরূপ বিশ্বরূপ ত্রিলোক জয় করেছিল, তিনি আমাকে গগনমণ্ডলে রক্ষা করুন। যাঁর ভয়ঙ্কর অট্টহাসির শব্দে দিকমণ্ডল প্রতিধ্বনিত হয়েছিল এবং অসুর-পত্নীদের গর্ভ নিপতিত হয়েছিল, সেই হিরণ্যকশিপুর শত্রু ভগবান নৃসিংহদেব অরণ্য, যুদ্ধক্ষেত্র আদি দুর্গম স্থানে আমাকে রক্ষা করুন।

 

 পরম অবিনশ্বর ভগবানকে যজ্ঞের মাধ্যমে জানা যায় এবং তাই তিনি যজ্ঞেশ্বর নামে পরিচিত। তিনি বরাহ অবতাররূপে রসাতল থেকে তাঁর তীক্ষ্ণ দশনাগ্রভাগ দ্বারা পৃথিবীকে উত্তোলন করেছিলেন। তিনি আমাকে পথের মধ্যে দুর্বৃত্তদের থেকে রক্ষা করুন। 

 

পরশুরামরূপী ভগবান আমাকে পর্বত-শিখরে রক্ষা করুন এবং ভরতাগ্রজ শ্রীরামচন্দ্র লক্ষ্মণ সহ আমাকে প্রবাসে রক্ষা করুন। অনাবশ্যক ধর্ম এবং প্রমাদবশত বিহিত কর্মের লঙ্ঘন থেকে নারায়ণ আমাকে রক্ষা করুন। 

 

নররূপী ভগবান আমাকে গর্ব থেকে রক্ষা করুন, যোগেশ্বর দত্তাত্রেয়রূপী ভগবান আমাকে ভক্তিযোগের পতন হতে রক্ষা করুন এবং সমস্ত সৎ গুণের ঈশ্বর কপিলরূপী ভগবান আমাকে সংসার-বন্ধন থেকে রক্ষা করুন। 

 

ভগবান সনৎকুমার আমাকে কামবাসনা থেকে রক্ষা করুন, ভগবান হয়গ্রীব আমাকে ভগবানের শ্রীবিগ্রহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে অবহেলা জনিত অপরাধ থেকে রক্ষা করুন। 

 

দেবর্ষি নারদ আমাকে শ্রীবিগ্রহের অর্চনার অপরাধ থেকে রক্ষা করুন এবং কূর্মরূপী ভগবান আমাকে অশেষ নরক থেকে রক্ষা করুন। 

 

ভগবান ধন্বন্তরি শরীরের ব্যাধিজনক দ্রব্যাদি ভক্ষণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। অন্তরেন্দ্রিয় ও বহিরেন্দ্রিয় বিজয়ী ঋষভদেব আমাকে শীতোষ্ণাদি দ্বৈতভাব জনিত ভয় থেকে রক্ষা করুন। 

 

ভগবান যজ্ঞ আমাকে লোকের অপবাদ থেকে রক্ষা করুন এবং শেষরূপী ভগবান বলরাম আমাকে ক্রোধান্ধ সর্পদের থেকে রক্ষা করুন। 

 

ব্যাসদেব রূপী ভগবান আমাকে বৈদিক জ্ঞানের অভাব জনিত সর্বপ্রকার অজ্ঞান থেকে রক্ষা করুন। 

 

ভগবান বুদ্ধদেব আমাকে বেদবিরুদ্ধ আচরণ এবং আলস্যবশত বেদবিহিত অনুষ্ঠানের বিমুখতারূপ প্রমাদ থেকে রক্ষা করুন এবং ধর্মরক্ষার জন্য যিনি অবতরণ করেন, সেই ভগবান কল্কিদেব আমাকে কলিযুগের কলুষ থেকে রক্ষা করুন। 

 

দিনের প্রথম ভাগে ভগবান কেশব তাঁর গদার দ্বারা আমাকে রক্ষা করুন, দিনের দ্বিতীয় ভাগে সর্বদা বেণুবাদনরত গোবিন্দ আমাকে রক্ষা করুন, সর্বশক্তি সমন্বিত নারায়ণ আমাকে দিনের তৃতীয় ভাগে রক্ষা করুন এবং দিনের চতুর্থ ভাগে চক্রহস্ত বিষ্ণু আমাকে রক্ষা করুন। 

 

অসুরদের জন্য ভয়ঙ্কর ধনুর্ধারী ভগবান মধুসুদন দিনের পঞ্চম ভাগে আমাকে রক্ষা করুন, সন্ধ্যায় ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বররূপে প্রকাশিত ভগবান মাধব আমাকে রক্ষা করুন, রাত্রির প্রথম ভাগে ভগবান হৃষীকেশ আমাকে রক্ষা করুন এবং অর্ধরাত্রে ও নিশীথে (রাত্রির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগে) ভগবান পদ্মনাভ আমাকে রক্ষা করুন। 

