ভগবানের কাছে দেবতাদের সুরক্ষা প্রার্থনা-শ্রীমদ্ভাগবত - শ্রীমদ্ভগবদ গীতা যথাযথ বাংলা

নতুন পোষ্ট

Add

শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৪

ভগবানের কাছে দেবতাদের সুরক্ষা প্রার্থনা-শ্রীমদ্ভাগবত

 

ভগবানের কাছে দেবতাদের সুরক্ষা প্রার্থনা


শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেন-“হে রাজন, আমি আপনার কাছে অতি পবিত্র গজেন্দ্রমোক্ষণ লীলা বর্ণনা করলাম। ভগবানের এই লীলা শ্রবণ করার ফলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এখন আমি রৈবত মনু সম্বন্ধে বর্ণনা করছি, শ্রবণ করুন।”
 
 

"তামস মনুর ভ্রাতা রৈবত পঞ্চম মনু হয়েছিলেন। তাঁর পুত্রদের মধ্যে অর্জুন, বলি এবং বিন্ধ্য ছিলেন প্রধান। হে রাজন, রৈবত মন্বন্তরে বিভু ইন্দ্র হয়েছিলেন, ভূতরয়গণ দেবতা হয়েছিলেন এবং হিরণ্যরোমা, বেদশিরা ও ঊর্ধ্ববাহু প্রভৃতি ব্রাহ্মণেরা সপ্তর্ষি হয়েছিলেন। 
 
শুভ্র এবং তাঁর পত্নী বিকুণ্ঠার সংযোগে ভগবান বৈকুণ্ঠ তাঁর স্বীয় অংশ দেবতাগণ সহ আবির্ভূত হয়েছিলেন।
 

লক্ষ্মীদেবীর প্রসন্নতা বিধানের জন্য, তাঁর প্রার্থনা অনুসারে ভগবান বৈকুণ্ঠ আর একটি বৈকুণ্ঠলোক সৃষ্টি করেছিলেন, যা সকলের দ্বারা পূজিত হয়।  
 
 
যদিও ভগবানের বিভিন্ন অবতারের অতি মহৎ কার্যকলাপ এবং দিব্য গুণাবলী অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে বর্ণিত হয়েছে, তবুও কখনও কখনও আমরা তা বুঝতে পারি না। কিন্তু ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পক্ষে সব কিছুই সম্ভব। যে ব্যক্তি ভগবানের গুণরাশি বর্ণনা করতে সমর্থ হয়, সে ভূমিস্থ রেণুগুলিকেও গণনা করতে সমর্থ হয়। 
 
 
কিন্তু ভগবানের চিন্ময় গুণাবলী কেউ গণনা করতে পারে না। চক্ষুর পুত্র চাক্ষুষ ষষ্ঠ মনু ছিলেন। তাঁর পূরু, পূরুষ এবং সুদ্যুম্ন আদি বহু পুত্র ছিল। চাক্ষুষ মন্বন্তরে মন্ত্রদ্রুম ছিলেন ইন্দ্র,
 
 

আপ্যাদিগণ দেবতা এবং হবিষ্মান, বীরক আদি সপ্তর্ষি ছিলেন। এই ষষ্ঠ মন্বন্তরেও জগৎপতি ভগবান শ্রীবিষ্ণু তাঁর স্বীয় অংশে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি বৈরাজের পত্নী দেবসম্ভূতির গর্ভে অজিত নামে জন্মগ্রহণ করেন। 
 
 
ক্ষীর সমুদ্র মন্থন করে অজিত দেবতাদের জন্য অমৃত উৎপন্ন করেছিলেন। কুর্ম রূপে তিনি বিশাল মন্দর পর্বতকে তাঁর পৃষ্ঠে ধারণ করে ইতস্তত ভ্রমণ করেছিলেন।"


মহারাজ পরীক্ষিৎ জিজ্ঞাসা করলেন-“হে মহান ব্রাহ্মণ শুকদেব গোস্বামী, ভগবান শ্রীবিষ্ণু কেন এবং কিভাবে ক্ষীর সমুদ্র মন্থন করেছিলেন? কি কারণে তিনি জলে কুর্মরূপে মন্দর পর্বত ধারণ করেছিলেন?
 
 
দেবতারা কিভাবে অমৃত প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং সমুদ্র মন্থনের ফলে অন্য আর কি কি উৎপন্ন হয়েছিল? দয়া করে ভগবানের সেই সমস্ত অদ্ভুত লীলা আপনি বর্ণনা করুন। আপনার দ্বারা বর্ণিত ভক্তের ঈশ্বর ভগবানের মহিমান্বিত কার্যকলাপ শ্রবণ করে, জড় জগতের ত্রিতাপ দুঃখের দ্বারা তপ্ত আমার হৃদয় এখনও তৃপ্ত হয়নি।"
 

শ্রীসূত গোস্বামী বললেন-"হে নৈমিষারণ্যে সমবেত ব্রাহ্মণগণ, দ্বৈপায়নের পুত্র শুকদেব গোস্বামীকে মহারাজ পরীক্ষিৎ যখন এইভাবে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন রাজাকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি ভগবানের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিলেন।"
 

শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেন-"অসুরেরা যখন যুদ্ধে তীক্ষ্ণধার অস্ত্রের দ্বারা দেবতাদের প্রবলভাবে আক্রমণ করেছিল, তখন বহু দেবতা পতিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং তাঁরা আর জীবিত হননি। 
 
 
হে রাজন, তখন দেবতারা দুর্বাসা মুনির দ্বারা অভিশাপগ্রস্ত হওয়ার ফলে ত্রিলোক শ্রীহীন হয়েছিল এবং তাই যজ্ঞ অনুষ্ঠান হতে পারেনি। তার ফলে অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়েছিল। ইন্দ্র, বরুণ প্রভৃতি দেবতারা তাঁদের জীবন এইভাবে বিপন্ন দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা কোন সমাধান খুঁজে পাননি। 
 
 
তখন সমস্ত দেবতারা। একত্রে সুমেরু পর্বতের শিখরে ব্রহ্মার সভায় গমন করেছিলেন এবং ব্রহ্মাকে তাঁদের প্রণতি নিবেদন করে সমস্ত বৃত্তান্ত নিবেদন করেছিলেন। দেবতাদের হতপ্রভ ও বলহীন এবং তার ফলে লোকত্রয়কে মঙ্গল রহিত
 

দর্শন করে এবং অসুরদের পরিস্থিতি দেবতাদের ঠিক বিপরীত অর্থাৎ সমৃদ্ধিশালী দর্শন করে, আদি দেব পরম শক্তিমান ব্রহ্মা পরমেশ্বর ভগবানে তাঁর মনকে একাগ্র করে উৎফুল্ল বদনে দেবতাদের বলতে লাগলেন, 'আমি, শিব ও তোমরা দেবতারা, অসুরেরা, জরায়ুজ, অণ্ডজ, উদ্ভিজ্জ এবং স্বেদজ, সমস্ত প্রাণীরা ভগবানের থেকে, রজোগুণে ভগবানের গুণাবতার (ব্রহ্মা) থেকে এবং আমার কলা মহর্ষিগণ থেকে সৃষ্ট হয়েছে। 
 
 
 তাই চল, আমরা সেই ভগবানের কাছে গিয়ে তাঁর শ্রীপাদপদ্মের শরণাগত হই। ভগবানের বধ্য, রক্ষণীয়, উপেক্ষণীয় বা আদরণীয় কেউ নেই, তবুও তিনি সৃষ্টি, স্থিতি এবং সংহারের জন্য কালক্রমে সত্ত্ব, রজ এবং তমোগুণে বিভিন্ন রূপে অবতরণ করেন। 
 
 
এখন দেহধারী জীবদের সত্ত্বগুণ আহ্বান করার সময়। সৃষ্টির পালনের নিমিত্ত সত্ত্বগুণ ভগবানের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তাই এটিই ভগবানের শরণ গ্রহণ করার উপযুক্ত সময়। যেহেতু তিনি স্বভাবতই দেবতাদের প্রতি অত্যন্ত কৃপাময় এবং প্রিয়, তাই তিনি নিশ্চয়ই আমাদের সৌভাগ্য প্রদান করবেন।'"


“হে অরিন্দম মহারাজ পরীক্ষিৎ! দেবতাদের এই কথা বলার পর, ব্রহ্মা তাঁদের নিয়ে এই জড় জগতের অতীত ভগবদ্ধামে গিয়েছিলেন। ভগবানের ধাম ক্ষীর সমুদ্রে শ্বেতদ্বীপে অবস্থিত।  
 
 
সেখানে (শ্বেতদ্বীপে), ব্রহ্মা ভগবানের স্তব করেছিলেন, যদিও তিনি কখনও তাঁকে দর্শন করেননি। যেহেতু ব্রহ্মা বৈদিক শাস্ত্রে ভগবানের কথা শ্রবণ করেছিলেন, তাই তিনি সমাহিত চিত্তে বৈদিক বাণীর দ্বারা ভগবানের স্তব করেছিলেন।"
 

"হে অবিকারী, অসীম পরম সত্য, পরমেশ্বর ভগবান, আপনি সব কিছুর উৎস। আপনি সর্বব্যাপ্ত হওয়ার ফলে, প্রতিটি জীবের হহৃদয়ে এবং প্রতিটি পরমাণুতেও বিরাজমান। আপনার কোন জড় গুণ নেই। বস্তুতপক্ষে, আপনি অচিন্ত্য। 
 
 
মনঃকল্পনা আপনাকে গ্রহণ করতে পারে না এবং বাণী আপনাকে বর্ণনা করতে পারে না। আপনি সব কিছুর পরম ঈশ্বর এবং তাই আপনি সকলের পরম পূজনীয়। আমরা আপনাকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। প্রাণ, মন, বুদ্ধি এবং আত্মা কিভাবে ভগবানের নিয়ন্ত্রণাধীনে কার্য করছে, তা তিনি প্রত্যক্ষভাবে
 

এবং পরোক্ষভাবে জানেন। তিনি সব কিছুর প্রকাশক এবং অজ্ঞান তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। পূর্বকৃত
কর্মফলের দ্বারা প্রভাবিত তাঁর কোন জড় শরীর নেই।
 

তিনি পক্ষপাত এবং অবিদ্যা থেকে মুক্ত। তাই আমি সেই নিত্য, সর্বব্যাপ্ত এবং আকাশের মতো মহান ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের শরণ গ্রহণ করি, যিনি ত্রিযুগে (সত্য, ত্রেতা এবং দ্বাপরে) যড়ৈশ্বর্য সহ আবির্ভূত হন।"
 

"জড় কার্যের চক্রে জড় দেহটি মনরূপ রথের চক্র। দশটি ইন্দ্রিয় (পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় ও পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়) এবং দেহাভ্যন্তরস্থ পঞ্চবায়ু সেই চক্রের পনেরটি অর।
 

প্রকৃতির তিন গুণ (সত্ত্ব, রজ ও তম) সেই চক্রের তিনটি নাভি এবং মাটি, জল, আগুন, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার প্রকৃতির এই আটটি উপাদান সেই চক্রের পরিধি। 
 
 
বিদ্যুৎশক্তির মতো বহিরঙ্গা মায়াশক্তির দ্বারা এই চক্র ভগবানরূপী কেন্দ্রের চতুর্দিকে অতি দ্রুতবেগে ঘূর্ণিত হয়। সেই পরমাত্মা এবং পরম সত্যকে আমরা আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। 
 
 
পরমেশ্বর ভগবান শুদ্ধ সত্ত্বগুণে অবস্থিত এবং তাই তিনি একবর্ণ-ওঁকার (প্রণব)। যেহেতু তিনি তমসাচ্ছন্ন জড়া প্রকৃতির অতীত, তাই তিনি জড় চক্ষুতে অদৃশ্য। 
 
 
কিন্তু তা সত্ত্বেও কাল বা স্থানের দ্বারা তিনি আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন নন, তিনি সর্বত্রই বিরাজমান। যাঁরা জড়া প্রকৃতির ক্ষোভ থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাঁরা যোগরূপ উপায়ের দ্বারা সেই গরুড়াসীন ভগবানের আরাধনা করেন। 
 
 
আমরা সকলে তাঁকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। ভগবানের মায়াকে কেউই অতিক্রম করতে পারে না এবং তা এত প্রবল যে, সকলকে জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য বুঝতে না দিয়ে মোহিত করে। 
 
 
 সেই মায়া কিন্তু ভগবানের বশীভূত, যিনি সকলকে শাসন করেন এবং সকলের প্রতি সমদর্শী। সেই ভগবানকে আমরা আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। 
 
 
আমাদের দেহ যেহেতু সত্ত্বগুণ দ্বারা নির্মিত, তাই আমরা দেবতারা অন্তরে এবং বাইরে সাত্ত্বিক ভাবাপন্ন।মহান ঋষিরাও এইভাবে সত্ত্বগুণে অবস্থিত। 
 
 
সুতরাং, আমরা যদি ভগবানকে না জানতে পারি, তা হলে রজ এবং তমোগুণাচ্ছন্ন ইতর শরীর-বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আর কি কথা? তারা কিভাবে ভগবানকে জানতে পারবে? সেই ভগবানকে আমরা আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।
 

এই পৃথিবীতে চার প্রকার জীব রয়েছে এবং তারা সকলেই তাঁর দ্বারা সৃষ্ট। জড় সৃষ্টি তাঁর শ্রীপাদপদ্মে আশ্রিত। তিনি সমগ্র ঐশ্বর্য এবং শক্তিতে পূর্ণ পরম পুরুষ। তিনি আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। 
 
 
সমগ্র জড় জগৎ যে জল থেকে উৎপন্ন হয়েছে, সেই জলেরই কারণে জীবসমূহ জীবিত থাকে এবং বৃদ্ধি পায়। সেই জল ভগবানের বীর্যস্বরূপ। সেই মহা বিভূতি-সম্পন্ন ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। 
 
 
সোম বা চন্দ্র হচ্ছেন দেবতাদের অন্ন, বল এবং আয়ুর উৎস। তিনি সমস্ত বনস্পতির ঈশ্বর এবং সমস্ত জীবের উৎপত্তির উৎস। পণ্ডিতেরা সেই সোমকে ভগবানের মন বলেন। সমগ্র ঐশ্বর্যের উৎস সেই ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। 
 
 
যজ্ঞের আহুতি গ্রহণ করার জন্য যার জন্ম হয়েছে, সেই অগ্নি ভগবানের মুখস্বরূপ। সম্পদ উৎপাদন করার জন্য সেই অগ্নি সমুদ্রের গভীরে বিরাজ করে এবং উদরে বিরাজ তা অন্ন পাক করে এবং দেহের সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রকার স্রাব উৎপাদন করে। 
 
 
সেই পরম শক্তিমান ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। সূর্যদেব অর্চিরাদি-বর্ণ নামক মুক্তির মার্গের দেবতা। তিনি বৈদিক জ্ঞান উপলব্ধির প্রধান উৎস। তিনি ব্রহ্মের উপাসনার স্থান। তিনি মুক্তির দ্বার, অমৃতের উৎস এবং মৃত্যুর কারণ। 
 
 
সেই সূর্যদেব যাঁর চক্ষু, সেই পরম ঐশ্বর্য সমন্বিত ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। স্থাবর এবং জঙ্গম সমস্ত জীব বায়ু থেকে তাদের তেজ, বল, ওজ এবং প্রাণ প্রাপ্ত হয়। ভৃত্যেরা যেমন সম্রাটের অনুসরণ করে, আমরাও তেমন আমাদের প্রাণ ধারণের জন্য বায়ুর অনুসরণ করি। 
 
 
সেই বায়ু যে ভগবানের প্রাণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে, সেই পরমেশ্বর ভগবান আমাদের প্রতি । প্রসন্ন হোন। পরম শক্তিমান ভগবান আমাদের প্রতি - প্রসন্ন হোন, যাঁর কর্ণ থেকে দিকসমূহ, হৃদয় থেকে - দেহগত ছিদ্র এবং নাভিমণ্ডল থেকে প্রাণ, ইন্দ্রিয়, মন, এবায়ু ও শরীরের আশ্রয় আকাশ উৎপন্ন হয়েছে। 
 
 
যাঁর তেজ থেকে দেবরাজ ইন্দ্র, প্রসন্নতা থেকে দেবতাগণ, ক্রোধ থেকে শিব, বুদ্ধি থেকে ব্রহ্মা, দেহের ছিদ্র থেকে বেদসমূহ, মেছ থেকে মহর্ষি এবং প্রজাপতিগণ উৎপন্ন - হয়েছেন, সেই মহাবিভূতি ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন  হোন। 
 
 
যাঁর বক্ষ থেকে লক্ষ্মীদেবী, ছায়া থেকে পিতৃগণ, স্তন থেকে ধর্ম, পৃষ্ঠদেশ থেকে অধর্ম, মস্তক থেকে স্বর্গ এবং ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ থেকে অপ্সরাগণ উৎপন্ন হয়েছে, সেই পরম শক্তিমান ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন।  
 
 
যাঁর মুখ থেকে ব্রাহ্মণ এবং বৈদিক জ্ঞান, বাহু থেকে ক্ষত্রিয় এবং দেহের বল, উরু থেকে বৈশ্য এবং তাদের উৎপাদন ক্ষমতা ও ধন এবং চরণ থেকে বৈদিক জ্ঞানের বহির্ভূত শূদ্রগণ উৎপন্ন হয়েছে, সেই মহা-শক্তিশালী ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। 
 
 
তাঁর অধরোষ্ঠ থেকে লোভ, উপরের ওষ্ঠ থেকে প্রীতি, নাসিকা থেকে দেহের কান্তি, স্পর্শেন্দ্রিয় থেকে পাশবিক কাম, ভ্রূ থেকে যমরাজ এবং অক্ষিপক্ষ্ম থেকে কাল উৎপন্ন হয়েছে, সেই মহাবিভূতি ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। 
 
 
মহা বুধগণেরও অগ্রাহ্য; পঞ্চভূত, কাল, কর্ম, প্রকৃতির গুণ এবং অত্যন্ত দুর্বোধ্য এই জড় জগতের বৈচিত্র্য যাঁর যোগমায়া দ্বারা রচিত বলে পণ্ডিতগণ বর্ণনা করেন, সেই পরম নিয়ন্তা ভগবান আমাদের প্রতি প্রসন্ন হোন। 
 
 
আমরা সেই পরমেশ্বর ভগবানকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি, যিনি পূর্ণরূপে শান্ত, সমস্ত প্রয়াস থেকে মুক্ত এবং সর্বতোভাবে সন্তুষ্ট। তিনি তাঁর ইন্দ্রিয়ের দ্বারা জড় জগতের কার্যকলাপের প্রতি আসক্ত নন। প্রকৃতপক্ষে তিনি এই জড় জগতে তাঁর লীলাবিলাস করার সময় বায়ুর মতো অনাসক্ত থাকেন।"
 

"হে ভগবান, আমরা আপনার শরণাগত, তবুও আপনাকে দর্শন করতে চাই। দয়া করে আপনি আপনার আদি রূপ এবং হাস্যোজ্জ্বল মুখপদ্ম আমাদের চক্ষুকে দর্শন করতে দিন এবং আমাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়কে উপলব্ধি করতে দিন। 
 
 
হে পরমেশ্বর ভগবান, আপনি আপনার ইচ্ছা অনুসারে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন অবতারে প্রকট হন এবং অসাধারণ কার্য সম্পাদন করেন যা আমাদের পক্ষে করা অসম্ভব। 
 
 
কর্মীরা সর্বদাই তাদের ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের জন্য ধন সংগ্রহে আগ্রহী, কিন্তু সেই জন্য তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এত কঠোর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও তার ফল কিন্তু কখনও সন্তোষজনক হয় না।
 
 
বস্তুতপক্ষে, কখনও কখনও তাদের কর্মের ফল কেবল নৈরাশ্যে পর্যবসিত হয়। কিন্তু ভগবানের সেবায় নিজেদের সর্বতোভাবে উৎসর্গ করেছেন, যে সমস্ত ভক্তেরা তাঁরা কঠোর পরিশ্রম না করেও যথেষ্ট ফল লাভ করতে পারেন। 
 
 
ভক্ত সর্বদাই তাঁর আশাতীত ফল লাভ করেন। ভগবানে সমর্পিত কর্ম যদি অতি অল্প পরিমাণেও সম্পাদিত হয়, তবুও তা ব্যর্থ হয় না। পরমেশ্বর ভগবান যেহেতু সকলের পরম পিতা, তাই তিনি স্বাভাবিকভাবেই প্রিয় এবং সর্বদা জীবের কল্যাণ সাধনে তৎপর। 
 
 
বৃক্ষের মূলে জল সেচন করলে যেমন বৃক্ষের স্কন্ধ এবং শাখা আপনা থেকেই তৃপ্ত হয়, তেমনই, ভগবান শ্রীবিষ্ণুর সেবা করলে সকলেরই সেবা করা হয়, কারণ ভগবান সকলের পরমাত্মা। 
 
 
হে ভগবান! অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সীমার ঊর্ধ্বে নিত্য বর্তমান আপনাকে আমরা আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। আপনার কার্যকলাপ অচিন্ত্য, আপনি জড়া প্রকৃতির তিন গুণের নিয়ন্তা এবং সমস্ত জড় গুণের অতীত হওয়ার ফলে আপনি সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত। 
 
 
আপনি জড়া প্রকৃতির তিন গুণের নিয়ন্তা হলেও আপনি সত্ত্বগুণের অনুকূল। আমরা আপনাকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।"
 
 

আরও পড়ুনঃ


* শ্রীমদ্ভাগবত বক্তা- শুকদেব গোস্বামীর আবির্ভাব


* মহাভারতের মহারাজ পরীক্ষিতের জন্ম কথা 


* কিভাবে পরীক্ষিৎ মহারাজ কলিযুগের সম্মুখীন হয়েছিলেন 


* পৃথিবীতে কলি যুগের শুরুর সময়-কলির দন্ড ও পুরুষ্কার


* আমাদের হৃদয়ে ভগবান কোথায় থাকেন?


* শুদ্ধ ভক্তি কি? কোন দেবতার পূজা করলে কি লাভ করা যায়


* বিষ্ণুর অবতার সমূহ (বিশিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন