শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ
অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদগীতা-দ্বাদশ-অধ্যায়-ভক্তিযোগ-(Bangla Gita)
এবং সততযুক্তা যে ভক্তাস্ত্বাং পর্যুপাসতে।
যে চাপ্যক্ষরমব্যক্তং তেষাং কে যোগবিত্তমাঃ।।১।।
অনুবাদঃ
অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-এভাবেই নিরন্তর ভক্তিযুক্ত হয়ে যে সমস্ত ভক্তেরা
যথাযথভাবে তোমার আরাধনা করেন এবং যাঁরা ইন্দ্রিয়াতীত অব্যক্ত ব্রহ্মের
উপাসনা করেন, তাঁদের মধ্যে কারা শ্রেষ্ঠ যোগী।
শ্রীভগবানুবাচ
ময্যাবেশ্য মনো যে মাং নিত্যযুুক্তা উপাসতে।
শ্রদ্ধয়া পরয়োপেতাস্তে মে যুক্ততমা মতাঃ।।২।।
অনুবাদঃ
শ্রীভগবান বললেন-যাঁরা তাঁদের মনকে আমার সবিশেষ রূপে নিবিষ্ট করনে এবং
অপ্রাকৃত শ্রদ্ধা সহকারে নিরন্তর আমার উপাসনা করেন, আমার মতে তাঁরাই
সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী।
যে ত্বক্ষরমনির্দেশ্যমব্যক্তং পর্যুপাসতে।
সর্বত্রগমচিন্ত্যং চ কূটস্থমচলং ধ্রুবম্।।৩।।
সংনিয়ম্যেন্দ্রিয়প্রামং সর্বত্র সমবুদ্ধয়ঃ।
তে প্রাপ্নুবন্তি মামেব সর্বভূতহিতে রতাঃ।।৪।।
অনুবাদঃ
যাঁরা সমস্ত ইন্দ্রিয় সংযত করে, সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন হয়ে এবং সর্বভূতের
কল্যাণে রত হয়ে আমার অক্ষর, অনির্দেশ্য, অব্যক্ত, সর্বত্রগ, অচিন্ত্য,
কুটস্থ, অচল, ধ্রুব ও নির্বিশেষ স্বরূপকে উপাসনা করেন, তাঁরা অবশেষে আমকেই
প্রাপ্ত হন।
ক্লেশোহধিকতরস্তেষামব্যক্তাসক্তচেতসাম্।
অব্যক্তা হি গতির্দুঃখং দেহবদ্ভিরবাপ্যতে।।৫।।
অনুবাদঃ
যাদের মন ভগবানের অব্যক্ত নির্বিশেষ রূপের প্রতি আসক্ত, তাদের ক্লেশ
অধিকতর। কারণ, অব্যক্তের উপাসনার ফলে দেহধারী জীবদের কেবল দুঃখই লাভ হয়।
যে ত সর্বাণি কর্মাণি ময়ি সংন্যস্য মৎপরাঃ।
অনন্যেনৈব যোগেন মাং ধ্যায়ন্ত উপাসতে।।৬।।
তেষামহং সমুদ্ধর্তা মৃত্যুসংসারসাগরাৎ।
ভবামি ন চিরাৎ পার্থ ময্যাবেশিতচেতসাম্।।৭।।
অনুবাদঃ
যারা সমস্ত কর্ম আমাতে সমর্পণ করে, মৎপরায়ণ হয়ে অনন্য ভক্তিযোগের দ্বারা
আমার ধ্যান করে উপাসনা করেন, হে পার্থ! আমাতে আবিষ্টচিত্ত সেই সমস্ত
ভক্তদের আমি মৃত্যুময় সংসার-সাগর থেকে অচিরেই উদ্ধার করি।
ময্যেব মন আধৎস্ব ময়ি বুদ্ধিং নিবেশয়।
নিবসিষ্যসি ময্যেব অত ঊর্ধ্বং ন সংশয়ঃ।।৮।।
অনুবাদঃ
অতএব আমাতেই তুমি মন সমাহিত কর এবং আমাতেই বুদ্ধি অর্পণ কর। তার ফলে তুমি
সর্বদাই আমার নিকটে বাস করবে, সেই সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই।
অথ চিত্তং সমাধাতুং ন শক্নোষি ময়ি স্থিরম্।
অভ্যাসযোগেন ততো মামিচ্ছাপ্তুং ধনঞ্জয়।।৯।।
অনুবাদঃ হে ধনঞ্জয়! যদি তুমি স্থিরভাবে আমাতে চিত্ত সমাহিত করতে সক্ষম না হও, তা হলে অভ্যাস যোগের দ্বারা আমাতে প্রাপ্ত হতে ইচ্ছা কর।
অভ্যাসেহপ্যসমর্থোহসি মৎকর্মপরমো ভব।
মদর্থমপি কর্মাণি কুর্বন্ সিদ্ধিমবাপ্স্যসি।।১০।।
অনুবাদঃ যদি তুমি এমন কি অভ্যাস করতেও অসমর্থ হও, তা হলে আমার প্রতি কর্ম পরায়ণ হও। আমার জন্য কর্ম করেও তুমি সিদ্ধি লাভ করবে।
অথৈতদপ্যশক্তোহসি কর্তুং মদযোগমাশ্রিতঃ।
সর্বকর্মফলত্যাগং ততঃ কুরু যতাত্মবান্।।১১।।
অনুবাদঃ আর যদি তাও করতে অক্ষম হও, তবে আমাতে সমস্ত কর্ম অর্পণ করে সংযতচিত্তে কর্মের ফল ত্যাগ কর।
শ্রেয়ো হি জ্ঞানমভ্যাসাজজ্ঞানাদ্ধ্যানং বিশিষ্যতে।
ধ্যানাৎ কর্মফলত্যাগস্ত্যাগাচ্ছন্তিরনন্তরম্।।১২।।
অনুবাদঃ
তুমি যদি এই প্রকার অভ্যাস করতে সক্ষম না হও, তা হলে জ্ঞানের অনুশীলন কর।
জ্ঞান থেকে ধ্যান শ্রেষ্ঠ এবং ধ্যান থেকে কর্মফল ত্যাগ শ্রেষ্ঠ, কেন না এই
প্রকার কর্মফল ত্যাগের শান্তি লাভ হয়।
অদ্বেষ্টা সর্বভূতানাং মৈত্রঃ করুণ এব চ।
নির্মমো নিরহঙ্কারঃ সমদুঃখসুখঃ ক্ষমী।।১৩।।
সন্তুষ্টঃ সততং যোগী যতাত্মা দৃঢ়নিশ্চয়ঃ।
ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্যো মদ্ভক্তঃ স মে প্রিয়ঃ।।১৪।।
অনুবাদঃ
যিনি সমস্ত জীবের প্রতি দ্বেষশূন্য, বন্ধু-ভাবাপন্ন, কৃপালু,
মমত্ববুদ্ধিশূন্য, নিরহঙ্কার, সুখে ও দুঃখে সম ভাবাপন্ন, ক্ষমাশীল, সর্বদা
সন্তুষ্ট, সর্বদা ভক্তিযোগে যুক্ত, সংযত স্বভাব, দৃঢ় সংকল্পযুক্ত এবং যাঁর
মন ও বুুদ্ধি সর্বদা আমাতে অর্পিত, তিনি আমার প্রিয় ভক্ত।
যস্মান্নোদ্বিজতে লোকো লোকান্নোদ্বিজতে চ যঃ
হর্ষামর্ষভয়োদ্বেগৈর্মুক্তো যঃ স চ মে প্রিয়ঃ।।১৫।।
অনুবাদঃ
যাঁর থেকে কেউ উদ্বেগ প্রাপ্ত হয় না, যিনি কারও দ্বারা উদ্বেগ প্রাপ্ত হন
না এবং যিনি হর্ষ, ক্রোধ, ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত, তিনি আমার অত্যন্ত
প্রিয়।
অনপেক্ষঃ শুচির্দক্ষ উদাসীনো গতব্যথঃ।
সর্বারন্তপরিত্যাগী যো মদ্ভক্তঃ স মে প্রিয়ঃ।।১৬।।
অনুবাদঃ যিনি নিরপেক্ষ, শুচি, দক্ষ, উদাসীন, উদ্বেগশূন্য এবং সমস্ত কর্মের ফলত্যাগী, তিনি আমার প্রিয় ভক্ত।
যো ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি।
শুভাশুভপরিত্যাগী ভক্তিমান্ যঃ স মে প্রিষঃ।।১৭।।
অনুবাদঃ
যিনি প্রিয় বস্তুর প্রাপ্তিতে হৃষ্ট হন না এবং অপ্রিয় বস্তুর প্রাপ্তিতে
দ্বেষ করেন না, যিনি প্রিয় বস্তুর বিয়োগে শোক করেন না, অপ্রাপ্ত ইষ্ট
বস্তু আকাঙ্ক্ষা করেন না এবং শুভ ও অশুভ সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করেছেন এবং
যিনি ভক্তিযুক্ত, তিনি আমার প্রিয় ভক্ত।
সমঃ শত্রৌ চ মিত্রে চ তথা মানাপমানয়োঃ।
শীতোষ্ণসুখদুঃখেষু সমঃ সঙ্গবিবর্জিতঃ।।১৮।।
তুল্যনিন্দাস্তুতির্মৌনী সন্তুষ্টো যেন কেনচিৎ।
অনিকেতঃ স্থিরমতির্ভক্তিমান্মে প্রিয়ো নরঃ।।১৯।।
অনুবাদঃ
যিনি শত্রু ও মিত্রের প্রতি সমবুদ্ধি, যিনি সম্মানে ও অপরমানে, শীতে ও
গরমে, সুখে ও দুঃখে এবং নিন্দা ও স্তুতিতে সম-ভাবাপন্ন, যিনি
কুসঙ্গ-বর্জিত, সংযতবাক্, যৎকিঞ্চিৎ লাভে সন্তষ্ট, গৃহাসক্তিশূন্য এবং যিনি
স্থিরবুদ্ধি ও আমার প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত, সেই রকম ব্যক্তি আমার অত্যন্ত
প্রিয়।
যে তু ধর্মামৃতমিদং যথোক্তং পর্যুপাসতে।
শ্রদ্দধানা মৎপরমা ভক্তাস্তেহতীব মে প্রিয়াঃ।।২০।।
অনুবাদঃ যাঁরা আমার দ্বারা কথিত এই ধর্মামৃতের উপাসনা করেন, সেই সকল শ্রদ্ধাবান মৎপরায়ণ ভক্তগণ আমার অত্যন্ত প্রিয়।
সমাপ্ত
------------------
আমি আরেকটা গীতা পড়েছি কিনতু আর এটায়ো পড়েছি কিতু দুটোর মধ্য এ কোন মিল নেই।
উত্তরমুছুনকোনটা সঠিক তা বঝতে পাড়ছিনা
আমাদের হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে ‘বেদ’, আর বেদের নির্যাস হচ্ছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। ভারতীয় পারমার্থিক বিজ্ঞানের মুকুটমণি-স্বরূপ এই ভগবদগীতা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডে খ্যাতি লাভ করেছে। আত্ম-উপলব্ধির পথপ্রদর্শক এই গীতার সাতশো শ্লোক পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অন্তরঙ্গ ভক্ত অর্জুনকে উপদেশ করেছিলেন। বাস্তবিকপক্ষে, মানুষের অপরিহার্য প্রকৃতি, তার পরিবেশ এবং সর্বোপরি ভগবানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আদি রহস্যোদঘাটনে এই গ্রন্থটি অতুলনীয়। বৈদিক জ্ঞানের বিদগ্ধ পন্ডিত ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্ত কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থেকে আগত গুরু-পরম্পরা ধারায় অবস্থিত তত্ত্বদর্শী সদগুরু। তিনি শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ কোন রকম বিকৃতি না করে যথাযথভাবে পরিবেশন করেছেন, যা গীতার অন্যান্য সংস্করণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা
মুছুন