 

রাত্রির নিশীথকাল থেকে অরুণোদয় কাল পর্যন্ত বক্ষে শ্রীবৎস চিহ্নধারী শ্রীভগবান আমাকে রক্ষা করুন, প্রত্যূষকালে অর্থাৎ রাত্রির চতুর্থ ভাগে অসিধারী ভগবান জনার্দন আমাকে রক্ষা করুন, প্রভাতকালে দামোদর আমাকে রক্ষা করুন এবং প্রতি সন্ধি সময়ে কালমূর্তি ভগবান বিশ্বেশ্বর আমাকে রক্ষা করুন।

 

 চতুর্দিকে ভ্রমণপূর্বক বায়ুর সহায়তায় আগুন যেমন তৃণরাশিকে ভস্মীভূত করে, সেইভাবে প্রলয়কালীন অগ্নির মতো প্রখর প্রান্তভাগ বিশিষ্ট সুদর্শন-চক্র ভগবান কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে, আমাদের শত্রুদের ভস্মীভূত করুক। 

 

হে ভগবানের গদা, তোমার স্পর্শের ফলে বজ্রের মতো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উৎপন্ন হয় এবং তুমি ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়। আমিও তাঁর দাস। অতএব তুমি দয়া করে আমাদের শত্রু – কুষ্মাণ্ড, বিনায়ক, যক্ষ, রাক্ষস, ভূত এবং গ্রহগণকে নিষ্পেষিত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ কর। 

 

হে শঙ্খরাজ পাঞ্চজন্য, তুমি শ্রীকৃষ্ণের মুখমারুতে পূর্ণ হয়ে ভয়ঙ্কর শব্দ সহকারে শত্রুদের হৃদয় কম্পিত করে রাক্ষস, প্রমথ, প্রেত, মাতৃকা, পিশাচ এবং ভয়ঙ্কর দৃষ্টি সমন্বিত ব্রহ্মরাক্ষসদের বিদূরিত কর। 

 

হে তীক্ষ্ণধার খগরাজ, তুমি ভগবান কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে আমার শত্রুদের খণ্ড খণ্ড কর! হে শতচন্দ্রাকৃতি মণ্ডল- বিশিষ্ট চর্ম (ঢাল), তুমি পাপাত্মা শত্রুদের চক্ষু আচ্ছাদন কর এবং তাদের পাপপূর্ণ চক্ষু অপহরণ কর।  

 

ভগবানের দিব্য নাম, রূপ, গুণ এবং বৈশিষ্ট্যের কীর্তন দুষ্ট গ্রহের প্রভাব, উল্কাপাত, ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ, সরীসৃপ, বৃশ্চিক, বাঘ-সিংহ আদি হিংস্র প্রাণী, ভূত-প্রেত, মাটি, জল, আগুন, বায়ু প্রভৃতির উপদ্রব, বিদ্যুৎ এবং পূর্বকৃত পাপ থেকে আমাদের রক্ষা করুক। 

 

আমাদের মঙ্গলময় জীবনের প্রতিবন্ধকতার ভয়ে আমরা সর্বদা ভীত। তাই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের কীর্তনের ফলে এই সব সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হোক। ভগবান বিষ্ণুর বাহন প্রভু গরুড় ভগবানেরই মতো শক্তিমান। তিনি বেদমুর্তি এবং বিশেষ মন্ত্রের দ্বারা তিনি পূজিত হন। 

 

তিনি আমাদের সমস্ত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন এবং ভগবান বিষুক্সেন তাঁর পবিত্র নামের দ্বারা আমাদের সমস্ত সঙ্কট থেকে রক্ষা করুন। 

 

ভগবানের পবিত্র নাম, তাঁর চিন্ময় রূপ, তাঁর বাহন, অস্ত্র প্রভৃতি যাঁরা তাঁর পার্ষদের মতো তাঁকে অলঙ্কৃত করেন, তাঁরা আমাদের বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়, মন ও প্রাণকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করুন। 

 

সূক্ষ্ম এবং স্থূল জগৎ হচ্ছে জড়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তা ভগবান থেকে অভিন্ন, কারণ চরমে তিনিই হচ্ছেন সর্বকারণের পরম কারণ। প্রকৃতপক্ষে কার্য এবং কারণ এক, কেননা কার্যের মধ্যে কারণ বিদ্যমান রয়েছে। 

 

তাই পরম সত্য ভগবান তাঁর যে কোন অংশের দ্বারা আমাদের সমস্ত বিপদ বিনাশ। করতে পারেন। ঈশ্বর, জীব, মায়া এবং জগৎ—এই সবই বস্তু। বস্তুতত্ত্ব বিচারে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই; চরমে তারা এক বাস্তব বস্তু ভগবান। 

 

তাই যাঁরা পারমার্থিক জ্ঞানে উন্নত, তাঁরা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য দর্শন করেন। এই প্রকার উন্নত চেতনা সমন্বিত ব্যক্তিদের কাছে ভগবানের অঙ্গের ভূষণ, তাঁর নাম, তাঁর যশ, তাঁর গুণ, তাঁর রূপ, তাঁর আয়ুধ প্রভৃতি সব কিছুই তাঁর শক্তির প্রকাশ। 

 

তাঁদের উন্নত চিন্ময় জ্ঞানের প্রভাবে তাঁরা জানেন যে, বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত সর্বব্যাপ্ত ভগবান সর্বত্রই উপস্থিত। তিনি সর্বদা আমাদের সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করুন। প্রহ্লাদ মহারাজ উচ্চস্বরে নৃসিংহদেবের পবিত্র নাম কীর্তন করেছিলেন। 

 

বড় বড় নেতাদের দ্বারা সমস্ত দিকে বিষ, অস্ত্র, জল, অগ্নি, বায়ু ইত্যাদির দ্বারা যে সমস্ত বিপদ সৃষ্টি হয়েছে, ভক্ত প্রহ্লাদ মহারাজের জন্য গর্জনকারী নৃসিংহদেব তা থেকে আমাদের রক্ষা করুন। ভগবান তাঁর স্বীয় চিন্ময় প্রভাবের দ্বারা তাদের প্রভাব আচ্ছাদিত করুন। 

 

সর্বপ্রান্তে, উপরে, নিচে, অন্তরে, বাইরে এবং সর্বত্রই নৃসিংহদেব আমাদের রক্ষা করুন।” বিশ্বরূপ বললেন—“হে ইন্দ্র, নারায়ণের সঙ্গে সম্পর্কিত এই দিব্য কবচের বর্ণনা আমি আপনার কাছে করলাম। এই কবচ ধারণ করার ফলে, আপনি নিশ্চিতভাবে অসুর নেতাদের জয় করতে পারবেন। 

 

কেউ যদি এই কবচ ধারণ করে তাঁর চক্ষুর দ্বারা কাউকে দর্শন করেন অথবা তাঁর পায়ের দ্বারা কাউকে স্পর্শ করেন, তা হলে সেও তৎক্ষণাৎ উপরোক্ত সমস্ত ভয় থেকে মুক্ত হবে। যেই ব্যক্তি এই নারায়ণ-কবচ নামক বিদ্যা ধারণ করেন, তাঁর কোন কালেও রাজা, দস্যু, অসুর অথবা ব্যাধি প্রভৃতি কোন বিষয় থেকে ভয় থাকবে না।”


“হে দেবরাজ, পুরাকালে কৌশিক নামক এক ব্রাহ্মণ এই কবচ ধারণ করে মরুপ্রদেশে যোগবলে দেহত্যাগ করেন। ব্রাহ্মণ যে স্থানে তাঁর দেহত্যাগ করেছিলেন, গন্ধর্বরাজ চিত্ররথ এক সময় বহু সুন্দরী রমণী পরিবৃত হয়ে, বিমানে করে সেই স্থানের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। 

 

চিত্ররথ হঠাৎ অধোমস্তক হয়ে তাঁর বিমান সহ আকাশ থেকে নিপতিত হয়েছিলেন। তারপর বালিখিল্য ঋষির নির্দেশ অনুসারে তিনি সেই ব্রাহ্মণের অস্থিগুলি পূর্ববাহিনী সরস্বতী নদীতে নিক্ষেপ করে তাতে স্নান করেছিলেন। 

 

তারপর তিনি অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে তাঁর ধাম গন্ধর্বলোকে গমন করেছিলেন।” শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেন—“হে মহারাজ পরীক্ষিৎ, যে ব্যক্তি ভয় উপস্থিত হলে এই কবচ ধারণ করেন অথবা শ্রদ্ধা সহকারে সেই সম্পর্কে শ্রবণ করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত হন এবং সমস্ত জীবের পূজ্য হন। শতক্রতু ইন্দ্র বিশ্বরূপের কাছ থেকে এই বিদ্যা লাভ করেছিলেন এবং অসুরদের পরাজিত করে তিনি ত্রিভুবনের সমস্ত সম্পদ ভোগ করেছিলেন।”

আরও পড়ুনঃ

 

* মহারাজ ভরতের চরিত্রকথা- শ্রীমদ্ভাগবত

* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব


* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা 


* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন 


* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার


* আমাদের হৃদয়ে ভগবান কোথায় থাকেন?


* শুদ্ধ ভক্তি কি? কোন দেবতার পূজা করলে কি লাভ করা যায়


* বিষ্ণুর অবতার সমূহ (বিশিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য) 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন